আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পঙ্গু শিশু খোকনের কৃত্রিম পায়ের স্বপ্ন ! এই তো জীবন তবু ও বেঁচে থাকতে হবে ....

জ্যোৎস্নায় অজানা পথ চলা ! এখানে ছে যে মোর ভালোবাসা ........ http://ohonil.tk/
‘পেপার লাগব পেপার, গরম-গরম খবর, তাজা খবর, হেফাজতের খবর, হরতালের খবর... আরও কত রকমের ছন্দ তার সুরেলা কণ্ঠে। কিন্তু পত্রিকা বিক্রিতে ছন্দ মেলালেও নিজের জীবনে কিছুতেই ছন্দ মিলছে না ১২ বছরের পঙ্গু শিশু খোকনের। এক পায়ে চলতে চলতে হাপিয়ে উঠলেই জিরিয়ে নেয় সে খানিকটা সময়। আবার হাক ছাড়ে, পত্রিকা নিবেন পত্রিকা...। তার এই হাকে কেউ কেনেন পেপার, আবার কেউ হাতে নিয়ে তাকে দাঁড় করে রেখে হেড লাইনে চোখ বুলিয়ে নিয়ে ফেরত দেন।

তখন তার করুণ চোখে তাকিয়ে থাকা ছাড়া আর উপায় থাকে না। তারা একবারও ভাবেন না এই এক পা ওয়ালা শিশুটির কষ্টের কথা। খোকনও একসময় স্বপ্ন দেখতেন বড় হয়ে চাকরি করবেন। তখন আর সংসারে অভাব থাকবে না। না খেয়ে থাকতে হবে না কোন বেলা।

কিন্তু নিয়তি তার স্বপ্ন ভেঙ্গে জীবনের স্বাভাবিক পথ থেকে ছুড়ে ফেলে দিয়েছে তাকে। বাবা অসুস্থ হলে বাধ্য হয়ে স্কুলের পাঠ চুকিয়ে বাসের হেলপারির কাজ নিতে হয়। তখন স্বপ্ন বদলে যায় তার। লক্ষ্য স্থির করে ফেলে সে বড় হয়ে বাবার মতো সিএনজি ড্রাইভার হবে। আয় রোজগার করে নিজে একটি সিএনজি কেনার কথা ভাবে।

নিজের একটা সিএনজি হলে তখন আর কারো মন-মর্জির ওপর নির্ভর করতে হবে না। কিন্তু তার সেই স্বপ্ন আর পূরণ হলো না। এক ধুমপায়ী যাত্রীর কথা রাখতে গিয়ে তার ভাগ্যের চাকা বিপরীত দিকে ঘুরে যায়। জনতা পরিবহনের হেলপার ছিল খোকন। বাসটি চলত মুরাদনগর –কুমিল্লা রুটে।

তারিখ ঠিকঠাক মনে করতে পারে না সে। তবে জানায়, দু’বছর ৫ মাস আগে বাস থেকে কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় যাত্রী নামাচ্ছিল। একযাত্রী ১০ টাকা হাতে ধরিয়ে দিয়ে ১টি সিগারেট ও ম্যাচ আনার কথা বলে। না বলার সাহস পায় নি। “একটি সিগারেট ও ম্যাচ লইয়া আইয়া দেহি বাস ছাইড়া দিছে।

দৌড়াইয়া ধরতাম চাইছিলাম। পা পিছলাইয়া পইড়া গেছি। একটা তিশা(বাস)মাইরা দিয়া গেছে আমারে। ” আর এই বাসের ধাক্কার সঙ্গে সঙ্গে তার স্বপ্নেরও অপমৃত্যূ ঘটে। হাসপাতালে নেওয়া হলে বাম পা কেটে ফেলে কোন রকমে জানে রক্ষা পায়।

সেই থেকে পঙ্গুত্ব বরণ করে দুর্বিষহ জীবন যাপন করছে ধুমপায়ীর খেয়াল পুরণ করতে যাওয়া এই শিশুটি। পা হারিয়ে অনেক দিন বাড়িতে পড়ে থাকতে হয়েছে তাকে। মা অন্যের বাড়িতে কাজ করে যা আয় করতেন তা দিয়ে বাবার চিকিৎসা ও তাদের দু’বেলাও খাবার জুটত না। চলাফেরার জন্য তার মা কাঠের একটি ক্র্যাচ সংগ্রহ করে দিয়েছিলেন। সেই ক্র্যাচে ভর করেই বাড়ি থেকে বের হয়ে পড়ে খোকন।

কুমিল্লা শহরে এসে একটি বাসে উঠে ঢাকায় আসে সে। কয়েকদিন তার কাটে অনাহারে অর্ধাহারে। এরপর বাধ্য হয়ে যাত্রাবাড়ীতে ভিক্ষা করা শুরু। আয় রোজগার ভালই হতো। বাড়িতেও টাকা পাঠাত কিছু কিছু করে।

কিন্তু ভিক্ষা করতে তার মন চাইত না। শুরু করেন পত্রিকা বিক্রির কাজ। আর রাতে থাকতে হতো সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালের কোন বাসের ভেতরে। কিন্তু ভালো পোশাক পরিয়ে দিলে তাকে ধনীর দুলাল বলে চালিয়ে দেওয়া যায়। এ রকম একটি শিশুকে দেখে সায়েদাবাদ উন্মুক্ত পথশিশু’র স্কুল শিক্ষিকা নিলুফার ইয়াছমিন লিনার মায়া জন্মে।

তিনিই নিয়ে আসেন শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে। এখন সেখানেই থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। শুরু করে সে আবার লেখা-পড়া। তবে এখনও পেপার বিক্রি করতে হয় তাকে বাড়িতে অসুস্থ বাবার চিকিৎসার খরচ যোগানোর জন্য। এখনও স্বপ্ন দেখেন কৃত্রিম পা লাগানোর।

সে জানায় “লিনা আপা তারে কইছে কৃত্রিম পা লাগোনোর ব্যবস্থা করে দিবে। তবে টাকা যোগাড় না হওয়ায় তার এই স্বপ্ন পূরণ হচ্ছে না। খোকন জানায়, “কৃত্রিম পা লাগাতে খরচ হবে ৮ হাজার টাকা। লিনা আপা কইছে ৪ হাজার টাকা দিবে। আর ৪ হাজার টাকা জোগাড় হচ্ছে না।

তাই পা লাগানো সম্ভব হচ্ছে না। আর সে কারণে এখনও ক্র্যাচের ওপর ভর করে প্রতিদিন পত্রিকা বিক্রি করতে হয় যাত্রাবাড়ী এলাকায়। কেউ তাকে সাহায্য করলে তার জন্য আজীবন দোয়া করবে সে। এখনও ঘুমের ঘোরে স্বপ্ন দেখে সে-- তার কৃত্রিম পা লাগানো হয়েছে। সন্ধ্যা হলে বাড়ি ফিরে যায় মায়ের কাছে।

দুর্ঘটনার কথা মনে হয় কি না এমন প্রশ্নের জবাবে মাথা নিচু করে থাকে কিছুক্ষণ। আর ঝরঝর করে পড়তে থাকে চোখের জল। হাত দিয়ে চোখ মুছে নিয়ে খোকন বলে, ভুলে থাকতে চাই ওই ভয়ানক ঘটনার কথা। নিলুফার ইয়াছমিন লিনা বাংলানিউজকে জানান, আমাদের সংগঠন থেকে তাকে ৮ হাজার টাকা দেওয়ার মতো সুযোগ নেই। আমার ব্যক্তিগত ভাবে পুরো টাকা দেওয়া সম্ভব নয়।

তাই তার ইচ্ছা পূরণ করা কঠিন হয়ে পড়েছে। খোকনের গ্রামের বাড়ি কুমিল্লা মুরাদনগর থানার খাকুরায় । ৪ ভাইয়ের মধ্যে সেই বড়। বাবা আগে সিএনজি চালাত। দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ।

বাড়িতেই থাকেন তিনি। লিংক :: Click This Link
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.