আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অস্থির পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়

সরকারের শেষ সময়ে অস্থিরতা ছড়িয়ে পড়ছে একের পর এক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে। অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগে বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্যের পদত্যাগ দাবিতে আন্দোলনে চলছে। তবে একাধিক প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক, ছাত্র ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের রাজনীতি ও দলাদলিই মূল কারণ বলে জানা গেছে। এমনকি অনেক প্রতিষ্ঠানে ক্ষমতাসীন দলের সমর্থক শিক্ষকরা বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। শিক্ষাবিদরা বলছেন, যে কারণেই আন্দোলন হোক না কেন, তার খেসারত দিতে হচ্ছে সাধারণ শিক্ষার্থীদের।

কারণ এতে অনিয়মিত হয়ে পড়ছে ক্লাস ও পরীক্ষা। আর সেশন জটে নষ্ট হচ্ছে শিক্ষাজীবনের মূল্যবান সময়। সাম্প্রতিক সময়ে দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে অবরুদ্ধ করে রাখেন আন্দোলনকারীরা। পরিস্থিতি সামলাতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপ করতে হয়। ব্যাপক অনিয়ম দুর্নীতি, শিক্ষক-ছাত্রদের রাজনৈতিক কোন্দল ও আন্দোলনে অস্থির জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি), রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি), কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি), রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, গোপালগঞ্জে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (পবিপ্রবি), খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট), খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় (খুবি) এবং শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (শাবিপ্রবি)।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় : উপাচার্যের পদত্যাগ দাবিতে ২৮ সেপ্টেম্বর থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য আবারও কর্মবিরতির ডাক দিয়েছেন আন্দোলনরত শিক্ষকরা। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক লাউঞ্জের ক্যাফেটেরিয়ায় গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেওয়া হয়। বিভিন্ন দাবিতে উপাচার্য অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেনের পদত্যাগ দাবিতে কয়েক মাস ধরে আন্দোলন করছেন শিক্ষকদের একাংশ। তাদের দাবির মুখে গত ১৩ ফেব্রুয়ারি ড. আনোয়ার পদত্যাগ করার ঘোষণা দিয়ে রাষ্ট্রপতির নির্দেশে ওইদিন রাতেই আবার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেন। এরপর গত ২১ এপ্রিল তার বিরুদ্ধে ১২টি ক্যাটাগরিতে অসংখ্য অভিযোগ এনে শিক্ষকরা অসহযোগ আন্দোলন শুরু করেন।

২৭ এপ্রিল থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য সর্বাত্দক কর্মবিরতির ডাক দেওয়া হয়। ফলে বন্ধ হয়ে যায় ক্লাস-পরীক্ষা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য প্রশাসনিক কার্যক্রম। এক মাসেরও বেশি সময় কর্মবিরতি পালনের পর ১৯ জুন কর্মবিরতি প্রত্যাহার করে উপাচার্যকে ক্যাম্পাসে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়। আবারও ভেঙে পড়ে প্রশাসনিক কার্যক্রম। শিক্ষকদের বাধার মুখে অফিস করতে না পারায় পণ্ড হয়ে যায় ২১ জুনের বার্ষিক সিনেট অধিবেশন।

তবে হাইকোর্টের রিটের মাধ্যমে দীর্ঘ ৪০ দিন পর ২৯ জুলাই সচল হয় জাবির প্রশাসনিক কার্যক্রম। শিক্ষক সমিতির ব্যানারে ওই আন্দোলনে হাইকোর্ট নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় নাম পরিবর্তন করে সাধারণ শিক্ষক ফোরাম করে আন্দোলন শুরু হয়। শিক্ষক ফোরামের বাধায় গত ৩০ জুলাইয়ে সিন্ডিকেট সভা পণ্ড হয়ে যায়। ঈদের ছুটিতেও চলে আন্দোলন। সর্বশেষ গত ১৭ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয় খোলার পর ১৯ আগস্ট ধর্মঘটের ডাক দেন শিক্ষকরা।

রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় : শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) সূত্র জানায়, নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদায়ী উপাচার্য অধ্যাপক মু. আবদুল জলিল ৩৩৮ জনকে বাড়তি নিয়োগ দিয়ে যান। এসব শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ পেয়েছেন অনুমোদিত জনবল কাঠামোর বাইরে। ফলে সরকার তাদের বেতন-ভাতা বরাদ্দ করেনি। বকেয়া বেতন ও বোনাসসহ সাত দফা দাবিতে গত ২২ আগস্ট ধর্মঘট শুরু করেন তারা। 'মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজের' ব্যানারে এই আন্দোলনকারীদের সঙ্গে বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক ড. একেএম নূর-উন-নবী বৈঠকও করেছেন।

কিন্তু কোনো আশ্বাস না পাওয়ায় এবং শিক্ষকদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণের অভিযোগে তাৎক্ষণিকভাবে ধর্মঘট ডাকা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ে গত ১৭ সেপ্টেম্বর থেকে উপাচার্যকে প্রায় ১০০ ঘণ্টা অবরুদ্ধ করে রাখা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ে সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে তিনি সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় : নানা ইস্যুতে প্রায়ই উত্তপ্ত হয় এ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডও সাময়িক সময়ের জন্য স্থগিত রাখতে বাধ্য হয় কর্তৃপক্ষ।

চাকরি না দেওয়ায় গত ২৪ সেপ্টেম্বর কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনে উপাচার্য ও সহ-উপাচার্যের কার্যালয়সহ সব কক্ষে তালা ঝুলিয়ে দেন ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা। প্রায় দেড় ঘণ্টা তালাবদ্ধ করে রাখার পর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অনুরোধে তালা খুলে দেওয়া হলেও ক্যাম্পাসে আতঙ্ক রয়েছে।

বঙ্গবন্ধু বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় : সংসদ সদস্যের সুপারিশে চাকরি না দেওয়ায় গোপালগঞ্জে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেছেন জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি শামীম হাসান রাসেল। উপাচার্যের অপসারণ দাবিতে তার সমর্থকরা গতকাল দুপুরে গোপালগঞ্জ-টুঙ্গিপাড়া সড়ক প্রায় এক ঘণ্টা অবরোধ করে রাখেন। পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

জানতে চাইলে উপাচার্য ড. এম খায়রুল আলম খান বলেন, 'শামিম হাসান রাসেল সহকারী পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক পদে চাকরির জন্য সংসদ সদস্যের সুপারিশ করা একটি আবেদনপত্র আমার কাছে নিয়ে আসে। তাকে বলি, এখানে এ ধরনের কোনো পদ নেই এবং বিজ্ঞপ্তি ছাড়া চাকরি দেওয়া সম্ভব নয়। এতে সে ক্ষুব্ধ হয়ে দুর্ব্যবহার করে। মেয়র রেজাউল হক সিকদার রাজু বিষয়টি মীমাংসা করে দেন। '

পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় : চার বছরে তিন শতাধিক শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ নিয়ে অস্থিরতা বিরাজ করছে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে।

বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নিজস্ব তহবিল থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ছয় কোটি টাকা বেতন-ভাতায় ব্যয়ও করেছে। ফলে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের দেওয়া বাজেটের বাইরে অন্তত আট কোটি টাকা খরচ হয়েছে। রেজিস্ট্রার অধ্যাপক নওয়াব আলী বলেন, 'বিভিন্ন সময়ে বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত অনিয়ম-দুর্নীতির খবরের ভিত্তিতে মঞ্জুরি কমিশন থেকে তদন্ত টিম এসেছিল। চলতি মাসের ১৫ ও ১৬ তারিখ তারা তদন্ত কাজ সম্পন্ন করেন, যার প্রতিবেদন প্রকাশ প্রক্রিয়াধীন। ' অবৈধভাবে তিন শতাধিক নিয়োগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'এ অভিযোগ পুরাপুরি সঠিক নয়।

'

শিক্ষামন্ত্রীর বক্তব্য : শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, 'বিশ্ববিদ্যালয় জ্ঞানচর্চার কেন্দ্র। শিক্ষকদের দেখে শিক্ষার্থীরা উন্নত জীবনের শিক্ষা নেবেন। কিন্তু তুচ্ছ ও সংকীর্ণ স্বার্থের বেড়াজালে শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবন বিপন্ন হয়। এটা কোনোভাবেই হওয়া উচিত নয়। ' [প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য পাঠিয়েছেন পটুয়াখালী প্রতিনিধি সঞ্জয় কুমার দাস লিটু, গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি আমিনুল হাসান শাহীন ও ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি আকতারুজ্জামান।

]

 

 

সোর্স: http://www.bd-pratidin.com/

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।