আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

“একটি পূর্ণদৈর্ঘ্য প্রেম কাহিনী" !!! আবার ও সেই পুরানো বোতলে পুরানো মদ !!!



হলের গিয়ে আরো একখানা বাংলা সিনেমা দর্শনের মাধ্যমে দেশের চলচ্চিত্র শিল্পের আগ্রযাত্রায় আরো একটি গুরুত্বপূর্ন অবদান রাখলাম। বিভিন্ন সংবাদ এ “একটি পূর্ণদৈর্ঘ্য প্রেম কাহিনী" নিয়ে যেই পরিমাণ পাম পট্টি দেয়া হইছে, তা তে সিনেমাখানা সম্পর্কে ভুল ধারণা তৈরী হতে বাধ্য। তাই নিজের জীবনের মূল্যবান আধাঘন্টা নষ্ট করে একখানা মুভি রিভিউ খাড়া করাইলাম। আশা করি রিভিউ পরে সিনেমাখানা সম্পর্কে একটি স্বচ্ছ ধারণা আসবে। সকলকে ধন্যবাদ “ইন্সেপশান” মুভিখানা দেখতে গিয়ে প্যাচে পড়েন নাই, এমন দর্শক পাওয়া বিরল।

কে কখন কোথায় কি স্বপ্ন দেখতেছে, কোন স্তরের স্বপ্ন, স্বপ্ন ভাঙ্গছে কি ভাঙ্গে নাই, তা বুঝার জন্য অনেকেই দুই বার তিন বার চার বার করে মুভিখানা দেখেছেন। “একটি পূর্ণদৈর্ঘ্য প্রেম কাহিনীর” লেখক বোধকরি সেই তিন চার বার “ইনসেপশান” মুভিখানা দেখার দলে ছিলেন। তাই তার উগ্র প্রভাব এই চলচ্চিত্রের মধ্যে বিদ্যমান। সিনেমার আদি থেকে অন্ত পর্যন্ত দর্শককে যে বিভিন্ন স্বপ্ন ও দুঃস্বপ্নের মধ্য দিয়ে যাইতে হইছে, তা মোটামুটি “ইনসেপশান” কে ও হার মানাবে। “একটি পূর্ণদৈর্ঘ্য প্রেম কাহিনী” পুরাই স্বপ্ন দুঃস্বপ্নের গোজামিলে ঘেরা সেই পুরানো বোতলে পুরানো মদ।

দুই নায়ক এক নায়িকা (যদিও সিনেমার মধ্যে আরো একজন সুন্দরী নায়িকার উপস্থিতি ছিলো, কিন্তু প্রযোজকের বাজেট ঘাটতির কারণে ই হোক আর পরিচালকের অনিচ্ছার কারণেই হোক, পুরা সিনেমাতে কিছু ন্যাকামি ছাড়া তাকে আর কোনো উল্লেখযোগ্য ভূমিকায় দেখাযায় নি) দুই নায়কের হাতাহাতি, পিতা মাতার মধ্যে যেকোনো একজন খুন, ৭/৮ খানা গান, একজনের ভাড়ের মাধ্যমে সহ্যের সীমার বাইরের কিছু ভাড়ামি, আর সব শেষে নায়ক নায়িকার মিলনের মাধ্যমে সিনেমার শুভ সমাপ্তি, এ যেন সেই প্রস্তর যুগের থেকে শুরু হয়ে আসা কাহিনীরই পুরনাবৃত্তি !!! সিনেমার পরিচালকের বুদ্ধির প্রশংসা করতেই হয়। ঠিক যেই মুহূর্তগুলাতে হলের দর্শক টিকিটের একশত টাকার মায়া ত্যাগ করে হল থেকে ওয়াক-আঊট করার চিন্তা করতেছিলো, ঠিক সেই মূহূর্ত গুলাতেই পরিচালক জয়ার অপরূপ সুন্দর মুখখানা গানের মাধ্যমে বিভিন্ন অ্যাংগেল এ দর্শকদের সামনে উপস্থিত করে দর্শকদের সিটে বসে থাকতে বাধ্য করে। তবে সমস্যা একটা ই, হাতে শুধু মাত্র ট্রাম্প কার্ড নিয়ে খেলতে গেলে যা হয়, ট্রাম্প কার্ড শেষ হওয়ার পর পরিচালকের হাত পুরাই শূন্য। পুরা সিনেমাতে জয়া আহসানকে দেখা ছাড়া না আছে কোনো কাহিনী, না আছে কোনো অ্যাকশন, না আছে কোনো থ্রিল, না আছে কোনো আকর্ষণ। সিনেমার নাম “একটি পূর্ণদৈর্ঘ্য প্রেম কাহিনী” না হয়ে “জয়া আহসান ও কিছু স্বপ্ন” হলেই মনে হয় ভালো হতো।

সিনেমার ট্রেইলার দেখে অথবা একটি মাত্র গান শুনে যে কোনো মতেই বিভ্রান্ত হওয়া উচিত নয়, তার প্রমাণ আরো একবার পেলাম। সিনেমার “আমি নিঃস্ব হয়ে যাবো” গানখানা শুনে যেই পরিমাণ বিমোহিত হয়েছিলাম, পুরা সিনেমার হাজার হাজার গান শুনে ঠিক সেই পরিমাণ ত্যাক্ত বিরক্ত হলাম। পুরা সিনেমাতে বোধ করি ডায়লগের থেকে গানের পরিমাণ বেশি। যদিও সিনেমার ডায়লগের খুব বেশি গুরুত্ব খুঁজে পাওয়া গেলো না, কারণ দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে এই পর্যন্ত শতকরা ৯৯ ভাগ সিনেমাতে ব্যবহৃত ডায়লগ সমূহ ই এই সিনেমাতে ব্যবহৃত হয়েছে। তবে স্ক্রিপ্ট লেখক আধুনিক মানুষ বিধায় নতুন শব্দ বলতে শুধুই “ফেসবুক” শব্দটার উপস্থিতি চোখে পড়ার মতো, যদিও ফেসবুক এর ব্যবহার সম্পর্কে মনে হয় কাহিনী লেখকের তেমন কোনো ধারণা নাই।

বাংলা সিনেমা হবে, আর সেখানে মেডিকেল সাইন্স মিরাকল থাকবে না, এইটা চিন্তার ও বাইরে। এই “একটি পূর্ণদৈর্ঘ্য প্রেম কাহিনী” ও তার বাইরে নয়। তবে মিরাকলের সংখ্যা এই সিনেমাতে কিঞ্চিত বেশি। গুলি পেট দিয়ে ঢুকে পিঠ দিয়ে বের হয়ে যাওয়া, চাক্কু দিয়ে পেট এফোঁড় ওফোঁড় হওয়া, ফাটা মাথায় ব্যান্ডেজ করতে গিয়ে ব্রেন টিউমার ধরা পড়া ও সাথে সাথে সফলভাবে তা অপারেশন করে রুগীকে সম্পূর্ণ সুস্থ করে ফেলা, এই সবই এখন সম্ভব মেডিকেল মিরাকলের নামে। ছোটবেলায় শুনছিলাম, ব্যকরণে কিছু না মিললে সেইটারে নিপাতনে সিদ্ধের মধ্যে ফালাইয়া দিলে ই হয়, আর এখন বড়বেলায় আইসা বাংলা সিনেমা দেখতে গিয়ে বুঝলাম, মরা মানুষরে জিন্দা করতে হইলে সেইটারে শুধুমাত্র মেডিকেল মিরাকল এর মধ্যে ফালাইয়া থুইলে ই চলে।

পরিশেষে একটা কথা ই বলার আছে, সিনেমার মধ্যে অজস্র স্বপ্নের প্যাচ ও মেডিকেল মিরাকল বিদ্যমান। তাই কেউ যদি এই সিনেমা দেখার আশা করেন, অবশ্যই সাথে একটা কলম ও খাতা রাখবেন নোটা রাখার জন্য। কারণ সিনেমা কখন কার স্বপ্ন থেকে কার স্বপ্নে প্রবেশ করবে, যে কখন মইরা গিয়া আবার জিন্দা হয়ে ফেরত আসবে, তা মনের রাখার জন্য শুধুমাত্র ব্রেনের কর্মদক্ষতার উপর নির্ভর করলে ধোঁকা খেতে হবে। তাই সাথে খাতা কলম রাখুন, আর সিনেমাখানা প্রাণ ভরে উপভোগ করুন। হলে গিয়ে সিনেমা দেখুন, নিজে মরুন কিন্তু দেশের চলচ্চিত্র শিল্পকে বাঁচান !!! বি.দ্র. কোন শ্রেণীর দর্শকরা এই সিনেমাটি দেখতে যাবেন – ১. জয়া আহসানের ডাই হার্ড ফ্যান ২. “ইনসেপসান” মুভির ফ্যান ৩. মালয়েশিয়া ঘুরতে যেতে চান, কিন্তু টাকার অভাবে যেতে পারছেন না, এমন ভ্রমণ-প্রেমী ৪. সিনেমা নয়, সিনেমা হলের তিন ঘন্টাই যাদের জন্য মুখ্য তারা !!!


সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১৫ বার

এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.