জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগের দিন পর্যন্ত সংসদ অধিবেশন চলতে কোনো বাধা নেই। ২৪ অক্টোবরের পর সংসদ অধিবেশন চলতে পারবে না, তা সংবিধানের কোথাও লেখা নেই।
গতকাল রোববার রাতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকের সূচনা বক্তব্যে এসব কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, সংবিধান অনুযায়ী সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগের ৯০ দিন নির্বাচনের সময়।
২৪ অক্টোবরের পর সংসদের অধিবেশন চলা না-চলা নিয়ে এখন যে বিতর্ক চলছে, সে ব্যাপারে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করলেন প্রধানমন্ত্রী।
তবে নির্বাচন কোন সময়ে অনুষ্ঠিত হবে, তা সুনির্দিষ্ট করে বলেননি তিনি।
নির্বাচন কমিশনও জানে না নির্বাচন কবে। তারিখ জানতে সরকারের দিকে তাকিয়ে আছে কমিশন। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী রকিব উদ্দীন আহমেদ গতকাল সাংবাদিকদের বলেন, দুই দলের সমঝোতার অপেক্ষায় আছেন তিনি। তা না হলে সংবিধানের আলোকেই নির্বাচন হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশিষ্ট আইনজীবী রফিক-উল হক গত রাতে প্রথম আলোকে বলেন, নির্বাচনের সময় স্পষ্ট করার দায়িত্ব প্রধানমন্ত্রীর। সংবিধান অনুসারে সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগের তিন মাসের মধ্যে নির্বাচন হওয়ার কথা। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী যদি ১০ জানুয়ারি বা ২০ জানুয়ারি সংসদ ভেঙে দেন, তাহলে নির্বাচন হবে পরের তিন মাসের মধ্যে। সুতরাং প্রধানমন্ত্রীকেই নির্বাচনের সময় স্পষ্ট করতে হবে। দুই নেত্রীকে বসে সংকট নিরসনের তাগিদ দিয়ে তিনি বলেন, ‘এটা তো আমরা সবাই বলছি।
কিন্তু ওনারা তো শুনছেন না!’
গতকালের বৈঠকে শেখ হাসিনা বলেন, ২৪ অক্টোবরের পর সংসদ অধিবেশন চলতে পারবে না বলে বিভ্রান্তিমূলক কথাবার্তা বলা হচ্ছে। এ বিষয়ে যে যাঁর মতো কথা বলছেন। সংবিধানে বলা আছে, সংসদের একটি অধিবেশন থেকে অন্য অধিবেশনের ব্যবধান যেন ৬০ দিনের বেশি না হয়। তবে নির্বাচনকালীন তিন মাস সময়ের ক্ষেত্রে এই বিধান শিথিল করা হয়েছে। কিন্তু সংসদ বসতে পারবে না, এমনটি সংবিধানে বলা নেই।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর বর্তমান সংসদের নির্বাচন হয়। ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি আমরা সরকার গঠন করি। ২৫ জানুয়ারি সংসদের প্রথম অধিবেশন বসে। সে হিসাবে ২৫ অক্টোবর থেকে গণনা শুরু হবে ২৪ জানুয়ারি পর্যন্ত। এ সময়ের মধ্যে নির্বাচন হবে।
এই ৯০ দিনে (নির্বাচনকালীন) ৬০ দিন পর পর সংসদ বসতে হবে তা শিথিল করা আছে। ’
শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘টক শোতে দেখছি, অনেকে বলছেন, ২৪ অক্টোবরের পর আর সংসদ বসতে পারবে না। যদি রাষ্ট্রপতির অনুরোধে সংসদ না ভাঙা হয়, তবে সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগের দিন পর্যন্ত সংসদ অধিবেশন চালাতে কোনো বাধা নেই। রাষ্ট্রপতি সংসদ ভেঙে দিলেও জরুরি প্রয়োজনে তিনি সংসদ অধিবেশন আহ্বান করতে পারেন। ’ যাঁরা এ বিষয়ে সমালোচনা করেন, তাঁদের সংবিধানের ৭২ ও ১২৩ ধারা ভালো করে পড়ে নেওয়ার পরামর্শ দেন প্রধানমন্ত্রী।
বিরোধীদলীয় নেতার আন্দোলনের হুমকিরও জবাব দেন শেখ হাসিনা। বলেন, ‘বিরোধী দলের নেতা নাকি ২৪ অক্টোবরের পর দেশে কেয়ামত নিয়ে আসবেন। এই কেয়ামত থেকে দেশের মানুষকে রক্ষার দায়িত্ব আমাদের আছে। মানুষের জানমালের নিরাপত্তা দেওয়া আমাদের দায়িত্ব। এ দায়িত্ব অতীতেও পালন করেছি।
এবারও করব। ’
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, দুই দলের পাল্টাপাল্টি অনড় অবস্থানের কারণে নতুন করে রাজনৈতিক সংকট সৃষ্টির আশঙ্কা জোরদার হচ্ছে। সরকারি দলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ একাধিক সূত্র বলছে, সরকার সংবিধান অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা বললেও এ নিয়ে অস্পষ্টতা রয়েছে। সরকারের একটি অংশ মনে করে, নির্বাচন অনুষ্ঠানে এ সময়টি আওয়ামী লীগের জন্য তেমন অনুকূল নয়। তারা আরও কিছুটা সময় নেওয়ার পক্ষে।
নির্বাচনের তারিখ নিয়ে এই অস্পষ্টতার মধ্যে নির্বাচন কমিশনের কী করণীয়, জানতে চাইলে সাবেক নির্বাচন কমিশনার এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, সংবিধানে বলা আছে, সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগের ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন হতে হবে। এখন নির্বাচন কমিশন যদি বলে, ২৬ অক্টোবর বা ১ নভেম্বর নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে, তাহলে সবকিছু স্পষ্ট হয়ে যায়। আর সংকট নিরসনে আলোচনা দরকার এবং এ ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতিকে দিয়েও আলোচনার উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
।অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।