আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বিস্ময়কর ও স্ববিরোধীভাবে সম্পদের মূল্য নির্ধারণ হয়

রবার্ট শিলার
ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়
দীর্ঘ মেয়াদে যেমন তিন থেকে
পাঁচ বছরে দামদর কোন দিকে যেতে পারে,
তা আগে থেকে বোঝা সম্ভব

ইউজেনে ফামা
শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়
আগামী কয়েক দিন বা
কয়েক সপ্তাহ স্টক ও বন্ডের বাজারদর কী হবে,
তার পূর্বাভাস দেওয়ার কোনো উপায় নেই


লারস হ্যানসেন
শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়
সম্পদের মূল্য নির্ধারণের তত্ত্বগুলো
নিবিড়ভাবে পরীক্ষা করার জন্য
একটি পরিসংখ্যান মডেল তৈরি করেন

অর্থনীতিতে নোবেল মানেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এই সত্য প্রতিষ্ঠিত হলো আরেকবার যখন তিনজন মার্কিন অর্থনীতিবিদের নাম গতকাল সোমবার আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করল রয়েল সুইডিশ একাডেমি অব সায়েন্স।
এ বছর অর্থনীতিতে নোবেল পুরস্কারপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা হলেন শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের লারস পিটার হ্যানসেন (৬১) ও ইউজেনে ফেমা (৭৪) এবং ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের রবার্ট শিলার (৬৭)। তাঁদের বাজারে সম্পদের মূল্যের প্রবণতা নিয়ে নিবিড়ভাবে কাজ করার জন্য নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়েছে।
নোবেল কমিটি বলেছে, ‘এঁরা তিনজন সম্পদের মূল্যের প্রবণতা বোঝার জন্য ভিত্তি রচনা করেছেন।

এটা ঝুঁকি ও ঝুঁকি বৃদ্ধির প্রবণতা এবং আংশিকভাবে ব্যবহারজনিত পক্ষপাত ও বাজার সংঘাতের ওপর নির্ভরশীল। ’
সহজ ভাষায় বললে, এই অর্থনীতিবিদেরা স্টক ও বন্ডের মতো সম্পদেরও মূল্য নিয়ে কাজ করেছেন এবং দেখিয়েছেন যে বিশ্ব অর্থনীতি এখনো আর্থিক বাজারের সংকট থেকে বেরিয়ে আসতে পারেনি।
এই তিনজনের কাজের মধ্যে বেরিয়ে এসেছে স্বল্প মেয়াদে স্টক ও বন্ডের এবং অন্যান্য সম্পদের মূল্য নির্ধারণের জটিলতার বিষয়টি যা একাধারে ‘বিস্ময়কর ও স্ববিরোধী’।
নোবেল বিজয়ী এই তিন অর্থনীতিবিদ দেখিয়েছেন যে আগামী কয়েক দিন বা কয়েক সপ্তাহ স্টক ও বন্ডের বাজারদর কী হবে, তার পূর্বাভাস দেওয়ার কোনো উপায় নেই। তবে দীর্ঘ মেয়াদে যেমন তিন থেকে পাঁচ বছরে দামদর কোন দিকে যেতে পারে, তা আগে থেকে বোঝা সম্ভব।


অবশ্য নোবেলপ্রাপ্তির ঘোষণা শুনে রবার্ট শিলার তা বিশ্বাস করতে চাননি। তিনি বলেন, ‘অনেকেই আমাকে বলেছেন যে আমি নোবেল পুরস্কার পেতে পারি। তবে আমি সব সময়ই মনে করেছি যে আমার চেয়ে অনেক যোগ্য লোক আছেন। তাই এটা আমার কাছে অবিশ্বাস্যই মনে হচ্ছে। ’
অর্থাৎ সারা জীবন অর্থনীতির পূর্বাভাস নিয়ে কাজ করা ব্যক্তিটিই নিজের বিষয়ে পূর্বাভাস করতে পারেননি।

তিনি আশির দশকেই গবেষণা করে দেখান যে কোম্পানিগুলোর লভ্যাংশের তুলনায় শেয়ারের দরের উত্থানপতন বেশি ঘটে।
তার চেয়ে বড় কথা, ২০০৭-০৮ সালে আমেরিকায় সৃষ্ট আর্থিক সংকট সম্পর্কে যে গুটি কয়েক অর্থনীতিবিদ আগে থেকে পূর্বাভাস দিয়েছিলেন, তাঁদের মধ্যে অন্যতম হলেন রবার্ট শিলার। যদিও এই পূর্বাভাস অনেক সুস্পষ্টভাবে দেওয়ার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি নাম এসেছে নুরিয়েল রুবিনির।
শিলার ২০০০ সালে ইররেশনাল একজিউবারেনস (অযৌক্তিক প্রাচুর্য) নামে যে বইটি রচনা করেন, তাতে সুস্পষ্টভাবে আমেরিকার শেয়ারবাজারের অস্বাভাবিক স্ফীতির পূর্বাভাস দেওয়া হয়। ২০০৫ সালে দ্বিতীয় সংস্করণে শিলার বলেন যে আমেরিকার গৃহায়ণ খাত ‘বিপজ্জনকভাবে অতিমূল্যায়িত’ হয়ে পড়েছে।


জর্জ অ্যাকেরলফের সঙ্গে মিলে শিলারের আরেকটি বই লিখেন, যার নাম এনিমেল স্পিরিট (জৈবিক প্রফুল্লতা)। এতে দেখানো হয় যে কীভাবে মানুষের মনস্তত্ত্ব অর্থনীতিতে তাড়িত করে এবং তা কীভাবে বিশ্বায়িত পুঁজিবাদের সঙ্গে সম্পর্কিত।
লারস পিটার হ্যানসেন সম্পদের মূল্য নির্ধারণের তত্ত্বগুলো পরীক্ষা করার জন্য একটি পরিসংখ্যান মডেল তৈরি করেন।
ফামা, হ্যানসেন ও শিলার যৌথভাবে পুরস্কারের ১২ লাখ ডলার যৌথভাবে ভাগ করে নেবেন।
অর্থনীতিতে নোবেল পুরস্কার অবশ্য আলফ্রেড নোবেলের উইলে উল্লেখ ছিল না।

তাই এটাকে প্রকৃতপক্ষে নোবেল পুরস্কার হিসেবে বিবেচনা করা হয় না। বরং ১৯৬৮ সালে সুইডিশ কেন্দ্রীয় ব্যাংক এই পুরস্কার চালু করে। ১৯৬৯ সালে প্রথম অর্থনীতিতে নোবেল দেওয়া হয়। এটা আনুষ্ঠানিভাবে ‘আলফ্রেড নোবেলে স্মরণে অর্থনীতিতে সেভরিগস রিজব্যাংক পুরস্কার’ নামে অভিহিত। মূল নোবেল দেওয়া হয় পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, চিকিৎসা, সাহিত্য ও শান্তিতে।

সূত্র: এএফপি ও বিবিসি।

সোর্স: http://www.prothom-alo.com     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।