আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অরক্ষিত এটিএম বুথ!

৭ সেপ্টেম্বর, শনিবার। সন্ধ্যা ৬টা ২৪ মিনিট। রাজধানীর নিকুঞ্জ-২ কবি ফারুক সরণির ৫ নম্বর বাড়ির ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের ফাস্ট ট্র্যাক অ্যান্ড এটিএম বুথ (রিজেন্সি হোটেলের পেছনে)। ফাস্ট ট্র্যাক মেশিন নম্বর-৫। টাকা তুলতে সাদা লুঙ্গি ও সবুজ টিশার্ট পরিহিত অজ্ঞাত এক যুবকের আগমন।

সঙ্গে তারই সহযোগী বেগুনি রঙের ফুলহাতা ফতুয়া এবং নীল জিন্স পরিহিত আরেক যুবক। এক মিনিটের মধ্যেই ২০ হাজার টাকার প্রথম ট্রানজেকশন সম্পন্ন করেন লুঙ্গি পরিহিত যুবকটি। তবে তার চেহারা ভালো করে বোঝা যাচ্ছিল না। প্রথম লেনদেনের পর ফাস্ট ট্রাকের ভেতরেই সঙ্গে থাকা সহযোগীর সঙ্গে এক মিনিটের কথোপকথন সারেন তিনি। এ সময় টেনশনে বারবার ঘাম মুছছিলেন বেগুনি রঙের ফতুয়া পরিহিত ওই যুবকটি।

৬টা ২৬ মিনিটে দ্বিতীয়বারের মতো একই ফাস্ট ট্রাক মেশিনে এটিএম কার্ড পাঞ্চ করেছিলেন লুঙ্গি পরিহিত যুবকটি। তিন দফায় ১০ হাজার, ৫ হাজার এবং ৩ হাজার টাকা উঠিয়ে ওই দুই যুবক ফাস্ট ট্রাক ত্যাগ করে। গত ৭ সেপ্টেম্বর একটি দৈনিক পত্রিকার বিজ্ঞাপন নির্বাহী ফারুক আহমেদ ফরহাদের কাছ থেকে অস্ত্রের মুখে ছিনিয়ে নেওয়া ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের এটিএম কার্ড পাঞ্চ করে দুর্বৃত্তদের টাকা উঠানোর দৃশ্য। লিখিত অভিযোগ দায়েরের পর ঘটনাটিকে বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে নেন আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা। ইতোমধ্যে তারা দুর্বৃত্তদের টাকা উঠানোর দৃশ্যের ফুটেজও সংগ্রহ করেছেন।

ওইদিন সন্ধ্যা আনুমানিক ৬টার দিকে বনানী-মিরপুর ফ্লাইওভারের সামনে মিরপুরগামী বাসের জন্য অপেক্ষা করছিলেন ওই ভুক্তভোগী ফরহাদ। একপর্যায়ে মিরপুরগামী একটি মাইক্রোবাসে তিনি উঠেন। কিছুদূর যেতেই মাইক্রোবাসের অপর যাত্রীদের প্রকৃত চেহারা প্রকাশ পেতে থাকে। একপর্যায়ে অস্ত্র ঠেকিয়ে ফরহাদের ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের এটিএম কার্ড কেড়ে নিয়ে তার পিন জেনে নেয়। প্রথমে ভুল পিন নম্বর দেওয়ায় তাকে নির্মমভাবে পেটায়।

পরে আসল পিন কোড দেওয়ার পর নিকুঞ্জ এলাকার ওই বুথ থেকে দুর্বৃত্তরা ৩৮ হাজার টাকা উঠিয়ে নিয়ে তাকে পুনরায় কুড়িল ফ্লাইওভারে নিয়ে ফেলে দিয়ে চলে যায়। র্যাবের গোয়েন্দা শাখার পরিচালক লে. কর্নেল কিসমত হায়াৎ জানান, অপরাধীদের ধরতে পুরো এলাকায় নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। ইতোমধ্যেই শুরু হয়েছে সাঁড়াশি অভিযান। খুব শীঘ্রই হয়তো তাদের গ্রেফতার করা সম্ভব হবে। তিনি আরও জানান, ওই বুথের একটি এটিএম যন্ত্রের উপরের সিসিটিভি ক্যামেরায় হয়তো সমস্যা ছিল।

তাই সংগৃহীত ফুটেজে এক দুর্বৃত্তের স্পষ্ট ফুটেজ পাওয়া যায়নি। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপকমিশনার (উত্তর) নাজমুল আলম জানান, অপরাধীদের যে কোনো মূল্যে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে। এ ব্যাপারে কোনো ছাড় নেই।

অরক্ষিত এটিএম বুথ

রীতিমতো অরক্ষিত হয়ে পড়েছে ব্যাংকগুলোর এটিএম বুথগুলো। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অনেক ব্যাংকের এটিএম কিংবা ফাস্ট ট্রাক বুথগুলোর গোপন ক্যামেরা অকেজো হয়ে পড়ে আছে দীর্ঘদিন ধরে।

এটিএম যন্ত্রের ওপর থাকা ক্যামেরাগুলোতে কার্ড ব্যবহারকারীদের পর্যাপ্ত ফুটেজও সংগ্রহ করা সম্ভব হয় না। কিছু কিছু এটিএম বুথের ভেতরের পরিবেশও অনেকটা অন্ধকারাচ্ছন্ন। বৈদ্যুতিক বাল্বের আলো পর্যাপ্ত না হওয়ায় অনেক সময় গ্রাহকদের টাকা আসল না নকল তা যাচাই করাই কষ্টকর হয়ে পড়ে বলে অভিযোগ করেছেন অনেক ভুক্তভোগী।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ৯ মার্চ মধ্যরাতে দুর্বৃত্তদের হাতে নিহত পুলিশ প্রখ্যাত সংগীতজ্ঞ আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুলের ছোট ভাই আহমেদ মিরাজের প্রাইম ব্যাংকের এটিএম কার্ড ব্যবহার করে টাকা উঠাতে গিয়েছিল দুর্বৃত্তরা। ওই বুথটি ছিল উত্তরা জসীমউদ্দীন রোডে।

তবে যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে তারা টাকা উঠাতে সক্ষম হয়নি। একই সঙ্গে ওই বুথের গোপন ক্যামেরা ত্রুটিযুক্ত হওয়ার কারণে সংগৃহীত ফুটেজ তেমন একটা উপকারে আসছে না তদন্তসংশ্লিষ্টদের। এই চিত্র রাজধানীর অনেক ব্যাংকের এটিএম বুথগুলোর বলে জানা গেছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক গোয়েন্দা কর্মকর্তা জানিয়েছেন, জালিয়াত চক্রের সদস্যরাই হয়তো ব্যাংকের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের সঙ্গে সমঝোতা করে সিসিটিভি ক্যামেরা অকেজো কিংবা বুথে অন্ধকারাচ্ছন্ন পরিবেশ নিশ্চিত করে। যথাযথ তদন্তে হয়তো থলের অনেক বিড়ালই বেড়িয়ে আসতে পারে।

অন্যদিকে, ক্রেডিট এবং এটিএম জালিয়াত চক্রের সদস্যরা সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের কোন আইটি (ইনফরমেশন টেকনোলজি) এঙ্পার্ট কিংবা সিস্টেম এনালিস্টের ভুয়া পরিচয়পত্র তৈরি করে এটিএম বুথ কিংবা ফাস্ট ট্রাকের নিরাপত্তা প্রহরীদের রীতিমতো বোকা বানিয়ে ইতোমধ্যেই বিপুল পরিমাণ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার ঘটনাও ঘটেছে।

আবার এটিএম বুথের আইটি বিভাগের রক্ষকরা ভক্ষকে পরিণত হওয়ায় অসংখ্য গ্রাহকের আমানত খোয়া যাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। এ ধরনের ঘটনার রহস্য উন্মোচন করে ডিবি পুলিশ গত ২৩ জুলাই জালিয়াত চক্রের হোতা মো. সেলিম ও তার তিন সহযোগীকে গ্রেফতার করে। এরা প্রথমে এটিএম বুথের সিপিইউ থেকে পেনড্রাইভের মাধ্যমে গ্রাহকের তথ্য চুরি করত। একই সঙ্গে এটিএম বুথে বসানো উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন ক্ষুদ্র সিসিটিভি ক্যামেরার মাধ্যমে ধারণকৃত ফুটেজ থেকে পাসওয়ার্ড জেনে নিত।

পরে কার্ড রিডার অ্যান্ড রাইটারের মাধ্যমে ল্যাপটপের সহায়তায় সংগৃহীত তথ্য ব্যাংক কার্ডের ম্যাগনেটিক স্ট্রিপে ধারণ করার মাধ্যমে নতুন ক্লোন কার্ড তৈরি করত। ডিবির জ্যেষ্ঠ সহকারী কমিশনার তৌহিদুল ইসলাম জানান, জালিয়াতির সব প্রক্রিয়াই যথাযথ কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। এখন তারাই সিদ্ধান্ত নেবেন। তিনি আরও বলেন, জালিয়াত চক্রের মূল হোতা এটিএম সেলিম একটি বিরল প্রতিভা। তবে সে তার প্রতিভাকে ভুল পথে ব্যবহার করেছে।

কারাগারে পাঠানোর আগে সেলিম দাবি করেছে, সে এমন প্রযুক্তি তৈরি করে দেবে যাতে কেউ জালিয়াতি করতে পারবে না।

 

 

সোর্স: http://www.bd-pratidin.com/

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.