আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নিজের কাজটা ঠিকমতো করতে পারলে দেশের উন্নতির জন্যে ভেবে রাতের ঘুম নষ্ট করার দরকার হবে না

যুদ্ধাপরাধীর বিচার ও জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবী করছি দেশে থাকার সময় কিছু দৃশ্য দেখে বিরক্ত হতাম। সরকারী দফতরগুলো দেখে মনে হতো চায়ের দোকান। প্রতিটি বসের রুমে বসতো চায়ের আসর - আর সরকারী অর্থ কেনা হতো পত্রিকা। সেগুলো পড়ে চা আর সিগারেট টেনে চলতো দেশ উদ্ধারের বত্তৃতা আর রাজনৈতিক বিতর্ক। সবাই এক একজন বিশেষজ্ঞ যেন - এদিকে টেবিলে ফাইলের স্তুপ হয়ে একটা ছোট খাটো পাহাড়ে পরিনত হচ্ছে তা নিয়ে ভাবনার সময় নাই।

মনে হয় এখনও অবস্থা আরো খারাপ হয়েছে - তাইতো দেখি বার্ষিক উন্নয়ন বাজেটের একটা বড় অংশ অব্যয়িত থাকে। দিনের পর দিন রাস্তাগুলো সংস্কারের অভাবে মংগলগ্রহের ছবির মতো মনে হয়। ডাক্তারগন সরকারী চাকুরী রেখে ক্লিনিকে কাজে বেশী মনযোগী, শিক্ষকগন ক্লাশরুমকে ব্যবহার করে ছাত্র ধরার ফাঁদ হিসাবে - টার্গেট আসলে কোটিং আর প্রাইভেট পড়ানো। সবার একই কথা সরকার কিছু্ করছে না - তাই দেশের অবস্থা খারাপ হচ্ছে। সরকার যে সবাই মিলেই তৈরী হয় - দেশের পিয়ন থেকে প্রধানমন্ত্রী আর মিউনিসিপ‌্যালিটির ঝাড়ুদেওয়া কর্মী থেকে মেয়র মিলেই একটা সংগঠন - এদের একজরও যদি কাজ না করে তার প্রতিক্রিয়া দেখা যাবে সার্বিক ফলাফলে।

যাই হোক - সবাইকে সমালোচনা করা কাজে কথা না। নিশ্চয়ই এর মধ্যে অনেকেই তাদের কাজটা ঠিকমতো করেন - তাইতো বাংলাদেশে একটা মধ্যআয়ের দেশ হিসাবে অচিরেই আত্নপ্রকাশ করবে। কিন্তু একটা প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে - এই আর্থিক উন্নতির সাথে সাথে মানবসম্পদ আর জীবনযাত্রার মানের কতটুকু উন্নয়ন হচ্ছে। জীবনযাত্রার মানের উন্নয়ন শুধুমাত্র চকচকে স্থাপনা তৈরী করেই বাড়ানো যায় না - তার জন্যে দরকার সেই দেশের নাগরিকদের সার্বিক বোধের উন্নয়ন - যা মুল ভিত্তি হলো শিক্ষা। আমি শিক্ষা বলতে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাকে তেমন গুরুত্পূর্ন মনে করি না।

প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ছাড়াও অনেক মানুষ সুনাগরিক এবং দায়িত্বশীল নাগরিক হিসাবে নৈতিক বোধগুলো অর্জন করতে পারে। সেই দায়িত্বশীল নাগরিকদের মাঝে সবচেয়ে বড় যে গুনটা লক্ষ্য করা যাবে - তা হলো তারা নিজের কাজটাকে সঠিক ভাবে করার জন্যে আন্তরিক এবং যত্নবান হয়। এই জন্যে তাদের প্রয়োজনীয় শিক্ষা তারা অত্যান্ত যত্নসহকারে গ্রহন করে - অন্যের কাজের সমালোচনা করে দায়িত্ব এড়িয়ে সময় নষ্ট না করে - নিজের সামর্থ্যকে সর্বোচ্চ ব্যবহার করে নিজেকে একজন পরিপূর্ন মানুষ হিসাবে প্রতিষ্ঠা করে। উদাহরন হিসাবে বাংলাদেশের কৃষকদের দিকে তাকালেই তার একটা সুস্পষ্ট উদাহরন পাওয়া যাবে - এরা নিজেরাই শিখে নেয় তাদের কাজগুলো - অত্যান্ত যত্ন সহকারে কাজগুলো করে সঠিক সময়ে বাজারে খাদ্য সরবরাহ করে - মধ্যসত্ত্বভোগী আর শহুরে ব্যবসায়ীদের কাছে লাভের বড় অংশ হারিয়েও এরা খুব একটা অভিযোগ করে না - পুনরায় শুরু করে চাষাবাদ। যাদের কোন সংগঠন নেই - দাবী দাওয়া নিয়ে হরতাল মিছিল মিটিং করে অন্যের জীবনকে অতিষ্ঠ করে না - বাস জ্বালিয়ে বা চাপাতি দিয়ে কোপিয়ে মানুষকে ভয়ার্ত করে না।

শুধু নিজের কাজগুলো করে - সবচেয়ে মজার বিষয় হলো এরা অধিকাংশ ক্ষেত্রে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় শিক্ষিত না হয়েও - দ্রুত নতুন প্রযুক্তিকে আয়ত্ব করে তা প্রয়োগ করে বলেই বাংলাদেশ আজ খাদ্য স্বয়ং সম্পূর্ন হয়ে উঠছে। এরা আস্তিকতা নাস্তিকতা নিয়ে কথার মারপ‌্যাচ করে নিজেদের কাজের কম্পিউটরকে ব্লগ আর ফেইসবুকে ব্যস্ত রেখে ধানাইপানাই ধরনের রিপোর্ট তৈরী করে মানুষকে বিভ্রান্ত করে না - সময় নষ্ট করে নিজেদের কাজের গুনগত মানকে নীচু করে না। আসলে এতো কথা কেন বললাম - তার কারন বাংলাদেশের পত্রিকাগুলো নিয়মিত পড়ার চেষ্টা করি আর তা পড়তে গিয়ে সাংবাদিকদের জন্যে মায়া হয় - এরা জানে না এমন বিষয় নেই। সারাদিন সরকার কি করলো না করলো তার বিরাট ফিরিস্তি। তা যদি পরিসংখ্যান ভিত্তিক হতো - যা পরিমাপ করা যায় - তাতেও বুঝা যেতো উনারা সামান্য সময় ব্যয় করে লেখাগুলো তৈরী করেন -অথবা জানা যেতো উনারা পরিসংখ্যান বলে যে একটা বিষয় আছে সেই বিষয়ে সামান্য জ্ঞান রাখেন।

টিভির খবরগুলো শুধুমাত্র কে কি বললো তার ক্লিপ আর খবরের কাগজগুলো সরকার আর বিরোধী দলের কোন্দল আর কোন্দলের উস্কানী ছাড়া তেমন কিছু দেখি না। সাম্প্রতিক বাংলাদেশের পুলিশ গোলমরিচের স্প্রে ব্যবহার শুরু করার পর সাংবাদিকদের সংবাদ প্রচারের জ্ঞানের বহর দেখে সত্যই লজ্জিত হতে হচ্ছে - কারন শুরুতেই "Pepper" কে লিখছেন "পিপার"। হাতের কাছে একটা অভিধান কিভাবে দেখতে হয় বা ইন্টারনেটে ডিকশেনারী সাইটগুলোতে এখন উচ্চারন সহ শব্দ বলে দেওয়ার যে ব্যবস্থা আছে তাও বোধহয় এরা জানে না। শব্দটা হবে "পেপর" মানে গোল মরিচ। ইন্টারনেটে এই পিপর স্প্রে নিয়ে বিস্তারিত পাওয়া যায় - যা কোন দেশেই নিষিদ্ধ নয় - বিশেষ করে সমাবেশ ভেংগে দেওয়ার জন্যে বিশ্বের অনেক উন্নত দেশেও এই পেপর স্প্রে ব্যবহূত হয়ে।

কিন্তু যেভাবে আলু পোকা মারার মতো করে পুলিশ শিক্ষকদের উপর স্প্রে করছিলো - তাতে মনে হয়নি যে পুলিশও এই জিনিসটা সম্পর্কে ভাল ভাবে জানেন। যে কোন জিনিস অতি ব্যবহার আর যত্রতত্র ব্যবহার করার যে কুফল তা শিক্ষকরা আর কয়েকদিন আগে সরকারের কাছে জামাই আদর পেয়ে সফল হরতাল করে আহ্লাদিত হয়ে আরেকটা হরতাল ডেকে ভালভাবেই পেপর এর ঝাঁজটা উপভোগ করেছে। একটা দেশ - যার শিক্ষিত শ্রেনীটা উৎপাদন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে শুধু শর্টকাটে - কথামালায় নিজেকে পন্ডিত প্রমান করা চেষ্টা রত - তাদের নজর ইউরোপ - আমেরিকার দিকে। এই শ্রেনীকে পশ্চিমা শিক্ষা দিয়ে বরঞ্চ উৎপাদন বিচ্ছিন্ন একটা পরজীবি শ্রেনীতে রূপান্তর করা হচ্ছে - যাদের হাতে দেশের ভবিষ্যত খুবই সংকটে পড়বে। দ্রুতই দেশের যুবসমাজকে উৎপাদন এবং কর্মমূখী করার জন্যে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অবশ্যই কর্মমূখী কার্যক্রম/পাঠক্রম চালু করা জরুরী।

বিশেষ করে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে - যারা রাষ্ট্রের অর্থে পড়াশুনা করে - শিক্ষার কার্যক্রম হিসাবে কমপক্ষে একটা ফসলের মৌসুম এদের গ্রামে থেকে কৃষককের সাথে কাজ করে আসা বাধ্যতামুলক করা জরুরী। বিশ্বের অনেক দেশে যুবকদের সামরিক বাহিনীতে একটা নির্দিষ্ঠ সময় কাজ করার বিষয়টি বাধ্যতামুলক করা আছে - বাংলাদেশে সামরিক বাহিনীতে পর্যাপ্ত লোকবল থাকায় সেখানে না পাঠিয়ে মুল উৎপাদনকেন্দ্র হিসাবে কৃষকদের কাছে পাঠানো দরকার। এতে যুবসমাজ প্রকৃতপক্ষে তাদের শিকড় চিনতে পারবে। ফেইসবুক আর ব্লগে বসে - পত্রিকার পাতায় ছাপা জ্ঞান নিয়ে ঢাকার আড্ডায় তর্ক করে সময়গুলো নষ্ট না করে প্রকৃত শিক্ষক হিসাবে কৃষকদের কাছে মৌলিক জীবন সম্পর্কে জ্ঞান আহরন করে নিজের কাজে মনোযোগী হলেই দেশের জন্যে চিন্তা করে সিগারেট ফুঁকে - চা খেয়ে হীনস্বাস্থ্য হয়ে দেশের বোঝা হয়ে উঠবে না। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.