আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ভাড়ায় স্বামী পাওয়া যায় !! - বিদেশ নয় ঢাকাতেই পাওয়া যাচ্ছে - লাগলে পড়ুন

ভাড়ায় স্বামী পাওয়া যায়, কথাটি শুনতে খটকা লাগলেও অবাক হওয়ার কিছু নেই। অবাক করার বিষয় হলো মাত্র ৩০ মিনিটের জন্য স্বামী ভাড়া করতে দেওয়া লাগবে ১০০ টাকা। বিবাহিত মহিলারা যে রকম হবেন, অর্থাৎ তিনি যদি স্মার্ট বা ধনী পরিবারের হন তার জন্য স্মার্ট স্বামী, আবার গরিব বা সাধারণ পরিবারের হলে সেই রকম স্বামী। তবে বিষয়টি নির্ভর করবে মহিলা কি ধরনের তার ওপর। তবে এর জন্য কিন্তু বিল আলাদা হবে না।

১০০ টাকায়ই মিলবে কাঙ্ক্ষিত ধরনের ভাড়া করা স্বামী। অবিশ্বাস্য এ ঘটনা ঘটছে রাজধানীর আগারগাঁও পাসপোর্ট অধিদফতর অফিসে। সরেজমিনে গত দুই দিন পাসপোর্ট অফিসে অনুসন্ধান করে বিষয়টি জানা গেছে। সরেজমিনে জানা গেছে, বিবাহিত মহিলারা অনেক সময় স্বামী ব্যস্ত থাকার কারণে তাদের নিয়ে আসতে পারেন না। তবে পাসপোর্টের ফরম জমা দিতে হলে ছবি তোলার সময় তার স্বামীকে প্রয়োজন।

স্বামী না এসে থাকলে তাকে ডেকে এনে তারপর ছবি তুলতে অনেক সময় চলে যাবে বা সেই দিন নাও হতে পারে। এ কারণে সেই সময় অন্তত ৩০ মিনিটের জন্য অর্থাৎ ছবি তুলতে যতোক্ষণ সময় লাগবে, ততোক্ষণের জন্য পাসপোর্ট করতে আসা মহিলাদের স্বামী জরুরি হয়ে পড়ে। তবে এ প্রয়োজন মেটানোর জন্য দুর্ভোগের শিকার হতে হয় না স্বামী ছাড়া আসা বিবাহিত মহিলাদের। বেশিক্ষণ অপেক্ষাও করতে হয় না তাদের। পাসপোর্ট গেট থেকে একটু সামনে ফুটপাতে দাঁড়িয়ে থাকলেই স্বামী ভাড়া দেওয়ার দালালেরা তার কাছে হাজির হয়ে যান।

কারো স্বামীর দরকার হলে ১০০ টাকা দিলেই ভাড়া করা স্বামীও চলে আসেন। এটি ছাড়াও সকল সমস্যার সমাধান রয়েছে দালালদের কাছে। পাসপোর্ট অফিসে কারো যে কোনো ধরনের সমস্যা হলেই টাকার বিনিময়ে সমাধান করা হচ্ছে। পাসপোর্ট অফিসকে ঘিরে দালালদের দীর্ঘদিনের যে দৌরাত্ন্য, তা এখনো চলছে। মঙ্গলবার বেলা প্রায় ১২টা।

মিরপুর থেকে সায়মা আক্তার নামের এক মহিলা পাসপোর্টের ফরম জমা দিতে অফিসের ভেতরে গেলেন। কিছুক্ষণ পরে মন খারাপ করে বের হয়ে আসলেন। পাসপোর্টের জন্য ছবি তুলতে তার স্বামীর সঙ্গে থাকা প্রয়োজন। অথচ ব্যস্ততার কারণে স্বামী আসতে পারেন নি তার সঙ্গে। সায়মা গিয়ে দাঁড়ালেন অফিসের সামনের ফুটপাতে।

কিছুক্ষণ পর অনেকটা নি:সঙ্কোচে জাহাঙ্গীর নামের এক ব্যক্তি সমস্যার কথা জানতে চাইলেন তার কাছে। উপায়হীন হয়ে ওই মহিলা তার সমস্যার কথা বললেন। জাহাঙ্গীর তাকে অভয় দিয়ে জানালেন, সমস্যার সমাধানের উপায় তার কাছে আছে। সায়মা জানতে চাইলেন, বললেন, কি উপায়? জাহাঙ্গীর বললেন, ‘‘ম্যাডাম আপনার কোনো সমস্যা না থাকলে ছবি তোলা পর্যন্ত আমি একটা লোক দিচ্ছি। আপনি তাকে স্বামী বলে পরিচয় দেন।

দেখেন আপনার সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। ’’ একটু ইতস্তত করলেও পরে সায়মা জাহাঙ্গীরের কথায় রাজি হলেন। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, এর জন্য কি কোনো টাকা লাগবে? জাহাঙ্গীর হাস্যোজ্জ্বল মুখে বললেন, ‘‘চা পানি খাওয়ার জন্য ম্যাডাম ১০০ টাকা দিলেই হবে। ’’ কিছুক্ষণের মধ্যে সায়মার উপযোগী এক ব্যক্তি হাজির। তিনি ওই মহিলার সঙ্গে ভেতরে যান।

ছবি তুলে বের হয়ে জাহাঙ্গীরকে ধন্যবাদ দিয়ে মহিলাটি চলে যান। জাহাঙ্গীর অবশ্য বলতে ভুল করলেন না, ‘‘ম্যাডাম সমস্যা হলে আমাকে ফোন দেবেন। ’’ একই দিন দুপুর দেড়টার দিকে রাজধানীর উপকণ্ঠ কেরাণীগঞ্জ থেকে এসেছেন হাসিনা বেগম নামের এক মহিলা। তিনি এ বিষয়টি না জানার কারণে স্বামীকে নিয়ে আসেন নি। অফিস থেকে বেরিয়ে তার স্বামীকে ফোন দিয়ে বিষয়টি বলছিলেন।

পাশে দাঁড়িয়ে কথাগুলো শুনছিলেন সেই জাহাঙ্গীর। কথা শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সুযোগ সন্ধানী জাহাঙ্গীর বলে উঠলেন, ‘‘আপা এ সমস্যার আমি সমাধান করে দেবো। হাসিনা বেগম অনেকটা অবাক হয়ে বললেন, কিভাবে? জাহাঙ্গীরের ওই একই ফর্মুলা। পরে দেখা গেল, মহিলাটি ফের তার স্বামীর সঙ্গে কথা বলে জাহাঙ্গীরের প্রস্তাবে রাজি হয়ে গেলেন। তবে এবার দেখা গেল, হাসিনা বেগমের জন্য সায়মার জন্য আসা আগের ওই ব্যক্তি এলেন না, এলেন অপর এক ব্যক্তি।

যথারীতি হাসিনার সঙ্গে গেলেন ওই ব্যক্তি। ছবি তোলার পর ওই ব্যক্তি জাহাঙ্গীরের সঙ্গে কথা বলে চলে গেলেন। অনুসন্ধানে জানা গেছে, জাহাঙ্গীরের বাড়ি পাসপোর্ট অফিস সংলগ্ন। সকাল থেকে সারাদিন পাসপোর্ট অফিসে ঘুরঘুর করাই তার কাজ। ঘুরে ঘুরে দেখেন তিনি, কার কি সমস্যা।

সমস্যা হলে দেন সমাধানের আশ্বাস। শুধু জাহাঙ্গীরই নন, পাসপোর্ট অফিস ঘিরে রয়েছেন তার মতোই শতাধিক দালাল। পাসপোর্টের বিভিন্ন সমস্যার সমাধানে টাকার অঙ্কও ভিন্ন। পাসপোর্ট অফিসে ফরম পূরণের ন্যূন্যতম ৩ হাজার টাকার কাজের বিপরীতে সমস্যায় পড়ে দালালদের কাছে গেলে ২ থেকে ৫ হাজার টাকায় কাজ করেন তারা। পুলিশ ভেরিফিকেশন থেকে শুরু করে পাসপোর্ট হাতে পাওয়া পর্যন্ত সব কাজের গ্যারান্টি দেন তারা।

তবে বেশিরভাগ সময়ই দালালদের কাছে যাওয়া লোকজনকে নানা সমস্যায় পড়তে হয়। টাকা নিয়ে কাজ না করার বিস্তর অভিযোগও রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। স্থানীয় লোকজন জানান, জাহাঙ্গীরের মতো অন্তত ৫টি দালাল গ্রুপ রয়েছে পাসপোর্ট অফিসকে ঘিরে। মাঝে মধ্যেই র*্যাব অভিযান চালিয়ে আটক করলেও জামিনে বেরিয়ে এসে তারা একই কাজ করে থাকেন। দালালদের বিরুদ্ধে কেউ কিছু বলার সাহস রাখেন না বলেও জানান স্থানীয়রা।

ফলে তাদের খপ্পড়ে পড়ে অনেকেই ভোগান্তির মধ্যে পড়ে যাচ্ছেন। স্থানীয় লোকজনের অভিযোগ, পাসপোর্ট অফিসের কয়েকজন অসাধু কর্মকর্তার সঙ্গে যোগসাজশ করে দালালরা পাসপোর্ট সংক্রান্ত নানা কাজে মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে আসছেন। কিন্তু প্রতারক দালালদের তেমন কোনো শাস্তি হচ্ছে না বলেই পাসপোর্ট অফিসে এদের দৌরাত্ম্যও কমছে না। অন্যদিকে পাসপোর্ট অফিসে থাকা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা বলছেন, প্রতিদিন পাসপোর্ট অফিসে প্রচুর লোকজন আসেন। তাই ওই ভাবে সবকিছু খেয়াল করা তাদের পক্ষেও সম্ভব হয়ে ওঠে না।

তবে কারো বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে তখনই ব্যবস্থা নেওয়া হয় বলে জানান সেখানকার এক কর্মকর্তা। পাসপোর্ট অধিদফতরের উপ-পরিচালক ফজলুল হক বলেন, বাইরের সবকিছু দেখভাল করা তাদের পক্ষেও অসম্ভব। তিনি বলেন, সব কিছু নির্ভর করে যারা পাসপোর্ট অফিসে আসেন তাদের ওপর। পাসপোর্ট করা লোকজনকে বিভিন্নভাবে বলা হয়ে থাকে, দালাল থেকে সাবধান থাকতে, কোনো সমস্যা হলে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে জানাতে। তারপরও কেউ কেউ দালালদের খপ্পড়ে পড়ে যান।

তবে সাবধানতা অবলম্বন করলে দালালদের খপ্পড় থেকে রক্ষা পাওয়া যায় বলেও তিনি মন্তব্য করেন।  ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.