আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সময় ধরে চলছে না ট্রেন

ট্রেন সময় ধরে চলছে না। রেল কর্তৃপক্ষ এ জন্য ইঞ্জিন মেরামত ও জনবলের অভাবকে দায়ী করছে। এদিকে ‘কালোবাজারি হচ্ছে না’ বলে রেল কর্তৃপক্ষ যে দাবি করেছে, বাস্তবের সঙ্গে এর কোনো মিল নেই। প্ল্যাটফর্মে প্রায় প্রকাশ্যেই দুই-আড়াই গুণ বেশি দামে টিকিট বিক্রি করতে দেখা গেছে। এ কাজে সাহায্য করছেন রেলের কর্মকর্তারাই।


ফলে ঈদ ও পূজা উপলক্ষে ঘরমুখী মানুষ ভোগান্তির শিকার হচ্ছে। অন্যান্য দিনের মতো গতকালও কমলাপুর রেলস্টেশনে প্রচণ্ড ভিড় দেখা গেছে। ঈদ ও পূজায় ট্রেনের ‘শিডিউল বিপর্যয় হবে না’ বলে রেলমন্ত্রী মজিবুল হক ৩ অক্টোবর যে আশ্বাস দিয়েছিলেন, সেটা বিফলে গেছে। গত শুক্রবার থেকে ঈদ ও পূজার বিশেষ ট্রেন চালু হলেও সময়সূচি ভেঙে পড়েছে।
সংশ্লিষ্ট রেল কর্মকর্তারা বলছেন, গত ঈদে এ সমস্যা ছিল ৬০-৭০ শতাংশ, এবার শত ভাগ।


সরেজমিনে দেখা গেছে, বিশেষ ট্রেন দেওয়ানগঞ্জ এক্সপ্রেস সকাল পৌনে নয়টায় ছাড়ার কথা থাকলেও প্রায় এক ঘণ্টা দেরিতে প্ল্যাটফর্ম ছাড়ে। চট্টগ্রামগামী মহানগর প্রভাতী সাতটা ৪০ মিনিটে ছাড়ার কথা থাকলেও গেছে প্রায় পৌনে দুই ঘণ্টা পরে। নোয়াখালী থেকে সুবর্ণ এক্সপ্রেস দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে পৌনে একটার মধ্যে ঢাকায় প্রবেশের কথা। কিন্তু বেলা আড়াইটায়ও ওই ট্রেনের ফিরে আসার খবর পাওয়া যায়নি। দুপুর ১২টার সিলেটগামী জয়ন্তিকা ছেড়েছে সোয়া দুইটায়।

একতা এক্সপ্রেসসহ আরও কয়েকটি ট্রেন এক ঘণ্টা দেরিতে স্টেশনে পৌঁছায়। সময়সূচি অনুযায়ী, গতকাল কমলাপুর থেকে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে মোট ১২টি ট্রেন এবং বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মোট ১৩টি ট্রেন পৌঁছানোর কথা।

রেলওয়ে সূত্র জানায়, পাঁচ দিনব্যাপী ঈদ ও পূজার বিশেষ ট্রেনের প্রথম দিন ১১ অক্টোবর দেড় ঘণ্টা বিলম্ব দিয়েই শুরু হয়। ওই দিনের জন্য চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে বগি লাইনচ্যুতি ও নিরাপত্তাকে দায়ী করে রেল কর্তৃপক্ষ। দ্বিতীয় দিন শনিবারও পৌনে এক ঘণ্টা থেকে দেড় ঘণ্টা, কোনো কোনো ক্ষেত্রে সোয়া দুই ঘণ্টা পর্যন্ত শিডিউল বিপর্যয় ছিল।

তৃতীয় দিন গতকালও তাই।

ট্রেনের অনুসন্ধান বিভাগের কর্মী মো. রাসেল জানান, একদিক থেকে ছেড়ে আসা ও অন্য প্রান্তের প্ল্যাটফর্মে পৌঁছাতে সব মিলিয়ে পাঁচ থেকে ছয় ঘণ্টা করে সময়সীমা থেকে পিছিয়ে পড়ছে প্রায় সবগুলো ট্রেন।

জানতে চাইলে রেলওয়ের মহাপরিচালক (ডিজি) মো. আবু তাহের বলেন, ঘড়ির কাঁটা ধরে ট্রেন ছাড়া সম্ভব নয়। ফিরতি ট্রেন পরিষ্কার করা, যাত্রীদের জন্য অপেক্ষা ও বিভিন্ন দিক হিসাব করে এক থেকে দেড় ঘণ্টা দেরি হবেই। যাত্রীরা অভিযোগ করলে কিছু করার নেই।

‘শিডিউল বিপর্যয়ে’ কারও হাত নেই।

গতকাল বেলা তিনটায় ৫ নম্বর প্ল্যাটফর্মে পরিদর্শনে এসে রেলমন্ত্রী শিডিউল-বিপর্যয় নেই বলে দাবি করলেন। দিনাজপুরগামী অগ্নিবীণা এক্সপ্রেস ঘুরে দেখে তিনি বলেন, ‘সামান্য দেরিকে শিডিউল বিপর্যয় বলা যাবে না। ’ বেলা দুইটা ২০ মিনিটে ছাড়ার কথা থাকলেও এই ট্রেনটি কাল প্ল্যাটফর্ম ছেড়েছে প্রায় দেড় ঘণ্টা পরে। কত ঘণ্টা বিলম্বে গন্তব্যে পৌঁছাবে, তা কেউ বলতে পারেননি।

মহানগর গোধূলী ট্রেন বিকেল তিনটা ২০ মিনিটে ছেড়ে যাওয়ার সময় নির্ধারিত ছিল। কিন্তু ট্রেনটি কমলাপুর স্টেশন ছাড়ে এক ঘণ্টা ২৫ মিনিট পর। এগারসিন্দুর সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় ছাড়ার কথা থাকলেও ট্রেনটি তখনো কমলাপুর স্টেশনে এসে পৌঁছায়নি। এটি কিশোরগঞ্জ থেকে দুপুরে দেড় ঘণ্টা দেরিতে ছেড়েছিল।

সময়সূচি অনুযায়ী, গতকাল কমলাপুর থেকে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে মোট ১২টি ট্রেন এবং বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মোট ১৩টি ট্রেন পৌঁছানোর কথা।

সময় মেনে চলতে না পারার কারণে এ ট্রেনগুলোর আজ সোমবারের যাত্রাও বিলম্বিত হতে পারে।

দ্রুত যান এক্সপ্রেস ট্রেনটি দিনাজপুরের উদ্দেশে ঢাকা ছাড়ার কথা সন্ধ্যা সাতটা ৪০ মিনিটে। কিন্তু রাত আটটায়ও ট্রেনটি ঢাকায় এসে পৌঁছায়নি। কর্মকর্তারা জানান, ট্রেনটি দিনাজপুর থেকে দুই ঘণ্টা ২৫ মিনিট দেরিতে ছেড়েছিল। এরপর পথে পথে দেরি হওয়ার কারণে নির্ধারিত সময়ের কয়েক ঘণ্টা পরও ঢাকায় পৌঁছাতে পারেনি।

একই অবস্থা লালমনি এক্সপ্রেসেরও। ট্রেনটি লালমনিরহাট থেকে দুই ঘণ্টা ৫০ মিনিট দেরিতে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে আসে। কমলাপুর থেকে রাত ১০টা ১০ মিনিটে অগ্রিম টিকিট কেটে রাখা যাত্রীদের নিয়ে আবার ছেড়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু ট্রেনটি ছাড়ার সময় পেরিয়ে গেলেও ঢাকায় পৌঁছাতেই পারেনি। রেলের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ট্রেনটি আসলে গভীর রাতে ছাড়তে হবে।

খুলনা স্পেশাল ট্রেন রাত আটটা ২০ মিনিটে ঢাকায় পৌঁছে যাত্রী নিয়ে যাওয়ার সময় নির্ধারিত। কিন্তু রাত সাড়ে আটটায়ও ট্রেনটি আসেনি।

এ বিষয়ে রেলমন্ত্রী মজিবুল হক বলেন, ‘ট্রেন ধোয়ামোছা করতে কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। প্রতিদিন ৫০ হাজার মানুষ ট্রেনে করে নির্বিঘ্নে বাড়ি ফিরছেন। এত মানুষকে সেবা দিতে একটু-আধটু বিঘ্ন হতেই পারে।

টিকিট কালোবাজারি: প্ল্যাটফর্মে পারাবত, তিস্তা ও অগ্নিবীণার টিকিট বিক্রি করছিলেন নিরাপত্তাকর্মী মো. আনোয়ার। ‘ভাই, সামনে ঈদ, একটু বেশি করে না দিলে টিকিট কেমনে দেই। ’ কথাগুলো তিনি বিনয়ের সঙ্গে বললেও টিকিটের দাম নির্ধারণ করেন দ্বিগুণ। ‘এত অগ্রিম টিকিট আপনার কাছে? কোত্থেকে এনেছেন?’ জবাবে আনোয়ার বলেন, ‘কাউন্টার থেকে নিয়ে এসেছি। ’

পাঁচ দিনে বিশেষ ট্রেনের ১৪ হাজার চারটি টিকিট বিক্রির কথা থাকলেও মাত্র চার হাজার টিকিট পেয়েছেন সাধারণ যাত্রীরা।

মেইল ও আন্তনগর মিলিয়ে মোট ১৯ হাজার টিকিট বিক্রি হয়ে গেছে। এর মধ্যে ই-টিকিট তিন হাজার ৪৬৯টি (২৫ শতাংশ), ভিআইপি ৭১৪ (৫ শতাংশ), রেলওয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য ৭১৪টি (৫ শতাংশ), সাধারণ কোটা ৮১৮টি মিলিয়ে মোট ১২ হাজার ৩৫০টি টিকিট বিক্রি হয়েছে। কিন্তু বেশির ভাগ টিকিট কোটা, অনুরোধ, প্রভাবশালী ব্যক্তিদের জন্য কর্মকর্তারা রেখে দিয়েছেন বলে জানালেন কাউন্টারের টিকিট বিক্রেতা বাবু।

টিকিট কেটেও আসন না পাওয়ায় হতাশা প্রকাশ করলেন কিশোরগঞ্জগামী এগারসিন্দুর এক্সপ্রেসের যাত্রী মায়মুনা রহমান। অনেক তদবিরের পর সংগ্রহ করা টিকিটে পুরো রাস্তা দাঁড়িয়ে যেতে হবে বলে জানান তিনি।

নোংরা প্ল্যাটফর্ম: পুরো কমলাপুর রেলস্টেশনে দুর্গন্ধ। ট্রেন স্টেশনে ঢোকার পর পরিষ্কারের কথা থাকলেও পরিচ্ছন্নতার দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তা করেন না। অথচ যাত্রীদের সেবা দিতে রেল কর্মচারীদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে।

সকাল নয়টায় রেলওয়ে মহাপরিচালকের কাছে শত শত যাত্রী সেবার মান ও নোংরা পরিবেশ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। মহাপরিচালক নিজেও কাউকে খুঁজে পাননি।

এমনকি দায়িত্বে থাকা ছয়জন কর্মকর্তা ও তালিকাভুক্ত কর্মচারীদের তালিকা চাইলেও উপস্থিত কর্মকর্তারা তাঁকে তা দেখাতে পারেননি। পরে তিনি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজে গাফিলতির অভিযোগে স্যানিটারি পরিদর্শক নিখিল চন্দ্র দাসকে সাময়িক বরখাস্ত করেন।

সোর্স: http://www.prothom-alo.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.