আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

একটি টেলিফোন কথোপকথনঃ মার্ক টোয়েন (বাংলা অনুবাদ পোষ্ট)

অদ্ভূত বিষয়গুলোতে বিস্ময়াভূত হওয়া একটি চমকপ্রদ ব্যাপার!! একটি টেলিফোন কথোপকথন বাই মার্ক টোয়েন একটি টেলিফোন কথোপকথনের ক্ষেত্রে যখন আপনি শুধুমাত্র সামনে বসে থাকবেন এবং সেই কথোপকথনে অংশগ্রহন করবেন না, তখন তা হয়ে দাঁড়ায় এই আধুনিক যুগের পৃথিবীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আগ্রহজনক কাজ। গতকাল আমি দর্শনের একটি সর্বোচ্চ মাত্রার বিষয় নিয়ে লিখছিলাম, তখন ঘরের ভিতর ঠিক এই ধরণের একটি টেলিফোন কথোপকথন চলছিল। আমি বুঝতে পেরেছিলাম, একজন খুবই ভাল লিখতে পারে যখন অদূরে কেউ টেলিফোনে কথা বলে। যা হোক, ব্যাপারটা ঘটেছিল এইভাবে, আমাদের বাড়ির একজন সদস্য ঘরে এল আর আমাকে বলল সে শহরের কেন্দ্রে থাকা জনাব বাগ্লে এর সাথে কথা বলতে চায়। আমি অনেকে বার-ই খেয়াল করেছি ভদ্রমহিলারা কখনই নিজেরা সেন্ট্রাল অফিসে কল করতে চায় না।

আমি জানি না কেন, কিন্তু তারা বরাবরি এমন করে। তাই বাধ্য হয়ে আমি-ই টেলিফোনের বেলটা উঠালাম এবং সেই কথা বলা শুরু হল- সেন্ট্রাল অফিল (গ্রাফি)- হ্যালো এটা কি সেন্ট্রাল অফিস? অবশ্যই। আপনি কী চান? আপনি কি আমাকে একটু বেগ্লেকে ধরিয়ে দিতে পারবেন? ঠিক আছে। শুধু কানে টেলিফোন ধরে রাখুন। তারপর আমি শুনলাম ক্লক...ক্লক...ক্লক...ক্লক...ক্লক...ক্লক......লক......ক্লক......লক তারপর দাঁতে দাঁত ঘষার মত ভয়ংকর কিচকিচ শব্দের মত শব্দ এবং শেষ্পপর্যন্ত একটি নারী কন্ঠ কথা বলল, হ্যা বলছি, আপনি কি আমাকে চাইছিলেন? কোন কথা না বলে আমি কল দাতাকে ধরিয়ে দিলাম এবং বসে পরলাম।

এরপরই আমি খেয়াল করলাম পৃথিবীর সবচেয়ে অদ্ভুত জিনিস। একটি কথোপথনে আপনি শুধু প্রশ্নটি শুনতে পাবেন, উত্তরটি নয়। তাঁর মানে আপনি শুধু নিমন্ত্রন করার ব্যাপারটি শুনতে পাবেন কিন্তু এর জন্য কোন ধন্যবাদ দেওয়া হল কি হল না, সেটা বুঝতে পারবেন না। আপনি শুধু কিছুক্ষনের জন্য ওপাশের কথা পরিবর্তে এপাশের নিরবতাটুকু বুঝতে পারবেন। কোন কথার মাথা-মুন্ড আবিস্কার করতে পারবেন না।

যা হোক, আমিও এখানে শুধু এইপাশের কথা, এই পাশের চিৎকার এবং এই পাশেরই নিরবতা বুঝতে পারছিলাম। কথোপকথনটি ছিল এরকম- - হ্যা, কেন? কিভাবে হয়েছে? - নিরবতা। - কি বললে তুমি? - নিরবতা। - ওহ না, আমি তা মনে করি নি। - নিরবতা।

- না। আরে না। আমি তা বুঝাই নি। আমি বলেছিলাম, ওটাকে রেখে দাও যতক্ষন সেদ্ধ হতে থাকে নয়তো সিদ্ধ হয়ে আসার আগেই রেখে দাও। - নিরবতা।

- কি? - নিরবতা। - আমি ওটা আবার শেষ মাথা থেকেই সেলাই করেছি। - নিরবতা। - হ্যা, আমিও এভাবেই পছন্দ করি। তবে আমার মনে হয় ভ্যালেনসিন্স অথবা বম্বাজিন অথবা এরকম কিছু দিয়েই সেলাই করলে আরো ভালো হতো।

- নিরবতা। - এভাবে এটা ছেড়াবেড়া হয়ে যেত। - নিরবতা। - বাইবেলের পুরানো দলিলের পঞ্চম গ্রন্থের উনচল্লিশ পৃষ্ঠা এবং চৌষট্টি থেকে সাতানব্বই তম পৃষ্ঠায়ও এটা আছে। আমার মনে হয়, আমাদের প্রায়ই এসব পড়া উচিত।

- নিরবতা। - সম্ভবত তাই। আমি সাধারণত চুলের কাটা ব্যাবহার করি। - নিরবতা। - তুমি কি বলেছিলে? (এই পাশে নিজে নিজে) ‘বাচ্চারা চুপ করো’ - ওহ! বি-ফ্ল্যাট।

আমি ভেবেছিলাম তুমি বিড়ালটার কথা বলছো? - নিরবতা। - কখন থেকে? - নিরবতা। - কেন? _আমি_কখনই এ ব্যাপারে শুনি নাই। - নিরবতা। - তুমি আমাকে অবাক করেছো।

এটা একদম অসম্ভব। - নিরবতা। - কে করেছে? - নিরবতা। - হায় ঈশ্বর। - নিরবতা।

- এই পৃথিবীতে কি হচ্ছে? এটা কি ঠিক গীর্জাতেই হয়েছে? - নিরবতা। - আর তাঁর মা কি সেখানে ছিল? - নিরবতা। - কেন মিসেস বাগ্লে? আমি নিশ্চিত এসব ঝামেলার কারনেই একদিন মারা যাব। তারা কি করেছিল? - অনেক্ষন নিরবতা। - আমি একদম ঠিক জানি না কিন্তু আমার মনে হয় ঠিক এরকম কিছু একটা।

যেমন- ট্রি ললি......লল......লল......ললি......লল......লল......তারপর এটা দুবার হবে। তুমি তো জানই। - নিরবতা। - হ্যা, আমি মনে করি, এটা খুব সুন্দর। কিন্তু খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং আগ্রহ উদ্দীপক, যদি তুমি পিয়ানো ও এন্ডাটিনো দিয়ে করো।

- নিরবতা। - ওহ হ্যা গাম......গাম। তবে আমি তাদেরকে কখনো চকলেট খেতে দিব না, যতদিন না তাদের দাঁত উঠছে। - নিরবতা। - মানে? - নিরবতা।

- নাহ। কোন ব্যাপার না। ‘সে’ এখানে লেখালেখি করছে। না...না ‘সে’ বিরক্ত হচ্ছে না। - নিরবতা।

- আচ্ছা ঠিক আছে। যদি আমি পারি তাহলে আসব। (এইপাশে নিজে নিজে) “এতক্ষণ টেলিফোন ধরে হাত উচিয়ে রাখা কতটা ক্লান্তিকর! আমার মনে হয় সে বুঝবে......” - নিরবতা। - আরে না। একদমই না।

আমার কথা বলত ভাল লাগছে কিন্তু আমি ভাবছি তোমাকে আমি অন্য কোন কাজ থেকে আটকে রাখছি কিনা। - নিরবতা। - মেহমান? - নিরবতা। - নাহ। আমরা এগুলোর উপর মাখন দেই না।

- নিরবতা। - হ্যা, এটা খুব ভাল উপায়। কিন্তু অধিকাংশ রান্নার বইগুলো বলে যে বিভিন্ন ঋতুর খাবার ঋতু চলে যাবার পর খাওয়াটা অস্বাস্থ্যকর। ‘সে’ও এধরণের খাবার পছন্দ করে না। বিশেষ করে সংরক্ষিত খাবার গুলো ‘ও’ একদমই খেতে চায় না।

- নিরবতা। - ওহ, এর দাম তো অনেক বেশী। এক গুচ্ছের জন্য আমরা কখনই পঞ্চাশ সেন্টের বেশী দিব না। - নিরবতা। - অবশ্যই যাও।

আচ্ছা তাহলে বিদায়। - নিরবতা। - চারটা বাজলে আমি তৈরি থাকব। আচ্ছা বিদায়। - নিরবতা।

- তোমাকে অনেক ধন্যবাদ। বিদায়। - নিরবতা। - ওহ না , একদমই না। আমার বরং ভাল লাগছে......আহ! আমি এটা শুনে খুব খুশি হয়েছি।

তাহলে বিদায়? - নিরবতা। (টেলিফোন ধরে রেখেই সে বলল, ওহ!! একজন মানুষের হাত ব্যাথা করে দেওয়ার জন্য এটাই যথেষ্ট। ) আসলে একজন পুরুষ একবার ‘বিদায়’ বলা মাত্রই কথা শেষ হয়ে যায়। আর একজন ভদ্র মহিলা তা করতে পারে না। আমি তাদের প্রশংসা করেই বলছি, তারা একবারেই ‘বিদায়’ বলে কথা শেষ করতে পারে না! ****৩০ নভেম্বর ১৮৩৫ সালে ফ্লোরিডার মিসৌরীতে মার্ক টোয়েনের জন্ম।

তিনি আমেরিকার অন্যতম দার্শনিক এবং জগত বিখ্যাত রম্য লেখকও বটে। ‘A Telephonic Conversation’ ঠিক তেমনি একটি কৌতুকপূর্ণ লেখনি তাঁর। **** ‘A Telephonic Conversation’ এর বাংলা অনবাদ করার প্রয়াস চালিয়েছি। আগে কখনো এর বাংলা অনুবাদ হয়েছে কিনা আমি জানি না। নিতান্তই শখের বশে করা।

ভুল ভ্রান্তি থাকতে পারে। ক্ষমা-সুন্দর দৃষ্টি কামনা করছি। 'মার্ক টোয়েনের প্রথম স্বাক্ষাৎকার' গল্পটির বাংলা অনুবাদ পড়তে চাইলে ঘুরে আসতে পারেন এখান থেকে।  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.