আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সময় তুমি হার মেনেছ রক্তদানের কাছে, দশটি মিনিট করলে খরচ একটি জীবন বাঁচে।১৪ই জুন বিশ্ব রক্তদান দিবস। এ মহিয়ান, গৌরবময় দিনের প্রাক্কালে একটু সময় নিয়ে লিখাট পড়ার জন্য আপনাদের কাছে সবিনয় অনুরোধ করছি ।

ঘাটের এই পারে বসে আছি ঐ পারে যাওয়ার অপেক্ষা। মুসাফিরের ব্লগ। আচ্ছা, আপনার সমস্যা কি বলেন? আর আপনি এতো অল্প বয়সে এতো অস্থির কেন? ডাক্তার সাহেব। আমি একজন ব্যর্থ মানুষ। জীবনে কিছুই করতে পারলামনা।

না পারলাম নিজের জন্য কিছু করতে, না পারলাম অন্যের কাজে লাগতে। ইদানীং রাতে আমার ভালো ঘুমও হয়না। ডাক্তার বলেন,আচ্ছা, আপনিতো এখনো ছোট। এই বয়সে কার জন্য কি করবেন? তা না ,ডাক্তার সাহেব। পৃথিবীতে আসলাম।

কিছুদিন থাকলাম। আবার একসময় হুট করে চলে গেলাম। এরকমতো হতে পারেনা কোনো মানুষের জীবন। তাইনা, ডাক্তার সাহেব? ডাক্তার বলেন- জ্বি তা ঠিক। আচ্ছা, কালকে বিকালে আপনি আমার ক্লিনিকে চলে আসুন।

দেখি , আপনার মানসিক শান্তির জন্য কিছু করতে পারি কিনা। পরদিন রোগী ডাক্তারের ক্লিনিকে আসলেন। ডাক্তার রোগিকে সুন্দর করে বেডে শুয়ালেন। তারপর ধীরে ধীরে রোগীর নিকট থেকে এক ব্যাগ রক্ত নিলেন। এরপর ডাক্তার মহোদয় রোগীর মাথায় হাত রেখে বললেন- আপনি, আজ বিশাল একটা কাজ করলেন।

আপনার এই রক্ত একজন মুমুর্ষু রোগীর জীবন বাঁচাতে সাহায্য করবে। আজ রাতে ঘুমাবার আগে এই জিনিসটি চিন্তা করবেন যে-আপনার রক্তে একজন মানুষ পৃথিবীতে আরো কিছুদিন বেঁচে থাকবে। আমি আশাকরি আপনি মনে অনেক প্রশান্তি পাবেন। এরপর রোগী খুব খুশীমনে রাতে বাসায় ফিরলেন। মন থেকে সমস্ত পেরেশানি যেন দূর হয়ে গেলো।

নিজেকে আর একেবারে তুচ্ছ মনে হলোনা। এই প্রথম গভীর প্রশান্তির ঘুমে তলিয়ে গেলেন। ওপরে যার কথা বললাম ,ওনার নাম হলো-অস্ট্রেলিয়ার ফিল বেয়ার্ড। ১৯ বছর বয়সে সর্বপ্রথম রক্ত দেন। এবং পৃথিবীর মাঝে সবচেয়ে বেশী রক্তদাতা হিসাবে গিনেজ বুক ওব ওয়ার্ল্ডে স্বীকৃতি পান।

প্রতি ১২ সপ্তাহে ৪৫০ মিলি হিসাবে মোট ২৩১ বার তিনি অস্ট্রেলিয়া রেড ক্রস সার্ভিসে রক্ত দেন। তার রক্ত দেয়ার পরিমাণ মোট ১০৯৩৫৪ মিলি। রক্ত দিয়ে মানুষের জীবন বাঁচানো এই মহান ব্যক্তি অস্ট্রেলিয়ার টেলিভিশানে এক সাক্ষৎকারে বলেন- “I am not a hero or anything like that – it would just be so good if more people gave blood, because supplies are always low and blood is so badly needed.” নীচে উনার একটা ছবি দিলাম। এরকম শত শত মানুষ নিজের রক্তের দানে মুমুর্ষু রোগীর জীবন বাঁচিয়ে যাচ্ছেন। তারপরও প্রয়োজনের তুলনায় রক্তের যোগান পৃথিবীতে খুবই কম।

আমাদের দেশেতো আরো অনেক কম। এবার আর একটা ঘটনা বলি- ছোট মেয়ে তার মাকে বলে, মা, আজ আমার জন্মদিন। বাবার মনে আছে? মা বলেন, অবশ্যই মনে আছে মা। তবে বাবা ,এখনো আসে না কেন মা ? এইতো মা , অফিস শেষ করেই বাসায় ফিরবে। সেদিন ,বাবার আর ঘরে ফিরা হয়না।

ট্রাকের সাথে একসিডেন্টে বাবা হাসপাতালে শয্যাশায়ী। মা -মেয়ে হসপিটালে ছুটোছুটি করেন। ডাক্তার নার্স রক্তের তাগাদা দেয়। রক্ত না পেলে রোগী বাঁচানো যাবেনা। মেয়ে ডাক্তারকে বলে- আমার সব রক্ত নিয়ে নাও,ডাক্তার স্যার।

শুধু আমার বাবাকে বাঁচাও। ডাক্তার বলেন, তুমিতো এখনো খুব ছোট মা। তোমার যে রক্ত দেয়ার বয়স এখনো হয়নি । মেয়ে এবার মাকে বলে- তাহলে আমাদের কে রক্ত দিবে গো মা। আমাদের কে রক্ত দিবে? ১৪ই জুন বিশ্ব রক্তদান দিবস।

আর এবছর পালিত হচ্ছে এর দশ বছর পূর্তি। বিশ্বের লাখো নিঃস্বার্থ মানুষ যারা নিজের রক্ত দিয়ে এ সুন্দর পৃথিবীতে মানুষের জীবনীকে আরো কিছুদিন বাড়িয়ে দিয়েছেন তাদেরকে ধন্যবাদ গ্যাপন করাই এ বছরের মূলপ্রতিপাদ্য। এবার আরেকটি ঘটনা শুনি- হসপিটালের বেডে শুয়ে আছে এক ফুটফুটে শিশু। বেচারার মনটা খুবই ভারাক্রান্ত। এসময় রুমে প্রবেশ করে শান্ত, সৌম্য এক ভদ্রলোক।

ভদ্রলোক শিশুর মাথায় হাত রেখে বলেন- এন্জেল তোমার জন্য প্রার্থণা করবে। তুমি সুস্থ হয়ে যাবে। তুমি এন্জেল চিনো। শিশু বলে, জ্বি, চিনি ফাদার। এন্জেলরা খুব পবিত্র, তাই না? জ্বি ফাদার।

ওরা খুবই পবিত্র। আর আমরা মানুষ। এই যে তুমি,আমি ,আমরা? আমরাতো ফাদার এন্জেলের চেয়েও পবিত্র। আর এন্জেলের চেয়েও মহান। কেন? শিশুটি এবার বলে, এন্জেলতো ফাদার আমার জন্য রক্ত দেয়নি, মানুষই আমার জন্য রক্ত দিয়েছে।

তাই আমি মনে করি। মানুষ এন্জেলের চেয়েও মহান। এন্জেলের চেয়েও পবিত্র। আমার এন্জেলের যেমন প্রার্থণার দরকার আছে। ঠিক তেমনি ফাদার, বেঁচে ওঠার জন্য আমার মানুষের রক্তের দরকার আছে।

সংগীত লিজেন্ড এলভিস প্রিসলি হাসপাতালে শয্যাশায়ি হয়ে শৈশবে উপরের কথাগুলো চার্চের ফাদারকে বলেছিলেন। সেদিন যদি এলভিস প্রিসলিকে যথাসময়ে রক্ত দেয়া না যেতো তবে পৃথিবী এক মহান শিল্পীর সংগীত থেকে বন্চিত হতো। রক্তদানকে বলা হয়ে থাকে এ পৃথিবীতে সর্বশ্রেষ্ঠ, সর্বোত্তম , নিঃস্বার্থ এক উপহার। এবার বিশ্ব সাস্থ্য সংস্থার দিকে একটু নজর দেই- বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরিসংখ্যান অনুযায়ী প্রতি বছর ৯২ মিলিয়ন মানুষ রক্ত দান করে থাকে। বিশ্বের ৬২টি দেশে শতভাগ প্রয়োজনীয় রক্ত সংগ্রহ করা হয়ে থাকে এবং বিনামূল্যে রোগীকে সরবরাহ করা হয়ে থাকে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার টার্গেট হলো ২০২০ সালের মধ্যে পৃথিবীর কোনো রোগীকে যেন আর টাকা দিয়ে রক্ত কিনতে না হয় এবং যথাসময়ে রক্তের সরবরাহের শতভাগ নিশ্চয়তার ব্যবস্থা করা হয়। শুনে অবাক হবেন, WHO-এর তথ্য অনুসারে আমেরিকার মতো উন্নত দেশে প্রতি দু সেকেন্ডে এক ব্যাগ রক্তের দরকার হয়। আমাদের দেশের সঠিক পরিসংখ্যান জানা নেই। শুধু এটুকু জানি- প্রতি মুহুর্তে কেউ না কেউ এক ব্যাগ রক্তের প্রতীক্ষায় হাসপাতালে কোনো এক মানব দেবতার পথ চেয়ে বসে আছে। এবারের বিশ্ব রক্তদান দিবসের মূল শ্লোগান হলো- "Give the gift of life: donate blood" আর হোস্ট কান্ট্রি হলো ফ্রান্স।

রক্তদান সম্পর্কিত এবার কিছু সরল পাঠঃ কোন দুটি জিনিস দিলে একেবারেই কমেনা। বরং মানুষের অপরিসীম কল্যাণ হয়। শিক্ষা আর রক্ত। রক্তদান করার জন্য কত বছর বয়স হতে হয়? কমপক্ষে ১৬ বছর। ওজন কত হতে হবে কমপক্ষে ১২০ পাউন্ড এবং শারীরিক ফিটনেস।

রক্ত দিতে কি কোনো রকম কষ্ট হয়? সুচ ঢুকাবার সময় কয়েক সেকেন্ডের জন্য সামান্য ত্বকে লাগে,এরপর রক্তদানের পুরো প্রক্রিয়ায় কোনোরুপ সমস্যা হয়না। রক্ত দিলে এইডস সহ অন্যান্য কোন জীবানু শরীরে প্রবেশের সম্ভাবনা আছে কিনা? জ্বি না, একেবারেই নেই। প্রতিবার রক্ত সংগ্রহের সময় সবকিছু একেবারে নতুন করে ব্যবহার এবং শুধুমাত্র একবারই ব্যবহার করা হয়। আমার শরীরে কি পর্যাপ্ত রক্ত আছে রক্ত দান করার জন্য? জ্বি আছে। মানুষের শরীরে মোট ১০-১২ পাউন্ড রক্ত থাকে।

আর রক্ত দিতে হয় মাত্র ১ পাউন্ডের ও কম। এই ১ পাউন্ড রক্ত দিলে শরীরের কোনো ক্ষতি হয়না। আমি যে রক্ত দিলাম তা শরীরে পূর্ণ হতে কত সময় লাগবে? এক ঘন্টার মধ্যেই আপনার শরীর তা এডজাস্ট করে নিবে। তবে লাল রক্তকণিকা তৈরি হতে মোট ৩-৪ সপ্তাহখানেক সময় লাগবে। কতদিন পরপর রক্ত দেয়া যায়? সাধারনতঃ ৫৬ দিন পর পর রক্ত দেয়া যায়।

আমার দেয়া রক্ত প্রসেস হতে এবং আরেকজনের শরীরে ব্যবহার করতে কতক্ষণ সময় লাগবে? ৪৮ ঘন্টার মধ্যেই এ কাজ পরিপূর্ণ সুষ্ঠু ভাবে রোগীর শরীরে ব্যবহার করা যাবে। রক্তদেয়ার আগে কি বিশেষ কিছু করতে হবে? নিয়মিত স্বাস্থ্যসম্মত খাবার আর প্রচুর পানিজাতীয় খাবার খেতে হবে। রক্ত দিতে কতক্ষণ সময় লাগে? ১০-১২ মিনিট সময় লাগে। রক্ত দেয়ার পর আমার কেমন লাগবে? একদম স্বাভাবিক লাগবে। কিছুক্ষন বিশ্রাম নিতে হয়।

যদি খারাপ লাগে সাথে সাথে ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করতে হবে। এবার দেখা যাক দেশে কিছু ব্লাড ব্যাংকের যোগাযোগ নাম্বারঃ সন্ধানি-ঢাকা মেডিকেল কলেজ ব্রান্চ ফোনঃ ৯৬৬৮৬৯০,৮৬১৬৭৪ সন্ধানি -ঢাকা ডেন্টাল কলেজ ব্রান্চ ফোনঃ ৯০১১৮৮৭ সন্ধানি- বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজ ইউনিট ফোন-৯১২৪৬১৯,৯১১৮২০২ রেটিনা ব্লাড ব্যাংক ফোনঃ ০১৬১৪৬০৬৪১১ রেড ক্রিসেন্ট ব্লাড ব্যাংক ফোনঃ ৯১১৬৫৬৩ , ৮১২১৪৯৭ সন্ধানি ইন্টারন্যাশনাল আই ব্যাংক ফোনঃ ৯১২৪৩৫৩,০১১৯০১৫১৪৮০ স্যার সলিমুল্লাহ কলেজ ব্লাড ব্যাংক ফোনঃ ৭৩১৯১২৩ ইসলামী ব্যাংক হসপিটাল ব্লাড ব্যাংক ফোনঃ ৮৩১৭০৯০,৮৩২১৪৯৫ কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশান ফোনঃ ৯৩৫১৯৬৯,৮৩২২৯৮৭ আপনার করনীয়ঃ ১)আজকেই আপনি মনে মনে সিদ্ধান্ত নিন, এক ব্যাগ রক্ত দান করবেন। এটা হবে আপনার জীবনের সর্বোত্তম, নিঃস্বার্থ, সবচেয়ে সুন্দরতম দান। ২) আপনার বন্ধুকে বলুন। ৩) ডাক্তারি পেশার সাথে জড়িত না হলেও আপনি যত পারেন প্রমোট করুন।

৪) রক্তদান বিষয়ক যে কোনো লিখা ব্লগে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন ৫) অন্যকে পড়তে উৎসাহিত করুন। এর বাইরে আপনি আরো যা করতে পারেন- সামাজিক যোগাযোগ নেটওয়ার্ক "রক্ত দিন, জীবন বাঁচান" - যোগ দিন। রক্ত দিন,জীবন বাঁচান নীচের লিংকগুলো কাজে লাগাতে পারেনঃ কিছু প্রয়োজনীয় ব্লাড ব্যাংকের লিংকঃ সন্ধানী অফিশিয়াল সাইট Virtual Blood Bank Bangladesh Red Crescent Society রক্ত দানের জন্য এখানে রেজিস্ট্রেশান করতে পারেন এখানে যোগ দিতে পারেনঃ রক্ত দিন জীবন বাঁচান A Social Blood Networking Platform শতাধিক ব্লগারের রক্তের গ্রুপ নিয়ে দারুন একটি পোস্টের লিংক দিলাম। ব্লগারের রক্তের গ্রুপ- এস রহমানের পোস্ট আপনি কার রক্ত নিতে পারবেন। নীচের চার্টটি দেখুনঃ এই চমৎকার লিখাটি দেয়ার লোভ সামলাতে পারলাম না।

অন্ততঃ এ লিখাটি একবার পড়ুন। বঙগবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন অনুষদ বিভাগের ডীনের একটি লিখাঃ ধর্ম-বর্ণনির্বিশেষে সবার রক্তই এক— লাল রঙের। এর মধ্যে কোনো বিভেদ নেই। মানুষের শরীরে রক্তের প্রয়োজনীয়তা এত বেশি যে এটা ছাড়া কেউ বেঁচে থাকতে পারে না। মুমূর্ষু রোগীকে বাঁচাতে প্রায়ই জরুরি ভিত্তিতে রক্ত দেওয়ার প্রয়োজন পড়ে।

যেমন— দুর্ঘটনায় আহত রোগী, অস্ত্রোপচারের রোগী, সন্তান প্রসবকালে, ক্যানসার বা অন্যান্য জটিল রোগে, এলিমিয়া, থ্যালাসেমিয়া, থিমোফিলিয়া ইত্যাদি কারণে রক্ত সঞ্চালনের প্রয়োজন পড়ে। বাংলাদেশের মতো গরিব দেশে বছরে পাঁচ থেকে ছয় লাখ ব্যাগ রক্তের প্রয়োজন হয়, যার মাত্র ৩০ শতাংশ পাওয়া যায় স্বেচ্ছায় রক্তদাতার মাধ্যমে। বাকি রক্ত অধিকাংশ ক্ষেত্রে পেশাদার রক্তদাতা এবং আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুবান্ধবের মাধ্যমে সংগ্রহ করা হয়। রক্ত অবশ্যই মানবদেহের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। পূর্ণমাত্রায় রক্ত থাকলে মানবদেহ থাকবে সজীব ও সক্রিয়।

আর রক্তশূন্যতা বা এনিমিয়া দেখা দিলেই শরীর অকেজো হয়ে পড়ে, প্রাণশক্তিতে ভাটা পড়ে। এই অতি প্রয়োজনীয় জিনিসটি কলকারখানায় তৈরি হয় না। বিজ্ঞানীদের যথাসাধ্য চেষ্টা সত্ত্বেও এখনো রক্তের বিকল্প তৈরি করা সম্ভব হয়নি। নিকট ভবিষ্যতে পাওয়া যাবে—এমনটাও আশা করা যায় না। মানুষের রক্তের প্রয়োজনে মানুষকেই রক্ত দিতে হয়।

জীবন বাঁচানোর জন্য রক্তদান এতই গুরুত্বপূর্ণ যে, বলা হয়—‘করিলে রক্তদান, বাঁচিবে একটি প্রাণ’, ‘আপনার রক্ত দিন, একটি জীবন বাঁচান’, ‘সময় তুমি হার মেনেছ রক্তদানের কাছে, দশটি মিনিট করলে খরচ একটি জীবন বাঁচে। ’ ১৮ থেকে ৬০ বছরের যেকোনো সুস্থ ব্যক্তি, যাঁর শরীরের ওজন ৪৫ কেজির ওপরে, তাঁরা চার মাস অন্তর অন্তর নিয়মিত রক্ত দান করতে পারেন। তবে রক্ত দিতে হলে কিছু কিছু রোগ থেকে মুক্ত থাকতে হবে। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশ অনুযায়ী, নিরাপদ রক্ত সঞ্চালনের জন্য রক্তদাতার শরীরে কমপক্ষে পাঁচটিতে রক্তবাহিত রোগের অনুপস্থিতি পরীক্ষা করে নিশ্চিত হওয়া দরকার। এই রোগগুলো হলো: হেপাটাইটিস বি, হেপাটাইটিস সি, এইচআইভি বা এইডসের ভাইরাস, ম্যালেরিয়া ও সিফিলিস।

এসব রোগ রেস্ক্রিনিং করার পরই সেই রক্ত রোগীর শরীরে প্রবেশের উপযুক্ত ঘোষণা করা যায়। অবশ্য একই সঙ্গে রোগীর রক্তের সঙ্গে দাতার রক্তের ক্রস ম্যাচিং করাটাও জরুরি। এ ছাড়া রক্তদাতা শারীরিকভাবে রক্তদানে উপযুক্ত কি না, তা জানার জন্য তাঁর শরীরের ওজন, তাপমাত্রা, নাড়ির গতি, রক্তল্পতা বা জন্ডিসের উপস্থিতি ইত্যাদি পরীক্ষা করে দেখা হয়। কোনো সুস্থ-সবল মানুষ রক্ত দান করলে দাতার স্বাস্থ্যের কোনো ক্ষতি হয় না। এমনিতেই রক্তের লোহিত কণিকাগুলো চার মাস পর পর নষ্ট হয়ে যায় বা ভেঙে যায় বা ক্ষয়প্রাপ্ত হয়।

সুতরাং এমনি এমনি নষ্ট করার চেয়ে তো স্বেচ্ছায় অন্যের জীবন বাঁচাতে দান করাই উত্তম। এই সামান্য পরিমাণ রক্তদানের মাধ্যমে একটি জীবন বাঁচানো নিঃসন্দেহে ভালো কাজ। নিয়মিত রক্ত দান করা একটি ভালো অভ্যাস। রক্ত দান করা কোনো দুঃসাহসিক কাজ নয়, বরং এর জন্য একটি সুন্দর মন থাকাই যথেষ্ট। রক্তদানে শরীরের তো কোনো ক্ষতি হয়-ই না, বরং নিয়মিত রক্ত দান করলে বেশ কিছু উপকারও পাওয়া যায়।

যেমন রক্তদানে উচ্চরক্তচাপের ঝুঁকি কমে এবং রক্তের কোলেস্টেরলের মাত্রাও কমে যায়। ফলে হূদেরাগ, স্ট্রোক ইত্যাদি মারাত্মক রোগের সম্ভাবনা হ্রাস পায়। হার্ট ভালো থাকে এবং রক্তদাতা সুস্থ ও প্রাণবন্ত থাকেন।  শরীরে রক্তকণিকা তৈরির কারখানা হলো অস্থিমজ্জা। নিয়মিত রক্ত দান করলে অস্থিমজ্জা থেকে নতুন কণিকা তৈরির চাপ থাকে, ফলে অস্থিমজ্জা সক্রিয় থাকে।

এতে যেকোনো দুর্ঘটনা বা অন্য কোনো কারণে হঠাৎ রক্তস্খলন হলেও শরীর খুব সহজেই তা পূরণ করতে পারে।  রক্তদানের সময় রক্তে নানা জীবাণুর উপস্থিতি আছে কি না, তার জন্য পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়। ফলে দাতা জানতে পারেন, তিনি কোনো সংক্রামক রোগে ভুগছেন কি না।  অনেক সময় রক্তদাতার শরীরের রোগ প্রতিরোধক্ষমতাও বৃদ্ধি পায়।  রক্ত দেওয়ার সময় রক্তের গ্রুপিং করা হয়।

ফলে দাতা তাঁর রক্তের গ্রুপ জানতে পারেন।  সাধারণত যে সংস্থার কাছে রক্ত দেওয়া হয় তারা একটি ‘ডোনার কার্ড’ তৈরি করে দেয়। এই কার্ডের মাধ্যমে একবার রক্ত দিয়েই রক্তদাতা আজীবন নিজের প্রয়োজনে ওই সংস্থা থেকে রক্ত পেতে পারেন। রক্তদান একটি মহাকাজ, যা দাতাকে মানুষ হিসেবে বড় করে তোলে। রক্তদাতার সবচেয়ে বড় পাওনা—অসহায় বিপন্ন মানুষের জীবন বাঁচানো।

 মানবিক, সামাজিক ও ধর্মীয়—সব দৃষ্টিকোণ থেকেই দাতা অনাবিল আনন্দ অনুভব করেন; সামাজিকভাবেও বিশেষ মর্যাদা পান। গ্রহীতা আর তাঁর পরিবার চিরদিন ঋণী থাকে, তার জীবন বাঁচানোর জন্য। দাতার জন্য তা যে কী আনন্দের, তা ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়। তাই নিজের ক্ষতি যেখানে হবে না, বরং লাভই হবে, আর অন্য একজন মানুষের জীবনও বাঁচবে, তাহলে আমরা স্বেচ্ছায় রক্তদানে এগিয়ে আসব না কেন? আমরা সমাজে একে অন্যের ওপর নির্ভরশীল। পারস্পরিক আদান-প্রদান আর সহায়তা সমাজবদ্ধ জীবনের অন্যতম পূর্বশর্ত।

আর স্বেচ্ছায় রক্তদান এই সেবাপরায়ণতার অনুপম উদাহরণ। সরকারিভাবে এমনকি বেসরকারিভাবে যাঁরা এই রক্ত সংগ্রহের কাজে জড়িত, তাঁরা কিছু কিছু বিষয়ে রক্তদাতাদের উৎসাহিত করতে পারেন। যেমন, তাঁদের সঠিক মূল্যায়ন করা, পুরস্কারের ব্যবস্থা করা বা অন্য কোনোভাবে সম্মানিত করা ইত্যাদি। এতে স্বতঃস্ফূর্তভাবে রক্তদাতার সংখ্যা বেড়ে যাবে এবং মানুষের মধ্যে সচেতনতা ও উৎসাহ বৃদ্ধি পাবে। মিডিয়া, রাজনীতিবিদ ও সমাজের গণ্যমান্য ব্যক্তি এবং ধর্মীয় নেতারা এ ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারেন।

তবে মনে রাখতে হবে, রক্ত সঞ্চালন যেন নিরাপদ হয়। আর যদি দূষিত, রোগাক্রান্ত রক্ত দেওয়া হয়, তাহলে জীবন রক্ষার পরিবর্তে অনিরাপদ রক্ত সঞ্চালনে জীবন ঝুঁকির মধ্যে পড়বে। সম্মানিত ডীনের চমৎকার লিখাটি উপরে শেয়ার করলাম। এবার ছোট আরেকটি সুন্দর, শিক্ষামূলক গল্প শুনি- রেশমা তুহিনের বান্ধবি। সকালে তুহিনকে নিয়ে ঘুরতে বের হয়।

ঘুরতে ঘুরতে এক সময় ঢাকা মেডিকেলের সন্ধানিতে আসে। তুহিন বলে- কি ব্যাপার রেশমা? তোমার কেউ অসুস্থ নাকি? আগে বলোনি তো। জ্বিনা, আমার কেউ অসুস্থ না। তবে আজকে বিশেষদিনে একটা বিশেষ কাজে এসেছি। রেশমা-সন্ধানীর ডাক্তার ভাইদের সাথে কথা বলে।

তারপর বেডে শুয়ে এক ব্যাগ রক্ত দেয়। এরপর বাইরে বের হয়ে এসে তুহিনের হাত ধরে বলে- জানো, আজ না তোমার জন্মদিন। তোমার জন্মদিনে এক ব্যাগ রক্ত দান করে আজকের দিনটি স্মরণীয় করে রাখলাম। এখন থেকে প্লান করেছি-তোমার প্রতিটি জন্মদিনে রক্তদানই হবে আমার সবচেয়ে বড় উপহার। জ্বি, পৃথিবীতে আপনার আগমনের এই শুভদিনকে রক্ত দানের মাধ্যমে স্মরণীর করে রাখুন।

বড় বড় যারা সেলিব্রেটি তারা এই কাজটি করে নিজেদের হাজারো, লাখো ভক্ত শুভানুধ্যায়ীদের উৎসাহিত করতে পারেন। দেখবেন- মুমুর্ষু রোগীর জন্য রক্তের হাহাকার দেশ থেকে একেবারেই দূর হয়ে যাবে। মা হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে আছেন। অপারেশান থিয়াটের জরুরী রক্তের দরকার। সন্তান পাগলের মতো এক ব্যাগ রক্তের জন্য ছুটোছুটি করছে।

চোখ বন্ধ করে একবার দৃশ্যটি কল্পনা করুন। অথচ সেই রক্ত আপনার দেহেই রয়েছে। মুমুর্ষু মা-বাবা, ভাই-বোনের শয্যার পাশে এক ব্যাগ রক্তের জন্য কাউকে যেন আর করুন আরতি, আর দুঃখভরা মিনতি নিয়ে অপেক্ষা করতে না হয়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, মাননীয় বিরোধী দলীয় নেতা আপনাদের জন্মদিনে দিননা এক ব্যাগ রক্ত। দেশের মানুষতো জনমভর আপনাদের ভালোবেসে গেলো।

এবার ১৬ কোটি মানুষের জন্য দিননা এক ব্যাগ রক্ত। সংগীত শিল্পী, অভিনয় শিল্পী, নাট্যকার, কবি, সাংবাদিক, রাজনৈতিক নেতা, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক,মসজিদের মাওলানা,চার্চের পাদ্রী, মন্দিরের পুরোহিত দিননা নিজেদের জন্মদিনে এক ব্যাগ রক্ত। আপনাদের এক ব্যাগ রক্ত দান হাজারো ভক্তদের অনুপ্রাণীত করবে। রক্তের অভাবে যেন কাউকে আর আমাদের দেশে জীবন দিতে না হয়। শান্তিতে নোবেল জয়ি আমাদের অহংকার ডঃ ইউনুস দিননা এক ব্যাগ রক্ত।

একজন নোবেল জয়ী মানুষের রক্ত একজন অসুস্থ মানুষের ধমনীতে প্রবাহিত হচ্ছে । কী সুন্দর যে হবে এ অভূতপূর্ব স্বর্গীয় দৃশ্য। প্বথিবী থেকে দুঃখ দুর হয়ে যাকে। হিংসা, বিদ্বেষ লোপ পাক। হানাহানি বন্ধ হোক।

শুধু মানুষের পারস্পরিক ভালোবাসায় এ পৃথিবী সুন্দর হয়ে ওঠতে পারে। আর রক্তদানই হোক ভালোবাসার সর্বশ্রেষ্ট নিঃস্বার্থ উপহার। আর আজকের এই দিনে এই মহান মানুষকে শ্রদ্ধা জানাতে চাই যিনি ১৯০২ সালে রক্তের গ্রুপ উদ্ভাবন করেন- Karl Landsteiner। যিনি ১৯৩০ সালে নোভেল পুরস্কার লাভ করেন। যারা রক্ত দান করে শুধু রক্তের আত্মীয় নয় , মানুষের নিঃস্বার্থ ভালোবাসার পরমাত্নীয় হয়ে রইলেন-সবাইকে অনেক অনেক শুভেচ্ছা।

এই পোস্টটি পড়ে একজন মানুষও যদি রক্তদানের অনুপ্রেরণা লাভ করে সেই নিঃস্বার্থ অজানা,অচেনা মানুষকেই পোস্টটি উৎসর্গ করা হলো। কৃতগ্গতাঃ বিবিধ ওয়েবসাইট। ডাঃ কে বাশির, গ্রেডি হসপিটাল। আটলান্টা। ডাঃ শিল্পী চ্যাটার্জি।

এমরি মেডিকেল , আটলান্টা। ডাঃ সন্দিপ বিশ্বাস। মোর হাউস স্কুল অফ মেডিসিন, আটলান্টা। ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১০ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.