আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

এটিএম বুথ আতঙ্ক

রীতিমতো আতঙ্কের বিষয় হয়ে উঠছে ব্যাংকের এটিএম বুথগুলো। কেবল গ্রাহক নয়, এসব বুথের সুরক্ষায় দায়িত্বরত ব্যক্তিরাও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। বুথগুলোতে পর্যাপ্ত সিসি ক্যামেরা এবং প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা না থাকায় মাঝেমধ্যেই ঘটছে ভয়ঙ্কর ঘটনা। দুর্বৃত্তরা ওতপেতে থাকছে এটিএম বুথের সামনে। আবার অনেক ক্ষেত্রে রক্ষকরাই ভক্ষকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হচ্ছেন।

তবে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান কিংবা আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোও এসব বিষয়ে অনেকটাই উদাসীন বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের। বিশেষ করে গতকাল ভোর রাতে মোহাম্মদপুর এলাকায় এটিএম বুথের নিরাপত্তারক্ষী খুন হওয়ার পর উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন এটিএম গ্রাহকসহ এর সংশ্লিষ্টরা। এসব অভিযোগের সঙ্গে একমত পোষণ করে র্যাবের গোয়েন্দা শাখার পরিচালক লে. কর্নেল জিয়াউল আহসান বলেন, এসব ত্রুটির কারণে অনেক সময় অপরাধীদের ধরাও সম্ভব হয় না। এ বিষয়টি আমরা লিখিতভাবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানাব। অনুসন্ধানে জানা গেছে, গতকাল ভোর ৫টা ১০ মিনিট।

মোহাম্মদপুর নূরজাহান রোডের ডাচ-বাংলা ব্যাংকের ফাস্ট ট্র্যাক বুথ। এতে চারটি টাকা উঠানোর এবং একটি টাকা জমা দেওয়ার মেশিন রয়েছে। কয়েকটি ফাস্ট ট্র্যাকের ভেতরে নিরাপত্তা কর্মী এরশাদ ঘুমাচ্ছেন। অন্য নিরাপত্তা কর্মী এনামুল হক বুথের বাইরে শাড়ি পরিহিত এক মহিলার সঙ্গে কথা বলছেন। এ সময় একটি প্রাইভেটকার তাদের পাশ দিয়ে চলে যায়।

ভোর ৫টা ২৬ মিনিট। একই স্থানে এনামুলকে ঘিরে ৩-৪ জন মানুষ। তাদের একজন শার্ট-লুঙ্গি পরিহিত আরেকজনের শার্ট-প্যান্ট পরিহিত। তবে সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ ঝাপসা হওয়ায় অনেক কিছুই বুঝা যাচ্ছিল না। কিছুক্ষণ পরই এটিএম বুথের সামনে নিরাপত্তা কর্মী এনামুল হাঁসফাঁস করতে করতে মারা যান।

এর আগে গত ৭ সেপ্টেম্বর, শনিবার একটি দৈনিক পত্রিকার বিজ্ঞাপন নির্বাহী ফারুক আহমেদ ফরহাদের কাছ থেকে অস্ত্রের মুখে ছিনিয়ে নেওয়া ডাচ-বাংলা ব্যাংকের এটিএম কার্ড দিয়ে দুর্বৃত্তরা সন্ধ্যা ৬টা ২৪ মিনিটে নিকুঞ্জ-২ কবি ফারুক সরণির ৫ নম্বর বাড়ির ডাচ-বাংলা ব্যাংকের ফাস্ট ট্র্যাক অ্যান্ড এটিএম বুথ (রিজেন্সি হোটেলের পেছনে) থেকে টাকা উঠিয়ে নেয়। তবে ডাচ-বাংলা এটিএম বিভাগ থেকে সংগ্রহকৃত ফুটেজেও দুর্বৃত্তদের টাকা উঠানোর স্পষ্ট ফুটেজ পাওয়া যায়নি।

গত ৩১ আগস্ট রাত ১০টার দিকে আবদুল গফুর সরদার নামের এক ব্যক্তি উত্তরার জসিম উদ্দিন রোডের ডাচ-বাংলা ব্যাংকের একটি এটিএম বুথ থেকে তিনি চার লাখ টাকা উত্তোলন করে বাসায় ফেরার পথে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে ছিনতাইকারীরা সবকিছু কেড়ে নেয়।

গত ১০ ফেব্রুয়ারি গভীর রাতে রাজধানীর পান্থপথে ডাচ-বাংলা ব্যাংকের একটি এটিএম বুথে টাকা লোডের (ঢোকানোর) সময় নিরাপত্তা কর্মীদের অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ৮৩ লাখ চার হাজার ৫০০ টাকা ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনাও ঘটেছে।

অন্যদিকে, ক্রেডিট এবং এটিএম জালিয়াত চক্রের সদস্যরা সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের কোনো আইটি (ইনফরমেশন টেকনোলজি) এঙ্পার্ট কিংবা সিস্টেম এনালিস্টের ভুয়া পরিচয়পত্র তৈরি করে এটিএম বুথ কিংবা ফাস্ট ট্র্যাকের নিরাপত্তা প্রহরীদের রীতিমতো বোকা বানিয়ে ইতোমধ্যেই বিপুল পরিমাণ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার ঘটনাও ঘটেছে।

এর মধ্যে ডিবি পুলিশ গত ২৩ জুলাই জালিয়াত চক্রের হোতা মো. সেলিম ও তার তিন সহযোগীকে গ্রেফতার করে।

লে. কর্নেল জিয়াউল আহসান বলেন, ঈদকে সামনে রেখে ছিনতাইকারীর মতো দুর্বৃত্তরা জেগে উঠার চেষ্টা করছে এমন খবর রয়েছে। তবে র্যাবও প্রস্তুত। নগরবাসীর নিরাপত্তার স্বার্থে টহলের সংখ্যাও বাড়ানো হচ্ছে। তিনি আরও জানান, ডিবির জ্যেষ্ঠ সহকারী কমিশনার তৌহিদুল ইসলাম জানান, ক্রেডিট কার্ড কিংবা এটিএম কার্ড জালিয়াতির সব প্রক্রিয়াই যথাযথ কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।

এখন তারাই সিদ্ধান্ত নেবেন।

নিরাপত্তাকর্মীকে হত্যা : রাজধানীর মোহাম্মদপুরে ডাচ-বাংলা ব্যাংকের এটিএম বুথের নিরাপত্তাকর্মী এনামুল হক (২৫) খুন হয়েছেন। গতকাল ভোর ৬টায় নূরজাহান রোডের এটিএম বুথের সামনের ফুটপাত থেকে পুলিশ তার রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার করে। তবে বুথের ভেতর ঘুমিয়ে থাকা অপর নিরাপত্তাকর্মী এরশাদকে অক্ষত অবস্থায় পাওয়া গেছে। তালাবদ্ধ বুথের ভেতর থেকে এরশাদকে বের করে নিয়ে আসে পুলিশ।

এরা দুজনই নিরাপত্তারক্ষী সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান 'এলিট ফোর্স'-এর কর্মী। র্যাব ও পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়। সিআইডি ঘটনাস্থল থেকে বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ করে। পুলিশ জানায়, ভোর ৫টার পর কোনো এক সময়ে দুর্বৃত্তরা ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়িভাবে কুপিয়ে এনামুলকে ফুটপাতে ফেলে রেখে যায়। দুর্বৃত্তরা এটিএম বুথের টাকা লুট করতে পারেনি।

ভাঙচুর করার মতো কোনো চিহ্ন নেই বুথে। তালাবদ্ধ বুথের ভেতর ঘুমিয়ে ছিল অপর নিরাপত্তাকর্মী এরশাদ। এনামুলের পকেট থেকে চাবি নিয়ে বুথ খুলে এরশাদকে বের করা হয়।

তেজগাঁও জোনের উপ-পুলিশ কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার বলেন, হত্যার ঘটনাটি রহস্যজনক। দুর্বৃত্তরা নিরাপত্তাকর্মী এনামুলকে হত্যা করলেও তার কাছ থেকে কিছুই ছিনিয়ে নেয়নি।

এমনকি এটিএম বুথ থেকে কোনো টাকা ?লুটের ঘটনাও ঘটেনি। তবে বুথের সিসিটিভিতে কিছু দৃশ্য ধরা পড়েছে। তিনি বলেন, সিসিটিভির ফুটেজে দেখা গেছে, ভোর ৫টা ১০ মিনিটে এনামুল একজন নারীর সঙ্গে কথা বলেন। ৫টা ২৬ মিনিটে কিছু লোকজন তার সামনে দেখা যায়। তারা হট্টগোল করছিল বলে মনে হচ্ছিল ফুটেজ দেখে।

ধারণা করা হচ্ছে, তখনই হত্যাকাণ্ডটি ঘটে। ফুটেজটি স্পষ্ট না হওয়ায় পরিষ্কার কিছু বলা যাচ্ছে না।

মোহাম্মদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আজিজুল হক বলেন, নারী ঘটিত, ব্যক্তিগত শত্রুতা নাকি বুথের টাকা লুটের কারণে এ হত্যাকাণ্ড ঘটেছে, তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।

স্থানীয় সূত্রগুলো জানায়, কারা এনামুলকে কুপিয়েছে তা কারও নজরে পড়েনি। তবে রক্তাক্ত অবস্থায় ফুটপাতের ওপর তাকে ছটফট করতে দেখেছে অনেকেই।

কিন্তু ভয়ে কেউ তাকে উদ্ধারে এগিয়ে যায়নি। পরে স্থানীয় লোকজন পুলিশকে খবর দিলে পুলিশ ও র‌্যাব ঘটনাস্থলে পৌঁছে। ততক্ষণে এনামুল আর বেঁচে ছিলেন না।

স্থানীয় অপর একটি সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরেই এনামুল ওই এলাকায় নিরাপত্তাকর্মী হিসেবে কাজ করছেন। তার সঙ্গে স্থানীয় এক মহিলার সম্পর্ক ছিল।

এ সম্পর্কের জের ধরেই হত্যাকাণ্ডটি ঘটতে পারে বলে তাদের ধারণা।

নিরাপত্তারক্ষী সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান এলিট ফোর্সের পরিচালক খোরশেদ আলম জানান, রাত ১০টা থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত এনামুল ও এরশাদ নামের দুই কর্মী ওই বুথের দায়িত্বে ছিলেন। কর্মীরা ঠিকমতো দায়িত্ব পালন করছে কিনা দেখার জন্য আমাদের নিয়মিত টহল দল আছে। সর্বশেষ ভোর ৪টার দিকে তারা জানায়, ওই বুথের সব ঠিক আছে।

ওই বুথের দায়িত্বে থাকা আরেক নিরাপত্তাকর্মী এরশাদুল হক জানান, রাত ১০টা থেকে সকাল পর্যন্ত তারা পালাক্রমে ডিউটি করেন।

ডিউটিকালে একজন বাইরে থাকেন এবং অপরজন ভেতরে বিশ্রাম নেন। শনিবার রাত ১০টা থেকে ডিউটি শুরুর পর আনুমানিক রাত ১টার দিকে এনামুলের মোবাইলে একটি কল আসে। এ সময় এনামুল কথা বলতে বলতে রাস্তার সামনে ফুটপাতে চলে যান। তিনি বুথের ভেতরে ছিলেন। রাত ২টার দিকে এক পর্যায়ে ঘুমিয়ে পড়েন।

ভোরে লোকজনের চিৎকারে তার ঘুম ভাঙে। কিন্তু চাবি এনামুলের পকেটে থাকায় তিনি বের হতে পারেননি।

এনামুলের বাড়ি কিশোরগঞ্জের তাড়াইল। লাশ ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে পাঠানো হয়েছে। গতকাল সন্ধ্যায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত সময়ে কোনো মামলা হয়নি।

তবে মামলার প্রস্তুতি চলছিল বলে পুলিশ জানায়।

 

 

সোর্স: http://www.bd-pratidin.com/

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.