আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মেটামরফোসিস: 5

যারা উত্তম কে উচ্চকন্ঠে উত্তম বলতে পারে না তারা প্রয়োজনীয় মুহূর্তে শুকরকেও শুকর বলতে পারে না। এবং প্রায়শই আর একটি শুকরে রুপান্তরিত হয়।

পূর্বানুমান: যার অনেক আগেই আসার কথা সে মহানগরে এসেছে সপ্তাহ পেরিয়ে গেল, আমার মত বাস্তুহীন সে কোন কালেই নয়। নিজ পরিবার পরিজন লতাপাতা আবেগআদর প্রেমকাম খালাতফুফাতমামাত ঘনিষ্টতাকে যতটা জড়িয়ে রাখা শোভন, তার চেয়েও বেশি সম্পৃক্ত। ভালো হতে হতে বর্তমান সংজ্ঞায় নির্বোধের কাছাকাছি।

খুবই সামপ্রতিকতাগ্রস্থ এবং সামপ্রতিক থেকে অনেক পেছানো। সামপ্রতিক হয়ে উঠতে হলে যতটা বন্য হয়ে উঠতে হয়; শৈশব থেকেই তার মধ্যে সেটির বড় অভাব, এতটা উচ্চাভীলাস ধারণ করার মত কলিজা এবং অন্ধত্ব তার কোনকালেই নেই। সপ্তাহ পর: সপ্তাহ পর দেখা হল। ছোটখাট দিনাজপুর হয়ে ওঠা মোহাম্মদপুরে মাথা গোঁজার ঠাঁই ঠিকই জোগাড় করে ফেলেছে এবং স্বাবলম্বী হতে শুরু করেছে, পয়সা বাঁচানোর জন্য নিজে রান্না করছে। গৃহে বলে এসেছে সফল না হলে ফিরবে না, অন্তত অর্থকরী না হয়ে তো নয়ই।

আমি প্রশ্ন করি, এটা কি সামপ্রতিক প্রেম-বিচু্যতির বহি:প্রকাশ কিনা (যদিও এতটা সবল বহি:প্রকাশ সম্ভব হবেনা বলেই আমার ধারণা ছিল), উত্তরে বুঝতে পারি প্রেম নয় পরিবার আর ততটা প্রেমপরিবারও নয় তারচেয়েও বেশি নিজস্বতা। এরও ব্যাখ্যা আছে বহুবিধ, তবুও কান্ত লাগল তাই সরে গেলাম। প্রথম তিরিশ মিনিটের পর: মিষ্টি খেতে চাইল। ফ্রিজ ফাঁকা তবে পকেট ততটা নয়, হোটেলে বসে মিষ্টি খেলাম কিন্তু অনিশ্চয়তার তেতো স্বাদ রয়েই গেল। তেতো স্বাদটাকে আমার অপরিচিত মনে হল না; তবে বুঝলাম ওর জন্য এখনো সহনীয় হয়ে ওঠেনি।

আমার একটু আশ্বস্ত করার বাসনা জাগলো কিন্তু আশ্বস্ত করতে ইচ্ছে করলনা। আশ্বস্ত হবার মত কিছু পৃথিবীতে নেই, সবকিছুই খুবই সামপ্রতিক। বললাম হাজারীবাগের ভেসে আসা গন্ধ কেমন লাগছে। ও বলল ভালোই। আরো পনের মিনিট পর: ও বলল, একটা চাকরি খুব দরকার; আমি বললাম খুঁজতে থাক পেয়ে যাবি।

যদিও প্রাক্তণ; তবুও শশরীরে উত্তরায় বর্তমান; প্রেমিকার সাথে কথা হয়েছে। ও বলল, এখন সম্পর্ক না থাকলেও "ওর" কাছ থেকে অনেক কিছু পেয়েছি। আমি হাসলাম বললাম, যেমন আধেক সংযুক্তি, কিছুটা শরীর, অনেকটুকু জড়িয়ে যাওয়া ইত্যাদি? ও হাসলো, একটু শয়তান হবার চেষ্টা করল, বলল এবার ওর কাছ থেকে কিছু টাকা চাইতে হবে। আমি বললাম প্রয়োজন নাকি প্রতিশোধ কোন কারণে? ও বলল, আসলে মরে গেলেও চাইতে পারব না কিছু কিছু জিনিস আমি পারি না। বাসে ছূটে চলেছি: হাবিবের "ভালোবাসবো" কানে বাজছে।

এক অদ্ভুত বিবশ করা বিষন্নতায় মন ভরে আছে। বিষণ্নতাটাকে বুঝতে পারছি নিবিড়ভাবেই এবং খন্ডনের ইচ্ছে করছে না। সমসাময়িকের সাথে একটা আপাত দূরত্ব তৈরী করার ব্যার্থ চেষ্টা করে আরো ভালোভাবে বুঝলাম যে জীবন নামক নিরাময় অযোগ্য ব্যাধিটাকে জড়িয়ে ধরতে হবে শক্ত করে। বাস যখন শিশুমেলা পেরিয়ে জাতীয় মানষিক স্বাস্থ্যের দিকে যাচ্ছে ঠিক তখনই মেডিকেলে শামসুর রাহমান মারা যাচ্ছেন। আগস্ট আমার জন্য হয়ে উঠছে আরো নৃশংসতম মাস।

আমার প্রিয় বন্ধুটি একরাশ অনিশ্চয়তা নিয়ে ভাড়া বাঁচানোর জন্য হেঁটে চলেছে জোর কদমে। প্রিয় বন্ধুরা আমার জন্য প্রতীা করছে। আর জীবন তার মাজা আর বুক দোলাতে দোলাতে পাল্টে যাচ্ছে একটা স্বৈর একনায়কে, একনায়ক থেকে মমতাময় পিতায় আবার এর সবগুলো ভেঙ্গে ফেলে কৃষ্ণ গহ্বরে এবং একেবারে অপরিচিত নতুন রূপে। আমার নতুন একটা অনুভূতি হচ্ছে, কিন্তু বুঝতে পারছি না কেমন লাগছে, তবে আর যাইহোক নতুন একটা কিছু লাগছে।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।