আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

যেভাবে বাংলাওয়াশ নিউজিল্যান্ড

নিউজিল্যান্ডের বাংলাদেশ সফর শুরুর সময় থেকেই ঘুরেফিরে আসছিল ২০১০ সালের স্মৃতি। এবারও কি হবে সিরিজ জয়? বাংলাওয়াশ? কিউই অধিনায়ক ব্রেন্ডন ম্যাককালাম অবশ্য কৌতুক করে বলেছিলেন, ‘এবার আর ৪-০ হবে না। ’ তিন ম্যাচের সিরিজে তো ৪-০ হওয়ার সুযোগই নেই। কিন্তু ম্যাককালামরা সত্যিই এড়াতে পারলেন না বাংলাওয়াশের লজ্জা। তিন বছর পর আবারও বাংলাদেশের কাছে সব কটি ওয়ানডে হারের স্মৃতিই সঙ্গী হলো নিউজিল্যান্ডের ক্রিকেটারদের।



ওয়ানডে সিরিজে বাংলাদেশের শুরুটা হয়েছিল দুঃসংবাদ দিয়ে। প্রথম ওয়ানডে শুরুর ঠিক আগমুহূর্তে ডেঙ্গুজ্বরের কবলে পড়ে মাঠের বাইরে চলে গেলেন গত সিরিজের সেরা খেলোয়াড় সাকিব আল হাসান। বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারকে ছাড়াই শুরু হলো বাংলাদেশের কিউই-বধ মিশন। কিন্তু সাকিবের অভাবটা টেরই পেতে দিলেন না সাকিবের বদলে শেষ মুহূর্তে একাদশে সুযোগ পাওয়া নাঈম ইসলাম।

মিরপুরে সিরিজের প্রথম ম্যাচেই খেললেন ১১৫ বলে ৮৪ রানের দায়িত্বশীল এক ইনিংস।

চতুর্থ উইকেটে অধিনায়ক মুশফিকুর রহিমের সঙ্গে জুটি বেঁধে স্কোরবোর্ডে যোগ করলেন ১৫৪ রান। যথার্থ অধিনায়কের মতো মুশফিক খেললেন ৯৮ বলে ৯০ রানের দারুণ এক ইনিংস। জয়ের জন্য নিউজিল্যান্ডের সামনে দাঁড় হলো ২৬৬ রানের চ্যালেঞ্জিং লক্ষ্য। নাঈম আর মুশফিকের ভালো ব্যাটিংয়ে লড়াকু পুঁজি গড়া গেলেও বাংলাদেশের জয়ের মূল নায়কটা বনে গেলেন রুবেল হোসেন। বৃষ্টিবিঘ্নিত ম্যাচে ম্যাচের দৈর্ঘ্য কমিয়ে ফেলার পর নিউজিল্যান্ডের সামনে নতুন লক্ষ্য নির্ধারিত হয়েছিল ৩৩ ওভারে ২০৬ রান।

বৃষ্টির পর খেলা শুরুর পর মারকুটে ব্যাটিং শুরু করেছিলেন কোরে অ্যান্ডারসন ও গ্রান্ট ইলিয়ট। কিন্তু দুর্দান্ত বোলিং করে তাঁদের দাঁড়াতেই দিলেন না রুবেল হোসেন। হ্যাটট্রিকসহ ছয়টি উইকেট নিয়ে নিউজিল্যান্ডকে ১৬২ রানে গুটিয়ে দিলেন তিন ওভার বাকি থাকতেই। ৪৩ রানের জয় দিয়ে শুভসূচনা করল বাংলাদেশ।

পেছন ফিরে তাকালে বোঝা যাবে, রুবেলে হ্যাটট্রিকটাই আসলে ঠিক করে দিয়েছে সিরিজের গতিপথও।

সেই ম্যাচটায় রুবেলের সৌজন্যে দুর্দান্তভাবে ঘুরে না দাঁড়ালে বাংলাদেশের হোয়াইটওয়াশ তো হতোই না, সিরিজেও মানসিকভাবে এগিয়ে যেত নিউজিল্যান্ড।

১-০ তে এগিয়ে যাওয়ার পর সিরিজ জয়ের লক্ষ্য নিয়েই মিরপুরে দ্বিতীয় ওয়ানডেটা শুরু করেছিল মুশফিক বাহিনী। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত ব্যাট হাতে শুরুটা ভালো হলো না বাংলাদেশের। এক ওভার হাতে রেখেই ইনিংস শেষ হয়ে গেল ২৪৭ রানে। সর্বোচ্চ ৫৮ রান এল তামিম ইকবালের ব্যাট থেকে।

কিন্তু ব্যাটিং ব্যর্থতার আক্ষেপটা বল হাতে টেরই পেতে দিল না বাংলার বাঘেরা। দুর্দান্ত বোলিং করে নিউজিল্যান্ডকে গুটিয়ে দিল ২০৭ রানে। এবার জয়ের নায়ক একক কেউ নয়। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টাতেই এল জয়। তবে ১০ ওভার বল করে মাত্র ৩৪ রানের বিনিময়ে গুরুত্বপূর্ণ তিনটি উইকেট নিয়ে ম্যাচসেরা সোহাগ গাজী।

তিনটি উইকেট গেল মাশরাফির ঝুলিতেও। তবে তিন উইকেটের পাশাপাশি ব্যাট হাতেও যে ২৬ রান করেছিলেন টেস্ট সিরিজে হ্যাটট্রিক করা সোহাগ।

এক ম্যাচ হাতে রেখেই সিরিজ জয়ের পর বেশ জোরেশোরেই উঠল সেই মোক্ষম প্রশ্নটা। হবে কি বাংলাওয়াশ? ধবলধোলাইয়ের লজ্জা এড়ানোর জন্য অবশ্য সর্বোচ্চ চেষ্টাটাই করেছিলেন নিউজিল্যান্ডের ক্রিকেটাররা। শুরুতে ব্যাট করতে নেমে ৩০৭ রান সংগ্রহ করে লজ্জা এড়ানোর কাজটা প্রায় সেরেই রেখেছিলেন।

কিন্তু শেষরক্ষা হলো না কিউইদের। বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের লড়াকু পারফরম্যান্সে সেই বাংলাওয়াশের লজ্জাতেই ডুবল কালো টুপির দল। ১০৭ বলে ৯৬ রানের ইনিংস খেলে বাংলাদেশ শিবিরে জয়ের যে আশা শামসুর রহমান জাগিয়েছিলেন, সেটাকে পূর্ণতা দিলেন নাঈম ইসলাম, নাসির হোসেনরা। প্রথম ম্যাচে ৮৪ রানের পর আজ নাঈমের ব্যাট থেকে এল ৬৩ রান। ৩৮ বলে ৪৪ রান করে দলকে জিতিয়েই মাঠ ছেড়েছেন নাসির।

বাংলাদেশের পক্ষে জয়সূচক রানটি অবশ্য এসেছে সোহাগের ব্যাট থেকে। চার বলের ব্যবধানে দুটি চার মেরে চার বল বাকি থাকতেই বাংলাদেশকে কাঙ্ক্ষিত জয়টি এনে দিয়েছেন এই ডানহাতি ব্যাটসম্যান।

বাংলাদেশের মাটিতে আরও একবার হোয়াইটওয়াশের দুঃসহ স্মৃতি নিয়েই ওয়ানডে সিরিজ শেষ করতে হলো নিউজিল্যান্ডকে। বাংলার দামাল ছেলেরা মাতল বাংলা-ধোলাইয়ের উত্সবে!

 

সিরিজের সেরা পাঁচ

সেরা পাঁচ ব্যাটসম্যান

                     ম্যাচ         রান          সর্বোচ্চ         ১০০/৫০

নাঈম ইসলাম         ৩            ১৬৩              ৮৪                      ০/২   

রস টেলর               ৩              ১৬০               ১০৭*                ১/০

মুশফিকুর রহিম        ৩            ১২৩              ৯০                      ০/১

শামসুর রহমান         ২            ১২১              ৯৬                      ০/১

গ্রান্ট এলিয়ট           ৩            ৮৮                ৭১                      ০/১          

 

সেরা পাঁচ বোলার

                        ম্যাচ         উইকেট              সেরা বোলিং

জেমস নিশাম             ২                    ৮                        ৪/৪২                      

রুবেল হোসেন           ৩                   ৭                        ৬/২৬ 

কোরি অ্যান্ডারসন      ৩                   ৭                         ৪/৪০ 

সোহাগ গাজী             ৩                   ৫                        ৩/৩৪ 

টিম সাউদি               ২                     ৩                       ৩/৩৪ 

সোর্স: http://www.prothom-alo.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.