আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

প্রিয় মা কিংবা জোছনার কাছে চিঠি

http://www.facebook.com/reyad.parvez.3

প্রিয় মা, কেমন আছো,আশা করি ভালো। আমি ভালো আছি। তোমায় গতরাতে স্বপ্নে দেখলাম। দেখলাম আমার প্রচণ্ড জর । তুমি মাথার কাছে বসে বসে কোরআন শরীফ পরছ।

দেখলাম বাবা দরজা দিয়ে ঢুকলেন। কি আজব কান্দ, বাবাতো সেই কবে মরে গেছেন ,বুঝলাম স্বপ্ন দেখছি তারপরপরই দেখলাম আমি আকাশে উড়ছি । হটাত মাটিতে পড়ে গেলাম । ঘুম ভেঙ্গে গেল। দেখলাম আমি আমার খাট থেকে মেঝেতে পড়ে আছি।

দূরে আমার দু মেয়ে রিশা আর নিশা আমার খাট থেকে পড়ে যাওয়া দেখে হাসছে । আমিও হাসলাম। তাদের মা রান্না ঘর থেকে ছুটে এলো। খুব হাসাহাসি হলো, বুঝলে মা। মেয়ে দুটো জমজ হওয়ায় আমি মাঝে মাঝে বুঝি না কোনটা কে ।

তাদের মা ঠিকই বুঝে,এমন কেন বলতো, মায়েদের কি আলাদা কোন ক্ষমতা থাকে? শেষবার যেবার তোমাদের ছেড়ে বার্লিন এলাম বড় খারাপ লেগেছিল। যতটা না সবার জন্য তার চেয়ে বেশী তোমার জন্য । আমিতো আর দেশে ফিরলাম না, আচ্ছা তুমি কি বুঝতে পেরেছিলে যে তোমার সাথে আমার আর দেখা হবে না? নাহয় আমন হু হু করে কাঁদলে কেন? প্রতিবার যখন ফোন দিতাম তুমি শুধু একটা কথাই বলতে,বাবা ভাল আছিস তো ? মেঝ ভাই ফোন কেড়ে নিত । তোমাকে বলতো আরে ওর টাকা খরচ হচ্ছে । তুমি ফোন ছেড়ে দিতে।

মেঝ ভাই বেশি করে টাকা পাঠাতে বলত। টাকা পাঠাতাম । তোমাকে যে এক্সট্রা টাকা পাঠাতাম তাও তুমি ওদের দিয়ে দিতে। আচ্ছা মা তুমি এত বোকা কেন । আমার মাঝে মাঝে গ্রামের শীতের কথা মনে পরে।

ভোরবেলায় বাড়ির সবার জন্য পিঠা বানাতে। আমার পিঠাটা ছোট হত। তুমি আমাকে বলতে, তুমি ছোট তাই তোমার পিঠাও ছোট। মনে আছে অনেক ছোটবেলায় একবার ভুতের গল্প শুনে ভয় পেলাম, জ্বর উঠে গেল, তুমি সারারাত কোলে করে রাখলে। ইদানিং এসব কেন যেনো বেশী মনে পরে।

জানো মা, বার্লিনেও জোছনা হয় তবে গ্রামের বাড়ীর ঘোলাটে জোছনা এখানে পাই না, কেমন যেন শহরের নিয়ন বাতির মত । মনে পরে একবার খুব ববৃষ্টি হল। আমি,তুমি,মেঝ ভাই আর আব্বা খুব করে ভিজলাম? বাবার মতন কঠিন মানুষও ঐ দিন হটাত বড় ভাই কে মনে করে কেঁদেছিল। মা বাবারা এত অদ্ভুত হয় কেন বলতে পারো? আচ্ছা,আব্বাকে তো বড় ভাইয়ের পাশেই কবর দেওয়া হয়েছিলো,তাই না? আজকাল বড় আফসোস লাগে , আমি তো সব হারালাম , টাকার পিছে দৌড়ে সব হারালাম। তোমায় কষ্টের কথা বলতে ইচ্ছা করে না।

চিঠির শুরুতে প্রিয় মা লিখেছিলাম। প্রিয় শব্দটা লিখতে শরম লাগছিলো। তোমার প্রতি জ ভালবাসা তা কখনই তোমাকে দেখাতে পারি নি। তাই আজ প্রিয় শব্দটা লিখতে হাত আটকে যাচ্ছিল। পরে ভাবলাম এ চিঠি তো আমি পোস্ট করব না।

তাই প্রিয় লেখতেই পারি। বহুদিন গ্রামে যাই নি, খুব বেশিদিন বোধহয় বাঁচবও না । যে সব দিনে উথাল পাথাল জোছনায় তোমার কবরে বরই পাতার বিচিত্র নকশা হয়, প্রচণ্ড বাতাসে চারপাশ থর থর করে কাপে, বড় ইচ্ছা হয় বুঝলে,তেমনি এক দিনে একরাশ কোমল জোছনায় তোমার পাশে ঘুমিয়ে যাই।


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.