আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ডিসেম্বর 21, 2006 : প্রিয় মৃতু্য, তোমার ভাঁজে ভাঁজে ডুবে যাচ্ছে আমার নাক-ঠোঁট ও সমস্ত শরীর



'টি'কে এসএমএস করেছিলাম কাল রাতে। তাতে একটা ইঙ্গিতও জুড়ে দিয়েছিলাম, ধোঁয়াশা করে। 'টি' সম্পর্কে যতোটা জানি, তাতে প্রথমত এই ইঙ্গিত ওর বোঝার কথা না; দ্বিতীয়ত, এসএমএসের রিপ্লাই হিসেবে দ্রুতই ওর কলব্যাক করার কথা। কিন্তু, কাল রাতে ও কোনো সাড়া দেয়নি। ঘুমিয়েছিল নাকি মোবাইলটা অফ ছিল নাকি ও সজাগ এবং ওর মোবাইল অন থাকলেও ইচ্ছে করেই রিপ্লাই করেনি_ জানি না।

জানতে ইচ্ছে করলেও ভাব ধরেছি। কল দিইনি। কারণ, ভাব ধরব কি ধরব না_ ভাবতে ভাবতেই রাত 2টা পার হয়ে গেছে। ততক্ষণে আমি দেখে ফেলেছি 'অটাম ইন নিউ ইয়র্ক' ছবিটি। এই ছবির ডিভিডিটা কিনেছিলাম গত বছরের ডিসেম্বরে।

এতোদিন দেখা হয়ে ওঠেনি। আসলে আমার কেনা 65 ভাগ ছবিই আমার এখনো দেখা হয়নি, আর বোধ করি 85 ভাগ বই-ই পড়া হয়ে ওঠেনি। কারণ, পড়া বা দেখায় আমি কোনো তাড়া বোধ করি না। ইচ্ছে হলেই দেখি/পড়ি, ইচ্ছে না হলে 'না'। এই ব্যাপারটা বেশি ঘটে লেখালেখিতে।

ফলে, বেশকিছু লিটলম্যাগ এবং দৈনিকে লেখা দেবার প্রতিশ্রুতি দিয়েও লেখা দেয়া হয়ে ওঠে না। তাড়া দিলে অবাক হয়ে দেখি, বারে সেই কবে, কয়েক মাস বা বছর আগে, দেব বলেছিলাম। আমি জানি, পৃথিবীতে আমাদের সাধারণ আয়ু অনির্দিষ্ট হলেও তা খুব কম। মাত্র কয়েকটা বছর। আমি, বাইশ ছেড়ে তেইশের দিকে হাঁটছি।

যদি, আরো তেইশ বা ছিচলি্ল্লশ বছর আয়ু পেয়ে যাই, তবু, তা দেখতে দেখতে ফুরিয়ে যাবে। ফলে, আমার লেখালেখি বা ক্যারিয়ার গড়ার চিন্তায়, ছোট্টবেলায় কল্পনা করা 'এ গ্রেট পারসন ফর অল টাইম' হওয়ার জন্য ব্যাপক তাড়া বোধ করা দরকার। কিন্তু, কেন যেন আমি তা বোধ করছি না। এতে ব্যাপক খুশি আমি। ইচ্ছেমতো ঘুমুতে পারছি, আলসেমি করতে পারছি।

জন্ম, বেঁচে থাকা, নিয়ম, মৃতু্য, পৃথিবী, মহাশূন্য... সবকিছু আমার কাছে কেমন যেন গোলমেলে, বাতাসের মতো অদৃশ্য তবু স্পর্শময় মনে হয়। ফলে, শারীরিক মৃতু্য অনিবার্য জানার পর, আমার প েনিজের মৃতু্যকে নিজের জন্য ভয় পাওয়ার বা মন খারাপ করার মতো কিছু মনে হয় না। মানুষের ক্ষেত্রে জন্মানোর চেয়েও মৃতু্য অধিকবেশি রহস্যময়। কেননা, জন্মানোর আগে কেউ টের পায় না, সে জন্মাচ্ছে। জন্মানোর পর বোধ হলে, সে প্রতিমুহূর্তেই অপেক্ষা করতে থাকে যার স্পর্শের জন্য, যার দিকে হেঁটে যায়_ তা 'মৃতু্য'।

সাধারণত, মৃতু্যর কাছ থেকে যতোদিন সম্ভব দূরে থাকা যায়, মানুষ তার প্রার্থনা করে সারণ। মানুষের সর্বোচ্চমত ও চূড়ান্ত ভয়ও 'মৃতু্য'। আমি মৃতু্য নিয়ে কখনো দুর্ভবনাগ্রস্ত হই না। মৃতু্যকে কেমন যেন রোমান্টিক ব্যাপার মনে হয়। যদি টের পাই মৃতু্যর হাজিরা, আমি তার সাথে হ্যাণ্ডশেক করতে চাই, গাঢ় চুমু খেতে চাই মৃতু্যর অদৃশ্য/স্পশাতীত ঠোঁটে [পারলে সেক্সও করতে চাই মৃতু্যর সাথে]।

ফলে, প্রিয় কারো মৃতু্যর খরব শুনলে খুব স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করি। ভাবি, সে তো আজীবন আমার মনে বেঁচে থাকবে, আমার মতো করে। তার এই বেঁচে থাকাটা টাটকা, শীতের সবজির মতোই রাখতে চাই ও রাখি আমি। ফলে, কারো মৃতদেহ, এমনকি অসুস্থ কাউকে দেখতে যাই না। ফলে, কবি শামসুর রাহমানের মৃতদেহের খুব পাশ দিয়ে হেঁটেছি আমরা তিনবন্ধু, আমি + বাপ্পি [কবি বিজয় আহমেদ] + ফেরদৌস ভাই [কবি ফেরদৌস মাহমুদ], যখন তাঁকে হাজারো মানুষ শ্রদ্ধা জানাচ্ছিল শহীদ মিনারে_ আমরা তাঁর মৃতমুখ দেখিনি।

আমরা আরেক বন্ধু মামুনের [কবি মামুন খান] অফিসের নিচে [কাওরান বাজার] এসে রোদে পুড়েছি। ফলে, কৈশোরের শুরু থেকেই যার লেখালেখি, বিশেষ করে সাক্ষাৎকার ও গদ্য আমার ভাবনার জগতে বরফের কুচকুচি টুকরোর মতো ঢুকে যেতো, অবাক আমি যার একগুঁয়েমিতাকে ভয়ানক ভালোবাসতাম, সেই হুমায়ুন আজাদের মৃতু্যর খবরটা জেনেও চুপ ছিলাম, তার লাশও দেখতে যাইনি, চাইনি। কবি বিনয় মজুমদারের মৃতু্যর খবর শুনে, বিনয়ের পাগলামি আর বিনয়-জগতের মহাবিস্ময় নিয়ে ফেরদৌস ভাইয়ের সঙ্গে, আজিজ মার্কেটের তিনতলা থেকে হাঁটতে হাঁটতে ফার্মগেট এসেছি। রাহমান/আজাদ/বিনয়কে আমার/আমাদের কাছে 'মৃত' মনে হয়নি, 'মৃত' বা 'নাই' মনে হয় না এখনো। 'অটাম ইন নিউ ইয়র্ক' ছবিটা চেয়ে চেয়ে দেখেছি, মন দিইনি।

কারণ, প্রথমত মনে মনে আমি 'টি'-এর রিপ্লাই আশা করছিলাম; দ্বিতীয়ত, 'রিচার্ড গেরে'কে [অভিনেতা] আমার ভালোলাগে না। এমনি এমনিই ভালো লাগে না। এমনি এমনি ভালো না লাগাটা একটা বাজে অভ্যাস। আমি এই অভ্যাসটা ত্যাগ করতে চাই না। ছবিটাতে আসলে অবাক লোভীচোখ নিয়ে দেখছিলাম 'উইনোনা রাইডার'কে [অভিনেত্রী]।

বুড়ো রিচার্ড যখন হাতড়িয়ে বেড়াচ্ছিল ওর শরীরের মসৃণ ও এবড়োখেবড়ো পথ, ও যখন হাঁটছিল-থামছিল-ঘামছিল-চাঁদছিল- চুমুচ্ছিল-লাফাচ্ছিল-নড়ছিল বিছানায়... ওর প্রতি বাঁক আমি তাজ্জব হরিণ হয়ে দেখেছি। আমি ওকে দেখতে চাই। আরো বেশি দেখতে চাই। এই মেয়েটার আর কোনো ছবি দেখেছি কি না, মনে করতে পারছি না। [কারণ, সাধারণত সিনেমা দেখার সময় আমি অভিনেতা-অভিনেত্রী বা কলাকুশলীদের নাম দেখার ব্যাপারে আগ্রহ বোধ করি না।

আমি সিনেমাটাই দেখতে চাই। ] ওয়েবসাইটে ওর ফটোগ্রাফ-বায়োগ্রাফ খুঁজতে হবে। [আমি ওর স্মার্ট নুড-ফটোগ্রাফও খুঁজতে চাই; কিন্তু পর্নোগ্রাফ বা স্থুল কোনো ছবি দেখতে চাই না। ] আজো ঘুম ভাঙল বারোটায়। হরতালের শহরে খুব দ্রুত অফিসে যাওয়া গেল।

'টি'কে ফোন করব_ ভেবেছিলাম একবার। মনে ছিল না। হুট করে একটা এসএমএস পেলাম, সাড়ে 4টার দিকে। অবাক হয়ে দেখি 'টি'। আমি সারারাত মনে মনে অপো করলেও ঐ মুহূর্তে এই এসএমএসের জন্য প্রস্তুত ছিলাম না।

493 অরের এসএমএস জুড়ে আমার ইঙ্গিতের অবাক সাড়া, তা-ও ইঙ্গিতে! [নাকি 'টি' এমনি এমনি লিখেছে, আর আমি ভাবছি 'সাড়া'? যা-ই হোক, আমি একে 'সাড়া'ই ভাবতে চাই। ] গত শতাব্দীর উল্লেখযোগ্য বুদ্ধিজীবী সুসান সনটাগের ডায়েরি অনুবাদ করেছিলাম যায়যায়দিন পত্রিকার আর্ট এণ্ড কালচার ম্যাজিনের জন্য। অনুবাদটা লিড হিসেবে ছাপা হয়েছে আজ। ফার্মগেটে এসে 'যায়যায়দিন' কিনলাম। 'ভোরের কাগজ দিনের শেষে' কিনলাম।

তারপর বাস। আজ 'নো শাহবাগ, নো আজিজ মার্কেট'। তারপর বাসা। তারপর টিভি দেখা। তারপর গোসল।

তারপর সেভ। তারপর অর্ণবের 'হোক কলরব'-এর 'তুই কি জানিস না' ও 'তুই কি জানিস না-1' গানটি দুটো বার বার শুনতে শুনতে এইসব লেখা। তারপর সেই এসএমএসের পর থেকে 'টি' তার বহুলপরিচিত শরীরটা নিয়ে আমার কল্পনায় 'উইনোনা রাইডার'-এর আবহ নিয়ে ম্যারাথন খেলছে। [রুদ্র আরিফ । ডিসেম্বর 21, 2006 ।

রাত 11টা 56]

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.