আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নাশকতার মহাপরিকল্পনা

নাশকতার মহাপরিকল্পনায় জঙ্গি সংগঠনের সদস্যরা। প্রধানমন্ত্রী ও তার পরিবারের সদস্যসহ ক্ষমতাসীন দলের অন্তত ২৫ জন নেতাকে হত্যার টার্গেট নিয়ে প্রস্তুতি নিচ্ছে তারা। গোপন আস্তানায় এসব জঙ্গি নিয়মিতভাবে প্রশিক্ষণ চালিয়ে যাচ্ছে। বগুড়ায় বিইএম, চট্টগ্রামে লালখানের মাদ্রাসায় বিস্ফোরণ ছাড়াও রাজধানীর উপকণ্ঠ আশুলিয়া থেকে উদ্ধার করা বিস্ফোরক ও আগ্নেয়াস্ত্র দেখে রীতিমতো চোখ কপালে উঠেছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কর্মকর্তাদের। বিশেষ করে জঙ্গিদের কাছে গুলি, বোমা, গ্রেনেড, স্বয়ংক্রিয় আগ্নেয়াস্ত্র পৌঁছে যাওয়াকে ভীতিকর বলে আখ্যায়িত করেছেন তারা।

গোয়েন্দারা বলছেন, আগামী ২৫ অক্টোবরের পর দেশকে যে কোনো মূল্যে অস্থিতিশীল করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে এসব জঙ্গি সংগঠনের সদস্যরা। তাদের উসকে দেওয়ার নেপথ্য কারিগর জামায়াত-শিবির। জামায়াত-শিবিরের একটি অফিস থেকে আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন আল-কায়েদা ইন অ্যারিবিয়ান পেনিনসুলার ২৩ পৃষ্ঠার একটি পরামর্শ বার্তাও উদ্ধার করা হয়েছে। জামায়াত-শিবিরের স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি করণীয় সম্পর্কে এতে বিশেষভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের দাবি, জামায়াত-শিবির সেই পরামর্শ বাস্তবায়নের দিকেই অগ্রসর হচ্ছে।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম-কমিশনার মনিরুল ইসলাম বলেন, 'ঈদের পর থেকে জামায়াত-শিবির নিজেরা এবং বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনের মাধ্যমে নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড চালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে, এমন তথ্য আমাদের কাছে রয়েছে। তবে যে কোনো মূল্যে তাদের রুখে দিতে পুলিশ অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে কাজ করছে। '

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পুলিশের বিশেষ শাখার এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, জামায়াত-শিবিরকে পেছন থেকে উৎসাহিত করছে আনসারুল্লাহ, আল-আকসা মাইটায়ার্স ব্রিগেড, জয়শ-ই-মোহাম্মদ, জিমা ইসলামিয়া, আবদুল্লাহ আজম শহীদ ব্রিগেড, হরকাত-উল-মুজাহিদীন, লস্কর-ই-জাংগবির মতো বিভিন্ন আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন। এ ছাড়া মুসলিম ব্রাদারহুডের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রয়েছে জামায়াত-শিবিরের। উদ্ধার করা ওই পরামর্শ বার্তায় দেখা গেছে, হরকাতুল জিহাদ আল ইসলামী বাংলাদেশ (হুজিবি), জামায়াতুল মুজাহেদীন বাংলাদেশ (জেএমবি), হিযবুত্ তাহ্রির, জাগ্রত মুসলিম জনতা, শাহাদাত-ই-আল হিকমাসহ নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠনগুলোকে এক প্লাটফর্মে নিয়ে আসার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে জামায়াত-শিবিরকে।

স্বল্পমেয়াদি করণীয় হিসেবে বলা হয়েছে, 'সশস্ত্র প্রস্তুতি নিয়ে মুরতাদ বাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধ করে জেল থেকে তাদের নেতাদের বের করে আনতে হবে। এ ব্যাপারে আলেমদের ইজমা রয়েছে। জামায়াত-শিবিরের এক নেতাকে হত্যা করা হলে এর বদলে শিবির মুরতাদ আওয়ামী ও বামপন্থি মুরতাদ নেতাদের হত্যার ঘোষণা দিতে পারে। মুরতাদ নেতাদের হত্যা করা জায়েজ এবং ওয়াজিব। প্রতি এলাকা থেকে আট-দশজন শিবিরের ভাই একত্রিত হলেই দুই-তিনটা আওয়ামী বামপন্থি নেতাকে কতল করা যায়।

সাধারণ মানুষকে হরতাল, অবরোধ ইত্যাদি তথাকথিত গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে হয়রানি না করে মূল শত্রুদের আপনারা কতল করেন, সাধারণ মুসলমানগণ আপনাদের সমর্থন দেবে ইনশাআল্লাহ। ' র্যাবের ইন্টিলিজেন্স উইংয়ের পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল জিয়াউল আহসান জানান, কারাবন্দী জঙ্গি ও জামায়াত-শিবির নেতাদের নির্দেশনায় তাদের অনুসারীরা সংগঠিত হচ্ছে বলে তথ্য মিলেছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বানচালের জন্য তারা বড় ধরনের নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড ঘটাতে পারে। তবে সব কিছু মাথায় রেখে সর্বোচ্চ পাল্টা প্রস্তুতি নিয়েছে র্যাব। কড়া নজরদারি অব্যাহত রয়েছে।

র্যাব সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী ও তার পরিবারের সদস্যসহ ক্ষমতাসীন দলের অন্তত ২৫ জনকে হত্যার টার্গেট নিয়ে কয়েকটি জঙ্গি সংগঠন তাদের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। এ জন্য দেশের সীমান্ত এলাকা, উত্তরাঞ্চল, চট্টগ্রাম ও রাজধানীকে কেন্দ্র করে জঙ্গিরা সংগঠিত হচ্ছে। সংগঠনগুলো তাদের নাম পরিবর্তন করে পাড়া-মহল্লায় আস্তানা গড়ে তুলছে। ব্যবহার করছে মাদ্রাসাকে। এর আগে তারা বোমা ও গ্রেনেড নির্ভর হলেও এখন স্বয়ংক্রিয় অস্ত্রের দিকে ঝুঁকছে।

কারাবন্দী শীর্ষস্থানীয় জঙ্গি নেতাদের পরামর্শেই চলছে সংগঠনগুলোর কার্যক্রম। গত সোমবার গ্রেফতার হুজি নেতা খলিলুর রহমান ও শরিফুজ্জামান জানিয়েছেন, কাশিমপুর কারাগারে বন্দী তামীর-উদ-দ্বীনের (হুজির নতুন নাম) আমির মাওলানা আবদুর রউফ মোবাইল ফোনের মাধ্যমে সাংগঠনিক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। তারা নিয়মিতভাবে জজ আদালতে ঘোরাফেরা করতেন এবং হুজি নেতাদের মামলার খোঁজখবর নিতেন। বিভিন্ন মামলার হাজিরার সময় আবদুর রউফ, মুফতি মাসুদ, মাসরুর, মুফতি ইব্রাহিম, ডা. মুহিবুল্লাহ, আবদুল কাইয়ুম ও হাফেজ মাহমুদসহ হুজি, জেএমবি ও হিযবুত তাহ্রিরের নেতাদের সঙ্গে দেখা করে তাদের দিক নির্দেশনা নিতেন। অন্যদিকে, জেএমবির বর্তমান আমির সোহেল মাহফুজ ভারতে অবস্থান করলেও সীমান্তের কাছাকাছি এসে সংগঠনের অন্যান্য সদস্য এবং জামায়াত-শিবিরের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন বলে তথ্য পেয়েছে র্যাব।

জঙ্গিদের কাছ থেকে উদ্ধার করা অস্ত্রের উৎস সম্পর্কে জানতে চাইলে লেফটেন্যান্ট কর্নেল জিয়াউল আহসান জানান, গ্রেফতারকৃতদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলে এ বিষয়ে হয়তো ধারণা মিলবে। বুধবার (আজ) আদালতে তাদের ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করা হবে।

 

 

সোর্স: http://www.bd-pratidin.com/     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.