আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমার চোখে ফ্রেডা ওয়ারিংটনে’র “Dracula The Undead” বা (রিটার্ন অভ ড্রাকুলা)

মুক্তমন। █▓▓▓▒▒▒░░░░ প্রাক-কথনঃ বিশ্ব বিখ্যাত হরর ঔপন্যাসিক ‘ব্রাম স্টোকারে’র কালজয়ী উপন্যাস- “ড্রাকুলা”। এটুকু হররপ্রেমীদের সবারই জানা আছে। এটি বিশ্বের সবচেয়ে ভয়ংকরতম পিশাচ কাহিনী। বইটি প্রথম প্রকাশ করা হয় অক্টোবর, ১৯৭৯ সালে।

বাংলা ভাষায় এর অনুবাদ করেন রকিব হাসান। বইটির সার সংক্ষেপ হলো নিম্নরূপ: “কাউন্ট ড্রাকুলা” নামক এক পিশাচ। মানুষের রক্ত যার খাদ্য। স্থানীয় মানুষ তার নাম শুনলে ক্রুশ ছুঁয়ে ঈশ্বরের আশ্রয় প্রার্থণা করে; অথবা শূন্যে ক্রুশ চিহ্ন আঁকে। ট্রান্সিলভেনিয়ার দুর্গম অঞ্চলে কার্পেথিয়ান পর্বতমালার ভেতর কোনও এক পাহাড়-চূড়ায় অবস্থিত প্রাচীন এক বিশাল দূর্গে তার বাস।

লোকেরা ওই দূর্গকে "ক্যাসল ড্রাকুলা" বলে থাকে। দুর্গের নিচে অবস্থিত অন্ধকার সমাধিতে একটা কফিনের ভেতর। সভ্য দুনিয়ার রক্তের লোভে সে লন্ডনের “কারফাক্স এ্যাবি”তে আস্তানা গাড়ল। এদিকে লন্ডনের বিভিন্ন স্থানে অদ্ভুত সব কান্ড ঘটতে লাগল। লন্ডনগামী রাশিয়ান মালবাহী জাহাজ ডিমেটারের দশ নাবিকের মধ্যে নয়জনই রহস্যজনকভাবে উধাও।

হারিয়ে যাচ্ছে শিশুরা- ফিরে এলে ওদের গলায় দেখা যাচ্ছে ধারালো কিছুর (দাঁতের) সূক্ষ্ণ ক্ষতচিহ্ণ। ঘটনার পটভুমিতে উদয় হলেন প্রফেসর ভ্যান হেলসিং। বহু লড়াইয়ের পর; কোনও এক সূর্য-ডুবন্ত লগ্নে ঘুমন্ত ‘ড্রাকুলা’র গর্দান কেটে তার স্বাভাবিক মৃত্যু নিশ্চিত করে ‘জোনাথর হারকার’; তার হৃৎপিন্ড বরাবর কাঠের গজাল ঢুকিয়ে তাকে অভিশপ্ত জীবন থেকে মুক্তি দিলেন ‘কুইন্সি মরিস’। এরপর বইয়ের সমাপ্তি। মূল কথাঃ সাহিত্যজগতে ‘ব্রাম স্টোকারে’র উপযুক্ত উত্তরসূরি বলা হয় ‘ফ্রেডা ওয়ারিংটন’কে।

তিনি “ড্রাকুলা”-র ধারাবাহিকতায় ৩২০ পৃষ্ঠার একটি উপন্যাস লিখেছিলেন। যার নাম দিয়েছিলেন “Dracula The Undead”। বইটি অনলাইনে পড়তে এখানে ক্লিক করুন। এটি ১৯৯৭ সালের ডিসেম্বরে প্রকাশিত হয়। অবশ্য একই নামে ‘ডাক্রে স্টোকার’ও একটি উপন্যাস লিখেছেন ২০০৯ সালে।

‘ফ্রেডা ওয়ারিংটনে’র উক্ত উপন্যাসটি ২০১২ সালের শেষের দিকে বাংলায় বাংলায় রূপান্তর করেছেন ‘ইসমাইল আরমান’। এবং এটি অনুবাদের পর তিনি এর নাম দিয়েছিলেন “রিটার্ন অভ ড্রাকুলা”। তবে এই নামটি তিনি চয়ন করেছেন ১৯৫৮ সালে নির্মিত একটি হরর ফিল্ম এর নাম অনুকরণ করে। যার নাম ছিল– “The Return of Dracula” । যাই হোক ফ্রেডা ওয়ারিংটনের লিখিত “Dracula The Undead” এর ভাষ্য হলো নিম্নরূপ: ‘কাউন্ট ড্রাকুলা’ মারা গেছে।

এর পর... একে একে কেটে গেছে সাত সাতটি বছর। ড্রাকুলার কথা এখন আর কেউই ভাবেনা। তার ধ্বংসকারীরাও না। কিন্তু হঠাৎ করেই যেন বদলে গেল সব। প্রায় রাতেই ভয়ংকর দুঃস্বপ্ন দেখেন ‘জোনাথন হারকার’।

বাড়ীর পোষ্য বেড়ালটাও ওর উপর হিংস্র আক্রমণ করল। মিনার জানালার বাইরে আবারও পাক খেতে শুরু করল কুয়াশার মেঘ। প্রফেসর ‘ভ্যান হেলসিং’ আত্মহত্যা করতে উদ্যত হতে বাধ্য হলেন। অপরদিকে তাঁরই এক বন্ধু প্রফেসর ‘আন্দ্রে কোভাক্স’ হাজার হাজার বছরের পুরনো শয়তানের পাঠশালা– “স্কলোম্যান্স”-এর খোঁজে বেরিয়ে উধাও হয়ে গেলেন। ক্রমেই রক্তশুন্য হয়ে যেতে লাগল সেই বন্ধুর ভাতিজি ‘ইলেনা কোভাক্স’।

একরাতে সকলেই দেখলেন, জানলেন– সাড়ে চারশ’ বছর বয়েসী রক্তখেকো পিশাচ, অন্ধকারের রাজপুত্র ‘ড্রাকুলা’ তাদের মাঝে পূণরায় ফিরে এসেছে। সুঠাম যুবকের চেহারায়। কিন্তু আগের চেয়ে কয়েকগুণ ভয়ংকররূপে। প্রতিশোধের তীব্র আক্রোশ নিয়ে। জোনাথনদের সুখ-শান্তি শেষ হয়ে গেছে।

শুরু হয়েছে তাদের দুঃখ আর আতঙ্কের জীবন। ড্রাকুলার হয়ে ‘মিনা হারকারে’র ছেলে ‘কুইন্সি’কে চুরি করে লন্ডনের পরিত্যক্ত “কারফাক্স এ্যাবি”তে নিয়ে যায় ‘ইলেনা’। ছেলের মুক্তির আশায় ড্রাকুলার কাছে নিজেকে স্বেচ্ছায় সমর্পণ করেন ‘মিনা’। তিনি নিজের শরীরের রক্ত পান করান ড্রাকুলাকে এবং ‘ড্রাকুলা’র রক্তও নিজে পান করেন। কিন্তু মিনাকে ভুল বুঝিয়ে ওকে নিয়ে “স্কলোম্যান্সে” পালিয়ে যায় ড্রাকুলা।

উদ্দেশ্য– আরও পড়াশুনা করে আরও অনেক অনেক শক্তি-ক্ষমতা অর্জন করা। কিন্তু ভ্যান হেলসিং এই বৃদ্ধ বয়সেও কোনো অংশে কম নয়। তিনিও তার সাথীদের নিয়ে ড্রাকুলার পিছু নিলেন। এদিকে ‘ইলেনা’কে ফেলে ‘মিনা’কে নিয়ে ‘ড্রাকুলা’র চলে যাবার পর রক্তশুন্য ‘ইলেনা’র বোধোদয় ঘটে। এবং সে মিনা’র ছেলে ‘কুইন্সি’কে তার অসুস্থ বাবা ‘জোনাথন হারকারে’র কাছে ফিরিয়ে দেয়।

তবে এক সময় জোনাথন হারকার’কে সে পরকীয়ায় জড়াতে চায়। কিন্তু সফল হয় না। ঈশ্বরের কৃপায় তাকেও মরতে হয় পবিত্র ক্রুশের খোঁচায়। ওদিকে ড্রাকুলা’র অসীম শক্তি অর্জনের সেই আশা আর পূরণ হলো না। কারণ, পিশাচ হলেও তারও একটা আত্মা ছিল।

আর এটাই তার জন্য কাল হয়ে দাঁড়াল। সে ‘মিনা হারকার’কে ভালোবেসে ফেলেছিল। ব্যাপারটা বুঝতে পেরে স্কলোম্যান্স এর প্রহরী প্রাচীন পিশাচ “বেহেরিট” মিনা’কে টোপ হিসেবে ব্যবহার করে। তাকে স্কলোম্যান্সে অবস্থিত “অগ্নিহ্রদে”র উপর ঝুলিয়ে ধরে এবং “নরকের দরজা” খুলে দেয়। সে হুমকি দেয়– ড্রাকুলা যদি সেই অগ্নিগর্ভে ঝাঁপ না দিয়ে এক পা-ও এগিয়ে যায়, তাহলে সে ঝুলন্ত মিনাকে আগুনে ছেড়ে দিবে।

ড্রাকুলাও তাই মেনে নিয়ে সেই “অগ্নিপথে” ঝাঁপ দিতে গেল। কিন্তু ঘটনার এই পর্যায়ে এসে ‘মিনা হারকার’ হত-বিহবল হয়ে পড়ল। ড্রাকুলার মত রক্ত পিশাচও যে প্রিয়তমের মুক্তির জন্য জীবন ত্যাগের ন্যয় অনন্য মহিমা দেখাতে পারে, তা কে জানত!!! নিজের কাছেই শূন্য মনে হলো তার ভেতরটা। এতদিনের ঘৃণা... এতদিনের বিদ্বষ... সবই যেন আবরণ ছিল। সে বুঝতে পারল, ড্রাকুলা আসলে তার আত্মারই একটা অংশ।

ওকে ছাড়া মিনার জীবন যেন অপূর্ণই রয়ে যাবে। মানুষ তাকে যতই খারাপ ভাবুক– কিন্তু হৃদয় কি কারো কথা শুনেছে কোনও কালে? মিনা সভয়ে মাথা নেড়ে বলল– না, ড্রাকুলা, না! আমার জন্য তুমি এমন কাজ করতে যেয়ো না! কিন্তু দু’জনের একজনকে তো জীবন দিতেই হবে। তাই পিশাচ ড্রাকুলা এক দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলল। আর্দ্র চোখে মিনা’র দিকে তাকিয়ে বলল– মিনা, সত্যিকার অর্থেই আমি তোমাকে ভালোবেসেছিলাম– “আমার সমস্ত মন-প্রাণ দিয়ে। সেই তুমিই আমাকে প্রত্যাখ্যান করেছিলে।

ভালোবাসার মূল্য দাওনি। আজ আমি প্রমাণ করে দেব, কতখানি নিগাদ ছিল আমার প্রেম, আমার আবেগ। ভালো থেকো, মিনা। সুখে থেকো। বিদায়।

” এবং এই কথাগুলো বলে সে লেলিহান অগ্নিশিখার মাঝে হারিয়ে গেল। আর মিনা চিৎকার করে উঠলেন– না–আ! বেহেরিট ‘মিসেস হারকার’ (মিনা হারকার) কে চাতালের উপরে ছুঁড়ে ফেলে উম্মাদের মত অট্টহাসিতে ফেটে পড়ল। কিন্তু সীমাহীন ক্রোধে মিসেস হারকারের চেহারা বিকৃত হয়ে গেল। ড্রাকুলাকে হারিয়ে যেন পাগল হয়ে গেছেন। আচমকা উঠে দাঁড়িয়ে তিনি ছুটে গেলেন বেহেরিটের দিকে।

শরীরের সর্বশক্তিতে ধাক্কা দিলেন পিশাচটার পিঠে। কিন্তু হতভাগা বেহেরিট নিজের বিপদটা টের পাবার আগেই টালমাটাল হয়ে হুড়মুড় করে আগুনের খাদে পড়ে গেল। তার বুক চিরে বেরিয়ে এল এক ভয়ানক আর্ত চিৎকার। অগ্নিহ্রদের আগুন পরম তৃপ্তিতে লক্ লক্ করে ছুটল আকাশের দিকে। উধাও হয়ে যাওয়া প্রফেসর ‘কোভাক্সের’ পিশাচ আত্মা হঠাৎ শ্বদন্ত বের করে তেড়ে আসতে লাগল ‘মিনা’র দিকে।

ভ্যান হেলসিং ঝাঁপিয়ে পড়লেন ‘কোভাক্সে’র উপর। কিন্তু ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে তিনি ক্ষত-বিক্ষত হয়ে ঢলে পড়লেন মৃত্যুর কোলে। দেরিতে হলেও, ‘ডাঃ সেওয়ার্ড’ একটি ক্রুশ কোভাক্সের মুখে পুরে দিলেন। কিন্তু পবিত্র ক্রুশের জ্বালা-যন্ত্রণায় অস্থির হয়ে কোভাক্স আগুনের খাদে ঝাঁপিয়ে পড়ল। এই যুদ্ধে ডাঃ জন সেওয়ার্ড ও মিসেস হারকার ছাড়া আর কেউ বাঁচতে পারেনি।

একটু পরই স্কলোম্যান্সে’র পাথুরে পাহাড়ে ফাটল ধরল। তারা সেখান থেকে বেরিয়ে আসেন। বহুদূর আসার পর সেই পাহাড় পুড়ে ভষ্ম হয়ে নিমিশেই নিশ্চি˝ হয়ে যায়। অবসান ঘটল জোনাথন হারকার ও মিনা হারকারের দুঃস্বপ্নময় অশুভ ও ভয়ংকর দুঃখের জীবনের। তাদের ছেলে কুইন্সিও চির সুস্থ হয়ে যায় (মিনাকে ভালোবেসে তার রুগ্ন ছেলে কুইন্সি’কে ড্রাকুলা “ধম্বন্তরী” নামক একটা ঔষধ খাইয়েছিল, আর এই কারণেই কুইন্সি আজীবনের জন্য সুস্থ হয়ে গিয়েছিল)।

ছেলের মুখের দিকে তাকিয়ে পরস্পরকে ক্ষমা করে দিয়েছেন হারকার দম্পতি। কাহিনীর সমাপ্তি এখানেই (যদিও একটু বিস্তারিত করে ফেলেছি, একটু মজার জন্য)। আমার কথাঃ আলোচনার সুবিধার্থে আমি ফ্রেডা ওয়ারিংটনে’র “Dracula The Undead” কে এর অনুবাদ শিরোনাম “রিটার্ন অভ ড্রাকুলা” নামেই উল্লেখ করেছি। তাঁর “রিটার্ন অভ ড্রাকুলা” বইটি সাহিত্য জগতে একটি অসাধারণ উপন্যাস গ্রন্থ, এটা কোনও ভাবেই অস্বীকার করা যাবে না। একই সাথে এতে রচিত হয়েছে ভয়, রোমাঞ্চকর অনুভূতি, আদর-স্নেহ, প্রেম-ভালোবাসা, বিরহ-বঞ্চণা, মানবিক তাড়নার অনন্য উদাহরণ এবং অপরদিকে পদে পদে বিশ্বাসঘাতকতার জলন্ত দৃষ্টান্ত।

তবে এই বইটি যেহেতু ব্রাম স্টোকারের “ড্রাকুলা”–র ধারাবাহিকতায় রচিত, তাই দু’চারটে কথা না বললেই নয়। “রিটার্ন অভ ড্রাকুলা”–র মাঝে কয়েকটি অসঙ্গতি রয়েছে। অসঙ্গতির কথাটা না হয় একটু পরেই বলি। তার আগে বলে নেয়া ভাল– এই বইটিতে কিছু কিছু স্থানে তোতলানো শব্দের ব্যবহার লক্ষ্য করেছি। যা উপন্যাসের গতিতে ভিন্ন মাত্রা যোগ করেছে।

আরও একটি নতুন ধারা সংযোজন করা হয়েছে, যা পূর্বের বইতে ছিলনা। সেটা হল– প্রফেসর আন্দ্রে কোভাক্সের ডায়েরীতে একই কথার পূণরাবৃত্তির মুদ্রাদোষ। এবং এই স্বকীয়তার মাধ্যমে তার ডায়েরীগুলোকে অন্যদের ডায়েরী থেকে পৃথক করা হয়েছে। মূলতঃ উপরের ভিন্ন দু’টি ধারা–ই অলংকার শাস্ত্রের অন্যতম অংশগুলোর মাঝে বিদ্যমান। সুতরাং ধারাবিবরণীতে ভিন্নতা সৃষ্টি হলেও এই ভিন্নতা–ই উপন্যাসকে করেছে আরও সৌন্দর্যমন্ডিত।

“রিটার্ন অভ ড্রাকুলা”–র অসঙ্গতিগুলোঃ বইটির (বাংলা রূপান্তরে) ১০৪ ও ১০৫ নং পৃষ্ঠায় রয়েছেঃ [ইলেনা কোভাক্সের ডায়েরী থেকে] (ড্রাকুলা) একটা দৃশ্য দেখাল আমাকে (সম্মোহনের মাধ্যমে)। “জোনাথন হারকার ঘুমাচ্ছেন সেই বিছানায়, আর মাদাম (মিসেস) হারকার... বসে আছেন হাঁটু গেড়ে, জড়িয়ে ধরে আছেন বিছানার পাশে দাঁড়ানো একটা দীর্ঘদেহী মূর্তিকে। (সেই মূর্তিটা) আমার গোপন সঙ্গী। ... বেশ অনেকটা সময় মাদাম হারকারের উপর ঝুঁকে থাকল আমার সঙ্গী। যখন সোজা হলো, লক্ষ্য করলাম তার মুখ রক্তে রঞ্জিত; মাদাম হারকারের সাদা পোশাকও লাল হয়ে গেছে ঘাড় বেয়ে নেমে আসা রক্তের ধারায়।

মুখ খুলল আমার সঙ্গী। ... ... সাময়িক জয় পেয়েছিলে তোমরা (সাত বছর পূর্বে, কারণ সেই লড়াইয়ের পর থেকে আজ পর্যন্ত আর কোনও লড়াই সংঘটিত হয়নি), কিন্তু এবার তার মূল্য শোধ করতে হবে কড়ায়-গন্ডায়। শুরুটা তোমাকে দিয়ে হচ্ছে– তোমাকে আমার দাসী বানাবার মাঝ দিয়ে। ... কথা শেষ করেই শার্টের বোতাম খুলল আমার সঙ্গী। লম্বা নখে বুক চিরে একটা শিরা ছিঁড়ে ফেলল।

গলগল করে বেরুল তাজা রক্ত। ‘মাদাম হারকারে’র মাথা এগিয়ে নিয়ে গেল ওদিকে। বাধ্য করল সেই রক্ত খেতে। বাধা দেবার চেষ্টা করলেন মাদাম হারকার, কিন্তু পারলেন না। রক্তের ধারা ঢুকতে থাকল তাঁর মুখে... গলায়।

হঠাৎ ধড়াম করে খুলে গেল দরজা। দু’জন পুরুষ ঢুকল সেখান দিয়ে। তাদের হাতে ক্রুশ। মাদাম হারকারকে ছেড়ে দিয়ে পিছিয়ে গেল আমার সঙ্গী। অস্ফুট আর্তনাদ করে লাটিমের মত ঘুরল, পরক্ষণে কুয়াশায় পরিণত হলো তার দেহ।

মিলিয়ে গেল বাতাসে। উপরের দৃশ্যপটকে সাধারণ একটা সম্মোহনী স্বপ্ন বা কোনও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার নিরূপণ হিসেবে ধরে নিলে কোনও প্রশ্ন উত্থাপিত হবার অবকাশ নেই। কিন্তু যদি এটাকে “ড্রাকুলা” গ্রন্থে বর্ণিত সাত বছর পূর্বে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলোর একটা অংশ ধরে নেওয়া হয় তাহলে উক্ত বর্ণনাটি অবশ্যই প্রশ্নবিদ্ধ হতে বাধ্য। আর এখানে শেষেরটাই উদ্দেশ্য, যা আমরা উক্ত বইয়ের (বাংলা অনুবাদে) ১৮৩ নং পৃষ্ঠায় স্বয়ং ‘মিনা হারকারে’র ডায়েরীতে দেখতে পাই– “আমি নিষ্পাপ নই। যে–রাতে আমার রক্ত খেয়েছ তুমি... নিজেরটাও খাইয়েছ আমাকে... সে–রাত থেকেই আমি কলঙ্কিনী।

এই কলঙ্ক মুছবার নয়!” এখানে ‘যে–রাত’ ও ‘সে–রাত’ দ্বারা ১০৪ ও ১০৫ নং পৃষ্ঠায় বর্ণিত ঘটনার প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে। কারণ, পরস্পরকে রক্তপান করানোর ঘটনা ইতোপূর্বে শুধু ওই দুই পৃষ্ঠাতেই উল্লেখ করা হয়েছে এবং তা ছিল সাত বছর পূর্বের কোনও এক রাতের ঘটনা। এখন কথা হলো– ১০৪ ও ১০৫ নং পৃষ্ঠায় যে বলা হয়েছে– “সাময়িক জয় পেয়েছিলে তোমরা”, এই কথার দ্বারাও সাত বছর পূর্বের লড়াইয়ের প্রতিই ইঙ্গিত করা হয়েছে। আর একই বর্ণনায় পরস্পরকে স্বেচ্ছায় রক্তপান করানোর ঘটনার উল্লেখ দেখেছি আমরা (যা ঘটেছে বর্তমান সময়ে)। এবং উক্ত বর্ণনায় এটাও উল্লেখ করা হয়েছে যে, ‘মিনা’কে ড্রাকুলা তার রক্ত পান করেছিল সাত বছর পূর্বের লড়াইয়ের প্রতিশোধের সূচনা হিসেবে।

অর্থাৎ আমরা ভালোভাবেই বুঝতে পারছি যে, রক্তপান করানোর ঘটনা ঘটেছে ড্রাকুলার বিরুদ্ধে ভ্যান হেলসিং ও তার সাথীদের লড়াইয়ের সাত বছর। অথচ আমরা ১৮৩ নং পৃষ্ঠায় দেখতে পাই ‘মিনা হারকার’ তার ব্যক্তিগত ডায়েরীতে লিখেছেন: অতীত কালে (সাত বছর পূর্বে) কোনও এক রাতে তিনি এবং ড্রাকুলা প্রত্যেকেই একে ওপরকে রক্ত পান করিয়েছিলেন এবং এর জন্য তিনি নিজেকে পাপী ও কলঙ্কিনী ভাবছেন। সুতরাং বইটির দু’টি বর্ণনা–ই পরস্পর বিরোধী। একটা বইয়ের সাহিত্য মানকে অনেক নিচে নামিয়ে দিতে এটুকুই যথেষ্ট। -উপরোক্ত বর্ণনার ২য় অসঙ্গতিঃ উক্ত বইয়ের ১০৪ নং পৃষ্ঠায় রয়েছে: “জোনাথন হারকার ঘুমাচ্ছেন সেই বিছানায়, আর মাদাম (মিসেস) হারকার... বসে আছেন হাঁটু গেড়ে, জড়িয়ে ধরে আছেন বিছানার পাশে দাঁড়ানো একটা দীর্ঘদেহী মূর্তিকে” এটি সাত বছর পূর্বের কোনও এক রাতের বর্ণনা।

এখানে মিসেস হারকারের বিছানার পাশের দীর্ঘদেহী মূর্তি বলতে ড্রাকুলা'কে বোঝানো হয়েছে। কিন্তু উক্ত বইটি যদি "ড্রাকুলা" গ্রন্থের ধারাবাহিকতায় রচিত হয়ে থাকে, তাহলে এই বর্ণনাটাও ভুল। কারণ, সাত বছর পূর্বে মিসেস হারকারের বেডরুমে ড্রাকুলা কেবল মাত্র তিন রাত্রিতে প্রবেশ করতে পেরেছিল। প্রথম বার কোনও এক রাতে জোনাথন হারকার যখন ড্রাকুলা'র সমাধীর খোঁজে বাইরে ছিলেন। তখন জোনাথন হারকার মিসেস হারকারের পাশে ঘুমানো তো দূরের কথা রুমেই ছিলেন না।

দ্বিতীয় রাতে তিনি সে মূহুর্তে ডাঃ জন সেওয়ার্ডের হসপিটালে গিয়েছিলেন। এই রাতেও তিনি মিসেস হারকারের পাশে অনুপস্থিত ছিলেন। তৃতীয় রাতে মিসেস হারকারের পাশেই শুয়ে ছিলেন জোনাথন। কিন্তু সে রাতে মিসেস হারকারের ধারে কাছেও পৌঁছুতে পারেনি ড্রাকুলা। কারণ, সে রাতে মিসেস হারকারের বালিশের নীচে ভ্যান হেলসিং এর দেয়া মন্ত্রযুক্ত পবিত্র ধূনো'র গুড়ো আর রসুনের কোয়া রাখা ছিল।

তার মানে উপরের ১০৪ নং পৃষ্ঠায় উল্লেখিত ঘটনার রাতে সেই মূহুর্তে মিসেস হারকারের পাশে ছিলেন না জোনাথন। অথবা তিনি যেই রাতগুলোতে মিসেস হারকারের পাশে ছিলেন সেইসব রাতে এই ঘটনাটা ঘটেনি। অথচ উক্ত বর্ণনায় বলা হয়েছে– জোনাথন হারকার মিসেস হারকারের পাশেই শায়িত ছিলেন। উপরোক্ত বর্ণনার আরও একটি অসঙ্গতিঃ “রিটার্ন অভ ড্রাকুলা”–র ১০৫ নং পৃষ্ঠায় বলা হয়েছেঃ “হঠাৎ ধড়াম করে খুলে গেল দরজা। দু'জন পুরুষ ঢুকল সেখান দিয়ে।

তাদের হাতে ক্রুশ। মাদাম (মিসেস) হারকারকে ছেড়ে দিয়ে পিছিয়ে গেল আমার সঙ্গী। অস্ফুট আর্তনাদ করে লাটিমের মত ঘুরল, পরক্ষণে কুয়াশায় পরিণত হলো তার দেহ। মিলিয়ে গেল বাতাসে। ” উক্ত বর্ণনায় বলা হয়েছে মিসেস হারকারের বেডরুমে দু'জন পুরুষ ঢুকল।

অথচ "ড্রাকুলা" গ্রন্থের বর্ণনানুযায়ী এই রকম দৃশ্য না থাকলেও এর কাছাকাছি একটা দৃশ্যে দেখা যায়, মিসেস হারকারের বেডরুমে কাউন্ট ড্রাকুলা'র আগমনের তৃতীয় রাতের ঘটনায় তার বেডরুমে জোনাথন হারকার ও ভ্যান হেলসিং সহ মোট ৫ জন পুরুষ প্রবেশ করেছিল। সুতরাং বর্ণনার ধারায় এখানেও ভুল করেছেন 'ফ্রেডা ওয়ারিংটন'। “রিটার্ন অভ ড্রাকুলা” বইয়ের আরেকটি ভুলঃ সাত বছর পূর্বে চিরতরে নিশ্চিহ্ন হওয়া ‘ড্রাকুলা’ পূণরায় ফিরে এসেছে এবং ‘ভ্যান হেলসিং’ ও তার সঙ্গীদের উপহাস করে বলেছে– তারা তাদের নিজেদের নিয়ম ভেঙ্গেছিল। যার কারণে ‘ড্রাকুলা’ পুরোপুরি মরেনি। তখন ভ্যান হেলসিং বললেন– (২২৪ নং পৃষ্ঠায় বর্ণিত)– “ছুরিটা মন্ত্রপূত ছিলনা।

মরিস ওর ব্যক্তিগত ছুরি ব্যবহার করেছিল ‘কাউন্টে’র (ড্রাকুলা) মাথা কাটার জন্য। মন্ত্র পড়ে ওটায় ফুঁ দিইনি আমি...” উক্ত বর্ণনাটিও ভুল। কারণ মরিস ড্রাকুলা’র মাথা কাটেনি। বরং মাথা কেটেছিলেন ‘মিনা হারকারে’র স্বামী ‘জোনাথন হারকার’। যাকগে, অনেক বকবক করলাম।

আর ভাল্লাগেনা। তবে আপনি যদি বইটা পড়েন, তাহলে আগের বইটা পড়া থাকলে সেটার কথা মাথা থেকে বাদ দিবেন, তখন আর কোনও সমস্যা-ই থাকবে না।     ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.