আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পরামর্শমূলক সরকার ব্যবস্থাঃ A Consultative/Expert Opinion-based Decision making Approach for the Government

নিরপেক্ষ নই; সত্য, ন্যায় ও স্বাধীনতার পক্ষেই আছি

অনেকদিন থেকেই আমার মাথায় বেশ কিছু প্রশ্ন ঘুরছিলো, কিছু বিষয় আমাকে ভাবিয়ে তুলছে। সাম্প্রতিক কালের রামপাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র ইস্যুর পর এটি নিয়ে ভাবতে বাধ্য হয়েছি, এবং আমার মত করে একটি সমাধানও দাঁড় করিয়েছি। পুরো বিষয়টি তাই আপনাদের সাথে শেয়ার না করে পারলাম না। একটি সরকার যখন ক্ষমতায় আসেন, তখন তারা দেশ পরিচালনার খুব গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন। তারা পার্লামেন্টে বসে বিভিন্ন আইন প্রনয়ন করেন, বিভিন্ন খাতে অর্থ ঢালেন, সম্পদ বন্টন করেন, দেশের সার্বিক উন্নয়নমূলক কর্মকান্ড পরিচালনা করেন।

কিন্তু দেখা যায়, এসব সিদ্ধান্ত সরকার অধিকাংশ ক্ষেত্রে একা একাই নিয়ে ফেলছেন! তারা কখনো এসব সিদ্ধান্ত নেবার পূর্বে দেশের বিশিষ্ট নাগরিকদের কাছ থেকে মতামত নিচ্ছেন না, কখনো সাধারণ মানুষের কাছে এসে জানতে চাইছেন না যে এই সিদ্ধান্তটি তারা সমর্থন করছেন কি না! আমরা সবাই জানি যে একটি সরকার ব্যবস্থায় অনেকগুলো মন্ত্রনালয় থাকে, যে মন্ত্রনালয়ের দায়িত্বে থাকেন সরকারের মন্ত্রীগণ। এই মন্ত্রীরা প্রত্যেকেই কিন্তু আসলে রাজনীতিবিদ, তাদের দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা আছে। কিন্তু তার মানে কি এই যে তারা স্ব স্ব মন্ত্রনালয়ের খাতগুলোর ব্যাপারে বিশেষজ্ঞ? তাদের কি স্ব স্ব খাতে যথেষ্ট পাণ্ডিত্য আছে, expertise আছে? অনেকক্ষেত্রেই নেই! তাহলে সেই মন্ত্রনালয়ের কোন গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেবার ক্ষেত্রে তারা আসলে কতটা পারদর্শী হবে সেটি কি প্রশ্নসাপেক্ষ থেকে যায় না? ধরুন, আপনি আজকে বন ও পরিবেশ মন্ত্রনালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত হলেন। দু’এক বছর পর আপনাকে আমি তথ্য ও যোগাযোগ মন্ত্রনালয়ের দায়িত্বে বসিয়ে দিলাম। প্রথমতঃ আপনার কি বন ও পরিবেশ বিষয়ক ডিগ্রি আছে? আপনি কি এই বিষয়ে একজন বিশেষজ্ঞ? হয়তো হ্যা, কিংবা না।

কিন্তু আপনাকে আমি যখন তথ্য ও যোগাযোগ মন্ত্রনালয়ে বসালাম, তখন কি আপনি হঠাৎ করেই এই সেক্টরে পন্ডিত হয়ে গেছেন? আপনি কি ‘তথ্য ও যোগাযোগ’ খাতটি আসলেই খুব ভালো বোঝেন? যদি তাই হয়ে থাকে, তাহলে বলতে হবে আপনি একজন সুপারম্যান! বাংলাদেশের প্রত্যেকটি মন্ত্রনালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রীগণ কি একেকজন সুপারম্যান, তারা প্রত্যেকটি field of study কিংবা Area of discipline সম্পর্কে জানেন বা বোঝেন? মোটেই না! তাহলে কি করা উচিৎ? এ বিষয়ে আমার ধারণা হল, তারা যখন কোন মন্ত্রনালয়ের দায়িত্ব পান, তখন বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তসমুহ নেবার পূর্ব সেই খাতের বিশেষজ্ঞ কিংবা এক্সপার্টদের মতামত নিতে পারেন, তাতে করে সিদ্ধান্তগুলো হবে অনেক বেশি ফলপ্রসূ এবং নিখুঁত। সাম্প্রতিক সময়ে বহুল আলোচিত রামপাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রজেক্টের কথাই একবার ভাবুন। এই প্রজেক্টটি হাতে নেবার পূর্বে সরকার এ দেশের সাধারন মানুষ, সচেতন নাগরিক কিংবা পরিবেশবিদদের মতামত নেন নি। প্রায় গোপনেই নিজে নিজেই সরকার Site selection সম্পন্ন করেছিলো, জমি অধিগ্রহন করে ফেলেছিলো, চুক্তিও হয়ে গেলো ভারতের সাথে- দেশের মানুষ জানতেই পারলো না। অনেক পরে ২০১৩ তে এসে আমরা রামপাল প্রজেক্টের কথা জানলাম।

ততক্ষণে অনেক দেরি। কি ক্ষতি হত যদি সরকার এই দেশের পরিবেশ বিদদের নিয়ে একটা টিম গঠন করতো, তাদের সামনে প্রস্তাবিত রামপাল প্রজেক্টটি উপস্থাপন করত, এবং সকলের মতামতের ওপর ভিত্তি করে সাইট সিলেকশন এবং অধিগ্রহণের কাজটি করতো? সরকার করল ঠিক তার উলটো! দেশের অসংখ্য পরিবেশ বিজ্ঞানী এবং সচেতন নাগরিকদের মতামতকে কাঁচকলা দেখিয়ে সরকার রামপাল প্রজেক্টের উদ্বোধন করে ফেলেছে! একেই বলে গণতন্ত্র! এ দেশে এখন পর্যন্ত অসংখ্য বাজেট প্রণীত হয়েছে যেগুলো প্রণয়নের গুরুদায়িত্বটি নিয়েছেন অর্থমন্ত্রী ও তাঁর মন্ত্রনালয়ের বিজ্ঞজন। কিন্তু এ দেশে যে এত এত সেলিব্রিটি অর্থনীতিবিদ আছেন- ডঃ মুহম্মদ ইউনুস, ডঃ দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য্য, ডঃ আলী আকবর খান, ডঃ রেহমান সোবহান; তাঁরা কি সরকারের এই বাজেট প্রণয়নে কোনদিন ভূমিকা রেখেছিলো? সরকারের তরফ থেকেই কি কখনো তাদেরকে মতামত নিয়ে বাজেটকে সমৃদ্ধ করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছিলো? সরকার কিংবা এই বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ- কোন পক্ষই কি একটিবারের জন্য বলেছিলো যে, আসুন আমরা একসাথে বসে বিচার-বিশ্লেষণ করে একটি বাজেট তৈরি করি? আমার জানা মতে, এটি কখনো ঘটে নি। কি ঘটেছে? অর্থমন্ত্রীর বাজেট বক্তৃতার পর এই বিজ্ঞ ব্যক্তিগণ সংবাদ সম্মেলন করে বাজেটের মুন্ডুপাত করেছেন... এটা ঠিক হয় নি, ওটা ঠিক হয় নি... মানুষের আশার প্রতিফলন ঘটে নি, হ্যান হয় নি ত্যান হয় ইত্যাদি! কেন? বাজেট বক্তৃতার পরে কেন? আগে কেন নয়? আমি এমন একটি মডেল বা সরকার ব্যবস্থার কথা বলছি, যে ব্যবস্থায় সরকারি কোন ক্রিটিক্যাল ডিসিশ্যান নেবার পূর্বে নাগরিকদের মতামত নেয়া হবে, তাদের বক্তব্য একটি দিকনির্দেশনা হিসেবে কাজ করবে। কোন খাতের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবার, আইন প্রনয়নের, কিংবা নীতিমালা প্রণয়নের আগে সংশ্লিষ্ট খাতের বিশেষজ্ঞদের দিয়ে একটি টিম গঠন করা হবে।

সেই টিমটিই সরকারকে বিভিন্ন বিষয়ে পরামর্শ দেবেন। প্রায় কাছাকাছি একটি মডেল ব্যবহার করেই কিন্তু কাজ করেছেন বর্তমান সরকারের শিক্ষামন্ত্রী ডঃ নুরুল ইসলাম নাহিদ। শিক্ষানীতি প্রণয়নের ক্ষেত্রে তিনি সাহায্য নিয়েছেন দেশের প্রথিতযশা বিশেষজ্ঞ ও শিক্ষাবিদদের। প্রতিটি মন্ত্রনালয়ই কি নীতি প্রণয়নের ক্ষেত্রে এরকম বিশেষজ্ঞ টিম গঠন করে কাজ করতে পারে না? ম্যানেজমেন্টের পরিভাষায় এধরণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়াকে বলা হয় ‘পরামর্শমূলক ব্যবস্থাপনা বা consultative management। ‘ এরকম পরামর্শমূলক সরকার ব্যবস্থা যদি হত, তবে কতই না ভালো হত! দেশ এবং জনগণের স্বার্থবিরোধী কোন সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হত না, এবং সর্বোপরি দেশের প্রত্যেকটি আইন, নীতিমালা এমনকি সংশোধিত সংবিধানও হত অনেক বেশি যুক্তিসঙ্গত, অনেক বেশি ফলপ্রসূ, অনেক বেশি কল্যাণকর।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।