আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ব্লগারদের সাথে একত্রে আড্ডাবাজি কিংবা যে ভাললাগার শেষ নেই - ২

জোরে-সোরে মহব্বতের সাথে স্বপ্ন দেখুন। স্বপ্নই সম্ভাবনা। “A dream you dream alone is only a dream. A dream we dream together is reality”.

অবশেষে অলওয়েজ ড্রিম মঞ্চে হাজির! না নাচার জন্য নয়, নয় গাওয়ার জন্যও। রাজনৈতিক ভরা মৌসুমে রাজনৈতিক বক্তব্য দেওয়ার জন্যও নয়। অলওয়েজ ড্রিম হাজির তার স্বপ্নের ডালি নিয়ে।

সকলের মাঝে স্বপ্নের আবেশ ছড়িয়ে দেয়ার জন্য। স্বপ্নই যে সকল সম্ভাবনার উৎস তা সকলকে বুঝিয়ে বলার জন্য। দীর্ঘ দীর্ঘ দিন পরে আজ আমার মডেমগুলো সচল হল। এতদিন নানা ঝামেলায় মডেমগুলির একটিও ব্যবহার করতে পারি নি। ব্লগে ঢুকতে পেরে কী যে আনন্দ হচ্ছে! সামু ব্লগে সদস্য হওয়ার পর তুমুল আগ্রহে সব পোস্ট পড়তে শুরু করলাম।

তারপর যেই পোস্ট পছন্দ হয় তার উপর মন্তব্য করতে গিয়ে দেখি, ওমা একী! মন্তব্য তো করা যায় না। একদিন দুদিন তিনদিন! সহিষ্ণুতার পারাকাষ্ঠা দেখিয়ে আরও বেশ কয়েক দিন নিরবচ্ছিন্ন চেষ্টা করলাম। না কিছুতেই আমি আমার পাঠপ্রতিক্রিয়া জানাতে পারছি না। অথচ অনেকেই তো পারছে। শুধু আমি পারছি না।

রাগ করে বিকট আওয়াজে ধ্যাত্তেরি জানালাম! এবং দীর্ঘদিন তারপর সামুর ছায়াও মারাই নি। অনেক অনেক দিন পরে হঠাৎ একদিন কী জানি কী মনে করে আবার সামুতে লগইন করলাম। এবং মন্তব্যও করতে পারলাম। আহা ওম শান্তি! সেই শুরু। এবং সেই শুরুটা হিসাব করলে আমি খুবই বাচ্চা ব্লগার।

তো ব্লগিং করতে গিয়ে আমার মনেহল, যাদের লেখা পড়ে মুগ্ধ হই, একেকটি পোস্টে মন্তব্য-প্রতিমন্তব্য করতে গিয়ে ব্লগারদের কেমন বন্ধু-বন্ধু মনেহয়; কিন্তু সবই তো ভার্চুয়ালি। সেই ভার্চুয়াল বন্ধুদেরকে যদি বাস্তবেও দেখি, তাদের সাথে যদি অন্তরঙ্গভাবে মেশার, গল্প করার, আড্ডা দেওয়ার সু্যোগ পাই তাহলে কেমন হয়? আরও মনেহল, বাস্তবেই যদি কোথাও বসে লেখা নিয়ে আলোচনা করার সুযোগ পাই, পারস্পরিক গঠনমূলক সমালোচনা করার সুযোগ পাই তাহলে কেমন হয়? স্বপ্ন দেখতে শুরু করলাম মুষলধারে। আমার আবার স্বপ্ন দেখার বেশি বেশি বাতিক। এবং সেই স্বপ্ন লুকিয়েও রাখতে জানি না। সবার সাথে শেয়ার করারও দুর্দমনীয় লোভে আক্রান্ত।

সুতরাং একদিন সাহস করে দিয়ে ফেললাম আড্ডার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে একটা পোস্ট। ভয়ে ভয়ে ছিলাম। না জানি মুষলধারে বিদ্রূপ শুরু হয়ে যায়। কিন্তু স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললাম যখন দেখলাম, শ্রদ্ধেয় ব্লগারগণ আড্ডার ধারণাটাকে ভালভাবেই নিয়েছেন। বরং তারা আমার থেকে একধাপ না দশধাপ এগিয়ে।

জুলিয়ান দা, আরজু পনি আপু পরামর্শ দিলেন ফেবুতে যেন একটা গ্রুপ পেইজ খুলি। জুলিয়ান দা তো বিউটি বোর্ডিং আর কফিহাউজের কথা মনে করিয়ে দিলেন। বললেন যে, আমাদের পূর্বসূরিরা একেকটি আড্ডাকে কেন্দ্র করে এক সময় ঋদ্ধ হয়েছেন, বিজ্ঞ হয়েছেন, অভিজ্ঞ হয়েছেন। আহা জুলিয়ান দা কী শুনালেন! বিউটি বোর্ডিং! কফিহাউজ! স্বপ্নের মতো সেইসব আড্ডার গল্প কত শুনেছি। সুতরাং আমি আরও জোরেসোরে মহব্বতের সাথে স্বপ্ন দেখতে শুরু করলাম আড্ডা নিয়ে।

আমার মনে হল, আমাদের এই যুগে সেই আড্ডারই বড় অভাব। অভাব বলেই আমরা ঋদ্ধ হতে পারছি না। আমাদের মধ্যে আন্তরিকতা, সৌহার্দ্য গড়ে উঠছে না। ফেবুতে খুলে ফেললাম “সাহিত্য-আড্ডা” নাম দিয়ে একটি গ্রুপ পেইজ। ধীরে ধীরে সদস্য বাড়তে লাগল।

সবার কাছে পরামর্শ চাইলাম কবে আড্ডায় মিলিত হওয়া যায়। না কেউই কিছু বললেন না। জুলিয়ান দা আবারো হাত বাড়িয়ে দিলেন। বললেন ওভাবে হবে না। তিনি নির্দিষ্ট তারিখ উল্লেখ করে পোস্ট দিতে বললেন ।

আমি তাই করলাম। গ্রুপ পেইজে পোস্ট দিয়ে জানালাম যে, উমুক তারিখ আমাদের সাহিত্য-আড্ডার প্রথম আড্ডা অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। যারা যারা আড্ডা দিতে চান দয়া করে এই পোস্টে মন্তব্য করে জানাবেন। হা হতোস্মি। এক কুহক ভাই ছাড়া কারো সাড়া পেলাম না।

নির্দিষ্ট দিনে কুহক ভাই ঠিকই হাজির হয়েছিলেন। তবে আমিই যাই নি আর কারো সাড়া না পেয়ে। পরে যখন জানলাম কুহক ভাই অপেক্ষায় ছিলেন তখন খুব লজ্জা পেয়েছিলাম। যশোর থেকে কবি ৎঁৎঁৎঁ সমানে আমাকে উৎসাহ দিয়ে যাচ্ছিলেন। ভাই আপনি যেভাবে লেগে আছেন, আপনিই পারবেন।

আপনাকে দিয়েই হবে। ভাই, হাল ছাইড়েন না। জুলিয়ান দাও প্রবাস থেকে সাহস জুগিয়ে যেতে থাকলেন। প্রথম দিকে আরজু পনি আপুও বেশ উৎসাহ জুগিয়েছেন। কিন্তু তিনি বেশি জোর দিতে চেয়েছিলেন ভার্চুয়াল আড্ডার প্রতি।

তাকে বলেছিলাম ভার্চুয়াল আড্ডার জন্য ফেবু আছে। আমাদের মূল লক্ষ্য বাস্তব আড্ডা। “সাহিত্য-আড্ডা” ভার্চুয়াল আড্ডায় পর্যবসিত হবে না। কিছুতেই সেটা হতে দেয়া যাবে না। আমার এই জোরাল বক্তব্য সম্ভবত তাকে নিরুৎসাহিত করল।

তিনি এক সময় হারিয়ে গেলেন।  (প্রিয় আরজু পণি আপনাকে আমরা জোরালভাবেই চাই। প্লিজ ফিরে আসেন। দেখেন বাস্তব আড্ডা কত মাধুর্য ছড়াতে পারে। এর কাছে ভার্চুয়াল আড্ডা – ফুহ!) একদিন অপর্ণা মম্ময়ও যুক্ত হলেন আমাদের সাথে।

যদিও তিনি আমাদের আড্ডায় এখনো বাস্তবে আসতে পারেন নি কিন্তু নিয়মিত তিনি আড্ডার খবরাখবর রাখেন। গ্রুপ পেইজের পোস্টে মন্তব্য করেন। এবং দৃঢ় আশাবাদ ব্যাক্ত করেন যে, অচিরেই যে কোনো আড্ডায় হাজির হয়ে সবাইকে চমকে দেবেন। তো যা বলছিলাম, আড্ডার জমায়েত তো হচ্ছে না। সাড়া তো পাচ্ছি না।

তাহলে কী করা? ভাবতে শুরু করলাম। বুঝলাম অলওয়েজ ড্রিম নামের বাচ্চা ব্লগারকে কেউ তেমন চেনে না। তার উপর কেউ আস্থা রাখতে পারছে না। বুঝে ফেললাম, ড্রিম-ফ্রিমকে দিয়ে হবে না। ভাগ্যিস বুঝতে পেরেছিলাম।

আমার গোবর-গনেশ মাথায় কেমনে যে এই বুদ্ধি খেলল ভেবে পাই না। কিন্তু সত্যি আমার মাথাতেই বুদ্ধিটা খেলেছিল বলে গোপনে কতবার যে নিজের পিঠ চাপড়ে দিয়েছি। বুদ্ধিটা ছিল – এমন কাউকে ধরতে হবে যাকে ব্লগের প্রায় সবাই চেনে। সাহিত্য-আড্ডার তখন মাত্র গুটি কয়েক সদস্য। তাদের ভিতরেই পেয়ে গেলাম স্বপ্নবাজ অভিকে।

তাকে ধরলাম কষে। এবং বলতে দ্বিধা নেই তাকে জোর উদ্যোগ নিতে অনুরোধ করার পরে এবং তিনি জোর চেষ্টা করাতেই আমাদের প্রথম আড্ডা আলোর মুখ দেখতে পেয়েছিল। এরপর দ্বিতীয় আড্ডা তো এক এপিক। অপ্রত্যাশিতভাবে কত ব্লগারই যে সেদিন এলেন। বিশেষ করে ব্লগার অপরিণিতা আপুর কথা না বললেই নয়।

তিনিই প্রথম নারী ব্লগার যিনি আমাদের আড্ডায় প্রথম এসেছেন। গতকালের (১লা নভেম্বর) আড্ডা নিয়ে “সাহিত্য-আড্ডা” ইতোমধ্যেই সৌহার্দপূর্ণ সফল তিনটি আড্ডা সমাপ্ত করেছে। আমাদের আড্ডা ক্রমশ জমজমাট হয়ে উঠছে। তৃতীয় আড্ডা শেষে সেটা আরও স্পষ্ট প্রতীয়মান। পুরানোরা তো আসছেনই নতুনরাও আসছেন, আসার আগ্রহ প্রকাশ করছেন।

সাহিত্য-আড্ডার মূল উদ্দেশ্য – সাহিত্য নিয়ে আলোচনা, সদস্যদের লেখার পারস্পরিক গঠনমূলক সমালোচনার মাধ্যমে পরস্পরকে ঋদ্ধ হতে সাহায্য করা। যদিও আমরা প্রথম দুটি আড্ডায় মূল উদ্দেশ্যের ধারে-কাছেও যাই নি। আমাদের ভাবনাজুড়ে ছিল, শুধুই পারস্পরিক পরিচিতি অর্জন ও সৌহার্দ বৃদ্ধি। তবে এখন সময় এসেছে ধীরে ধীরে মূল উদ্দেশ্য নিয়ে চিন্তাভাবনা করার। এবং তারই প্রতিফলন ছিল গতকালকের আড্ডাতে।

ব্লগার এ টি এম মোস্তফা কামাল ভাই কাব্যছন্দ জানার প্রয়োজনীয়তার উপরে একটি প্রবন্ধ লিখে এনেছিলেন। তার প্রবন্ধের উপর ভিত্তি করে এরপর ছন্দ নিয়ে অনেক আলোচনা হল। কুহক ভাই কামাল ভাইকে অনেক প্রশ্ন করছিলেন। ভাবটা এমন ছিল যেন কুহক ভাই একটি ছোট্ট বালক। নবীন শিক্ষার্থী।

প্রশ্ন করে যাচ্ছেন গুরুজির কাছে। কামাল ভাইও গুরুর ধৈর্য নিয়ে তার সকল প্রশ্নের জবাব দিয়ে যাচ্ছিলেন। এই প্রশ্নোত্তর পর্ব থেকে একটা বিষয় স্পষ্ট কামাল ভাইয়ের পাঠের পরিমাণ অর্থাৎ জানার পরিমাণ অনেক অনেক বেশি। আর কুহক ভাইও যে অনেক পড়েন, অনেক জানেন তা তার প্রশ্ন থেকেই আন্দাজ করে নেয়া যায়। আমি কোনো প্রশ্ন করতে পারি নি।

কারণ আমি তো কিছুই জানি না। সীমিত পাঠের দৌড়। কাল টের পেলাম প্রশ্ন করতে হলেও জানতে হয়। প্রশ্ন করতে পারাটাও একটা বিশেষ যোগ্যতা। কিছুই না জানলে কী প্রশ্ন করতে হবে বা কিভাবে প্রশ্ন করতে হবে তা খুঁজে পাওয়া যায় না।

সুতরাং আমি শুধু তাদের আলাপের মুগ্ধ শ্রোতা হয়েই ছিলাম। কামাল ভাইকে আমরা “সাহিত্য-আড্ডায়” পেয়েছি আমাদের বড়ভাই হিসাবে। তিনি যেন আমাদের শিক্ষক, বন্ধুস্থানীয় শিক্ষক। তার কালকের একটা কথা আমার মনে দাগ কেটে আছেঃ আমাদের এই সাহিত্য-আড্ডা সফল হবে। এতে কোনো সন্দেহ আর নাই।

গতকাল আড্ডায় যারা এসেছিলেন সবাই আসলে কামাল ভাইয়ের এই অনুভূতি নিয়েই বাসায় ফিরতে পেরেছি। আমাদের কারো মনেই সন্দেহ নেই সাহিত্য-আড্ডার সাফল্যের ব্যাপারে। আমরা এখন “সাহিত্য-আড্ডা” নিয়ে আরও সাহসী স্বপ্ন দেখতেই পারি। সে না হয় আরেক দিন হবে। বিঃ দ্রঃ আমাদের আড্ডা নিয়মিত প্রতিমাসের শেষ শুক্রবার বসে।

তবে অক্টোবরে এই নিয়মের ব্যাত্যয় ঘটাতে হয়েছে। ২৫শে অক্টোবর ছিল গতমাসের শেষ শুক্রবার। কিন্তু ঐ দিন ছিল বিরোধী দলের সমাবেশ। অপ্রীতিকর পরিস্থিতির সম্ভাবনা থাকায় ঐ দিনের আড্ডা স্থগিত করে ১লা নভেম্বর ধার্য করা হয়েছিল। নভেম্বরের আড্ডা যথারীতি মাসের শেষ শুক্রবার, ২৯শে নভেম্বর বসবে।

সাহিত্য-আড্ডার ফেবু লিংকঃ সাহিত্য-আড্ডা ব্লগারদের সাথে একত্রে আড্ডাবাজি কিংবা যে ভাললাগার শেষ নাই সামুভিত্তিক আমাদের একটি সাহিত্য-গ্রুপ থাকা উচিত

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.