আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

একটি চাকমা উপকথার শুরু



জলের স্থিরতা নেই। মানুষের মতোই। যদিও স্রোত উত্তুঙ্গ রূপ ধারন করে না -সর্বদাই এক প্রশান্ত চেহারা নিয়ে পাহাড়ী শহরটিকে ঘিরে রাখে। একটা দ্রুতগামী জলযান নিস্তরঙ্গ প্রকৃতিতে একটানা শব্দ তুলে চলে যায়। ক্রমশ অপসৃয়মান সাদা শরীরে রোদ পড়ে ওটার শরীর চকচক করে।

আনন্দে উত্তাল চারজনের কারো মুখই ভালো করে দেখা যায় না তবু দিব্যজ্যোতি বুঝতে পারেন এই সবুজ পাহাড় আর নীল জলের মধ্যে ওরা দু চারদিনের প্রশান্তি খুজতে এসেছে। স্পীডবোটটা তখন অনেকদুরে কিনু্ত চলে যাবার পথে সরু রেখার মতো একটা দাগ, জলের মধ্যে অনেকক্ষন জেগে থাকে। দিব্যজ্যোতি একদৃষ্টে সেই দাগটার দিকে চেয়ে থাকেন। একটা রুপালী মাছের পাখনা পানি ঠেলে ভেসে উঠে আবার জলের নীচে উধাও হয়ে যায়। তার চোখ মাছেটাকে খুজে বেড়ায় কিন্তু মাছটার কোন চিহ্ন নেই শুধু একরাশ জেলে নৌকা মাছটার অপেক্ষায় মৃদু দুলতে থাকে।

সরু চোখে দিব্যজ্যোতি মাছটাকে কল্পনা করে। নীলচে জলের নিচে শান্ত একটা জগৎ - কেমন শীতল ছায়ায় ঢাকা, সূর্যের শেষ রশ্মিটুকু ধীরে ধীরে জলের রঙে মিশে যায় - জলের রঙ শ্যাওলা সবুজ রঙের ভেতর দিয়ে সে তির তির এগিয়ে যেতে থাকে। সে আরো গভীরে ডুবে যেতে চায় -জলের স্বচ্ছতার ভেতরে সে খোজে সবুজ মাঠ... সেই রুপোলী শরীরে বারো বছরের কিশোর নাকশা ফুলের খোজে মাঠ পেরিয়ে পাহাড়ের খাজ বেয়ে ওঠার চেষ্টায় কাতর হয়ে ওঠে - জলের তলায় জেগে ওঠে মাথার উপর এক আশ্চর্য্য আকাশ সে আকাশে উড়ে বেড়ায় বার্গি পাখির দল - দুর পাহাড়েরর কোল বেয়ে ওরা উড়ে আসে আরো কতদুর থেকে কে জানে- কিশোর বালক অবাক চোখে চেয়ে থাকে। ওরও ইচ্ছে হয় বার্গি পাখির মতো আকাশ দিয়ে উড়ে গিয়ে মাথা উচু করে আকাশ আড়াল করা পাহাড়ের ওপাশে গিয়ে দেখে আসে সেখানে কি আছে। বার্গি হতে গিয়ে সে আবার ফিরে পায় সেই রূপালী শরীর - শৈশব ছেড়া কাটাহীন শরীওে সে পাড়ি দেয় ঢেউ এর পরে ঢেউ।

ঢেউ ভেঙে সে উঠে আসে বর্তমানের সন্ধ্যার আধো আলো অন্ধকারে। এক এক জ্বলে উঠছে মাছ ধরা নৌকার বাতি। নীলচে হলুদ আলোয় চকচকে মুখগুলো ভেসে ওঠে দিব্যজ্যোতির চোখে। তখনও তার শরীর থেকে স্মৃতি কাতরতার জল ঝরে। তার জীবন নিংড়ানো ফোটা ফোটা সেই জল চুষে নিতে আসে রুপকথার হাঙর, দিব্যজ্যোতি ঢোক গিলে সমস্ত কষ্টটুকু হজম করে নিতে চায়, তার এই বৃদ্ধ শরীরে সময়ের হাঙরকে আটকানোর শক্তি অবশিষ্ট নেই।

কেবল অক্ষম প্রতিহিংসায় হাঙরের দিকে জ্বলন্ত ঘৃণার দৃষ্টি ছুড়ে দিতে গিয়ে দেখে হাঙরের মুখ পাল্টে গিয়ে রজব আলী, কোরবান, নুর আলী, আক্কাস শেখ, নিবারন পোদ্দার, রুস্তম আরো কত চকচকে হাভাতে মুখে রূপ নেয়। সে যেন তাদের রুপোলী মাছ ধরা জালে জড়িয়ে পড়তে থাকে। বুড়োটা পালাতে চায়, এতক্ষনে সে চুপচাপ বসে থাকা শৌনকের দিকে তাকিয়ে একটা কথা বলতে গিয়েই হাপসে ওঠে বুড়ো : তোর মাছ ধরতে ইচ্ছে করে? কথাটা বলেই বুঝতে পারে এ কথাটা একটা ফালতু কথা হয়েছে। জন্মান্তর ধরে দৌড়ে বেড়ানো পূর্বপুরুষদের স্মৃতি পান করে বেড়ে ওঠা মাছগুলোতে তাদের কোন অধিকার নেই। শৌনকের বুড়োর কথা কিংবা ভাবনা কোনটাই কানে ঢোকে না।

তার দৃষ্টি একটা ছোট্ট ডিঙি নৌকায় একটা প্লাস্টিকের ঘুড়ি আকাশে উড়ানোর আয়োজনে ব্যাস্ত দুই বালকের উপর - এমন করে জলের উপর ঘুড়ি ওড়াতে আগে আর কাউকে কখনো দেখেনি। আকাশে ততক্ষনে সূর্যটা ডুবতে বসেছে।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.