আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আড্ডার দু'শততম বক্তৃতা:

বাংলাদেশ নিয়ে ভাবনা, প্রত্যাশা ও সম্ভাবনার সংগ্রহমালা

শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীনের ছবি মুখ: http://tinyurl.com/erwlx অপরিচিতদের জনাকীর্ণতায় দেশজ আড্ডার ভাবনাকে সম্বল করে আড্ডাবাজ নামে যখন ব্ল্ল্লগিং শুরু করলাম, আমার কাছের একান্ত মানুষগুলো ভ্রু কুঁচকে উঠল। অনেকের কাছে মনে হলো নাম বিভ্রম। কিন্তু আমার অনড় বিশ্বাস, আড্ডার জমজমাট গল্পের আসরে ভাবনার উচ্ছ্বাস আর নিজস্ব হৈচৈ আমাদের জীবণধারার এক অখন্ড প্রতীকি রূপ। ভাবনার জগতে নাড়া দিকে এর কোন বিকল্প নেই। এধরণের ধারণাকে ধারণ করে ডিসেম্বরের ষোল তারিখে শুরু হলো বাংলায় আড্ডার পথযাএা।

ঘড়ির কাঁটা ধরে ছয় মাস পার করে দু'শততম পোস্টিং-এ পদার্পণ করল। তাই আজকের মুহুতর্্বটা বিশেষভাবে ধরে রাখার জন্য ব্ল্লগের ক্যানভাসে সাজিয়ে দিলাম মনের মাঝে উঠে আসা বিক্ষিপ্ত ভাবনাগুলো। নিজের এই অগোছালো ভাবনার আঙ্গিণা থেকে সকল সুহূদ পাঠক ও ব্লগারদের জানাই একরাশ শুভেচ্ছা। আড্ডাবাজ নাম নিয়ে কৌতুহুল ও প্রশ্ন অনেক। ব্যক্তিগত নাম বা পরিচিতি আমার নিজের জন্য কোন গুরুত্ব বহন করে না, একথা হলফ করে বললে অনেকের কাছে ন্যাকামি মনে হবে।

জীবণ নামের নাটকের চরিএে আমরা বিভিন্ন ভূমিকায় অভিনয় করি বলেই শেক্সপীয়ার এই দুনিয়াটাকে একটা বিরাট নাট্যশালার সাথে তুলনা করে গেছেন। নাটকের পাএ-পাএীরা পর্দার আড়াল থেকে রকমারি চরিএের মুখোশ নিয়ে মঞ্চে নামেন। আমরা বিমুগ্ধ হয়ে থাকি তাদের চরিএের বৈচিএ্যে আর ছন্দবদ্ধ কথামালার পরতে পরতে। আফ্রিকানরা তো মুখোশের অন্তরালে পূর্বপুরুষদের আত্মার শক্তির সন্ধান পায়। তাই শিল্পাচার্যের শেষ আঁকা মুখাবয়বের ভেতরে লুকিয়ে থাকা আমরা সবাই একএিত হতে পারি এই অভাগা বাংলাদেশের বঞ্চিত মানুষদের উওরণে।

এধরণের প্রত্যয়ী ভাবনাকে এগিয়ে নিতে দরকার ভাবনার জগতে বিপ্ল্ল্লব। দরকার নতুন কাব্য, ছন্দ, ও অঙ্গীকার যা কখনো শহীদি রক্তে ভেজা স্বাধীনতার রক্তিম পতাকার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করবে না। ব্যক্তি আমি আর পাঁচজন মানুষের মতো। খুব চমকে দেয়ার মতো কোন ঘটনা নেই। ঢাকা শহরের মোহাম্মদপুরে এক মধ্যবিও পরিবারে আমার জন্ম ও বড়ো হওয়া।

স্কুল আর কলেজ শেষ করেছি রেসিডেন্সিয়াল মডেল থেকে, "তরঙ্গে"র বাসে চড়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নিত্যকার পদচারণা, লাইব্রেরীতে আর হাকিম চত্বরে ঘন্টার পর ঘন্টা কাটানো, লাস্ট বেঞ্চে বসে লাস্ট বেঞ্চের দূর্ণাম ঘুচানোর চেস্টা, ক্লাশের পরে তাড়িয়ে আড্ডা দেওয়ার মধ্যে জীবণের সবচেয়ে আনন্দের স্মৃতিগুলো লুকিয়ে আছে। ডিপার্টমেন্টে নবীণ বরণ অনুষ্ঠানে উদ্দীপনামূলক এক বক্তৃতার আশীর্বাদে অনেকের নেক নজরে পড়ে গেলাম। রেজাল্ট ভাল হতে থাকলো। অনার্সের রেজাল্ট খুব ভাল হলো। মোটামুটি নিশ্চিত যে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতায় যোগ করছি।

নির্বিরোধ খরগোশীয় জীবণে নির্ঝঞ্জাট আড্ডা ও অধ্যয়নের অধ্যবসায় চললেও তৈলমর্দনে অনভ্যাস ও অসমর্পনের খেসারত দিতে হলো মাস্টার্সের রেজাল্টে। নোংরা রাজনীতির শিকার হলাম। প্রথম বিভাগ অল্প কয়েক মার্কের কারণে জুটল না। হতাশ হলাম, কিন্তু হাল ছাড়লাম না। রেজাল্ট নিয়ে দূনর্ীতির ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ে তদন্ত কমিশন বসল।

যে শিক্ষক মহোদয় তদন্ত কমিটির চেয়ারম্যান হলেন তিনি ব্যাপারটা বেমালুম চেপে গেলেন কারণ কাকের মাংস তো আর কাক খায় না। পরবতর্ীতে তিনি উপাচার্য হলেন এবং বেশ অপমানের মাথায় সেই পদও ছাড়তে বাধ্য হলেন ছাএীদের হলে পুলিশী নির্যাতনের অপরাধে। এধরণের ব্যাপারগুলো খুব কাকতালীয়। আমাদের প্রত্যেককে কৃতকর্মের হিসেব কড়ায় গন্ডায় দিতে হয়, তা আমরা স্বীকার করি আর না করি। মাস্টার্স রেজাল্ট বের হওয়ার কিছুদিন মধ্যেই ডিপার্টমেন্টে শিক্ষক নিয়োগের তোড় জোড় শুরু হলো।

অনেকটা মান অভিমান করেই আমি আবেদন করা থেকে বিরত থাকলাম। খুব কাছের শিক্ষকরা এতে বেশ ক্ষুদ্ধ হলেন আমার উপর। আমি নির্বিকার। ডিপার্টমেন্টে যোগ দিল আমার ঘনিষ্ঠ বন্ধু। তার সাথে যোগ দিল শিবিরের এক নেতাগোছের ব্যক্তি।

উভয়ই জাতীয়তাবাদী ঘরাণার মানুষ বলে খুব সহজে পার পেয়ে গেল। বিশ্ববিদ্যালয়ে শিকতায় রংভিওিক গ্রুপিং (নীল ও সাদা)-এর কাছে মুচলেকা দিয়ে জ্ঞান চর্চা ও বিতরণ করা আমার কম্মো নয়। একবার তো এক নেতাগোছের শিক্ষক বেশ অনুযোগ করে বললেন, "ভেবেছিলাম তুমি আমাদের সাথে অন্তত একবার দেখা করবে, তুমি যোগ দিলে তো ভালই হতো"। আমি হেসে বলি "স্যার যা হয়েছে ভালই তো হয়েছে"। মনে মনে বলি, নিজেকে বিকিয়ে আত্মসওাবিহীন বিদ্যা চর্চায় কি কোন মুক্তি আছে? আসলে আমার মতো মানুষের জন্য আঙ্গুল ফল বরং টক হিসেবেই থাকুক।

জীবণ বহমান নদীর মতো। থেমে যায় না কোথাও। বাধা পেলে আরও উওাল হয়ে উঠে। হতাশা আমার জন্য নয়। এসময় অনেকগুলো সুদূরপ্রসারী ঘটনা ঘটতে লাগল।

রাজনৈতিক পটপরিবর্তন হলো। লেজেহোমো এরশাদ গণআন্দোলনের মুখে ক্ষমতা হারালো। মনে হলো দেশ আবার স্বাধীন হলো। কস্ট লাগে যখন দেখি এই বিশ্ববেহায়া এরশাদ বিচারের কাঠগড়া থেকে মুক্তি পেয়ে আজও লেজ নাড়ে। এদেশের রাজনীতিতে যে অসুস্থ ও সুবিধাবাদী ধারা প্রকট সেখানে রাজনীতিতে বিবেকবোধ ও নীতিবোধের সৎকার হয়েছে অনেক কাল আগেই।

ভুক্তভোগী আমি এরশাদকে কখনও ক্ষমা করতে পারব না। কারণ, তার জন্যেই হারিয়েছি জীবণের অনেকটুকু মূল্যবান সময় যা পেলে জীবণের চাকা হয়তো খুব অন্যরকম গতি পেতো। এসময় হঠাৎ করে ভালো খবরটা আসল। আমার মাস্টার্সের এডমিশন মার্কিন মুললুকে। অনেকটা স্বপ্নের মতো মনে হলো।

মাস্টার্স করতে পাড়ি দিলাম অনেক চড়াই উৎরাই পার করে। অনেক কাছের মানুষ হারিয়ে গেল। যাওয়ার ঠিক আগ মুহুতের্্ব একজন তো বলেই ফেলল, "চলে যাচ্ছেন জানতাম না তো। একবারও তো বললেন না"। অনুযোগের উওরটা খুব নিরুওাপভাবেই দিলাম, "এই যে খুব ব্যস্ত ছিলাম।

একদম সময় করতে পারিনি"। একটা ব্যাপারে আমি খুব ধার্মিক। সেটা হচ্ছে যে জন দু:সময়ে পাশে দাঁড়াতে পারেনা, তাকে সুসময়ে কাছে টেনে বিড়ম্বিত করা দারুণ অন্যায়। এক সকালে প্রথম বিমানে চড়ে দেশ আর স্বজনদের ছেড়ে এক বুক স্মৃতি নিয়ে পাড়ি জমালাম মার্কিনী হার্টল্যান্ডে-মিডওয়েস্টে। রোববার বিকেল বেলা এসে ক্যাম্পাসের কাছে এক হোটেলে অপেক্ষার কথা।

নিউইয়র্ক থেকে চার ঘন্টার ফ্লাইট শেষ করে সন্ধ্যায় যখন হোটেলে এসে পৌঁছালাম তখন পুরো জনপদ একেবারে নির্জন হয়ে গেছে। কথা ছিল গাইড এসে স্টুডেন্ট ডর্মে নিয়ে যাবে। অপেক্ষায় ক্লান্ত আমি হোটেলে চেক্ ইন করে ফেললাম। রাতে খাবারের দাওয়াত ছিল এক বাংলাদেশী অধ্যাপকের বাড়ীতে। দাওয়াতের কাঙ্গাল আমি।

তিনি স্টুডেন্ট ডর্মে গিয়ে আমাকে না পেয়ে হোটেলে এসে এক প্রস্থ চোটপাট দেখালেন। অধ্যাপক আমাকে সুস্থ সতেজ দেখে আশ্বস্ত হয়ে বিদায় নিলেন। যাবার সময় তিনি বেমালুম চেপে গেলেন যে রাতে তার বাসায় আমার ডিনারের কথা ছিল। রাত বাজে নয়টা। ক্ষিদে পেয়েছে প্রচন্ড।

হোটেলের লবীতে গিয়ে জিগ্যেস করলাম আশে পাশে কোন খাবারের দোকান আছে কি-না। উওর দিল, "রোববার রাত, সবকিছু তাড়াতাড়ি বন্ধ হয়ে যায়, মোটামুটি দশ ব্ল্লক হাঁটলে খাবারের দোকান পাওয়া যাবে"। ধন্যবাদ দিয়ে রুমে ফিরলাম। ঠিক করলাম, এক রাত না খেলে মারা যাব না। ভোজনবিলাসী হওয়ার কারণে বাসায় কখনো খাওয়া নিয়ে রাগ করতাম না।

ব্যাগে খুঁজে ভাগ্নের দেয়া বোম্বে চানাচুরের একটা প্যাকেট পেলাম। দু'টো সিকি দিয়ে অনেকক্ষণ কসরত করে ভেন্ডিং মেশিন থেকে জীবণের প্রথম কোকের ক্যান বের করতে পারার সাফল্যে তখন আমি আটখানা। চানাচুর আর এক ক্যান কোক দিয়ে রাতের খাবার শেষ হলো। তা'ও ক্ষিদে যায় না। গরম শাওয়ার নিয়ে নরম বিছানায় লম্বা হয়ে শুয়ে জীবণের প্রথম ক্ষুধার্ত রাতকে দীর্ঘ যাএাপথের অবসন্নতার কাছে ছুটি দিয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম।

পরের দিন সকাল বেলা ডিপার্টমেন্টে গেলাম। সবাই যেরকম সম্মান ও স্নেহ দেখাল, মনে হলো কতোদিনের পরিচিত আপনজন আমি। ডিপার্টমেন্টের ডীন প্রায় একঘন্টা ধরে কথা বললেন। পাশে ছিল ভর্তি কমিটির চেয়ার। রাশভারী এই ডীন আমার সাথে কথা বলে বেশ খুশী বলে মনে হলো।

এক পর্যায়ে জিগ্যেস করলেন, "আমি কি আমার ডিপার্টমেন্টের সেরা ছাএ কি-না"? আমি অত্যন্ত বিনয়ের সাথে বললাম, "না, মাস্টার্সের রেজাল্টে আমার উপরে আরও 2 জন আছে"। তখন খুব কৌতুহুলী হয়ে জিগ্যেস করলেন, "তারা কোন জায়গায় এডমিশন নিয়ে এসেছে"? আমি খুব দৃঢ়ভাবে উওর দিলাম, "তারা এখানে আসবে কেন? তারা তো দেশেই অধ্যাপনা শুরু করে দিয়েছে"। মনে মনে বলি, আমি তাদের মতো সুবিধে করতে পারিনি বলে এদিকে পাড়ি জমিয়েছি। আমার ডীন অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলেন আমার দিকে। তাকে কিভাবে বলি যে আমার বন্ধুবর ও তার সহচর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা ভারতীয় ও ঢাকাইয়া পিএইচডি নিয়ে তড়তড় করে উপরে উঠে যাবেন।

গেল সপ্তাহে খবরের কাগজে দেখলাম নয় মাসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি দিয়েছে এক গুণধরকে। দেশের শিক্ষাব্যবস্থার কি ঈর্ষণীয় উন্নতি হয়েছে? দু'বছরের মাস্টার্স প্রোগ্রামের প্রথম বছরের শেষে গরমের ছুটিতে দেশে ফিরলাম। এক বছরের মাথায় দেশে ফিরে এসে দেখেছি অনেকের চক্ষু চড়ক গাছে। আমি কি আর বলি ক্রেডিট কার্ডের ফুটানি দিয়ে দেশে এসেছি। মার্কিনী দেশে ছাএদেরকে ক্রেডিট কার্ড গছিয়ে দেয়ার জন্য ব্যাংকগুলো ক্যাম্পাসে ফুটপাতের পাশে দোকান নিয়ে বসে।

ক্রেডিট কার্ড নিয়ে মজা করে খরচ করো। তারপর সুদ আর আসল শোধে প্রাণ ওষ্ঠাগত। মাস্টার্স করে দেশে ফিরেছি। বিদেশী এক সংস্থায় চাকরি হয়ে গেল। চাকরি করছি, ব্যস্ততার ভীঁড়ে কি আর আড্ডা থেমে থাকে? সময় পেলেই এক পাল বন্ধু নিয়ে আড্ডা চলতে থাকে।

একদিন আমার এক বন্ধুর বাসায় গল্প করছি। বন্ধু আমার বড্ডো মালদার মানুষ। বিশ্ববিদ্যলয়ে থাকতে গাড়ী হাঁকাতো। তার বাসায় ছিল আমার আড্ডার আনাগোণা, অনেক সময় রাত কাটাতাম তার বাসায়। বিদেশে যাওয়ার আগে তার ছোট বোনের অনার্সের থিসিসটাকে ঘঁসে মেজে দিয়েছিলাম।

বিদেশ থেকে ফেরার পর যত্নের সীমা আরও অনেক বেশী বেড়ে গেল। জীবণের সবচেয়ে বিব্রতকর ঘটনাটা এখানে ঘটল। খালাম্মা খুব স্নেহ করতেন। বন্ধুর ব্যাপারে যত অভিযোগ আমার কাছে। গল্প করছি আমি আর আমার বন্ধু।

সেখানে খালাম্মা এসে যোগ দিলেন। এক সময় বন্ধু বলল, "মা ওর জন্য একটা মেয়ে দেখো তো? দোস্ত নাকি বিয়ের জন্য মেয়ে খুঁজে পায় না"। বন্ধুর মা যে উওরটা দিলেন তার জন্য আমি ভীষণভাবে অপ্রস্তুত ছিলাম। কল্পনাও করিনি এরকম একটা ঘটনা ঘটবে। আমি আমার শত্রুর জন্যও এতোটা বিব্রতকর সময় কল্পনা করব না।

খালাম্মা বললেন, "আমার কাছে তো কোন মেয়ে নেই আমার নিজের মেয়ে ছাড়া"। আমি স্মিতহাসি মুখে টেনে মনে মনে বললাম, ধরণী দ্বিধাবিভক্ত হও। সেই বন্ধুর বাসায় সেই আমার শেষ যাওয়া। বন্ধুর বোনটি দেখতে শুনতে যথেস্ট ভাল। কিন্তু আমি কি করে বলি বন্ধু, মহল্ল্লা আর ডিপার্টমেন্টের মেয়েদের ব্যাপারে আমার নিজস্ব টাবু আছে।

লিখতে গিয়ে নানান ভাবনা জড়ো হতে লাগল। হঠাৎ দেখি নীচে কলিং বেলের আওয়াজ। আড্ডার এক বন্ধু এসে হাজির। বললাম, "দোস্ত আমার দু' শততম বক্তৃতাটা পড়ে দেখতো কেমন হয়েছে"। সে মনোযোগ দিয়ে পড়তে পড়তে একসময় বলল, "শালা এসব চাপা বন্ধ কর।

তার চেয়ে চা আর চানাচুরের ব্যবস্থা কর। তুই এসব গাল-গল্প বাদ দিয়ে দেশ উদ্ধার নিয়ে কিছু লেখ্"। পুরনো বন্ধুর কথা ফেলি কি করে? আড্ডাবাজির আমেজটা তার নিরুৎসাহে একেবারে উবে গেল। তাই ভাবলাম নিজের চাপাবাজি বাদ দিয়ে ব্ল্লগের টেম্পারেচারটা একটু মেপে দেখি। এখানকার সবাই কি করে অনেক দিনের চেনাজানা আর কাছের মানুষ হয়ে গেছে তা ভাবতেও অবাক লাগে।

সত্যিকারের বিনে সুতোর মালায় গাঁথা আমাদের অনুভুতিগুলো। কথাগুলো কি রকম সরব আর প্রাণবন্ত, ব্যস্তুতার মাঝে এক খন্ড প্রশান্তি। সামহোয়্যার ইন-এর বেড়ে উঠা আঙ্গিণায় জীবণ ও সমাজের জটিল গ্রন্থিগুলো খুব সহজভাবে সাড়ম্বরে প্রকাশ পাচ্ছে। নানান ভাবনার আনাগোণা। প্রকাশের ভিন্নতা, স্বাদ ও আমেজ সত্যি বেশ উপভোগ্য।

এর মধ্যে টগবগিয়ে উঠে অসম্ভব আবেগ, আনন্দ ও অহংকার। আছে স্বীকৃতির তৃপ্তি আর উপেক্ষার কস্ট। প্রত্যাশার এক নিজস্ব গন্ডি ভাবনার ব্যস্ত প্রকাশকে আচ্ছন্ন করে রাখে। খ্যাতির তাড়না প্রবৃওিগত বলে এর মধ্যে কোন অপরাধবোধ নেই। তাই খ্যাতি ও স্বীকৃতির সীমান্ত না ছুঁয়ে নৈর্ব্যক্তিক হওয়ার কসরৎ করা সত্যি খুব কস্টকর।

এছাড়া আাছে অশান্ত ও আক্রমণাত্মক ভাবনার খন্ড খন্ড পালাক্রমিক প্রকাশ। এর সাথে ফুল মুনের কোন সম্পর্ক আছে কি-না জানি না। তবে এটা সত্য যে, এই সংঘাতময় পরিবেশ হচ্ছে আমাদের প্রাত্যাহিক জীবণধারার রূপক যা স্মরণ করিয়ে দিতে চায় ব্ল্লগ হচ্ছে আমাদের চলমান জীবণধারার সচল চিএপট। এর মধ্যে ভাবনার কম্পমান প্রকাশ আমাদের জীবণবোধের বিচিএ রং তুলির আচঁড়। ভাল না লাগলেও একে মোছা যায় না, চোখ বন্ধ করেও একে উপেক্ষা করা যায় না।

ব্ল্লগের প্রিয় আলোচ্য বিষয় হচ্ছে ধর্ম। ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি যে কতটা বিড়ম্বনার কারণ তা অনেকে নিজের অজান্তেই খুব চমৎকারভাবে এখানে তুলে ধরছে। তারা ধর্মকে কাঁচের তৈজসপএের মতো আঁকড়ে রাখে যা মনে হয় দু'চারটা লেখা আর কথার তুবড়িতে ভেঙ্গে পড়বে। ধর্ম যদি এতো অল্পতেই ভেঙ্গে খানখান হয়ে যায় তাহলে তা মানুষের মুক্তি দিবে কি করে? ধর্মের নামে অবিচার, অনাচার ও জীবন হননের অপকর্ম করে যারা ধর্মবোধকে কালিমামুক্ত করেছে সেসব ধর্মান্ধ অপোগন্ডদের হাত থেকে ধর্মবোধ মুক্তি চায়। ধর্মবোধ সুস্থ জীবণবোধ নির্মাণে সহায়ক হতে পারে কিন্তু অপরিহার্য নয়।

বস্তুবাদী সমাজ ধর্মকে এড়িয়ে এগিয়ে যায় সামনের দিকে যার বিপরীতে আমরা ধর্ম নিয়ে হানাহানি করে খন্ডিত ধর্মবোধ দিয়ে স্থবিরতা ও পশ্চাদপদতার কাছে নিজেদেরকে অন্তরীণ করে রেখেছি। এদেশে ধর্মবোধ ও খোদাভীতি ক্রমেই মানুষের ঘর ও জীবণ থেকে পালিয়ে যাচ্ছে, কারণ ইসলামী দলগুলো খোদাকে তাদের একমাএ সম্পওি মনে করে রাস্তায় নিয়ে গেছে (আড্ডা, 25 ডিসেম্বর 2005)। তাই ধর্মের নামে শ্ল্লোগান বেড়েছে কিন্তু ধর্মের অনুশীলন বাড়েনি। ধর্মবোধ ও নীতিবোধের প্রসার পায়নি মানুষের জীবণবোধে, বরং নির্বাসিত হয়েছে। এদেশে ধর্ম রাজনৈতিক দাবার গুটি, ক্ষমতায় উঠার সিঁড়ি।

এতে খেটে খাওয়া মানুষের কোন ভাগ নেই, তারা অবহেলিত আর উপেক্ষিত থাকে। রাজপথ সিক্ত হতে থাকে তাদের দাবী আদায়ের রক্তে। তাই ধর্ম নামক বস্তুটি ধর্মব্যবসায়ীদের বড্ডো আদরের কুমীর ছানা। প্রতারণার উপকরণ। এর নিবৃতি লুকিয়ে আছে সুস্থ রাজনীতির নতুন ধারায়।

বাংলাদেশে সুবিধাবাদী রাজনীতির খন্ডিত ধারায় গণমানুষের স্বপ্ন কখনো নির্ণায়ক শক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে না। দেশবাসীকে নিবের্াধ বানিয়ে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন দল ক্ষমতায় আসে, তারা আসে ব্যক্তিগত প্রভাব প্রতিপওি নিয়ে। এতে নেই কোন ইসু্যভিওিক পরিমাপযোগ্য ও বিশ্বাস্য রাজনৈতিক এজেন্ডা। সমস্যাটা হচ্ছে রাজনীতির শেকড়ে। এদেশে শেকড় কেটে আমরা গাছের বিস্তৃতি চাই।

যে গাছের শেকড় কাটা আর নড়বড়ে, তার মহীরূহ হওয়ার সম্ভাবনা কোথায়? তাই, আবেগ নয়, যুক্তিশক্তি হোক রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দু। দেশের লোকজন যখন দুধের মাছিদের চিনতে পারবে, তখনই বন্ধ করতে পারবে তাদের বিস্তৃতি, প্রতিরোধ করতে পারবে এসব আগাছাদের। তাই যোগ দিন মুক্তচিন্তায়, দেশজ শেকড়ের সন্ধানে, আর ভৌতিক অপচ্ছায়াদের অপসারনে। কোন রাজনৈতিক দলের লেজুড়বৃওির দরকার নেই। দরকার সুস্থ ও সচেতন নাগরিকবোধ দিয়ে নিজেদের রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য উৎসর্গীত লড়াকু মানুষের।

দরকার মানুষের প্রতারিত স্বপ্নকে বাস্তবতার ছোঁয়ায় উদ্দীপ্ত করার। সেরকম স্বপ্নের ফেরী করতে রাজী আছেন কি কেউ? এধরণের স্বপ্নের মধ্যে জন্ম নিবে আগামী দিনের সফল বাংলাদেশ। এদেশ হবে সারা বিশ্বের বিশ্বের বিস্ময় আর আমাদের সবার অহংকারের অফুরন্তউৎস। কারণ, শহীদের রক্ত কোনদিন ম্লান হয় না, বৃথা যায় না। তাই ব্ল্লগে আমার সবচেয়ে সেরা লেখাটি আমি নিবেদন করেছি এদেশের সেই অদম্য সাহসী নতুন প্রজন্মের জন্য যারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে সঙ্গী করে এদেশকে পথ দেখাবে নতুন মিলেনিয়ামে।

এই উপলদ্ধির ধারাবাহিকতায় আমাদের এই নতুন প্রজন্ম যে নতুন যুগ সৃস্টি করবে তা অবশ্যই আমরা আমাদের জীবনকালে প্রত্যক্ষ করব। আমার নিজের দৃস্টিতে আমার সেরা লেখাটি হচ্ছে: বাংলাদেশ সবার সেরা (পড়তে চাইলে এখানে টোকা দিন: http://tinyurl.com/pyerr বাংলা ব্ল্লগে আমার সবচেয়ে কস্টকর লেখা ছিল: প্রতিবাদ নয় প্রতিজ্ঞার কন্ঠ (7 মার্চ, 2006)। কারণ, এ লেখায় আমি চেস্টা করেছি নৈতিকতার আপেকি মূল্যবোধ ও সিভিল লিবার্টীর ধারণার মধ্যে একটা সুষম ভারসাম্য আনার। বাংলা ব্ল্লগের নেপথ্যে যারা কলা-কুশলী তাদের জন্য রইল আমার অনেক অনেক শুভেচ্ছা। তারা হচ্ছেন নেপথ্যের শিল্পী।

তাদের ঋণ কখনো শোধ হবে না। ব্ল্লগ করে কি হবে এ ধরণের বাতুল প্রশ্ন কেউ করলে বলব, ব্ল্লগ অন্তত: ছোট্র মেয়ে প্রাপ্তির হাসিকে আমাদের সবার খুব কাছে নিয়ে এসেছে। প্রাপ্তির হাসি ও উওরোওর সুস্থতায় বাস করে আমাদের সম্ভাবনা। প্রাপ্তি আমাদের ভালবাসার অবিভক্ত প্রতীক, আমাদের সম্ভাবনার প্রচ্ছদপএ। ব্ল্লগে আমি খুঁেজ পাই আমাদের অগ্রজ ও অনুজদের এক অভূতপূর্ব সৃজনশীল ভার্চুয়াল মিলন।

চারপাশে দেখি অসাধারণ মানুষদের সমাবেশ, দেখি তাদের সৃস্টির উৎকর্ষতা। আমি মন্ত্রমুগ্ধের মতো সম্মোহিত হয়ে থাকি তাদের ছন্দে, তাদের লেখনীর অপূর্ব শক্তিতে। নামহীন আমি এখানে নামের চর্চা করব না। শুধু প্রণতি জানাই আমার সকল সহযাএীদের প্রতি। যারা এদেশকে এগিয়ে নিবে সাহসের সাথে তাদের জন্য জায়গা করে দিয়ে আমি নীরবে ইতিহাসের কাঠগড়ায় স্থান করে নিতে চাই।

এরকম ভাবনা অনুরণিত হয় আমার চেতনায়: "...এসেছে নতুন শিশু, তাকে ছেড়ে দিতে হবে স্থান, জীর্ণ পৃথিবীতে ব্যর্থ, মৃত আর ধ্বংসসতূপ-পিঠে চলে যেতে হবে আমাদের। চলে যাব-তবু আজ যতক্ষণ দেহে আছে প্রাণ প্রাণপনে পৃথিবীর সরাব জঞ্জাল, এ বিশ্বকে এ-শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি্ত নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার। অবশেষে সব কাজ সেরে আমার দেহের রক্তে নতুন শিশুকে করে যাব আশীর্বাদ, তারপর হবো ইতিহাস"। ছাড়পএ, সুকান্ত ভট্রাচার্য

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।