আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ৮)

অন্য রকম একটা জীবনের স্বপ্ন আমার আজও গেল না.............. রাশেদ ভাইয়ের বাসায় একদিন গরম গরম খিচুরী আর মুরগির মাংশ খেয়ে, পরে কি আর ডাইনিং এর ওই অখাদ্য ভালো লাগে? আমি ও তাই প্রায়ই নানান অজুহাতে রাশেদ ভাইয়ের বাসায় হাজির হয়ে যেতাম। এছাড়া বাংলায় কথা বলার জন্য ও ভিতরটা হাঁসফাঁস করত। ওনাদের বাসায় গেলে খাওয়ার সাথে সাথে চরম একটা আড্ডাও হত। উইকেন্ডের দুইদিন ওনার বাসায় খাওয়া ছিল ধরা বাধা। মাকসুদ ভাই ও আসতেন সেইদিন।

আমি রাশেদ ভাই, মাকসুদ ভাই, মিশু মিলে আড্ডা হত চরম। রাত ২-৩ টা কখন যে বেজে যেত খেয়াল থাকত না। মানুষ খুব খারাপ এবং লোভী। বসতে পেলে শুইতে চায়। সেই অবস্থা হইছিল আমার।

রাশেদ ভাইকে বললাম ভাই এক কাজ করি, আমি বাজার করে আপনাদের বাসায় রাখি, এসে রান্না করে খাব। ভালোমানুষ বড়ভাই আর কি বলবে.....আমি ও পাকাপাকি সেটল হয়ে গেলাম ওনাদের ঘাড়ে এরপর থেকে বাজার করে ওনাদের ফ্রিজে রাখতাম আর কাজের পর হাতে একটু সময় থাকলেই ওনাদের বাসায় যেয়ে রান্না করে খেতাম। বাংলাদেশ থেকে আম্মু বারবার বলা সত্তেও রান্না শিখে আসি নাই। তার ঠেলা বুঝছি তখন। সবসময় তো আর রাশেদ ভাইকে রান্না করতে বলা যায় না।

তার উপর উনি টি.এ হওয়ায় ব্যস্ত ও থাকতেন খুব। তাই বললাম ভাই আমাকেই রান্না শিখান। শুরু হলো রান্না শিখার পালা। বেশিদিন লাগে নাই। দুই তিন দিন।

মুরগি, খিচুরী, মাছ। সব কিছুই এক রেসিপিতে। হলুদ, মরিচ, আদা, রসুন, পেয়াজ সব একসাথে দিয়ে তেলে ভাজ। লবন আর পানি দিয়ে বসিয়ে দাও, সিম্পল। রাশেদ ভাই গোছানো মানুষ।

রান্নার প্রতি ও আগ্রহ খুব। আর আমি তো পয়দাই হইছি খাওয়ার জন্য। খিলগাঁওয়ের মুক্তার বিরিয়ানি, ভোলা ভাই, ঢাকা হোটেল, মৌচাকের স্বাদ, মজা, শান্তিনগরের বিসমিল্লাহ, হক রেস্টুরেন্ট, কাকরাইলের কস্তুরী, বিপাশা হোটেল, মতিঝিলের ঘরোয়া, ধানমন্ডির সুনামি, স্টার, পুরান ঢাকার নান্না, মামুন, নিরব হোটেল কোন জায়গার ওয়েটাররা আমাকে না চিনত.....তাই রাশেদ ভাইয়ের সাথে রান্নার ট্যাগ টিম হতে বেশি সময় নিল না। দেশ থেকে রেসিপি বই নিয়ে এসেছিলাম। তার সাথে আম্মু'র কাছ থেকে আম্মু'র স্পেশাল মজার রেসিপি লেখিয়ে নিলাম।

আর ইন্টারনেট তো আছেই। নরমাল দিনে কোনমতে ব্যাচেলর খিচুরী, ভাত, মাংশ খেয়ে পার করতাম কিন্তু প্রতি উইকেন্ডে নতুন কিছু রান্নার প্লান থাকত.........পোলাও, ফ্রায়েড রাইস, ফ্রায়েড চিকেন, বাটার চিকেন, চিকেন বিরিয়ানি, চিংড়ি ভুনা, মোঘলাই পরোটা, গরুর রেজালা, মুরগির রোস্ট, ডিমের কোর্মা, লাচ্ছি আরো কত কিছু বানানোর চেষ্টা করেছি (যাদের জিভে জল আসছে তাদের বলি অসহায়দের খাবারে নজর দিয়েন না। আপনাদের ঘরে কি মা-বোন্ থুক্কু খাবার নাই?)। বেশিরভাগই ডিজাস্টার এ পরিনত হলেও কিছু আইটেম সত্যিই খুব ভালো হত। এইসব দিনে মাকসুদ ভাই ও আসতেন।

ওনার বাসায় ও আমাদের দাওয়াত থাকত তবে ওনার একা সব করতে হত তাই সংখ্যাটা হাতে গোনা। রান্নার টেস্ট কেমন হবে সে নিয়ে কি সাসপেন্স !!!!! সারাদিন বলতে গেলে অভুক্ত থাকার পর সেই খাওয়ায় যে কি স্বাদ লাগত........ভরপেট খাবার পর বাসার সামনের মাঠে বেঞ্চের উপর বসে ঠান্ডার ভিতর কোক আর সিগারেট খাওয়া, মাঝে মধ্যে বিয়ার........ঠিক সেই মুহুর্তে মনে হত.......উমমম লাইফ ইজ বিউটিফুল। (চলবে) অন্যান্য পর্ব: আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ১) আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ২) আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ৩) আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ৪) আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ৫) আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ৬) আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ৭) আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ৯) আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ১০) আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ১১) আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ১২) আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ১৩) আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ১৪) আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ১৫) আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ১৬) আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ১৭) আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ১৮) আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ১৯) আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ২০) আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ২১) আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ২২) আমেরিকায় এক বছর এবং মধ্যবিত্ত ছাত্রদের বাস্তবতা (পর্ব ২৩) ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।