আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

স্থানীয় উদ্যোক্তারা সুরক্ষা চান না!

আমদানি করা পণ্যের সঙ্গে অসম প্রতিযোগিতায় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার অভিযোগ অনেক পুরোনো। বিশেষ করে বাজেট ঘনিয়ে এলে বিভিন্ন খাতের স্থানীয় উদ্যোক্তারা এ অভিযোগ নিয়ে বাজেটের আওতায় সুরক্ষা দাবি করেন। কিন্তু দেশে সুরক্ষা (সেইফ গার্ড) শুল্ক বিধিমালা জারি এবং কর্তৃপক্ষ গঠনের সাড়ে তিন বছর পেরিয়ে গেলেও উদ্যোক্তা বা ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত একটি আবেদনও জমা পড়েনি।
সুরক্ষা কর্তৃপক্ষের কাছে প্রতিকারের জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে আবেদনে উদ্যোক্তাদের অনীহা এভাবেই প্রতিফলিত হয়েছে। সুরক্ষা কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন না করে বরং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআরে) তদবির করে আমদানি করা পণ্যে বাড়তি শুল্ক আরোপ করার দিকেই তাদের বেশি চেষ্টা থাকে।

ফলে দেশীয় শিল্প রক্ষায় জারি করা সুরক্ষা বিধিমালা কার্যকর করা যাচ্ছে না। বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশন নিজে উদ্যোগী হলেও বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তারা তাতে সাড়া দিচ্ছেন না।
জানতে চাইলে ট্যারিফ কমিশনের চেয়ারম্যান ও সুরক্ষা কর্তৃপক্ষের প্রধান মো. সাহাব উল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, ‘ব্যবসায়ীদের মধ্যে এ বিষয়ে সচেতনতা কম। আবার এ জন্য যেসব তথ্যের প্রয়োজন হয়, সেগুলো ব্যবসায়ীদের কাছে থাকে না। সে কারণে তাঁদের মধ্যে আবেদন করার আগ্রহও কম।

’ সুরক্ষা বিধিমালার কিছু সীমাবদ্ধতাও আছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
দেশে কোনো পণ্য অতিরিক্ত আমদানি হলে সুরক্ষা শুল্ক বিধিমালার মাধ্যমে ওই পণ্যের তথা দেশীয় শিল্পকে সুরক্ষা দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। অ্যান্টিডাম্পিং বিধিমালার আওতায় বিদেশি কোনো পণ্য উৎপাদনমূল্যের চেয়ে কম দামে স্থানীয় বাজারে প্রবেশ করলে দেশীয় পণ্য রক্ষার ব্যবস্থা রয়েছে। আর কাউন্টারভেইলিং বিধিমালায় ভর্তুকি মূল্যে বিদেশি কোনো পণ্য দেশীয় বাজারে প্রবেশ করলে স্থানীয় পণ্যকে প্রতিযোগী সক্ষম করতে সুরক্ষা দেওয়া হয়।

২০১০ সালের ৭ জুন সুরক্ষা শুল্ক বিধিমালা জারি করা হয়।

আর বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার বিধান অনুসারে, ১৯৯৫ সালে দেশে অ্যান্টিডাম্পিং বিধিমালা এবং ১৯৯৬ সালে কাউন্টারভেইলিং বিধিমালা জারি করা হয়। তিনটি ক্ষেত্রে কাজ করার জন্য যে তিনটি কর্তৃপক্ষ রয়েছে, সেগুলোর চেয়ারম্যান বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশন।

কোনো পণ্য অতিরিক্ত আমদানির কারণে স্থানীয় শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কি না, সেটা দেখার দায়িত্ব সুরক্ষা কর্তৃপক্ষের। কর্তৃপক্ষ ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের লিখিত আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে কিংবা নিজ উদ্যোগেও এ কাজটি করতে পারে।

বিধি অনুযায়ী, কোনো বিষয়ে অভিযোগ পেয়ে সুরক্ষা কর্তৃপক্ষ প্রাথমিকভাবে বিষয়টির তদন্ত করবে।

তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে সর্বোচ্চ ২০০ কার্যদিবসের জন্য সাময়িকভাবে সুরক্ষা শুল্ক আরোপ করা যাবে। তবে বিশ্ববাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) সুরক্ষাবিষয়ক কমিটিকে বিষয়টি জানাতে হবে। আর তদন্তে প্রমাণিত হলে কর্তৃপক্ষ চূড়ান্তভাবে চার বছরের জন্য সুরক্ষা শুল্ক আরোপ করতে পারবে। পরিস্থিতি বুঝে তা আরও চার বছর পর্যন্ত বাড়ানো যাবে।

মজার বিষয় হলো, ১৯৯২ সালে ট্যারিফ কমিশন আইন হওয়ার পর থেকে সুরক্ষা শুল্ক বিধিমালা জারির আগ পর্যন্ত ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে আট-নয়টি অভিযোগ পায় কমিশন।

তবে স্থানীয় শিল্প সুরক্ষাসংক্রান্ত বিধিমালা না থাকায় কমিশন কোনো সুপারিশ করতে পারেনি।

কিন্তু বিধিমালা হওয়ার পর উদ্যোক্তাদের কাছ থেকে কোনো অভিযোগ পাচ্ছে না কর্তৃপক্ষ। উদ্যোক্তারা আবেদন না করার কয়েকটি কারণ চিহ্নিত করেছে কমিশন। প্রথমত, উদ্যোক্তারা এ বিষয়ে সচেতন নন। দ্বিতীয়ত, সুরক্ষা পেতে হলে অভিযোগটি প্রমাণ করতে হয়।

কিন্তু উদ্যোক্তাদের কাছে পর্যাপ্ত তথ্য থাকে না। তৃতীয়ত, উদ্যোক্তাদের মধ্যে তথ্য দিতে একধরনের ভীতি কাজ করে।

উদ্যোক্তাদের মধ্যে সুরক্ষা কর্তৃপক্ষের বিষয়ে আগ্রহ তৈরির জন্য বিভিন্ন চেম্বার ও ব্যবসায়ী সংগঠনের সঙ্গে নিয়মিত সভা-সেমিনার করছে ট্যারিফ কমিশন। কিন্তু এতেও কোনো আবেদন জমা পড়েনি।

ট্যারিফ কমিশন দুটি পণ্য চিহ্নিত করেছিল, যেখানে উদ্যোক্তারা সুরক্ষা কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করতে পারেন।

পণ্য দুটি হলো পলিয়েস্টার টেক্সচারাইজড ইয়ার্ন (পিটিওয়াই—একধরনের সুতা) ও টিউবলাইট।

যোগাযোগ করলে বাংলাদেশ বস্ত্রকল মালিক সমিতির (বিটিএম) সভাপতি জাহাঙ্গীর আলামীন প্রথম আলোকে বলেন, ‘সুতার বিষয়টি নিয়ে আমরা অভিযোগ করতে পারি। কিন্তু রপ্তানিকারক দেশে ওই সুতা কত টাকায় উৎপাদিত হয়েছে, কিংবা এ ক্ষেত্রে ভর্তুকি আছে কি না, তা প্রমাণ করা খুবই কঠিন। আবার এটা দেশ থেকে দেশে ভিন্ন হয়। বিশেষ করে চীন কীভাবে যে কী উৎপাদন করে, তার কোনো কিছুই প্রমাণ করা সম্ভব নয়।

এসব কারণে আমরা অভিযোগও করতে পারি না। ’

তবে সুরক্ষা কর্তৃপক্ষ তথা ট্যারিফ কমিশন নিজ উদ্যোগে কয়েকটি বিষয়ে কাজ করেছে।

ভারত ২০০২ সালে বাংলাদেশের রহিমআফরোজের লেড অ্যাসিড ব্যাটারি রপ্তানির ওপর অ্যান্টিডাম্পিং শুল্ক আরোপ করে। এই শুল্ক প্রত্যাহার করার জন্য ট্যারিফ কমিশনের মাধ্যমে সরকার ২০০৪ সালে বিশ্ববাণিজ্য সংস্থার বিবাদ নিষ্পত্তি বিভাগ (ডিসপিউট সেটেলমেন্ট বডি বা ডিএসবি) পর্যন্ত যায়। ডিএসবি আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া শুরুর আগে ভারতকে এ বিষয়ে দ্বিপক্ষীয় আলোচনার আহ্বান করে।

এর পরই ভারত ২০০৫ সালের জানুয়ারিতে ওই শুল্ক তুলে নেয়। এটি এখন পর্যন্ত অ্যান্টিডাম্পিং শুল্কের বিরুদ্ধে ডব্লিউটিওতে আপিল করে কোনো স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) সফল হওয়ার একমাত্র উদাহরণ। ২০০৯ সালে ভারত পার্টিকেল বোর্ডের ওপরও সুরক্ষা শুল্ক আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করেছিল। পরবর্তীকালে অবশ্য তা বাস্তবায়ন করেনি।

আবার তুরস্ক ২০১১ সালে বাংলাদেশি তৈরি পোশাকের ওপর সুরক্ষা শুল্ক আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করে।

কিন্তু ট্যারিফ কমিশনের মাধ্যমে সরকার তৎপরতা চালানোয় শেষ পর্যন্ত আর এ শুল্ক আরোপ হয়নি। তবে অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করে।

ডব্লিউটিওর তথ্য অনুযায়ী, ১৯৯৫ সালের ২৯ মার্চ থেকে এ বছরের ৩১ মার্চ পর্যন্ত সংস্থাটির সদস্য দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি সুরক্ষা শুল্ক আরোপ করেছে ভারত। এই সময়ে দেশটি ২৯টি অভিযোগ নিয়ে কাজ করে ১৫টি পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপ করেছে। এর বাইরে ইন্দোনেশিয়া ১৪টি এবং তুরস্ক ১৩টি পণ্যের ওপর সুরক্ষা শুল্ক আরোপ করেছে।

 

সোর্স: http://www.prothom-alo.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.