আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আড্ডার গপ্প: ডিল ফর ডাইল!


তখনও আমি সুযোগ পেলে চুপেচাপে ফেন্সিডিল খাই... তবে অনিয়মিত। বিয়ের আগে নিয়মিত খেতাম। বিয়ের পর আড্ডা কমেছে, সুযোগ কমেছে.... ডাইল খাওয়াও কমেছে! আমি, আমার স্ত্রী, ফ্রেন্ড রতন আর রতনের স্ত্রী... আমরা চারজন 'উর্মি গোধূলী'তে চেপে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় ফিরছি। তিন দিনের প্লেজার ট্রিপ কাটিয়ে আমরা দুই জুটি মূলতঃ ফিরছি কক্সবাজার থেকে। অনেকক্ষণ ধরেই ট্রেন চলছে।

একসময় আমি সীট ছেড়ে উঠে দাঁড়ালাম.... সিগারেটের তেষ্টা পেয়েছে। সন্ধ্যা হয়েছে মাত্র কিছুক্ষণ.... ট্রেন আখাউড়া স্টেশন ছাড়লো। আমি কম্পার্টমেন্টের দরজার পাশে দাঁড়িয়ে সিগারেট ধরালাম। ধীরগতিতে চলছে ট্রেন। সিগনাল বাতী পেছনে ফেলে আসার পরও অজ্ঞাত কারনে গতি বাড়ছেনা গাড়ীর... ট্রেন ধীরলয়েই চলছে তখনও।

হঠাৎ অন্ধকার ফুরে দু'জন লোক তরতর করে উঠে এলো চলন্ত ট্রেনে ... একজনের ধাক্কা খেয়ে আমি সাইড নিলাম। দুই ধাক্কায় গেট ফাঁকা! ওরা ঝটপট দখল নিল কম্পার্টমেন্টের টয়লেটের। ট্রেনের পাশের অন্ধকার থেকে যেন উড়ে উড়ে এসে পড়তে থাকলো ফেন্সিডিলের বোতল ভর্তি মলিন চটের বস্তা... আশ্চর্য দক্ষতায় অবিশ্বাস্য দ্রুত গতিতে বস্তার দুই সাইডে দু'জন ধরে... পটাপট বস্তাগুলি একটার উপর একটা করে ছুঁড়ে মারতে লাগলে টয়লেটের মধ্যে। পাঁচ-সাত মিনিটেই একের পর এক দশটা বস্তা সুবিন্যস্ত ভাবে একটা কলামের মত দাঁড়িয়ে গেল টয়লেটের দেয়াল ঘেঁষে। আশ্চর্য নিখুঁত তাঁদের পারদর্শীতা... না দেখলে বিশ্বাসই হবেনা! অন্ধকার ভেদ করে ট্রেনে উঠে এলো আরও দু'জন, ভিতর থেকে কম্পার্টমেন্টের গেট লক করে উধাও হয়ে গেল তিনজন.... বাকি একজন টয়লেটের ভিতরে গিয়ে দরজা লাগিয়ে দরজার এক ফুটাতে এক চোখ পেতে ঠায় দাঁড়িয়ে রইল।

ম্যান হাইটে টয়লেটের দরজায় ছোট একটা ফুটা লক্ষ্য করলাম তখনই... হয়তো ওখানে কোন লক বা হুরকো-টুরকো ছিল কোন সময়। আমি তখনও জায়গা ছাড়িনি.... উল্টোদিকের দরজায় দাঁড়িয়ে মজা দেখছি। ট্রেন এতক্ষণে গতি পেয়েছে। মাঝে মাঝে দু'একজন যাত্রী এসে টয়লেটের দরজায় ধাক্কা দিচ্ছে। ভিতর থেকে আওয়াজ আসছে .. ''এটা বন্ধ, অন্য দিকে যান'।

'' কয়েকজন চলে গেলেও একজন যাত্রী দেখি বিষয়টা মালুম করতে পারে নাই। সে টয়লেটের গেটে দাঁড়িয়েই রইল.. হয়তো ভাবছে, কতক্ষণ আর একজন লোক টয়লেটে বসে থাকবে?! কিছুক্ষণ পর সে আবারও ধাক্কা দিল দরজায়। কিন্তু ভেতর থেকে একই জবাব! এরপর আরও একজন এসে লাইনে দাঁড়ালো। তারপর আরও একজন। আমি ততক্ষণে দ্বিতীয় সিগারেটটা ধরিয়েছি.. আর দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে মজা দেখছি... দেখি কি হয়! এরইমধ্যে তিনজন জিআরপি পুলিশের একটা দল এসে টয়লেটের দরজায় অপেক্ষমান লোকগুলির চেহারা মেপে নিল, তারপর ধমকের সূরে বললো..'' দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কি সার্কাস দেখছেন? এই বাথরুম লক।

অন্য বাথরুমে যান। '' জিআরপির ধমক খেয়ে লোকগুলি সুরসুর করে চলে গেল অন্যত্র... জরুরী ত্যাগের প্রয়োজনে স্থান ত্যাগ ! আমিও একটা সুযোগের অপেক্ষায় ছিলাম। জিআরপি চলে যাবার পর আমি সাইড পরিবর্তন করে টয়লেটের পাশে দাঁড়ালাম। টয়লেটের দরজায় আয়েসী ভঙ্গিতে হেলান দিয়ে সিগারেট খাচ্ছি...টোকা দিলাম টয়লেটের দরজায়। কোন রিপ্লাই নাই... কিন্তু দরজার ফুটায় সেই চোখ! অন্যদিকে তাকিয়ে যতটা সম্ভব ফুটার কাছাকাছি মুখ নিলাম... ''এই চিপার মধ্যে ভিতরে এতক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকা যায়?! কষ্ট হচ্ছেনা?''... ফুটার চোখ দু'টো যেন আরও বড় হলো... কিন্তু চুপ, কোন রা নাই! এরমধ্যে একজন যাত্রী এসে টয়লেটের সামনে দাঁড়াল।

আমি খুব ভদ্রভাবে বল্লাম..''ভিতরে মহিলা আছে, দেরী হবে ভাই। প্লিজ পাশের কম্পর্টমেন্টে যান। " আবারও ফুটার সেই চোখের সাথে ভাব জমানোর চেষ্টা করলাম... ''আপনারা লাইনের লোক, এত ভয় কি?!.. রেলের লোক, পুলিশ সব-তো কেনা!'' উহু... শুধু কথায় কাজ হচ্ছেনা! সেই চোখ জুড়ে বিস্ময় আর অবিশ্বাস! আমি সোজা লাইনে এ্যপ্রোচ করলাম...''একটা ডাইল দেন ভাই, পয়সা দিচ্ছি। '' এবার মুখ খুললো সেই চোখ..'' না দেয়া যাবেনা... এখান থেকে যান। '' আমি আশ্বস্ত হলাম।

যাক, এটলিস্ট রেসপন্স-তো করেছে... কথা-বার্তা চললেই লাইনে আনা যাবে! একটা পাঁচশ' টাকার নোট গোল করে ফুটার মুখে ধরলাম। সাঁই করে টাকাটা চালান হয়ে গেল ভিতরে... যেন কোন সাকশন মেশিন টেনে নিল টাকাটা! ভিতর থেকে এবার যেন একটু নরম সূর পেলাম..'' ভাই বল্লামনা... দেয়া যাবেনা। '' আমি অফার দিলাম...''একটা বোতল, বাকি টাকা আপনার। '' আমি নিশ্চিত, পাঁচশ' টাকার লোভ সামলানো কঠিন হবে তাঁর জন্য। আমি যখনকার কথা বলছি তখন ঢাকায় ২০০ থেকে ২৫০ টাকায় ডাইল পাওয়া যায়।

এরমধ্যে তলপেটে চাপ নিয়ে আসা আরও একজন যাত্রীকে বিদায় করেছি। - '' কি হলো ভাই ...দ্যান?'' - '' ভাই আপনাকেতো বল্লাম... দেয়া যাবেনা। আপনার টাকা নিয়ে যান। " ভাই-ভাই করে যখন কথা হচ্ছে, তখন আমি নিশ্চিত... কাজ হবে। এবং হলোও তাই।

- ''দ্যাখেন, আশেপাশে কেউ আছে কিনা?''.... বললো ফুটার চোখটা। - ''দাড়ান''... মিছাই ডানে বামে একবার তাকিয়ে বল্লাম..'' এবার দেন। '' ওই ফুটা দিয়েই বের হয়ে এলো একটা ডাইলের বোতল। জাস্ট একটা ফেন্সিডিলের বোতল বের হয়ে আসার মত স্ট্যান্ডার্ড সাইজ ফুটা! তড়িৎ বোতলটা পকেটে পুরে নিয়েই বল্লাম..'' বাকি টাকাটা দ্যান। '' লোকটার চেহারা দেখা গেলে বোঝা যেত যে কতটা অবাক হয়েছে.... কতটা ধাক্কা খেয়েছে সে! তাঁর চোখ জুরে অবাক বিস্ময়..'' কইছিলাম দেয়া যাবেনা।

না দিলেই ভাল হইত"। এবার আর ফিসফিস করে নয়, আমি বেশ জোরেই বল্লাম... ''ঢাকায় দাম দুইশ' টাকা, বাকি তিনশ' ফেরত দেন। '' লোকটা যেন বেকুব হয়ে গেছে.... আমি বারবার দরজায় ধাক্কাতে লাগলাম। একসময় অসহায় উত্তর এলো..''আমার কাছে ভাঙতি নাই। '' পকেট হাতড়িয়ে একটা একশ' টাকার নোট বের করে বল্লাম..''আপাততঃ এই একশ' টাকা রাখেন, আর পাঁচশ' টাকার নোটটা দেন, এক প্যাকেট সিগারেট কিনে ভাঙিয়ে আনি।

'' এক পকেটে ফেন্সিডিল, অন্য পকেটে পাঁচশ' টাকার নোট-টা পুরে আমি পাশের কম্পার্টমেন্টের টয়লেটের সামনে এসে লাইনে দাঁড়ালাম! পুনশ্চঃ টঙ্গী স্টেশনে ঢুকবার আগে বেশ কিছুটা পথ অজ্ঞাত কারনে ট্রেনের গতি আবার সেই স্লথ...যেমনটা ছিল আখাউড়া ছাড়বার পর। (ক্রেডিট লাইনঃ আমার বড় ভাই কাম বন্ধু.... সুহৃদ বাবু ভাইয়ের অভিজ্ঞতা শেয়ার করলাম এখানে। উনি মফস্বল শহরের একসময়ের তুখোড় ছাত্রনেতা। অভিজ্ঞতার ভান্ডার সমৃদ্ধ। জমিয়ে গল্প বলেন তিনি।

আমরা যখন আড্ডা দেই... বাবু ভাই-ই আড্ডার মধ্যমনি। আড্ডায় বলা উনার গল্প নিয়ে এই পোস্ট। উনার অনুমতি নিয়েই .... উনার জবানীতেই। )
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।