আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

উৎসের সন্ধানেঃ ব্যক্তির চেয়ে দল বড়, দলের চেয়ে দেশ বড়, দেশের চেয়ে ...



আকার বিবেচনা করলে অবশ্য দেশের চেয়ে মহাদেশ, আর মহাদেশের চেয়ে পৃথিবী বড় ইত্যাদি, তবে আমার মনে হয় না এই উক্তি যিনি বা যারা করেন তারা আকার-আকৃতি প্রসঙ্গে এ কথা বলেছেন। বড় বলতে এখানে collision resolution এর প্রায়োরিটি বোঝানো হয়েছে বলে মনে হয়, অর্থাৎ যদি এমন হয় ব্যক্তিস্বার্থ আর দলের স্বার্থ পরস্পর বিরোধী হয় তাহলে দলের স্বার্থ মুখ্য, আবার দল ও দেশের ক্ষেত্রে দেশের স্বার্থ গুরুত্ব পাবে ইত্যাদি। উক্তিটা সুত্র বা মন্ত্রের চেয়ে অনেকটা আদেশের মতো (কেন আদেশ মনে হলো পরে আসছি)। কিন্তু ব্যক্তি, দল হয়ে কেন "দেশ"-এ এসে থেমে যাওয়া, মহাদেশ বা পৃথিবীর ক্ষেত্রে এই সুত্র সমপ্রসারিত করতে দোষ কোথায়। আসলে দল বা দেশ ইউনিট (বিশেষত রাজনৈতিক) হিসেবে যে রকম শক্তপোক্ত অবস্থানে আছে, মহাদেশ ঠিক ওরকম অবস্থায় নেই, গোটা পৃথিবীও নয়।

এ কারনে খেলাধুলায় নিজের দেশ জিতলে যতটা ভালো লাগে নিজেদের মহাদেশ থেকে জিতলে অতটা তৃপ্তি পাওয়া যায় না। এখন কথা হচ্ছে উপরের উক্তিটা আসলে কতটুকু গ্রহনযোগ্য, স্বার্থের সংঘাত দেখা গেলে আমাদের কি আসলেই এই সুত্র অনুসরণ করা উচিত? তার আগে বলে নেই কেন আদেশ মনে হলো । ভেবে দেখুন এই কথা কে কাকে কেন বলে থাকতে পারে ... রাজনৈতিক নেতারা তাদের কর্মীদেরকে বা জনগনকে বলার সম্ভাবনাই বেশী অথবা যুদ্ধের সময় সমরনায়ক। উদ্দ্যেশ্য লোকজন যেন তাদের ক্ষুদ্্র স্বার্থের কারনে দল, দেশের বৃহত্তর স্বার্থকে ব্যহত না করে এবং চেইন অফ কমান্ড যেন ঠিক থাকে। এই প্রচ্ছন্ন চেইন অফ কমােেন্ডর উপস্থিতির জন্যই আমি উক্তিটার মধ্যে "আদেশ"-এর গন্ধ খুজে পাই।

সাদা চোখে যাই মনে হোক না কেন এর উদ্দ্যেশ্য যে কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করা তাতে আমার সামান্যই সন্দেহ আছে। সবচেয়ে ভালো উদাহরন বোধ হয় সমাজতান্ত্রিক শাসন ব্যাবস্থা, যেখানে দেশের স্বার্থ সবার ওপরে, 70-80 বছর এক্সপেরিমেন্ট করে ওরা প্রমান করলো যে এসব বইয়ের তত্ত্বে দেশের উন্নতি হয় না। কেন হয় না তার বিস্তারিত বর্ণনায় যাব না, অন্য উদাহরন দেই। যদি এমন হত দেশের চেয়ে মহাদেশ, আর তারপরে পৃথিবীর স্বার্থ সবার ওপরে তাহলে কি প্রতিযোগিতামুলক খেলাধুলা যেমন বিশ্বকাপ তার মুল্য থাকতো? যে কোন দেশ চ্যাম্পিয়ন হলেই বলতে পারতাম যেহেতু পৃথিবীর একটি দেশ বিজয়ী হয়েছে তাই আমি সমান সুখী, আর তখন কে জিতলো তাতে আমাদের কিছু যায় আসতো না। ঠিক এই প্রতিযোগিতা আর স্বার্থের দ্্বন্দ্বের অভাবে "ব্যক্তি->দল->দেশ" এসব নীতি শেষমেশ সফল হয় না।

সুত্রটা সম্পুর্ন সত্যি যদি নাও হয়ে থাকে সম্পুর্ন মিথ্যা তারই বা প্রমান কি। দেখা যাক উলটে দেখলে কেমন হয়, "ব্যক্তিস্বার্থ সবার আগে, তারপর দল, শেষে দেশ"। ধনতন্ত্র কে বোধ হয় এরকম ধরা যায়। সমাজতন্ত্রে ব্যক্তি মোটিভেশন সমস্যা হলে, এখানে এটাই সুবিধা। যোগ্যতা থাকলে কৌশল জানলে, পয়সা থাকলে ব্যক্তিগত উন্নতির কোন বাধা থাকার কথা না।

এখানে সমস্যা হচ্ছে ইন্টিগ্রেশনের, বৃহত্তর স্বার্থ উপেক্ষিত হবার সমুহ সম্ভাবনা। তো দেখা যাচ্ছে "ব্যক্তি->দল->দেশ" বা "দেশ->দল->ব্যক্তি" এসব মন্ত্রের কোনটাই পুরোপুরি সত্য নয় আবার মিথ্যাও নয়। মানুষের জন্য লাভজনক বোধ হয় পুরোপুরি এ দুটোর কোনটাই নয়, এমনকি এদের মধ্যবর্তী অবস্থানও নয়, সমাধান সম্ভবত কোন 3rd plane-এ। গনতন্ত্র আর ধনতন্ত্রের মিশ্রনে গড়া দেশগুলোর সাফল্য দেখে তাই মনে হয়। সে যাই হোক , নেতা নেত্রীরা যখন বলেন "ব্যক্তির চেয়ে দল বড়, আর দলের চেয়ে দেশ বড়" সাধারন লোকে এসব কথার ফাঁদে না পড়লেই ভালো ।

আদর্শের জন্য জীবন বিলিয়ে দেয়াকে বোকামীই মনে হয়, যে কোন আদর্শের চেয়ে একজন মানুষের জীবনের সম্ভাবনা বেশী বলে আমার ধারনা

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.