আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আরজে ভুবনের হালচাল

খুব অল্প সময়ের মধ্যে আমাদের দেশে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে এফএম রেডিও। আর এর পেছনেও একটি কারণ ছিল। পাশ্চাত্য সংস্কৃতির দাপটে বাংলাদেশের সংগীত শিল্প যখন ধ্বংসের পথে, তখন বাংলাদেশে ধূমকেতুর মতো আবির্ভূত হয় কয়েকটি এফএম রেডিও চ্যানেল। শুরুর অল্প কিছুদিনের মধ্যেই নতুন নতুন আইডিয়া এবং নতুন ধরনের পরিবেশনার মাধ্যমে তুমুল জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। এফএম রেডিও চ্যানেলগুলোর মাধ্যমে বাংলা গান আবার ফিরে পেতে থাকে হারানো গৌরব।

তরুণ প্রজন্মের মুখে মুখে ঘুরতে থাকে বাংলা গান এবং বিভিন্ন আরজে'দের (রেডিও জকি) কথা। এফএম ব্যান্ডের রেডিও সমপ্রচার অনেক আগে থেকেই বিশ্বজুড়ে জনপ্রিয় হলেও, বাংলাদেশে এর প্রচলন হয়েছে খুব বেশিদিন হয়নি। প্রথম দিকে বিবিসি রেডিও, ভয়েস অফ আমেরিকা প্রভৃতি বৈশ্বিক চ্যানেলগুলোই কেবলমাত্র বাংলাদেশে এফএম সমপ্রচার পরিচালনা করত। বাংলাদেশী মালিকানাধীন প্রথম এমএম রেডিও চ্যানেল হলো রেডিও টুডে। ২০০৬ সালে এটি আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করে।

এর অল্প কিছুদিন পরই আসে আরেকটি চ্যানেল রেডিও ফুর্তি। বর্তমানে বাংলাদেশে নয়টিরও বেশি বেসরকারি এফএম রেডিও চ্যানেল রয়েছে। সমপ্রচারের অপেক্ষায় আছে আরও বেশ কয়েকটি রেডিও চ্যানেল। যাত্রা শুরু করার পর পরই এফএম রেডিও চ্যানেলগুলো তুমুল জনপ্রিয়তা অর্জন করে। গান নির্বাচন ও পরিবেশনায় নতুনত্ব খুব সহজেই তরুণ প্রজন্মকে আকৃষ্ট করে ফেলে।

চলতি পথে এফএম রেডিও চ্যানেলগুলোর মতো বিনোদনের মাধ্যম আর নেই। মূলত বিভিন্ন ধরনের গান শুনতে পারাটাই এফএম চ্যানেলগুলোর মুল আকর্ষণ। এর উপর আবার রয়েছে প্রিয় ব্যান্ড বা শিল্পীদের সরাসরি পরিবেশনা ও সাক্ষাৎকার। পাশাপাশি প্রেম, ভূত, কৌতুক, সাম্প্রতিক ঘটনার মত জনপ্রিয় বিষয় নিয়ে করা অনুষ্ঠানগুলোও শ্রোতা ধরে রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এফএম রেডিও চ্যানেলগুলো বাংলাদেশের তরুণদের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি করেছে।

অনেক তরুণই এখানে ক্যারিয়ার গড়ার স্বপ্ন দেখেন। আরজে নীরব, সায়েম, টুটুল, সাদিয়া, মেঘলা, রাসেলের মতো নিজেদের জায়গা সুপ্রতিষ্ঠিত করেছে।

এফএম এর বর্তমান সময় নিয়ে আর জে সায়েম বলেন, 'বর্তমানে আমাদের দেশে বেশ কয়েকটি এফএম চ্যানেল এসেছে। তাদের মধ্যে অনেকে ভালো করছে। কিন্তু গাছের মধ্যে কিছু আগাছা থাকবেই।

তা মেনে নিয়েই আমাদের কাজ করতে হবে। আমাদের সময়ে সে সব আর জে ছিল তাদের মধ্যে কাজের প্রতি পেশাদারিত্ব ছিল এখন তার মধ্যে একটু ভাটা পড়েছে। তারা চাচ্ছে রাতা-রাতি জনপ্রিয় হয়ে যেতে। '

বাংলাদেশের এফএম রেডিওগুলোর একটি বড় সমালোচনা হচ্ছে এর উপস্থাপকদের ভাষার ব্যবহার। বাংলা-ইংরেজি মিশিয়ে কথা বলা এবং তরুণ প্রজন্মের উপর এর প্রভাবের কথা বিবেচনা করে অনেকেই এটাকে বাংলা ভাষার বিশুদ্ধতার জন্য হুমকি হিসেবে দেখছেন।

যদিও এই ব্যাপারটি পরিবর্তনের তেমন কোনো চেষ্টা এখনো দেখা যায়নি।

এ প্রসঙ্গে আর জে টুটুল বলেন, 'বাংলা - ইংরেজি মিশিয়ে কথা বলার প্রবণতা আমার মনে হয় এখন একটু কমে গেছে। আমরা যখনই একজন আর জেকে নিয়োগ করি, তখন আমরা তাদের বাংলা বলার দক্ষতা যাচায়-বাছাই করি। আমাদের দেশের প্রায় সব রেডিও চ্যানেলই এখন ভালো করছে। '

বিনোদনের এই মাধ্যমটির আরেকটি সমস্যা হচ্ছে সৃষ্টিশীলতার অভাব।

সব চ্যানেলের অনুষ্ঠানে খুব বেশি পার্থক্য খুঁজে পাওয়া যায় না। অনুষ্ঠান পরিকল্পনায় আরেকটু সৃজনশীল হলে এর জনপ্রিয়তা আরও বহুগুণ বেড়ে যেত। এ প্রসঙ্গে আরজে রাসেল বলেন, 'এ কথাটা কিছু সত্য যে প্রায় সব রেডিও চ্যানেলই একই ধরনের অনুষ্ঠান প্রচার করে। কিন্তু আমার কাছে মনে হয় এ সমস্যাটা আগে বেশি হতো। বর্তমানে অনুষ্ঠানের কিছু ভিন্নতা এসেছে।

'

এ প্রসঙ্গে আর জে মেঘলা বলেন, 'পুরুষের পাশাপাশি আর জে পেশায় সমান জায়গা করে নিয়েছে মেয়েরাও। এটা আমাদের জন্যও একটা ভালো দিক। আর এ পেশায় ভালো ও সম্মানজনক ক্যারিয়ার গড়া সম্ভব। '

বাংলাদেশের সমাজজীবনে, বিশেষ করে নগর জীবনে আবির্ভূত এফএম চ্যানেলগুলোর প্রভাব অনেক। অনেক মানুষেরই দিন শুরু হয় এফএম চ্যানেলের খবর কিংবা রবীন্দ্র সংগীত শুনতে শুনতে।

গাড়িচালকরা রেডিওর মাধ্যমেই জেনে যান কোন রাস্তায় জ্যাম বেশি, কোন রাস্তায় কম। অনেক তরুণকে দেখা যায় এফএম আরজে'দের বাচনভঙ্গি নকল করতে। অনেকে আবার এফএম রেডিওতে ক্যারিয়ার গড়ার স্বপ্নে বিভোর।

 

 

সোর্স: http://www.bd-pratidin.com/

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.