আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বিশ্বে ঘটে যাওয়া কিছু অজানা সুনামীর কথা -২য় পর্ব : সাগর দ্বিখন্ডন ও মোজেস এর পার হয়ে যাওয়া

আগের পর্বে বলেছিলাম দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালীন সময়ে কিভাবে বোমা বানিয়ে সুনামী সৃষ্টি করার চেষ্টা করা হয়েছিল। এখন বলবো আমাদের সবার জানা একটা ঘটনা, কিন্তু সে ঘটনা যে সুনামীর সাথে সম্পর্কযুক্ত সেটা অনেকেই জানিনা।
প্রাচীন বাইবেলের সূত্র ধরে আমরা সবাই হযরত মুসা বা মোজেস এর কাহিনী জানি। প্রাচীন বাইবেলের একটা খন্ড হলো এক্সোডাস (Exodus),যেখানে বলা আছে কিভাবে মোজেস ইসরায়েলীদের মিসর থেকে ইসরায়েলী ভূমিতে নিয়ে যায় (ইংরেজী এই শব্দটা পুরানো বাইবেল থেকেই এসেছে, যার অর্থ ধর্মীয় কারনে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গাতে স্থানান্তর) । এক্সোডাস (Exodus) এর সূত্র ধরে আমরা জানতে পারি, আনুমানিক ৩৫০০ বছর আগে মোজেস মিসরের ফারাওদের বন্দী দশা থেকে ইসরায়েলীদের মুক্ত করে নিয়ে যায়।

কিন্তু যখন ইসরায়েলীরা মিসর ত্যাগ করার পথে থাকে, তখন ফারাও তাদের যেতে দেওয়ার ব্যাপারে তার মন পরিবর্তন করে। ইসরায়েলীদের আটকানোর জন্য সে তখন ৬০০ ঘোড়ার গাড়ী করে সৈন্য সামন্ত পাঠায়। এরপরের ঘটনা বাইবেলের সূত্র ধরে আমরা সবাই জানি। মোজেস এবং তাঁর অনুসারীদের বাচানোর জন্য খোদা তখন সাগর দুই ভাগ করে দিলো, এবং মোজেস তাঁর অনুসারীদের নিয়ে সাগরে সৃষ্টি হওয়া শুকনো পথ দিয়ে নিরাপদে পার হয়ে গেলো। তাদের পিছু পিছু ফারাও এর বাহিনী আসতে থাকলো।

কিন্তু মোজেস ও ইসরায়েলীরা সবাই পার হয়ে যাওয়ার পরেই ফারাও এর বাহিনীর উপর সাগরের পানি ফিরে এলো এবং তাদের ডুবিয়ে দিলো। বাইবেলের বর্নণা হতে আমরা এটাই জানি। অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করে যে এই ঘটনার ভিন্ন ব্যাখ্যা আছে!
অনেক বিশেষজ্ঞ বদ্ধমূল বিশ্বাস করে যে রেড সী/লোহিত সাগর ( Red Sea)এর পরিবর্তে মোজেস ও তাঁর অনুসারীরা আসলে বড় একটা জলাভূমি পার হয়েছিল, যে জলাভূমি ছিল একদা রীড সী (Reed Sea) এর উত্তরে। মনে করা হয়, এই রীড সী ছিল নাইল ডেল্টার ঠিক পূর্ব দিকে এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হলো, এটা ছিল ভূমধ্যসাগরের উপকূলের অতি নিকটে।
এখানে মজার বিষয় হলো, আমরা যদি সেই আসল হিব্রু বাইবেল পড়ি, তাহলে দেখতে পারি যে লোহিত (Red) শব্দটা পরে ভুল অনুবাদ করা হয়েছে।

আসল হিব্রু বাইবেলে আছে যে মোজেস এবং তাঁর অনুসারীরা ইয়াম ছাপ (Yam Suph) পার হয়, যার অর্থ রীড সাগর বা সী অফ রীডস্ (Sea of Reeds). সুতরাং মোজেস এবং তাঁর অনুসারীরা রেড সী (Red Sea)পার হয় নাই, আসলে তারা পার হয়েছিল রীড সী (Reed Sea)। আর সেই পার হওয়া পথটা সাগরের কোন সরু অঞ্চল ছিল না, বরং সেই জায়গা ছিল ভূমধ্যসাগরের উপকূলের সাথে একটা অগভীর জলাভূমি!
এখন আমরা অনেকেই মনে করতে পারি যে, রীড সাগরকে দুই ভাগ করে শুষ্ক পথ তৈরী করে, পরে সেখানে আবার প্রবল পানির তোড়ে ভাসিয়ে দেওয়া সম্ভব হতে পারে একমাত্র অলৌকিক কিছু থেকে।
কিন্তু আসলেই একটা উপায় আছে, যেখানে প্রকৃতি ঠিক এই কাজটাই করতে পারে, আর সেটা সুনামীর সাথে সম্পর্কযুক্ত! আর এভাবেই প্রকৃতি করতে পারে। পৃথিবীর সভ্যতার ইতিহাসে এযাবৎ কালের সবচেয়ে অন্যতম ব্যাপক ধ্বংসাত্মক অগ্নুৎপাত হয়েছিল আনুমানিক ৩৫০০ বছর আগে, অনেক বিশেষজ্ঞের মতে এটা হয়েছিল ঠিক মোজেসের কাহিনীর সমকালীন সময়ে। এটা ছিল স্যান্তোরিনির সেই ব্যাপক অগ্নুৎপাত যেটার কারনে ক্রীটের মিনোআন সভ্যতা ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল।

স্যান্তোরিনির অগ্নুৎপাত এবং ধ্বসে যাওয়া এতই ভয়াবহ ছিল যে, এর কারনে সাগরে যে বিশাল আয়তনের পানির স্থানান্তর ঘটেছিল, তা থেকেই তখন সুনামী হয়েছিল।
খুব গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হলো, যখন সাগর তার শুন্য জায়গা পুরন করার কাজে ব্যস্ত ছিল, সে তখন আশে পাশের অঞ্চল থেকে বিশেষ করে উপকুল থেকে পানি টেনে নিলো, এমনকি নাইল ডেল্টা থেকেও পানি টেনে নিলো। এটা আসলে সুনামী হওয়ার ঠিক আগমুহুর্তে ঘটে থাকে, একে বলা হয় 'ড্রব্যাক (Drawback)'। (বিঃ দ্রঃ আপনি যদি কখনো সাগর তীরে যেয়ে খেয়াল করেন, তাহলে দেখতে পাবেন যে একটা বড় ঢেউ আসার আগে তীর থেকে পানি কিছু সময়ের জন্য সরে যেয়ে আবার আছড়ে পড়ছে। একটা বড় কোন পাত্রের ভিতর পানি বা অন্য কোন তরল জাতীয় পদার্থ নিয়ে আপনি যদি উপর থেকে টেনে ঊঠান, দেখতে পাবেন যে পাত্রের চারদিক থেকে তরলগুলো সরে আসছে- এটা পরীক্ষা করে দেখতে পারেন।

)
যেহেতু সাগর তার উপকুলবর্তী জায়গা থেকে সব পানি টেনে নিলো, মিসরের রীড সাগর (Reed Sea)অঞ্চলের অগভীর জলাভূমি এলাকা হতে হাজার হাজার কোটি গ্যালন পানি সরে যেয়ে সেখানে প্রায় ২০ মিনিটের জন্য পানিশুন্য হয়ে গেলো, যা একটা শুকনো পথের মতো হয়ে গেলো (সৃষ্টিকর্তা যদি সাগরের পানি দুইভাগ করতো, তাহলেও এভাবেই সমান ফল হতো)। তারপরেই হঠাৎ করে সুনামী এসে কূলে আছড়ে পড়লো, উপকূলের কয়েক মাইল ভিতর পর্যন্ত ভাসিয়ে নিয়ে নদীর উপত্যাকা ডুবিয়ে দিলো। যখন সুনামী আছড়ে পড়লো, ফারাও এর সৈন্য বাহিনী ঐ পানির তোড়েই ডুবে গেলো। এটাই হলো বিষেশজ্ঞদের ব্যাখ্যা। আসলেই যদি স্যান্তোরিনির সেই ভয়াবহ অগ্নুৎপাতের কারনে মিসরে এই সুনামী হয়ে থাকে, সেটা হয়তো প্রজন্মের পর প্রজন্ম মনে রেখেছে, আর এই মহান কাহিনী তৈরী হওয়ার পিছনে সেটা বিরাট অনুপ্রেরনা হিসাবে কাজ করেছে।


কিন্তু এই ঘটনা আসলে প্রাকৃতিক শক্তির একটা উদাহরন। প্রাকৃতিক শক্তির দ্বারা এমনভাবে অবিশ্বাস্য কোন ঘটনা ঘটে, যেটাকে অনেক সময় ' সৃষ্টিকর্তার কারসাজী' বলে ধরা হয়।
desh_bondhu

সোর্স: http://www.sachalayatan.com/

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।