আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

থ্যাংক ইউ বাংলাদেশ

এই মুহূর্তগুলোর জন্য আমি বহুদিন ধরে অপেক্ষা করেছি। পৃথিবীর নানা দেশে, নানা শহরে ঘুরেছি, কথা বলেছি। কিন্তু আমি অপেক্ষা করছিলাম বাংলাদেশের জন্য। আমার অপেক্ষা সার্থক হয়েছে। বাংলাদেশে আমি যা পেয়েছি, তাতে কেবল একটা কথাই বলতে পারি—থ্যাংক ইউ বাংলাদেশ।

’গতকাল রোববার বিকেলে প্রথম আলো কার্যালয়ে এসে উচ্ছ্বসিত কণ্ঠে কথাগুলো বলছিলেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ২৩ বছরের ব্রিটিশ তরুণ উদ্যোক্তা ও লেখক সাবিরুল ইসলাম। সিলেটের বিশ্বনাথে বাড়ি তাঁর। তিন বছর বয়সে একবার পরিবারের সঙ্গে বাংলাদেশে এলেও এবার তিনি এলেন ২০ বছর পর। তবে এত দিনে সাবিরুলের খ্যাতি বিশ্বজুড়ে। ২০১০ সালে পৃথিবীর ২৫ তরুণ শিল্পোদ্যোক্তার একজন নির্বাচিত হন সাবিরুল।

এ বছর যুক্তরাজ্যের প্রভাবশালী ১০০ ব্রিটিশ-বাংলাদেশির তালিকায় নাম এসেছে। তাঁর লেখা বই দ্য ওয়ার্ল্ড অ্যাট ইওর ফিট বিক্রি হয়েছে ৬০ হাজার কপি।  ১০ লাখ তরুণের মধ্যে উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্নের বীজ বুনে দিতে ২০১১ সালের মে মাসে সাবিরুল শুরু করেন ‘ইন্সপায়ার ওয়ান মিলিয়ন’ কর্মসূচি। যাত্রা শুরু করেছিলেন মালদ্বীপ থেকে। তারপর শ্রীলঙ্কা, ভারত, নাইজেরিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, বতসোয়ানাসহ বিশ্বের ২৫টি দেশের আট লাখ ৮৫ হাজার মানুষের সঙ্গে কথা বলেছেন।

তবে অপেক্ষা করে ছিলেন বাংলাদেশের জন্য। ২৩ সেপ্টেম্বর ২৬তম দেশ হিসেবে তিনি মাতৃভূমি বাংলাদেশে আসেন। গত এক সপ্তাহে তিনি ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার তরুণদের সঙ্গে কথা বলেছেন।

গতকাল তিনি ঢাকায় সিএ ভবন মিলনায়তনে ৫০০ তরুণের সামনে কথা বলেন। এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে প্রথম আলো।

জুনিয়র
চেম্বার ইন্টারন্যাশনাল (জেসিআই), ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ (ডিসিসিআই), বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস) এতে সহায়তা করে ।

অনুষ্ঠানে সাবিরুল বলেন, পৃথিবীতে ৭০০ কোটি লোক। কিন্তু প্রত্যেকেই স্বতন্ত্র। কাজেই প্রত্যেকের উচিত নিজেকে আবিষ্কার করা। কেউ যদি তাঁর ভেতরের সম্ভাবনা আবিষ্কার করতে পারেন, নিজের উদ্দেশ্য ঠিক করতে পারেন, তাহলে মৃত্যুর পরেও মানুষের মধ্যে তিনি বেঁচে থাকতে পারবেন।

সাবিরুল বলেন, ‘সবাই বলে বাংলাদেশে অনেক সমস্যা। কিন্তু আমি বলি, বাংলাদেশেই সব সম্ভাবনা। এখানে এখনো অনেক কিছু করার আছে। তাই সুখের সন্ধানে উন্নত দেশে গিয়ে হতাশ না হয়ে এ দেশেই তরুণেরা কাজ করতে পারেন। সরকারের দিকে তাকিয়ে না থেকে নিজেরাই উদ্যোক্তা হয়ে অনেক কিছু করতে পারেন তরুণেরা।

সাবিরুল বলেন, ‘আমাদের বাবা-মায়েরা চান ছেলেমেয়েরা ডাক্তার হবে। কিন্তু সবাই যদি ডাক্তারই হয়, তাহলে রোগী আসবে কোথা থেকে? বাবা-মায়েরা এগুলো বুঝতে চান না। তাঁদের কাছে ছেলেমেয়েদের সফলতা মানে প্রতিযোগিতা। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করে ভালো চাকরি করা। ছেলেমেয়েরা নিজে কিছু করবে—এটা তাঁরা ভাবতে পারেন না।

কিন্তু যার মধ্যে যে সম্ভাবনা আছে, তাকে সেটিই করতে দেওয়া উচিত। ’

সাবিরুল শুরু করেন তাঁর জীবনের গল্প। মাত্র ১৪ বছর বয়সে খুলে বসলেন ওয়েবসাইট ডিজাইনের ব্যবসা। ১৭ বছর বয়সে লিখে ফেলেন দ্য ওয়ার্ল্ড অ্যাট ইওর ফিট বইটি। সাড়া পেলেন অভাবনীয়।

পরের নয় মাসে ৩৭৯টি অনুষ্ঠানে তিনি বক্তব্য দিলেন। একই সময়ের মধ্যে বইটি বিক্রি হলো সাড়ে ৪২ হাজার কপি। এরপর শুধুই বদলে যাওয়ার গল্প। তাঁর তৈরি তরুণদের ব্যবসা শেখার গেম ‘টিন-ট্রাপেনার’ যুক্তরাজ্যের ৬৫০টি স্কুলে পাঠ্যসূচির অংশ হিসেবে শিক্ষার্থীদের খেলতে দেওয়া হয়।

তরুণ বয়সেই সারা বিশ্বে খ্যাতি পাওয়া সাবিরুল বলেন, ‘আমাদের সমস্যা আমরা যা চাই তা বলতে পারি না।

আমাদের অনেক পিছুটান। আমাদের বড়রা ভুল বললেও তার সঠিক প্রতিবাদ করতে পারি না। আমাদের এই মানসিকতার পরিবর্তন করতে হবে। যার মধ্যে যে প্রতিভা আছে, তাকে তা-ই করতে দিতে হবে। সাহস করে শুরু করতে পারলে সফলতা আসবেই।

সফল উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য সাতটি পরামর্শ দেন সাবিরুল। তিনি বলেন, সব সময় ইতিবাচক থাকতে হবে। লক্ষ্যে অবিচল থাকতে হবে। স্বাধীনভাবে, মুক্তভাবে চিন্তা করতে হবে। লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য পরিশ্রম করতে হবে।

কেন, কী করছি—সেই উদ্দেশ্য ঠিক থাকতে হবে। আর অর্থকড়ি নয়, মানুষই সবচেয়ে বড় সম্পদ। কাজেই মানুষেই আস্থা রাখতে হবে।

অনুষ্ঠানে প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক আনিসুল হক বলেন, ‘বাংলাদেশের শতকরা ৬০ ভাগ তরুণ। এই তরুণেরা ভালো হলেই দেশটা ভালো হয়ে যাবে, দেশটা আলোকিত হয়ে যাবে।

আর যা কিছু ভালো তার সঙ্গে আছে প্রথম আলো। কাজেই আমরা তরুণদের সঙ্গে আছি। ’

জেসিআইয়ের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘সাবিরুল সারা বিশ্বে ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন অথচ আমরা তাঁকে দেশে আনতে পারছিলাম না। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আমরা পেরেছি। প্রথম আলোকে এ জন্য ধন্যবাদ।

’ বক্তব্য শেষে সাবিরুলকে শুভেচ্ছা স্মারক তুলে দেন প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক আব্দুল কাইয়ুম।

অনুষ্ঠান শেষে সাবিরুল প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমানসহ জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। এ সময় সাবিরুল তাঁর লেখা বইগুলো বাংলায় অনুবাদ করে প্রকাশ করার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য প্রথম আলো কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানান। প্রথম আলোতে তিনি নিয়মিত লিখবেন বলেও জানান। এ সময় সাবিরুল বলেন, ‘বাংলাদেশে আমাকে হয়তো আগে কেউ চিনত না।

কিন্তু প্রথম আলোর ছুটির দিনে আমাকে নিয়ে লেখার পর ফেসবুকে বাংলাদেশ থেকে চার হাজার অনুরোধ পেয়েছি। এসেছে হাজার হাজার মেইল। এবার বাংলাদেশে এসে আমি যা পেলাম তাতে আমি কেবল একটা কথাই বলতে চাই— থ্যাংক ইউ বাংলাদেশ। আমি আবার আসব। আমি ১০ লাখ উদ্যোক্তা তৈরির শেষ মুহূর্তটি বাংলাদেশেই উদ্যাপন করব।

 

সোর্স: http://www.prothom-alo.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।