আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

শান্তিতে ঈদ করতে দিন!

কালকে ঈদ। বাংলাদেশের মানুষ ছুটছে তাঁদের আদিবাড়িতে, উত্সভূমিতে। মায়ের কাছে যাচ্ছি, এই স্টিকার গাড়িতে লাগিয়ে ছুটছেন কেউবা। ঢাকা শহর ফাঁকা হয়ে গেছে। গতকাল হয়ে গেল বিজয়া, বিসর্জন।

এবারের পূজা নির্বিঘ্নভাবে পালিত হয়েছে, উত্সাহ-উদ্দীপনার কমতি ছিল না। ঈদও পালিত হবে নির্বিবাদে, আনন্দের সঙ্গে, এটাই আমাদের প্রার্থনা।

 

কবি কাজী নজরুল ইসলামের কবিতায় পাই:

 

          সাম্যের রাহে আল্লাহের

          মুয়াজজিনেরা ডাকিবে ফের,

পরমোত্সব হবে সেদিন ময়দানে

সাত আসমান দোল খাবে          জয়-গানে

                   এক আল্লাহর জয়-গানে,

                   মহামিলনের জয়-গানে

                   “শান্তি’’ “শান্তি” জয়-গানে।

 

          এক ঘরে হেথা দশ প্রাচীর,

          হিংসা-ক্লৈব্য-বদ্ধ          নীড়,

ভেঙে যাবে, মন রেঙে যাবে        এক রঙে,

এক আকাশের তলে রব এক সঙে।

          চাঁদ আসিছে রে নতুন     চাঁদ!

          অপরূপ প্রেম-রসের       ফাঁদ

বাঁধিবে সকলে  এক সাথে         গলে গলে

মিলিয়া চলিব তাঁর পথে   দলে দলে।

 

          রবে না ধর্ম জাতির ভেদ

          রবে না আত্ম-কলহ-ক্লেদ,

রবে না লোভ, রবে না ক্ষোভ       অহঙ্কার,

প্রলয়-পয়োধি এক নায়ে           হইব পার।

 

          একের লীলা এ দুজন নাই

          তাঁহারি সৃষ্টি সবাই ভাই,

কত নামে ডাকি--সর্বনাম                    এক তিনি,

তাঁরে চিনি নাকো, নিজেরে তাই   নাহি চিনি।

                   আলো ও বৃষ্টি তাহার দান

                   সব ঘরে ঝরে এক সমান

সকলের মাঠে শস্য দেয় ফুল ফোটায়,

সকল মানুষ তাঁর ক্ষমা    করুণা পায়। (নতুন চাঁদ)

 

‘নতুন চাঁদ’ নামের কবিতাটার বক্তব্য প্রণিধানযোগ্য—আল্লাহতালা এক। তাঁর সৃষ্টি সবাই।

কোনো ভেদাভেদ নাই। তিনি সবার ঘরেই আলো দেন, সব বাগানেই ফুল ফোটান, সবার জন্য রোদ বৃষ্টি দেন। তিনি কোনো বৈষম্য করেন না—কাজী নজরুল ঈদ উপলক্ষে এই সাম্যের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন। শান্তির কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন।

 

শান্তির কথা আমাদের বারবার পাড়তে হবে এই ঈদে।

কারণ আমরা শান্তি চাই। ঢাকার সাবেক মেয়র সবাইকে দা-কুড়াল-বল্লম হাতে আসতে বলেছেন ঈদের পরের সমাবেশে। শুনে খুব অশান্তির অনুভূতি হচ্ছে। আমরা লগি-বৈঠার আন্দোলন দেখেছি। দেখেছি ঢাকার রাজপথে মানুষের মৃত্যু।

সেই দুঃস্বপ্নের স্মৃতি আমরা ভুলতে পারি নাই, ক্ষমা করতে পারি নাই। লগি-বৈঠার তবু একটা খোঁড়া যুক্তি ছিল, মাঝিরা তাদের উপকরণ নিয়ে আসবে ঢাকায়। দা-কুড়াল-বল্লম নিয়ে আসতে বলা একেবারেই যুদ্ধের ঘোষণা। আমরা চাইব, অত্যন্ত দায়িত্বশীল এই ব্যক্তি তাঁর এই কথা প্রত্যাহার করে নেবেন। বিরোধী দলের আন্দোলন যুক্তিপূর্ণ, দেশের বেশির ভাগ মানুষ তাকে সমর্থন করে।

এই আন্দোলনে জয়লাভ করতে হলে চাই নিরস্ত্র সাধারণ মানুষের ব্যাপক সমাবেশ। শাসকেরা ভয় করে মানুষের শান্তিপূর্ণ জমায়েতকে। দা-কুড়াল-বল্লম কিংবা সাপ হাতে করে সমাবেশ করা হলে তাতে সাধারণ মানুষ, নারীরা অংশগ্রহণ করবেন না। ওই সমাবেশ দিয়ে আন্দোলনে জয়লাভ করা যাবে না।

আমরা কি উন্মাদের দেশে বসবাস করছি? সবাই কি উন্মাদ হয়ে গেল? ক্ষমতা-উন্মাদ?

একদল ক্ষমতা যে করেই হোক আঁকড়ে রাখতে চায়, আরেকদল ক্ষমতা দখল করতে চায়।

ন্যূনতম সভ্যতা, ভব্যতা, দায়িত্বশীলতার পরিচয় কোনো পক্ষের কথাতেই থাকছে না।

এই ঈদটা অন্তত শান্তিতে করতে দিন।

আর অবশ্যই বিরোধী দলের সঙ্গে আলোচনা শুরু করতে হবে সরকারি দলকে। রাজপথে এই সমস্যার সমাধান হবে না। সরকারের পক্ষে সেদিকে পরিস্থিতি নিয়ে যাওয়া বুদ্ধিমানের কাজও নয়।

সংবিধানের আওতাতেই একটা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব, যাতে উভয় দলের সংসদ সদস্য ও টেকনোক্র্যাটরা মন্ত্রী হতে পারেন। এই ধরনের একটা সরকারের অধীনে নির্বাচনে বিরোধী দলের অংশ নেওয়া উচিত। এবং জনমত বলছে, তাতে তারা জয়ী হবে, এই সম্ভাবনাই বেশি। অযথা পানি ঘোলা করলে কারও লাভ নাই, আওয়ামী লীগের না, বিএনপির না, এবং গণতন্ত্রেরও না।

কাল ঈদ।

আজকে এসব কথা বলতে ভালো লাগছে না। আপনারা যদি শান্তির বার্তা দিতে না পারেন, ঈদের আগে অন্তত চুপ থাকুন। আমরা অশান্তির হুংকার, গর্জন—কোনো কিছুই শুনতে চাই না। আমরা শান্তি চাই।

দোহাই তোদের একটুকু চুপ কর,

ঈদ করিবারে দে আমারে অবসর।

 

আনিসুল হক: সাহিত্যিক ও সাংবাদিক

সোর্স: http://www.prothom-alo.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.