আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

জার্মানির 'ব্ল্যাক ফরেস্ট'

পৃথিবীর বুকে জুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে হাজারো সবুজ বন। যেখানে হাজারও সবুজ গাছের সমারোহের কারণে সবুজ হয়ে থাকে বনগুলো। সেজন্য বনের নাম সবুজ বন রাখা যুক্তিযুক্ত, কিন্তু সবুজ নয় কালো বন নামেই একটি বন আছে আমাদের এই পৃথিবীতে।

জার্মানিতে অবস্থিত এ বনটির নাম 'ব্লাক ফরেস্ট'। সবুজ বন না রেখে এ বনের নাম ব্লাক ফরেস্ট কেন রাখা হল? এ প্রশ্ন অনেকের মনে হতে পারে।

হয়তবা ভাবতে পারেন এ বনে খারাপ কিছু আছে যে কারণে বনের নাম করা হয়েছে কালো বন। আসলে তা নয়। জার্মানির দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত পর্বতময় এই বনভূমির নাম ব্ল্যাক ফরেস্ট বা কালো বন রাখা হয়েছে এই বনের অপরূপ সৌন্দর্যের কারণে। পাহাড় ও বন একসাথে মিশে এখানে তৈরি করেছে এক অনাবিল পরিবেশ। লম্বা লম্বা গাছ আর উঁচু উঁচু পাহাড়ের কারণে এই বনটি ব্ল্যাক ফরেস্ট নামে পরিচিতি লাভ করেছে।

ব্ল্যাক ফরেস্টের রয়েছে এক দীর্ঘ ইতিহাস। শেষ বরফ যুগের সময় বর্তমান ব্ল্যাক ফরেস্ট তুষার আচ্ছাদিত ছিল। পরে এই বরফ হিমবাহ আকারে নেমে এসে তৈরি করেছে অপরূপ সৌন্দর্যের কয়েকটি নদী। যেগুলোর মধ্যে অন্যতম দানিয়ুব, দি ইনজ, দি কিনজিগ, দি মুরগ, দি নেগোল্ড, রেন্চ। এই বনের মূল বৃক্ষগুলোর মধ্যে রয়েছে পাইন ও দেবদারু জাতীয় গাছ।

এ বনের গাছগুলোর ডালপালা কম এবং পাতা সরু সুচালো। ব্ল্যাক ফরেস্ট আফ্রিকার বনের মতো ঘন ও নিবিড় নয়। গাছগুলো একটু সাজানোগুছানো ও পরিপাটি। এই সুন্দর বনটি বার বার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মানুষ ও প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে। এক সময় মানুষের নির্বিচারে বৃক্ষ নিধন বনটিকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিয়েছিল।

ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আকাশ থেকে এসিড বৃষ্টি বর্ষিত হবার কারণে। বনটি সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল ১৯৯৯ সালে এ এলাকায় সংঘটিত ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড়ের কারণে। এই ঝড়ে অন্তত ১০০ একর বনভূমি চুরমার হয়ে গিয়েছিল।

সবচেয়ে মজার বিষয় হল এই বনে কোনও হিংস প্রাণী নেই। এ বনের বন্যজীবের মধ্যে রয়েছে গরু, উট, ছাগল, ভেড়া, ঈগল, পেঁচা, অস্ট্রিচ পাখি ইত্যাদি।

এ বনে খুব বড় আকারের কেঁচো ও শিয়াল দেখতে পাওয়া যায়। শিয়ালগুলো এতই বড় আকৃতির যে সেগুলো ঘোড়ার সমান বড়। অতীতে এই এলাকার লোকেরা এই শিয়াল দিয়ে বোঝা বহন করাত। ব্ল্যাক ফরেস্ট এলাকায় রয়েছে একটি বিশেষ ছুটির দিন। এদিন সবাই দলবেঁধে রাস্তায় নেমে আসে এবং আদিবাসীদের মুখোশ পরে আনন্দ উল্লাস করে।

আকর্ষণের বিষয় হচ্ছে, এই বনে প্রায় ২৩ হাজার কিলোমিটার এলাকা জুড়ে তৈরি করা হয়েছে পর্যটন নেটওয়ার্ক- যা পর্যটকদের বনের মধ্যে সকল ধরনের সুযোগ সুবিধা প্রদান করে। এই পর্যটন নেটওয়ার্ক পরিচালনার জন্য সেখানে রয়েছে প্রচুর লোকবল ও পর্যটন ব্ল্যাক ফরেস্ট সোসাইটি নামের একটি সংগঠন। এ বনে আছে অনেক সুন্দর সুন্দর লেক ও মনোরম ঝরনা। লেকগুলোতে দেখতে পাবেন সবুজের মাঝে স্নিগ্ধ পানির উপর পাথর ছড়িয়ে থাকার অপরূপ সৌন্দর্য।

পাহাড়ের চূড়া থেকে গা বেয়ে নেমে আসা ঝরনার দৃশ্য দেখলে যে কেউ মুগ্ধ হয়ে যাবেন।

বনের মধ্যে সবুজ বেষ্টনীর মাঝে তৈরি করা হয়েছে নয়নাভিরাম বিভিন্ন কটেজ। যেখানে পর্যটকরা অবস্থান করতে পারেন। এই বনে আছে সুন্দর কয়েকটি জলপ্রপাত। যার মধ্যে একটি অন্যতম জলপ্রপাতের নাম ট্রিবার্গ। জলপ্রপাতটি খুব উঁচু না হলেও এটি জার্মানির একটি বিখ্যাত জলপ্রপাত।

জলপ্রপাতটি পর্যটকদের দারুণভাবে মুগ্ধ করে। ব্ল্যাক ফরেস্টের মধ্যে আছে একটি জাদুঘর, যেখানে দেখানো হয়েছে ১৬ ও ১৭ শতকের জার্মান কৃষকদের জীবন। ঘড়ির ইতিহাস নিয়ে ব্ল্যাক ফরেস্টে আছে একটি ঘড়ি জাদুঘর।

সোর্স: http://www.bd-pratidin.com/

এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।