আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আইসিটি আইনের শিকার কে? শিকারী কে?

জ্ঞান যেখানে সীমাবদ্ধ, যুক্তি যেখানে আড়ষ্ট, মুক্তি সেখানে অসম্ভব।

দুইবার ইউটিউব বন্ধ। একবার ফেসবুক বন্ধ। ব্লগার গ্রেপ্তার। সর্বশেষ সংযোজন সংশোধিত আইসিটি আইন।

সে আইনে জামিন নাই। ওয়ারেন্ট ছাড়া গ্রেপ্তার করার বিপুল পুলিশী ক্ষমতা রয়েছে। সর্বনিম্ন ৭ বছরের জেল। অথবা এক কোটি টাকা জরিমানা। এই হলো ডিজিটাল সরকারের তথ্য-প্রযুক্তি প্রেমের নমুনা।

আইসিটি আইন করেছে। খুব করেছে খুব করেছে। এবার হেফাজতি-জামাতিরা-বিএনপিরা যাবে কই বলে যারা লাফাতে লাফাতে সিলিংএর সাথে বাড়ি খাবার দশা তাদের কাছে আমার বিনীত প্রশ্ন, চাঁদে সাঈদীরে যারা দেখছে তাদের কতটুকু অংশ সোশ্যাল নেটওয়ার্ক বুঝে? কতজন ইন্টারনেট ব্যবহারকারী? আর এই আইন করলেই কি চাঁদে সাঈদীকে আর দেখা যাবে না? মতিঝিলে আড়াই হাজার মরছে যারা বিশ্বাস করে তাদের কতজন ফেসবুকে বসে? ব্লগে লিখে? আইসিটি আইন কার্যকর হলে কি খালেদা-শফিরা আড়াই হাজারের মিথ্যে বলা ছেড়ে দিবে? সাঈদীকে চাঁদে দেখা গেছে শুনে যারা কাঁদো কাঁদো হয়ে চাঁদের দিকে তাকিয়ে সাঈদী সাহেবের দাঁড়িতে ঝিলিক দেখতে না পেয়ে হা হুতাশ করতে লাগলেন, চারপাশের আত্মীয় স্বজনকে দুনিয়াতে গজব নেমে এসেছে বলে চাঁদে সাঈদীকে দেখার জন্য নিজের পকেটের পয়সা খরচ করে ফোন করেছেন, সেই দাঁড়ির ঝিলিক কেড়ে নেবার জন্য বর্তমান সরকার ও কমিউনিস্টদের দোযখ বরাদ্দের জোর দাবি আল্লাহ তায়ালার কাছে করছেন তারা কারা? তারা আর কেউ নন। আওয়ামীলীগের 'নৌকার মালিক তুই আল্লাহ' আর বিএনপির 'ধানের শীষে বিসমিল্লাহ'তে (জামাতের কথা নাই বললাম) যারা সিক্ত হন এঁরা তারাই। এঁরাই সাম্প্রদায়িকতা দুষ্ট শিক্ষা ব্যবস্থায় বেড়ে উঠা আমার বোন, ভাই।

এঁরাই প্রতি তিনজনের একজন মাদ্রাসায় যাওয়া আমাদের নিকটাত্মীয়। ভেবে দেখুনতো, এই আইসিটি আইন দিয়ে কি রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহার কমবে? অন্ধকার জগতের মাদ্রাসা শিক্ষা বিজ্ঞানের আলো পাবে? যদি তাই না হয় আইসিটির ভজং কেনো? অনেকে খুব খুশি, পর্নোগ্রাফ দমন হবে। সত্যি তাই হলে আমিও খুশি হতাম। কিন্তু আইন পাশ হবার আগ হতেই বাক স্বাধীনতাকে রুদ্ধ করতে এর ব্যবহারে সরকার যে পরিমান সাফল্যের পরিচয় দিয়েছে আজ অব্ধি পর্নোগ্রাফ দমনে তার বিন্দুমাত্র লক্ষণ অথবা পদক্ষেপ চোখে পড়েনি। আর পর্ণোগ্রাফ/মাদক দিয়ে তরুন/মেধাবী সমাজকে দেশ গড়ার বদলে যেভাবে নষ্ট/ভ্রষ্ট জীবনের দিকে যারা আগ্রহী করে তুলছেন তারা কারা? তরুন/মেধাবীরা দেশ গড়ার রাজনীতিতে আকৃষ্ট হলে কাদের জান কবযের দষা হয়? তারা কি আওয়ামীলীগ/বিএনপি/জামাত/জাতীয় পার্টিতে সমানে সমান ভাগ হয়ে নাই? যদি তাই হয় তাহলে আইসিটি আইন দিয়ে কাজটা কি? এতোক্ষণে নিশ্চয় বুঝা গেছে আইসিটি আইনের উদ্দেশ্য ধর্মীয় উন্মাদনা বন্ধ নয়, পর্নোগ্রাফ বন্ধ নয়, কারো মান রক্ষা নয়।

তাহলে আইসিটি আইনের টার্গেট কে বা কারা? নিশ্চিতভাবেই মুক্তচিন্তার মানুষরাই এ আইনের টার্গেট বলে পূর্বাপর সকল ঘটনা বিশ্লেষণে মনে হয়। অবশ্য আইন না হলেই বা কী? হুমায়ুন আজাদ স্যারকে কোপানোর ক্ষেত্রেতো আইনের দরকার হয়নি। এর আগে জাফর ইকবাল স্যার, হাসান আজিজুল হক স্যার ও এম এম আকাশ স্যারদেরকে 'মুরতাদ' ঘোষণা করতে কোনো আইনের দরকার হয়নি। আওয়ামীলীগতো আর তেমনটা করতে পারে না। চক্ষুলজ্জা বলে একটা কথা আছে না!! তাই একটু আইন টাইন দেখিয়ে করলে কোপানোটা একটু ভদ্রস্থ হয় আরকি।

আবার বলছি, সংশোধিত আইসিটি আইনে শিকারীর ভূমিকায় থাকবে ধর্মাশ্রয়ী গ্রুপ ও শিকারের ভূমিকায় থাকবে মুক্তচিন্তার মানুষ। আর তাই আওয়ামীলীগ ও বিএনপি সমর্থিত গ্রুপগুলোর এ নিয়ে খুব একটা মাথা ব্যথা নেই। প্রতিবাদটা করতে হবে আমাদেরই। যারা নিজেদের স্বাধীনচেতা বলে দাবি করি।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.