আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বিংশ শতাব্দীর ভারতীয় বাংলা গানের কিংবদন্তীতূল্য ও জনপ্রিয় সঙ্গীত শিল্পী শচীন দেববর্মণের ১০৭তম জন্মদিনে শুভেচ্ছা

আমি সত্য জানতে চাই
‘শোন গো দখিন হাওয়া প্রেম করেছি আমি’, বাঁশি শুনে আর কাজ নাই -এরকম অসংখ্য গানের গায়ক ও সুরকার হচ্ছেন শচীনদেব বর্মন। শচীন দেববর্মণ যিঁনি তাঁর শ্রোতাদের কাছে এস, ডি, বর্মণ নামেও বিশেষভাবে পরিচিত। তিনি ছিলেন একজন সুবিখ্যাত গায়ক ও সুরকার এবং চিত্রজগতের প্রখ্যাত সঙ্গীত পরিচালক। অনুরাগী মহলের প্রিয় নাম ‘শচীন কর্তা’। ১৯২৩ খ্রিস্টাব্দে শচীন দেববর্মন আকাশবাণী কলকাতা কেন্দ্রে প্রথম গান করেন।

কলকাতা বেতার কেন্দ্র থেকে প্রথম গানেই তিনি অসংখ্য শ্রোতার চিত্ত জয় করেছিলেন। ১৯৩০-এর দশকে তিনি রেডিওতে পল্লীগীতি গেয়ে জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। ১৯৩২ সালে শচীনদেবের প্রথম গ্রামোফোন রেকর্ড প্রকাশিত হয়। ১৯৫৮ সালে শচীনদেব বর্মন ভারতের সঙ্গীত নাটক একাডেমী ও এশিয়ান ফিল্ম সোসাইটি, লন্ডন থেকে সম্মানিত হন। ১৯৬৯ সালে তিনি ভারত সরকারের পদ্মশ্রী উপাধীতে ভূষিত হন।

বিংশ শতাব্দীর ভারতীয় বাংলা গানের কিংবদন্তীতূল্য ও জনপ্রিয় সঙ্গীত শিল্পী শচীন দেববর্মণের ১০৭তম জন্মদিন আজ। জন্মদিনে তার প্রতি আমাদের ফুলেল শুভেচ্ছা। (নবদ্বীপচন্দ্র দেববর্মণ এবং মাতা নিরুপমা দেবীর মাঝে শচীন দেববর্মন) শচীন কর্তা ১৯০৬ সালের পহেলা অক্টোবর কুমিল্লায় ত্রিপুরার চন্দ্রবংশীয় মানিক্য রাজপরিবারের জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম নবদ্বীপচন্দ্র দেববর্মণ এবং মাতা মণিপুরি রাজবংশের মেয়ে নিরুপমা দেবী। শচীন দেববর্মনের পিতা কুমার বাহাদুর নবদ্বীপচন্দ্র দেববর্মন রাজা বীরচন্দ্র মাণিক্যের অর্থানুকূল্যে কুমিল্লার চর্থায় ৬০ একর জমি নিয়ে প্রাসাদ নির্মাণ করেছিলেন।

এই প্রাসাদে ১৯০৬ সালের পয়লা অক্টোবর নবদ্বীপচন্দ্র দেববর্মন দম্পতির ছোট সন্তান শচীন দেববর্মণের জন্ম। (কুমিল্লায় শচীন দেববর্মনের পরিত্যাক্ত বসত বাড়ি) শচীন দেববর্মন ১৯২০ খ্রিস্টাব্দে কুমিল্লা জেলা স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাস করে ভিক্টোরিয়া কলেজে ভর্তি হন। ১৯২২ খ্রিস্টাব্দে ঐ কলেজ থেকে আইএ পাস করে ভিক্টোরিয়া কলেজে বিএ ক্লাসে ভর্তি হন। কৃতিত্বের সাথে বিএ পাস করার পরে ১৯২৪ খ্রিস্টাব্দে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে এমএ তে ভর্তি হন। লেখা পড়ার সুবিধার্থে শচীন দেববর্মন ১৯২৫ খ্রিস্টাব্দে কুমিল্লা থেকে কলকাতা চলে আসেন।

পরবর্তীতে ১৯৩১ খ্রিস্টাব্দে পিতা নবদ্বীপচন্দ্র দেববর্মন কলকাতায় দেহত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তিনি ছিলেন ত্রিপুরার প্রধানমন্ত্রী। শচীন দেবমর্বনের পিতা কুমার বাহাদুর নবদ্বীপচন্দ্র দেববর্মন ছিলেন একজন সেতারবাদক এবং ধ্রূপদী সঙ্গীতশিল্পী। তিনিই ছিলেন শচীন দেববর্মনের প্রথম শিক্ষক। এরপর তাঁর সঙ্গীত শিক্ষা চলে উস্তাদ বাদল খান এবং বিশ্বদেব চট্টোপাধ্যায়ের তত্ত্বাবধানে।

ধ্রূপদী সঙ্গীতের এই শিক্ষা তাঁর মধ্যে সঙ্গীতের মৌলিক জ্ঞান সঞ্চারে গভীর ভূমিকা পালন করে। এই শিক্ষা তাঁর পরবর্তী জীবনের সুর-সাধনায় প্রভাব বিস্তার করেছিল। পরবর্তীতে তিনি উস্তাদ আফতাবউদ্দিন খানের শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন। বাংলা গানের কিংবদন্তী এই সঙ্গীত শিল্পী ১৯৩২ খ্রিস্টাব্দে ভারতের শীর্ষ রেকর্ড প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান এইচএমভিতে অডিশনে ফেল করে ছিলেন। তাই বলে দমে যাননি তিনি।

ফলশ্রুতিতে এবছরই তার প্রথম গ্রামোফোন রেকর্ড বের হয় হিন্দুস্তান মিউজিক্যাল প্রোডাক্টস থেকে। শচীন দেবের প্রথম রেকর্ডকৃত দুটি গান হল পল্লীগীতির ঢঙে গাওয়া "ডাকিলে কোকিল রোজ বিহানে" যার গীতিকার হেমেন্দ্র কুমার রায় এবং খাম্বাজ ঠুমরি অঙ্গের রাগপ্রধান "এ পথে আজ এসো প্রিয়" যার গীতিকার শৈলেন রায়। ১৯৩৪ খ্রিস্টাব্দে অল ইন্ডিয়ান মিউজিক কনফারেন্সে তিনি গান গেয়ে সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। ১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দে বেঙ্গল মিউজিক কনফারেন্সে ঠুমরি পেশ করে ওস্তাদ ফৈয়াজ খাঁকে মুগ্ধ করেছিলেন। শেখ ভানুর রচনা ‘নিশিথে যাইয়ো ফুলবনে’ দেহ ও সাধনতত্ত্বের গানটিকে প্রেমের গানে রূপান্তর করলেন কবি জসীমউদ্দীনকে দিয়ে এবং রূপান্তরিত এই গানটি রেকর্ড করলেন ১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দে।

১৯৩৭ খ্রিস্টাব্দে রাজগী নামক চলচ্চিত্রের মাধ্যমে তার সঙ্গীত পরিচালনা জীবনের শুরু। ১৯৪৪ খ্রিস্টাব্দ থেকে শচীন দেব বর্মন স্থায়ীভাবে মুম্বাইয়ে বসবাস করতে শুরু করেন। ( স্ত্রী মীরা দেবীর সাথে শচীন দেববর্মন) গত প্রায় একশত বৎসরেও বাংলা গানের শ্রোতাদের কাছে তাঁর কালোত্তীর্ণ গানের আবেদন কিছুমাত্র লঘু হয়নি। কেবল সঙ্গীতশিল্পী হিসাবে নয়, গীতিকার হিসাবেও তিনি সার্থক ছিলেন। তিনি বিভিন্ন চলচ্চিত্রেও সঙ্গীত পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেছেন।

১৯৩৭ এ শচীন দেববর্মন তাঁর ছাত্রী মীরা ধরকে বিয়ে করেন। পরবর্তীতে তাঁর সহধর্মিনী মীরা দেববর্মণ গীতিকার হিসাবে বিশেষ খ্যাতি অর্জন করেন। বাংলা গানের জগতে মীরা ধর তথা মীরা দেববর্মণ এক অসামান্য গীতিকার। শচীন দেব বর্মণের অনেক বিখ্যাত গানের গীতিকার তিনি। মীরা নিজেও প্রথিতযশা সুরকার অ শিল্পী ছিলেন।

মীরা ধর ছিলেন শচীন দেববর্মনের সঙ্গীত জীবনের বিশ্বস্ত সঙ্গী। তাঁর লেখা গানের মধ্যে আছেঃ ১। শোন গো দখিন হাওয়া, ২। বিরহ বড় ভাল লাগে, ৩। গানের কলি সুরের দুরিতে, ৪।

ঘাটে লাগাইয়া ডিঙা, ৫। বর্ণে গন্ধে ছন্দে গীতেতে, ৬। কালসাপ দংশে আমায়, ৭। কে যাস রে ভাটি গাঙ্গ বাইয়া, ৮। কী করি আমি কী করি, ৯।

না আমারে শশী চেয় না, ১০। নিটোল পায়ে রিণিক ঝিনিক. ১১। টাগডুম টাগডুম বাজে উল্লেখযোগ্য (রাহুল দেববর্মণ) শচীন দেববর্মন দম্পতির পুত্র রাহুল দেববর্মণও ভারতের বিখ্যাত সঙ্গীত পরিচালক এবং সুরকার ছিলেন। বাংলা গানের কিংবদন্তী এই সঙ্গীত শিল্পী ১৯৭৫ সালের এপ্রিল মাসে প্যারালিটিক স্ট্রোক হয়ে কোমায় ছিলেন পাঁচ মাস। এ বছরের ৩১ আগষ্ট মুম্বাইতে মৃত্যুবরন করেন এই গুণী শিল্পী।

মৃত্যুর পরেও এই গুণী শিল্পী তার অবিনাশী কর্মের জন্য অমর হয়ে আছেন সঙ্গীত পিপাশুদের মাঝে। শচীন কর্তার গান শুনতে ক্লিক করুনঃ শচীন কর্তার গান বিংশ শতাব্দীর ভারতীয় বাংলা গানের কিংবদন্তীতূল্য ও জনপ্রিয় এই সঙ্গীত শিল্পীর জন্ম দিনে আমাদের ফুলেল শুভেচ্ছা।
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.