আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আসুন বাবুদের জন্য হাত বাড়াই

www.runews.weebly.com

মাত্র 30 টাকার জন্য প্রতিদিন 30 কিলোমিটার পথচলে বাবু আত্রাই থেকে পার্বতীপুর। দুরত্ব খুব বেশি হলে 30 কিলোমিটার। এই অঞ্চলের বেশিরভাগ লোকই চলাচলের জন্য নির্ভর করে ট্রেনের ওপর। আন্তঃনগর এঙ্প্রেস কিংবা লোকাল, যে ট্রেনই হোক না কেন ভেতরে উঠলেই দেখবেন ছেলে-বুড়ো-দোকানদার-ভদ্রলোক থেকে শুরু করে বর-বধুও শ্বসুর বাড়ি চলেছে বোচকাবুচকি নিয়ে। একটু খেয়াল করলে নজরে পড়বে আসা যাওয়ার পথে দেখা হওয়া, পরিচিত বন্ধু বান্ধবের গল্প।

এই ট্রেনই যেন সব মানুষকে এক সুত্রে গেঁথেছে। তবে বরেন্দ্র এঙ্প্রেসে উঠলে দেখা মিলবে একজনের। মায়া ভরা চোখ। মুখে কথার খই ফুটছে। একটু আগে আপনার কাছে একটাকা চাইলো তো একটু পরেই বেশ হাত পা নেড়ে গল্প জমিয়েছে যাত্রীদের সাথে।

বয়স বড়জোর 8-9 বছর। নাম নূর মোহাম্মদ বাবু। ওর ভাষায় , 'আমার বয়স 10 বছর। ' চলার পথেই বাবুর সাথে পরিচয়। নামের কথা জিজ্ঞাসা করতেই মুখ ফিরিয়ে নিল।

তবে দশ টাকার একটা নোট হাতে দিতেই বিষ্ময়ে ভরে উঠলো বাবুর নিষ্পাপ চোখ। এবার আর সমস্যায় হলো না ভাব জমাতে। জানালো, মা জবা খাতুন আর ছোট ভাই রুবেলকে নিয়ে বাবুর সংসার। থাকে আত্রাই রেল স্টেশনের পাশের বস্তিতে। মা কাজ করে অন্যের বাড়ীতে।

আর বিকেল হলেই বাবু উঠে পড়ে ট্রেনে। আত্রাই থেকে পার্বতীপুর এটুকুই আসা যাওয়ার পথ। তারপর ফিরতি ট্রেনে বাড়ি ফেরা। প্রতিদিন কত টাকা হয়? বাবু বললো, আমি 30 টাকার বেশি আয় করি না। তারপর বেশ রাশভারি চালে হাত নাড়িয়ে বলতে লাগলো, আমি,আমার মা আর রুবেল- রাতে খাইতে লাগে, আঙ্গুলের গিটে কয়েক দফা গোনাগুনি করে বলল, '30 টাকা লাগে।

তাই 30 টাকা পাইয়া গেলেই আপনাদের মত লোকের সাথে গল্প করতে করতে বাড়ি ফিরি। ' জানালো, তাতেও তিন জনের চলতে কষ্ট হয়। তাই প্রতিদিন ট্রেনে ভিা করি। ' বাবার কথা জানতে চাইলে বাবু জানায়, "মইরা গেছে। মা আরেকখানে বিয়া করছেলো হেও পলাইছে।

আমি তার আশা করি না। " কথায় কথায় জানা গেল, বাবুদের বাড়ী ছিলো গাইবান্ধার চর কালা সোনাচাঁদে। তখনও জন্ম হয় নি ছোট ভায়ের। বাবা আফসার উদ্দিন ছিলো কৃষক। আয় যা হতো তা দিয়ে তিনজনের পেট ভরতো কোন মতে।

বাবু তখন প্রথম শ্রেণেিত। তারপর একদিন জায়গা জমি চলে গেল নদীর বুকে। আফসার উদ্দীন পরিবার নিয়ে চলে আসলেই আত্রাইয়ে। শেষ পর্যন্ত আশ্রয় মিলল রেলস্টেশনের ঝুপড়িতে। 2001 সালে আফসার উদ্দীনের মৃতু্যর পর জবা খাতুন কাজ নেয় অন্যের বাড়ীতে।

কিন্তু অন্তঃসত্তা মায়ের খাটুনি দেখে সহ্য হয়নি বাবুর। তাই আর লেখাপড়া না করে 30 টাকার জন্য প্রতিদিন উঠে পড়ে ট্রেনের বগিতে। বাবু বলল,' আমি প্রথম শ্রেণী পর্যন্ত পড়ছি। তয় এখনো পড়তে ইচ্ছা করে। যদি পড়ার সুযোগ পাই তবে আমি পাইলট হব।

' তারপর আকাশের দিকে হাত উঠয়ে বলল, আমি পেলেনে চড়মু, আর আমার ছোটভাই রুবেলকে ডাক্তার বানামু। ওক কমু ফিরি চিকিৎসা করতি। ' চলাফেরা করতে করতে ট্রেনের স্টাফদের সাথেও বেশ খাতির বাবুর। নাটোর রেল পুুলিশের এ. এস. আই. আনিসুর রহমান বললেন, ওর প্রচন্ড স্মরণ শক্তি। একবার আপনার সাথে পরিচয় হলে যতদিন পরেই দেখা হোক ঠিকই চিনে নেবে।

' তার কাছেই অভিযোগ দিল বাবু, "জানেন বরেন্দো এঙ্পেসে এক আইসক্রিমআলা আমার নয় টাকা চুরি করেছে। " আত্রাই স্টেশনে ট্রেন থামতেই বাবু বলল,'চলেন আমাদের বাড়ি যাই। এক শুহুর্ত অপোর পর সাড়া না পেয়ে আনিসুর রহমানের দিকে তাকিয়ে বেশ কেতাদুরস্ত ভঙ্গিতে স্যালুট দিয়ে বলল,' স্যার গেলাম। ' তারপর নেমে গেল অন্ধকার আত্রাই স্টেশনে। যাত্রীদের কাছে টাকা চেয়ে খেতে ভালো লাগেনা বাবুর।

তাই ও স্বপ্ন দেখে স্বনির্ভর হবার। বাবু পাইলট হয়ে আকাশে উড়তে চায়। দারিদ্রতাকে জয় করে ছোটভাইকে ডাক্তার বানাবার স্বপন দেখে বাবু। বাবুর এ স্বপ্ন কি স্বপ্নই থেকে যাবে?#

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.