সেঞ্চুরি উদ্যাপনটা না হয় বোঝা গেল, কিন্তু তার আগে ফিফটি করেও হেলমেট-টেলমেট খুলে অমন খ্যাপাটে উদ্যাপন! ৫০ করে হেলমেট খোলার দিন তো বাংলাদেশের ক্রিকেট পেছনে ফেলে এসেছে সেই কবেই। লোয়ার অর্ডার হলে ভিন্ন কথা। কিন্তু আট-নয়ে ব্যাট করলেও সোহাগ গাজী তো সেই অর্থে লোয়ার অর্ডার নন!
ব্যাটে-বলে ইতিহাস গড়েছেন তিনি টেস্ট অভিষেকের আগেই। অলরাউন্ড পারফরম্যান্সে রেকর্ড বইয়ের এমন অভিজাত একটা পাতায় জায়গা করে নিয়েছেন, যেখানে নেই গ্যারি সোবার্স, জ্যাক ক্যালিসের নামও। আশির দশকের চার বিখ্যাত অলরাউন্ডার ইমরান-বোথাম-কপিল-হ্যাডলিও নেই।
পারেননি নানা যুগে ব্যাটে-বলে ২২ গজ কাঁপানো ডব্লু জি গ্রেস, উইলফ্রেড রোডস, ফ্রাঙ্ক উলি, জর্জ ও অ্যালেক হিয়ার্ন, কিথ মিলার, রিচি বেনো, ওয়াসিম আকরাম, ক্রিস কেয়ার্নস বা হালের শেন ওয়াটসনরা। প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে একই ম্যাচে সেঞ্চুরি ও হ্যাটট্রিক! প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটের আড়াই শ বছরের ইতিহাসে সোহাগের আগে এই কীর্তি ছিল মাত্র ১২ জনের।
এই তো, গত অক্টোবরের ঘটনা। জাতীয় লিগে খুলনার বিপক্ষে বরিশালের হয়ে ৯৩ বলে ১১৯ করার পর বল হাতে ৭ উইকেট নেওয়ার পথে করেছিলেন হ্যাটট্রিক। এর আগেও একটি সেঞ্চুরি ছিল।
জাতীয় লিগে সেই খুলনার বিপক্ষেই ২০১১ সালের অক্টোবরে ৯৯ বলে করেছিলেন ১৪০। বিস্ময়কর তথ্য আছে আরেকটি, প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে বাংলাদেশের সবচেয়ে দ্রুততম দুটি সেঞ্চুরির রেকর্ডই কিন্তু সোহাগের! ১৪০ রানের ওই ইনিংসটির পথে সেঞ্চুরি ছুঁয়েছিলেন ৬৭ বলে, ১১৯ রানের পথে সেঞ্চুরি এসেছিল ৭৬ বলে। সেঞ্চুরি দুটি ছাড়াও প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে ফিফটি আরও চারটি। এই সবই সাক্ষ্য দিচ্ছে তাঁর ব্যাটিং-সামর্থ্যের। ব্যাটিংটা যে ভালো পারেন, সেটার প্রমাণ মেলে ব্যাটিংয়ের ধরনেও।
স্ট্রেট ড্রাইভ, কাভার ড্রাইভ চমৎকার খেলেন, স্লগ সুইপ বা লং অন-লং অফে লফটেড শট বেশ ভালো। ডিফেন্স, বল নির্বাচন খারাপ নয়। এই সোহাগ কাল ফিফটি ছুঁয়েই হেলমেট খুলে ফেললেন, তেড়েফুঁড়ে ব্যাট ছুড়লেন বাতাসে। এর পর সেঞ্চুরির উদ্যাপনটা আরও খ্যাপাটে হওয়াই স্বাভাবিক। তাঁকে ধরতে গিয়ে গুঁতো খেয়ে প্রায় পড়েই যাচ্ছিলেন রুবেল হোসেন।
কেন এই বাঁধনহারা উল্লাস?
মূল কারণ, অবশেষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ব্যাটিং-সামর্থ্যের প্রমাণটা দিতে পারা। কালকের আগে টেস্টে সর্বোচ্চ ছিল ৩২, ওয়ানডেতে সর্বোচ্চ ৩০। যদিও মাত্র ৬টি টেস্টই খেলেছেন এর আগে, ওয়ানডে আটটি। হতাশার কিছু তাই ছিল না। কিন্তু ভেতরে ভেতরে যে অধৈর্য হয়ে উঠছিলেন, সেটাই ফুটে উঠেছে অপেক্ষার অবসানের পর।
খ্যাপাটে সোহাগ অবশ্য সংবাদ সম্মেলনে একদমই শান্ত। উদ্যাপন প্রসঙ্গে লাজুক মুখে বললেন, ‘আসলে প্রথম আন্তর্জাতিক ফিফটি তো, খুব এক্সাইটেড ছিলাম। আর সেঞ্চুরি তো সেঞ্চুরি, অনুভূতিই অন্য রকম। ’
অধৈর্য হওয়ার আরেকটা কারণ হতে পারে, লক্ষ্যের দিকে ছুটতে না পারা। পরিপূর্ণ অলরাউন্ডার হয়ে ওঠার ইচ্ছের কথা নানা সময়ে বলেছেন অনেকবার।
প্রতি ম্যাচেই কিছু না-কিছু দিতে চান দলকে, একটি ব্যর্থ হলে পুষিয়ে দিতে চান আরেকটিতে। বোলিং দিয়ে হইচই ফেলে দিয়েছেন দলে ঢুকেই। কিন্তু আন্তর্জাতিক আঙিনায় মেলে ধরতে পারছিলেন না ব্যাটসম্যান সত্তাকে। কোচ ও অধিনায়কের পরামর্শে তাই বাড়তি কাজ করেছেন ব্যাটিংয়ের দুর্বলতাগুলো নিয়ে। সেটার হাত ধরেই এই ইনিংস, যা অনুপ্রেরণার বড় রসদ হবে ভবিষ্যতের পথচলায়।
সোহাগের কণ্ঠে আত্মবিশ্বাসের ঝিলিক, ‘কেবল শুরু হলো। আশা করি এই ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারব। ’
সোহাগের ইনিংসটাকে বাড়তি নম্বর দিতে হবে আরেকটা কারণে। ১০১ রানের ৮১-ই করেছেন লোয়ার অর্ডারদের নিয়ে। নবম উইকেটে ১০৫ রানের জুটি গড়া রবিউলকে ধন্যবাদ জানাতে ভুললেন না তাই, ‘ওই আমাকে বারবার সাহস দিচ্ছিল।
বলছিল, “আমি আছি, তুই খেলে যা। ”
সোহাগ খেলে গেলেন এবং দেখালেন কী করতে পারেন। নিজে যেমন বলেছেন, ‘কেবলই শুরু’, এভাবে তাঁর ব্যাটের হাসি দেখার আশা থাকবে নিয়মিতই। দুর্দান্ত কোনো অফ স্পিনিং অলরাউন্ডার বিশ্ব ক্রিকেট খুব একটা পায়নি। সোহাগ কেন হবেন না? স্বপ্নটা আকাশসমান হলেই না ছুঁতে পারবেন আকাশ!
টেস্টে বাংলাদেশের
৫০০
৬৩৮
বিপক্ষ শ্রীলঙ্কা
গল, ২০১৩
৫৫৬
বিপক্ষ ওয়েস্ট ইন্ডিজ
মিরপুর, ২০১২
৫০১
বিপক্ষ নিউজিল্যান্ড
চট্টগ্রাম, ২০১৩
।অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।