আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমায় নহে গ...... ভালোবাসো শুধু, ভালোবাসো মোর গান ..... গান গাইতে গিয়ে একদিন

স্বপ্ন দেখতে ভালোবাসি । তবে স্বপ্ন দেখা নিয়ে কিছুদিন যাবত একটা সমস্যা হয়ে গেছে । নতুন দেখা স্বপ্নগুলো কেন যেন পূরণ হচ্ছে না খুব শীঘ্রই এই সমস্যা কেটে যাবে এই আশাতেই আছি ।

গতকাল ক্লাস খুললো বিরাট বন্ধের পর । বন্ধের ২০ দিন একেবারে রুটিন করে রাতে ঘুমাতে গেছি ভোর চারটা বাজে, উঠেছি দুপুর দেড়টার দিকে ।

কাজেই বুঝতেই পারছেন, এই কদিন সূর্যের আলো চোখে পড়েছে গড়ে ৫ থেকে ৬০ ঘণ্টা । বড়ই আনন্দের সময় । আনন্দের সময়টা কাটালাম নানা ভাবে । মুভি দেখলাম এক বস্তা, পড়ার জন্যে বইও কিনে, উপহার পেয়ে, ধার করে জোগাড় হলো এক গাট্টি । রাস্তায় রাস্তায় টো টো করার কথা তো না বললেও চলে ।

সব মিলিয়ে বলা যায় একেবারে পারফেক্ট ভবঘুরে লাইফ কিন্তু সমস্যা হলো কারো বেলায়ই সুখ বেশীদিন থাকে না । আমার বেলায়ও থাকলো না । নিজের ডেস্কে আধ শোয়া হয়ে ঝিম ধরে, আশাহত বিধ্বস্ত মনে চিন্তা করছিলাম, ক্লাস করতে করতে আর প্রেজেন্টেশন, পরীক্ষা , ভাইবা দিতে দিতে তো বুড়া হয়ে গেলাম । এইসব যন্ত্রণার শেষ কবে? . . . . . এমনই সংকটময় মুহূর্তে কানে আসলো পাশের সিটের বন্ধু মুন্না তার ডেস্কে ঢোল বাজাচ্ছে । তার হাতের কারুকার্যে উৎপন্ন শব্দ দূষণ শুনে সামনের সারি থেকে পাশে এসে বসলো আরেক বন্ধু কুদ্দুস বয়াতি রাহাত ।

আমরা তিনজন একসাথে হলে আবার গান না গেয়ে থাকতে পারি না একদমই; স্থান, কাল, পাত্র ( বা আশেপাশে পাত্রীর উপস্থিতি ) আমাদের সঙ্গীত চর্চার জন্যে কোন সমস্যাই না । তো শুরু হলো সঙ্গীত দুপুর তিনজনের গায়ে কাঁপন ধরানো সুর , তাল , লয় , মিউজিকের স্রোতে যেন ভেসে যেতে থাকলো চারপাশের সবকিছু . সবকিছু না হলেও আশেপাশের মানুষ তো বটেই । সামনের সারীর কয়েকজন দেখলাম সিট চেঞ্জ করে অন্য জায়গায় বসলো । সে বসতেই পারে , কাছ থেকে শুনলে হয়তো সব গান ভালো লাগে না , প্রতিধ্বনিতে সমস্যা হয়, কিংবা মনে দাগ কাটে না ; সেজন্যেই বুঝি দূরে যাওয়া । দর্শকদের কাছ থেকে আশানুরূপ সাড়া পেয়ে আমরা গলায় আরো এক গ্যালন দরদ ঢেলে, ভোকাল কর্ড টিউন আপ করে আরো জোরে জোরে গাইতে থাকি ।

আর গানের বিচিত্রতাও যে কাউকে মুগ্ধ করবেই করবে ; ওমর সানি, মান্না, বাপ্পারাজের সিনেমার গান থেকে শুরু করে ব্রায়ান অ্যাডামস, ওস্তাদ রশিদ খাঁ , আতিফ আসলাম , আর্কের হাসান ( সুইটি তুমি আর কেঁদো না, এতো কষ্ট কেন ভালবাসায় ইত্যাদি ) হালের হাবিব, ফুয়াদ, অর্ণব সবাইকে একসাথে গুলে সরবত বানিয়ে খেয়ে ফেলতে থাকলাম আমরা . আকাশে গান, বাতাসে গান । সারা রুম গমগম করছে আমাদের তিনজনের ভরাট, সুরেলা, উদাত্ত গানের সুরে । ........ এমন সময় হঠাৎ পেছন থেকে বান্ধবী ফারাহ তাসনিমের বেরসিক ডাক । সঙ্গীত চর্চার মতো জটিল , সূক্ষ্ম একটা কাজে বাঁধা পড়ায় বিরক্ত হতেই হয় . তবুও তাকালাম পেছনে । তাকিয়ে দেখি সে পার্স খুলে আমার দিকে একটা চকচকে দুই টাকার নোট বাড়িয়ে ধরে রেখেছে . আগের যুগের রাজা , রানী , রাজকন্যারা কারো গানে মুগ্ধ হলে নাকি গলা থেকে খুলে হীরা , মতির হাঁর উপহার দিতেন , অনেক সময় লিখে দিতেন রাজ্য ।

ফারাহ তাসনিম রানী , রাজকন্যা কোনটাই না, রাজ্য লিখে দেওয়ার সুযোগও এখন আর নেই এবং আমাদের ফারাহ কিপটা বলেই সমধিক পরিচিত । কিন্তু তাই বলে আমাদের আমাদের গান শুনে মুগ্ধ হয়ে মাত্র দুই টাকা?? আমার কপালে উঠে যাওয়া চোখে প্রশ্ন দেখে সে নিজেই ব্যাপারটা খোলাসা করে । “ দুইটা টাকা দিলাম । এখন দয়া কইরা গান গাওয়া থামা । “ দেখছেন কারবারডা? মাননীয় বিরোধী দলীয় নেত্রী, আপনি যে হারে হরতাল দেওয়া শুরু করেছেন তাতে আমি চিন্তায় আছি কবে না আবার ইস্যু সংকটে পড়ে যান ।

ইস্যু সংকটে না পড়লেও নারায়ণগঞ্জের তিন জ্বলন্ত প্রতিভা, দেশের উদীয়মান তিন তরুণ সঙ্গীত শিল্পীর সাথে একজন দর্শকের করা এমন নালায়েক , বেত্তমিজ, বে-ফিকির আচরণের প্রতিবাদে আপনি অচিরেই দেশ ব্যাপী লাগাতার হরতাল ডাকবেন, এই আপনার কাছে আমাদের আকুল আবেদন !!

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।