আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ওবামাকে কী বলেছিলেন মনমোহন সিং

ক্ষমতাধর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাকে বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশ ভারতের প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিং বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে কী বলেছিলেন- এ নিয়ে রাজনীতির অন্দরে-বাইরে এবং পর্যবেক্ষক মহলে কৌতূহলের শেষ নেই। সাবেক কূটনীতিক ও পর্যবেক্ষকদের অনেকের ধারণা, সেই আলোচনায় বাংলাদেশের অগ্নিগর্ভ রাজনীতির মুখে মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান ডব্লিউ মোজেনার বক্তব্য ও দৌড়ঝাঁপ নিয়ে কথা হয়েছে। অক্টোবরেই মনমোহন ওবামার সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেন। সেই টেলিফোন সংলাপের পর হঠাৎ নাটকীয়ভাবে ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মোজেনা ছুটে যান দিল্লি। তিনি ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের উপদেষ্টা শিব শঙ্কর মেননের সঙ্গে দেখা করতে চাইলেও সাক্ষাৎ হয়ে ওঠেনি।

তবে তিনি ভারতের পররাষ্ট্র সচিব সুজাতা সিং ছাড়াও অন্য কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। কূটনৈতিক পেশাদারিত্বে সুজাতা সিংয়েরও সুনাম যথেষ্ট। এমনকি ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সৈয়দ আকবরকে যারা দেখেছেন তারাও মুগ্ধ হয়েছেন। মার্কিন রাষ্ট্রদূত মোজেনা সুজাতা সিংসহ ভারতীয় কূটনীতিকদের বোঝাতে চেয়েছেন সব দলের অংশগ্রহণে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন ছাড়া তাদের চাওয়ার কিছু নেই। দিলি্ল থেকে ফিরে ওয়াশিংটন যাওয়ার আগে মোজেনা ৬৪ জন কূটনীতিকের সঙ্গে পররাষ্ট্র মন্ত্রী দীপু মনিরও মুখোমুখি হয়েছিলেন।

তার বা পশ্চিমা কূটনীতিকদের দৌড়ঝাঁপ সরকার কখনোই সুনজরে দেখেনি। এর আগেও পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিদেশি কূটনীতিকদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক না গলানোর পরামর্শ দিয়েছিলেন ডেকে নিয়ে। এবারও তিনি মোজেনাকে প্রশ্ন করেছিলেন- দিল্লি তো ঘুরে এলেন, চীনও যাচ্ছেন নাকি? মার্কিন রাষ্ট্রদূত মোজেনা বলেছিলেন আপাতত যাচ্ছি না, এটা গুজব। ওয়াশিংটন যাওয়ার আগে দুপুরে পররাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে বৈঠক করেন। সন্ধ্যায় মোজেনা তার বাসভবনে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে দুই দফা বৈঠক করেছেন।

পর দিন সকালেই খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা শমসের মবিন চৌধুরী ও শেখ হাসিনার উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভীর সঙ্গে কথা বলেন। জানতে চান দুই পক্ষের সর্বশেষ অবস্থান। এ ছাড়া তিনি ভারতের হাইকমিশনার পঙ্কজ শরণের সঙ্গেও একান্ত বৈঠক করেন। একজন সাবেক পররাষ্ট্র সচিবের ভাষায়, ওবামার কাছে মোজেনার বক্তব্য ও দৌড়ঝাঁপ নিয়ে মনমোহনের কণ্ঠে নাকি ছিল অনুযোগের সুর। পর্যবেক্ষকদের মতে ওয়াশিংটন স্টেট ডিপার্টমেন্টে এখানকার পরিস্থিতি, নির্বাচন নিয়ে সরকার ও বিরোধী দলের অবস্থান এবং দিলি্লর মনোভাব তুলে ধরে দিকনির্দেশনাই নেবেন মোজেনা।

তিনি ফিরে আসার পর বোঝা যাবে তার অবস্থান এবং যুক্তরাষ্ট্রের মনোভাব। কারণ তার দিলি্ল সফর থেকে ওয়াশিংটন যাত্রা সবই ছিল স্টেট ডিপার্টমেন্টের তলবে। সরকারি ও বিরোধী দলের সাধারণ সম্পাদক ও মহাসচিব ছাড়াও আওয়ামী লীগ-বিএনপি নেতাদের সঙ্গে পশ্চিমা এবং ভারতীয় কূটনীতিকদের যোগাযোগ চলছে। এমনকি সারা জীবন পশ্চিমা ঘরানার বিএনপি ও আওয়ামী লীগের বহুল আলোচিত দু-তিন জন নেতা এখন পশ্চিমের সূর্যের মতো খুব বেশি হেলে পড়ছেন প্রতিবেশী বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশের দিকে। সময় ও পরিস্থিতি তাদের পূর্বমুখীও করেছে।

রাজনীতির দাবা খেলায় আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার শুধু বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশ ভারতই নয়, পুবের চীন ও রাশিয়ার সঙ্গেও সম্পর্কটা উষ্ণ করে ফেলেছে। বিরোধী দল বিএনপি পশ্চিমা ও চীনের সঙ্গে সম্পর্ক রেখেই ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক উষ্ণ করার প্রক্রিয়া চালিয়ে যাচ্ছে। তবে এখানে এসে হোঁচট খাচ্ছে বিরোধী দল বিএনপি। পর্যবেক্ষকদের ভাষায় সন্দেহ-অবিশ্বাসের দেয়াল এখনো বিএনপি টপকাতে পারেনি। ভারতীয় গণমাধ্যমে হামেশাই '৭১-এর পরাজিত তালেবান ও জঙ্গিবাদের উত্থানে ক্ষতবিক্ষত একটি দেশের গোয়েন্দা সংস্থার তৎপরতা নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হচ্ছে।

সেখানে বলা হচ্ছে, এই ইসলামী জঙ্গিবাদের আশ্রয়-প্রশ্রয়দাতা হচ্ছে বিএনপি নেতৃত্ব ও তার শরিক জামায়াত। জামায়াতের সহিংস কর্মকাণ্ডকেও বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশ কখনোই গণতান্ত্রিক রীতিনীতির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ বলে মনে করছে না। ২০০১ সালের জাতীয় নির্বাচনে বিএনপি গণরায় নিয়ে জয়লাভের ক্ষেত্রে যে প্রতিবেশী গণতান্ত্রিক দুনিয়াকে কাছে পেয়েছিল তারা পরবর্তীতে দেখেছে বিএনপি-জামায়াত সরকারের আমলে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদের ভয়ঙ্কর তৎপরতার দৃশ্য। জনমত এ মুহূর্তে বিএনপির দিকে থাকলেও সেই জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসবাদের আগ্রাসন এবং শরিক জামায়াত আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে বিএনপিকে এগোতেই দিচ্ছে না। পশ্চিমারা বার বার বিএনপিকে নির্বাচনে অংশগ্রহণের পরামর্শ দিয়ে এলেও বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া জানেন তার বাধাটা কোথায়।

তাই পশ্চিমারা যতই ভরসা দিক তিনি সাহস পান না শেখ হাসিনার সর্বদলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে যেতে। গণআন্দোলন গড়তে না পারলেও সে পথটাই তাকে নিতে হচ্ছে। পর্যবেক্ষকদের মতে, আমাদের সুমহান মুক্তিযুদ্ধে গণতন্ত্রের মহান নেত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধীর নেতৃত্বে ভারত ও তার জনগণ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আক্রমণের মুখে ১ কোটি শরণার্থীকে আশ্রয় ও খাবার দিয়েছিল, অস্ত্র ও ট্রেনিং দিয়ে সাহায্য করেছিল, এমনকি মুক্তিবাহিনীর সঙ্গে মিত্রবাহিনী গঠন করে আমাদের মুক্তিযুদ্ধে তাদের ২০ হাজার সৈন্য জীবনও দিয়েছিল। স্বাধীনতার পর পর যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশের মানুষের পাশে অর্থ ও খাবার নিয়ে দাঁড়িয়েছিল। ফিরিয়ে নিয়েছিল মিত্রবাহিনীর সৈন্যদের।

সেই বাংলাদেশের মাটিতে রাজনৈতিক সরকারের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে ব্যর্থ রাষ্ট্রের তালিকায় ঠাঁই পাওয়া তালেবানি জঙ্গিদের অভয়ারণ্যের দেশের গোয়েন্দা সংস্থার তৎপরতা ও জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসবাদের উত্থানে তাদের নিরাপত্তা বিঘি্নত করার ঘটনা বা আশঙ্কা কখনোই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। এটি তাদের জন্য নিরাপত্তা হুমকিই নয়, গভীর বেদনারও। ভারত এ দেশের সঙ্গে বরাবর চেয়েছে উষ্ণ ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক। ভারতের রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী থেকে জাতীয় নেতৃত্ব এখনো বলে আসছেন দুই দেশের বন্ধুত্ব অটুট রাখতে। ভারতের সঙ্গে অমীমাংসিত ইস্যুর সমাধান এক কথা আর বাংলাদেশের মাটি জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদীদের ঘাঁটি হিসেবে চিহ্নিত হওয়া আরেক বিষয়।

বিএনপি নেতৃত্ব অতীতে যা-ই ঘটুক না কেন ভবিষ্যতে ক্ষমতায় এলে জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ প্রশ্নে ছাড় দেওয়া হবে না বলে যতই বক্তৃতা করুক তাতে বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশ আস্থায় নিতে পারছে না। এর মধ্যে বিএনপির নির্বাসিত প্রভাবশালী নেতা ও তাদের শরিক জামায়াতে ইসলামী অবিশ্বাসের উঁচু দেয়াল সরাতে বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, ইউরোপিয়ান ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোই নয়, ভারতও বরাবর বলে আসছে সব দলের অংশগ্রহণে একটি গ্রহণযোগ্য জাতীয় নির্বাচন তাদের প্রত্যাশা। এ ক্ষেত্রে নতুন করে একই সুরে সংলাপে সমাধান খুঁজতে তাগিদ দিচ্ছে চীন। শেষ পর্যন্ত বিরোধী দলের আন্দোলনের যাত্রাপথ ও সরকারের নির্বাচনমুখী অবস্থানের মধ্যে রাজনীতিতে কী ঘটে একের পর এক দৃশ্যের দিকে তাকিয়ে আছে পর্যবেক্ষক মহল।

জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মহল সবার নজরই বাংলাদেশের চলমান রাজনীতির দিকে। এমনি অবস্থায় দুই সপ্তাহের ওয়াশিংটন সফর শেষে মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান মোজেনা ফিরে এসে কী বলেন বা কী প্রেসক্রিপশন নিয়ে আসেন স্টেট ডিপার্টমেন্টের, সেদিকেই কৌতূহলী মানুষের দৃষ্টি। এমনকি কূটনৈতিকপাড়ায় খবর ও আগ্রহ রয়েছে তিনি ফিরে এলেই নাকি পশ্চিমা সব দেশের কূটনীতিকদের নিয়ে তার প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধীদলীয় নেতার সঙ্গে আলাদা বৈঠকের।

 

 

সোর্স: http://www.bd-pratidin.com/

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.