আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

চোখের পানি

"পসার বিকিয়ে চলি জগৎ ফুটপাতে, সন্ধ্যাকালে ফিরে আসি প্রিয়ার মালা হাতে"

শাহানার সামপ্রতিক চোখের পানি বিষয়ক লেখাটা পড়লাম। এ নিয়ে অনেকেই নানা দৃষ্টিকোণ থেকে নানা রকম মন্তব্য আর অভিব্যক্তির কথা জানিয়েছেন। তেমনটাই লিখবার কথা। হাজার হলেও লেখাটা চোখের পানি ফেলা নিয়ে। খুব স্পর্শকাতর একটা বিষয়।

কারণ চোখ এমনিতেই মানব শরীরের অন্যতম স্পর্শকাতর অঙ্গ। মূল্যবানতো বটেই। মানুষ মানুষের কথা বলতে গেলেতো প্রথমে ঐ চোখের দিকেই দৃষ্টি যায়। তাই লোকে বলে চোখে চোখে কথা হয়। চোখে চোখে কথা বা ইশারা যোগাযোগ বা তথ্য বিনিময়ের একটা বহু পুরোনো মাধ্যম।

বিশেষ করে যেখানে লেখা পড়া না জেনেও যে মাধ্যমে প্রেম বিনিময় করা যায়। শাহানার লেখাটা পড়ে আমার মাথায় কিছু প্রশ্ন এসে জট পাকালো। বিষয়টা ভেবে দেখবার মতো। যে কোন সময় যে কোন মুহূর্তে চোখের পানি ফেলার ঘটনা স্থান-কাল-পাত্র ও ঘটনা বিশেষে অন্যরকম কিছু মাত্রা বহন করতেই পারে। কথা হচ্ছে, সব চোখের পানি কিন্তু কান্না নয়।

আর চোখে পানি ঝরলেই সেটাকে কান্না ভাবারও কোন কারণ নেই। নানা কারণে, নানা উপলক্ষে, নানা ঘটনায়, নানা অজুহাতে, নানা অভিব্যক্তিতে, নানা আবেগে, নানা অনুভূতিতে মানুষের চোখে পানি আসতেই পারে। সেই পানি যে শুধু কান্না হবে সেটা ভাবা ঠিক নয়। কান্না ও চোখের জল মোটামুটিভাবে বলা যায় অনেকক্ষেত্রেই সময়, পরিস্থিতি, পরিবেশ ও আবেগ নির্ভর। মানুষ কষ্টে কাঁদে, দুঃখে কাঁদে, আঘাত বা ব্যথা পেলে কাঁদে, অভিমানে কাঁদে, শোকে কাঁদে আবার আনন্দেও কাঁদে।

অথর্াৎ আবেগ-অনুভূতি দ্বারা তাড়িত হয়ে মানুষ যে কোন মুহূর্তে কাঁদতে পারে। এমন নিখাদ কান্না মানুষের ভেতর থেকে আসে। এই চোখের পানিতে রয়েছে অন্তরের অভিব্যক্তি। চোখে পানি ঝরছে, আবেগ আছে, কষ্ট আছে অথচ সত্যিকারের কান্না নয় এমন ঘটনাও আমরা অহরহ নাটক ও চলচ্চিত্রে দেখছি। সত্যিকারের কান্না ভেবে কষ্ট পাচ্ছি।

কিন্তু আসলেতো সেগুলো সত্যিকারের কান্না বা চোখের জল নয়। আমাদের চোখের সামনে বা চোখের আড়ালে এমন অনেক কিছুই ঘটে যাচ্ছে যা প্রতিনিয়ত চোখে পানি ঝরাচ্ছে কিন্তু সেগুলো সবই আসল কান্না নয়। যেমন ধরুন চোখে বালি কিংবা ধূলিকণা গেলে চোখে পানি ঝরতে পারে। রেল ইঞ্জিন বা স্টীমারের কালো ধোঁয়া বা কয়লার কণা চোখে গেলে চোখের পানি ঝরতে পারে। রাস্তার যানজটে বিষাক্ত ধোঁয়া চোখে পানি ঝরাতে পারে।

পুলিশের কাঁদানে গ্যাস চোখে পানি ঝরাতে পারে। আবার চোর চুরি করে নাকে কান্না করে ধোঁকাও দিতে পারে। তাহলে শাহানার চোখের পানি ফেলার বিষয়টাকেও আমরা অন্যভাবে খতিয়ে দেখতে পারি। যেমন ধরুন শাহানা সেদিন অফিসে ঝালমুড়ি নিজে হাতে বানিয়ে সবাইকে খাওয়াবে ভেবে পেঁয়াজ কাটতে গেছে আর সেই পেঁয়াজের ঝাঁঝে চোখের পানি নাকের পানি এক হয়ে গ্যাছে। এমন ঝাঁঝানির ঠেলায় শাহানা হয়তো লিখতে বাধ্য হয়েছে যে সে আর চোখের পানি এভাবে আর ফেলবে না।

কিংবা এমনও হতে পারে শাহানা এমন একটা সূত্র বা পদ্ধতি খুঁজে পেয়েছে যা ব্যবহার করলে অযথা চোখের পানি ঝরবে না। এমনও হতে পারে শাহানা এমন একটা আই ড্রপস্ বা লোশনের সন্ধান পেয়েছে যা ব্যবহার করলে চোখে কিছুতেই পানি আসবে না। এমন কী নিকট জনের যত কষ্টেই হোক বা মৃতু্যই হোক সেক্ষেত্রেও চোখে কোন পানি আসবে না। এমন একটা ব্যবস্থার হদিস যদি শাহানা সত্যিই পেয়ে থাকে তবে এই পোড়ার দেশে মানুষ নানা দুঃখ/কষ্টে অকারণে চোখের পানি ফেলে ডিহাইড্রেশনে ভুগতে হতো না। কষ্ট আসতে পারে ভেবে আগেভাগেই কয়েক ফোঁটা লোশন চোখে দিয়ে দিলেই ব্যস দুঃখের বাপের সাধ্যি নেই চোখের পানি ঝরায়।

আর এমন ব্যবস্থা হলে প্রেমিক প্রেমিকারা নির্দ্দিধায় ছ্যাকা খাবার অনুশীলণ করে যেতে পারতো বিনা টিসু্য ব্যবহারে। প্রেম বিরহে আত্মহত্যার প্রবণতাও কমে যেতো বহুলাংশে। চোখে পানি নেই তাই কোন দুঃখ নেই। কেউ কষ্ট দিয়ে কাঁদাবে? এতো সোজা না।



এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.