আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ক্রিকেট বিশ্বে বিভক্তি

'দ্বি-স্তর টেস্ট ক্রিকেট' প্রস্তাবিত ঝড়ে লণ্ডভণ্ড হয়ে যেতে বসেছিল বাংলাদেশের ক্রিকেট। পরশু রাত পর্যন্তও মহাবিপদ সংকেত ছিল বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য। কাল দুবাইয়ে আইসিসির দুই দিনব্যাপী সভার প্রথম দিন 'পজেশন পেপার' প্রস্তাবের বিপক্ষে জোরালো অবস্থান নেয় বাংলাদেশ, পাকিস্তান, দক্ষিণ আফ্রিকা ও শ্রীলঙ্কা। এই চার দেশের শক্ত অবস্থানে বাধ্য হয়ে পিছু হটে 'বিগ থ্রি' ভারত, অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ড। ফলে ২০১৫ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত টেস্ট খেলার সম্ভাবনা যে শেষ হয়ে যেতে বসেছিল বাংলাদেশের, সেই শঙ্কা আপাতত কেটে গেছে।

তবে তা এপ্রিল পর্যন্ত। আগামী এপ্রিলে আইসিসির সভায় আবারও দ্বি-স্তরবিশিষ্ট টেস্ট ক্রিকেটের বিষয়টি আলোচিত হবে। প্রস্তাবের বিপক্ষে অবস্থান নেওয়ায় ভারত এশিয়া কাপ ও টি-২০ বিশ্বকাপে অংশ না নেওয়ার হুমকি দেয় বাংলাদেশকে। বাংলাদেশ, পাকিস্তান, দক্ষিণ আফ্রিকা ও শ্রীলঙ্কা বিপক্ষে অবস্থান নেওয়ায় পরিষ্কার দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ল ক্রিকেটবিশ্ব। প্রথম দিনের সভা শেষে আইসিসি জানিয়েছে, এফটিপি অনুযায়ী টেস্ট খেলা হবে।

৯ জানুয়ারি আইসিসির সভায় 'পজেশন পেপার' প্রস্তাবটি দেওয়া হয় পূর্ণাঙ্গ সদস্য-দেশগুলোকে। তখনো বিষয়টি নিয়ে তেমন কোনো আলোচনা হয়নি দেশগুলোর মধ্যে। কিন্তু জনপ্রিয় ক্রিকেট ওয়েবসাইট 'ক্রিকইনফো' সংবাদটি প্রকাশের পর পর বিতর্কের ঝড় বয়ে যায় বিশ্বব্যাপী। সংবাদটি প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গেই প্রতিবাদ জানায় দক্ষিণ আফ্রিকা। এরপর প্রতিবাদ জানায় পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কা।

ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট বোর্ড সভা করে প্রতিবাদ জানিয়েছিল। কিন্তু 'বিগ থ্রি'র লোভনীয় প্রস্তাবে শেষ পর্যন্ত ইউটার্ন দেয় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। অবশ্য জিম্বাবুয়েও শেষ পর্যন্ত সমর্থন দেয় 'বিগ থ্রি'কে। নিউজিল্যান্ডের সমর্থন আগেই ছিল 'বিগ থ্রি'র পক্ষে। ফলে প্রস্তাব পাস করতে প্রয়োজন ছিল আরও দুই ভোটের।

কিন্তু বাংলাদেশ গতকাল নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করে বিপক্ষে দাঁড়ায়। আর তাতেই অস্বস্তিতে পড়ে যায় 'বিগ থ্রি'। যদিও ২৩ জানুয়ারি বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) পরিচালনা পর্ষদের জরুরি সভায় পজেশন পেপারের পক্ষেই সমর্থন দিয়েছিলেন অধিকাংশ পরিচালক। পরে দেশব্যাপী আন্দোলন-প্রতিবাদের ফলে অবস্থান পাল্টায় বিসিবি।

পজেশন পেপারে শুধু দ্বি-স্তর ক্রিকেটের প্রস্তাবই ছিল না।

২১ পাতার প্রস্তাবে ছিল পাঁচটি অনুচ্ছেদ, যার দ্বিতীয়টি ছিল দ্বি-স্তরবিশিষ্ট টেস্ট ক্রিকেট। এতে র্যাঙ্কিংয়ের ৯ ও ১০ নম্বর দেশকে খেলতে হতো ইন্টারকনটিনেন্টাল কাপ। র্যাঙ্কিং অনুযায়ী বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থান ১০। তাই প্রস্তাবটি পাস হলে কনটিনেন্টাল কাপ খেলতে হতো বাংলাদেশকে। অন্য কোনো অনুচ্ছেদ নিয়ে অবশ্য আপত্তি ছিল না বাংলাদেশের।

টেস্ট খেলতে পারবে না প্রতিবাদে ক্ষোভে ফেটে পড়েন বাংলাদেশের ক্রিকেটপ্রেমীরা। আর বিসিবি সভাপতি গতকাল প্রথম দিনের সভায় দ্বি-স্তরবিশিষ্ট টেস্ট ক্রিকেটের বিপক্ষেই অবস্থান নেন। যদিও এতে করে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে বাংলাদেশ। গত বছর যে পরিমাণ অর্থ পেয়েছিল বাংলাদেশ, আগামী মৌসুমে পাবে এর অর্ধেক। আর্থিক ক্ষতি হবে জেনেও নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিসিবির এক পরিচালক বলেন, 'দ্বি-স্তরবিশিষ্ট টেস্ট ক্রিকেটের প্রস্তাবটা একেবারে বাতিল হয়ে যায়নি।

আগামী এপ্রিলে আবারও প্রস্তাবটি উঠবে আইসিসির সভায়। এর আগে এশিয়া কাপ ও টি-২০ বিশ্বকাপটা হয়ে যাচ্ছে, এটাই অনেক বড়। ' সভায় প্রতিনিধিত্বকারী বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন কিংবা বিসিরি ভারপ্রাপ্ত সিইও নিজামুদ্দিন চৌধুরী সুজনের সঙ্গে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি। বিসিবি যে মেইল পাঠিয়েছে তাতে নিজাম উদ্দিন বলেছেন, 'দ্বি-স্তরবিশিষ্ট ক্রিকেটে বিপক্ষে আমরাই একমাত্র অবস্থান নিয়েছি। ' অবশ্য সভার আগে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের (পিসিবি) সভাপতি জাকা আশরাফ বলেন, 'আমরা চার দেশ (বাংলাদেশ, পাকিস্তান, দক্ষিণ আফ্রিকা ও শ্রীলঙ্কা) একসঙ্গে আছি এবং একসঙ্গেই থাকব।

' চার দেশের জোরালো বিরোধিতার ফলে পজেশন পেপারের প্রস্তাবে কিছু পরিবর্তন আনা হয়। আইসিসির নতুন নির্বাহী কমিটির (এঙ্কো) স্থায়ী সদস্যসংখ্যা তিন থেকে বাড়িয়ে পাঁচে উন্নীত করা হতে পারে। এর ফলে ভারত, ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে যোগ হতে পারে দক্ষিণ আফ্রিকা, পাকিস্তান কিংবা শ্রীলঙ্কার যে-কেউ। গতকাল প্রথম দিনের সভা শেষে আইসিসি থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছুই জানানো হয়নি। আজ সংবাদ সম্মেলন করে জানানো হবে।

 

 


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.