আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

প্রগতিশীলতার নামে এসব কিসের আলামত?

ভারতের পাঞ্জাব রাজ্যে আবারও গণধর্ষণের শিকার হয়েছে ২৯-বছর বয়সী এক মহিলা। শুক্রবার রাতে ওই মহিলা বাসে চড়ে গ্রামের বাড়িতে যাওয়ার সময় বাস ড্রাইভারসহ পাঁচ ব্যক্তি জোরপূর্বক তাকে ধর্ষন করে। গত মাসে রাজধানী দিল্লিতে ২৩-বছর বয়সী এক ছাত্রী বাসে ধর্ষিত হন। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে হাসপাতালে নেয়ার কয়েক দিন পর ঐ মেডিকেল স্টুডেন্ট মারা যায়। এই ঘটনায় অনেকে শোক প্রকাশ করছেন, চোখের পানিও ফেলছেন।

এমনকি মিডিয়ার কল্যাণে আমরা সিঙ্গাপুর হাসপাতালে ভারতীয় রাষ্ট্রদূতের চোখেও পানি ঝরতে দেখেছি। ভারতের নয়াদিল্লীতে বিক্ষোভের আশঙ্কায় সর্বোচ্ছ সতর্কাবস্থা জারি করা হয়েছিল পুলিশের পক্ষ থেকে। জনগণকে ঐ ঘটনার বিরুদ্ধে কঠোর প্রদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাসও দেওয়া হয়েছিল সরকারের পক্ষ থেকে। বেশকিছুদিন যাবত ভারতজুড়ে ঐ ঘটনা ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল এবং গণবিক্ষোভ সামাল দিতে সরকারকে রীতিমত বেগ পেতে হয়েছিল। কোন এক প্রেক্ষাপটে ঐ ধর্ষনের ঘটনাটি মিডিয়ায় ব্যাপকভাবে আলোচিত এবং ভারতের জনগণের দৃষ্টি আকর্ষন করলেও এরকম আরো হাজারো ধর্ষণের ঘটনা ঘটে যাচ্ছে মিডিয়া ও জনগণের আড়ালে।

এমনকি ঐ ঘটনাটি যখন ব্যাপকভাবে আলোচিত হচ্ছিল ঠিক তখনও আরো একটি ধর্ষণের খবর আসে মিডিয়াতে যেটি তেমন আলোচিত হয়নি। দু চার দশদিন এই ঘটনা নিয়ে মিডিয়াতে শোরগোল থাকলেও এর মাত্র কয়েকদিন ব্যবধানে আবারও একই কায়দায় আরো একটি ধর্ষনের ঘটনা ঘটে গেল, ধর্ষনের ঘটনা এখন ভারতের একটি নিয়মিত ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। ‘প্রগতিশীল’ ভারতের এই রূপ খুব বেশি অপ্রত্যাশিত ও নয়। আজকের ভারতে অতীতের যে কোনো সময়ের তুলনায় অধিক নারীকে জোর পূর্বক ঠেলে দেয়া হচ্ছে পতিতাবৃত্তিতে। শিশুরা যৌন নির্যাতনের শিকার হচ্ছে অতীতের যে কোন সময়ের তুলনায় বেশি, নাইট ক্লাবের সংখ্যা আর মদ্যপান ছাড়িয়ে গিয়েছে অতীতের সকল রেকর্ড।

পশ্চিমাদের দেখিয়ে দেয়া নারী স্বাধীনতায় আজ ভারতের নারীরা এই উপমহাদেশের যে কোন দেশের তুলনায় অনেক বেশি তথাকথিত ‘স্বাধীন’ কিন্তু একই সাথে সব থেকে বেশি নির্যাতিতও। অবাধ যৌনতার চোখ ধাঁধানো সব মিডিয়ার আড়ালে হারিয়ে গিয়েছে অসংখ্য নারীর অশ্রু। প্রগতিশীল ভারতে নারী আজ কেবলই পন্য যাকে কেনা যায় টাকা দিয়ে। ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লীতে ২০১১ তে ধর্ষনের শিকার হয়ে পুলিশের দ্বারস্ত হয়েছেন ৫২২ জন আর ২০১২ তে ৬৫০ এর বেশি। এটি কেবল তাদের নারী স্বাধীনতার ক্ষুদ্র একটি চিত্র, এর বাইরে বিশাল একটি অংশ মান-সম্মানের ভয়ে পুলিশের দ্বারস্তও হননি।

এই সকল পরিসংখ্যান দ্বারা বুঝা যায় ভারতের নারী স্বাধীনতার প্রকৃত চিত্র কতটা ভয়াবহ। ভারত তথাকথিত ‘প্রগতিশীলতার’ দিকে যতবেশি এগিয়ে যাচ্ছে দিন দিন তাদের দেশে এইসব ধর্ষনের ঘটনা বেড়েই চলেছে, ভবিষ্যতে হয়তো আরো বাড়বে, এতে কোন সন্দেহ নেই। আর এতে অবাক হওয়ারও কিছু নেই। কারণ, যেদেশে অবাধে যৌন উত্তেজক প্রডাক্টগুলো তরুণদের হাতে তুলে দেয়া হয়, যে দেশের মিডিয়াগুলোতে পর্ণ ওয়েবসাইটগুলোর প্রকাশ্য বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়, যে দেশের সিনেমাগুলো শিলা কি জাওয়ানি আর মুন্নি বদনামের মত সুড়সুড়ি আইটেম গান ছাড়া চলেনা, যেদেশে একটা বডিস্প্রের বিজ্ঞাপন দিতে বডিস্প্রের সুগন্ধে সবার সামনে শশুরের মত ব্যক্তির গায়ের পোশাক খুলে যৌনাবেগের দৃষ্টিতে তাকানো হয়, যে দেশের একটা ক্রিকেট চ্যানেল পর্যন্ত ওভারের মাঝখানে দেখায় কনডমের বিজ্ঞাপন আর সেখানে লিখা থাকে get ready for the naughty world তাদের দেশে এমন ঘটনা ঘটবে এটাই স্বাভাবিক। তারা তাদের তৈরি naughty world এ রকম naughty প্রবলেমে পড়বেন এটাই স্বাভাবিক।

এটা নিয়ে আমাদের আফসোস করার কিছু নেই....!! কিন্তু আমরা শঙ্কিত আমাদের দেশের কথা ভেবে, আজ থেকে ৫ বছর আগেও আমাদের সংস্কৃতির সাথে ভারতীয় সংস্কৃতির অনেক তফাৎ ছিল, এখনও অনেকটাই আছে, সন্দেহ নেই। কিন্তু ভারতীয় আকাশ সংস্কৃতি যেভাবে দিন দিন আমাদের দেশের তরুণ তরুণীদের গ্রাস করছে তাতে অচিরেই যে আমাদের দেশের অবস্থাও ভারতীয় এবং পশ্চিমা সংস্কৃতিতে রুপা্ন্তরিত হবে তা খুব সহজে আন্দাজ করা যায়। আমাদের দেশে আড়ালে আবডালে ইতিপূর্বে অনেক পরকীয়া সম্পর্কের নজির পাওয়া গেলেও তার জন্য সামাজিক কড়া একটা অনুশাসন ছিল। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে এই পরকীয়া সম্পর্ক কিংবা তরুণ তরুণীদের অবৈধ সম্পর্কগুলোকে বৈধতায় রুপ দেওয়ার জন্য এক ধরণের সার্থান্বেষী মহল ভারতীয় শিল্পীদের এদেশের স্টেডিয়ামে ভাড়া করে এনে প্রকাশ্যে উন্মুক্ত যৌন প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে যেখানে জনৈক ভারতীয় জনপ্রিয় শিল্পী এদেশের লক্ষ লক্ষ দর্শকের সামনে এদেশেরই এক গৃহবধুকে প্রকাশ্যে কিস পর্যন্ত করে বসল আর আমাদের দর্শকবৃন্দ করতালি দিয়ে তাকে অভিনন্দন জানালো। এমনকি অতীতে এদেশের সিনেমাগুলোতে দেশী চলচ্চিত্রের প্রদর্শনী থাকলেও তাতে জাতির মোড়লদের আয়েশ পূর্ণ হয় না, তাই সংস্কৃতি বিনিময়ের নামে ভারতীয় অশ্লীল চলচ্চিত্রগুলো প্রদর্শনের আয়োজন করা হল।

আমাদের বুদ্ধিজীবি মহল তাতেও বিচলিত নয়। তবে কিছুদিন যেতে না যেতেই যখন ইভটিজিং নামে এইসব সংস্কৃতি বিনিময়ের উপসর্গ প্রকাশিত হওয়া শুরু করল তখন হৈ চৈ পড়ল নারী অধিকার নিয়ে। এসব ঘটনার আরো ভয়ংকর উপসর্গ হয়ে দেখা দিয়েছে সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশেও বেশকিছু নারী ধর্ষণের ঘটনা। ভারত এবং বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ধর্ষণের ঘটনাগুলো বিচার বিশ্লেষণ করে দেখা যায় যে, অধিকাংশ ক্ষেত্রে এসব ইভটিজিং এবং ধর্ষনের ঘটনার কারণ আইনের কঠোর প্রয়োগের অভাব, নারীদের অবাধ চলাফেরা, ধর্মীয় অনুশাসন মেনে না চলা এবং ভারতীয় ও পশ্চিমা আকাশ সংস্কৃতির অবাধ বিস্তার। অতএব, এসব সামাজিক দুর্যোগ প্রতিরোধ করার জন্য আইনের কঠোর প্রয়োগের পাশাপাশি ভারতীয় ও পশ্চিমা আকাশ সংস্কৃতির অবাধ বিস্তার নিয়ন্ত্রন এবং ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলতে জনগণকে উৎসাহিত করার বিকল্প নেই।

অথচ দুঃখের বিষয় হচ্ছে, আজকে বরং ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলা নারীদেরকেই বিভিন্ন অজুহাতে হেনস্তা করে এবং নারীদের পরনের হিজাব খুলে নিয়ে তথাকথিত প্রগতির দিকে বাংলাদেশের নারীসমাজকে উৎসাহ প্রদান করা হচ্ছে, আমাদের জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পীকারতো একবার বলেই বসলেন নারীরা বোরকা পরে তাদের কুৎসিত চেহারা ঢাকার জন্য, আর সাবেক টেলিযোগাযোগমন্ত্রী রাজি উদ্দিন আহমেদ রাজু আবিষ্কার করলেন যে, নারীদেরকে বোরকা পরা থেকে বিরত রাখতে হলে তাদেরকে ছোটকাল থেকে নাচগানের স্কুলে ভর্তি করাতে হবে। সরকারের কর্তাব্যক্তিদের এসব কথাবার্তা, ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে সরকারের অব্যাহত বৈরী আচরণ, পহেলা বৈশাখ কিংবা থার্টি ফার্স্ট নাইটের মত অবাধ যৌনপ্রদর্শনীগুলোতে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা প্রদান এবং বাংলাদেশে ভারতীয় ডিশ চ্যানেলগুলোর অবাধ যৌন প্রদর্শনীর সুযোগ প্রদান সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের পরিস্থিতিও অনেকটা ভারতের কাছাকাছি নিয়ে এসেছে। অবিলম্বে এই যৌনতার অবাধ বিস্তার বন্ধ করা না গেলে সেদিনও হয়তো আর বেশি দূরে নয় যেদিন ভারতের এই মেডিকেল ছাত্রীর মত আমাদের দেশের পথে ঘাটেও আমাদের মা-বোনরা অবলীলায় নির্যাতীত হতে থাকবে। তাই অবিলম্বে এসব সামাজিক দুর্যোগ প্রতিরোধে সরকারের আশু প্রদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি হয়ে পড়েছে। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.