আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ক্রীড়াঙ্গনে আলোচিত নিষেধাজ্ঞা

দেশের ক্রীড়াঙ্গনে শাস্তি কোনো নতুন ঘটনা নয়। শৃঙ্খলাভঙ্গের দায়ে অনেক ক্রীড়াবিদ ও কর্মকর্তাদের নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তবে সবচেয়ে আলোচিত শাস্তির ঘটনা ঘটেছিল ক্রিকেটে। ভারতের বিতর্কিত টি-২০ টুর্নামেন্ট আইসিএলে খেলার জন্য জাতীয় দলের অধিনায়ক হাবিবুল বাশার সুমন, শাহরিয়ার নাফিস, আফতাব আহমেদ, মোশাররফ হোসেন রুবেল, ফরহাদ রেজা, গোলাম মোহাম্মদসহ ১০ ক্রিকেটারকে ১০ বছরের জন্য সব ধরনের খেলা থেকে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। বিসিবি থেকে বলা হয়েছিল, আইন অমান্য করাতে তাদের কোনো ক্ষমা নেই।

অথচ ১০ বছরের শাস্তি ১০ মাসও টিকেনি। ক্রিকেটাররা ক্ষমা চাইলে ৬ মাসের মধ্যে বিসিবি তা প্রত্যাহার করে নিয়েছিল। বিপিএলে স্পট ফিক্সংয়ের দায়ে ক্রিকেটে সুপারস্টার আশরাফুলকে মাঠের বাইরে রাখা হলেও তার শাস্তির মেয়াদ এখনও ঠিক হয়নি। ফুটবলে বড় ঘটনা ঘটে ১৯৭৮ সালে। সেবার থাইল্যান্ডে অনুষ্ঠিত এশিয়ান গেমসে ফুটবল দলের প্রথম অধিনায়ক করা হয় আবাহনীর মনোয়ার হোসেন নান্নুকে।

অথচ দল ঢাকা ছাড়ার আগে তা পরিবর্তন করে অধিনায়কের দায়িত্ব দেওয়া হয় মোহামেডানের গোলরক্ষক শহিদুর রহমান সান্টুকে। আবাহনী বাফুফের এ সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারেনি। দলে সুযোগ পাওয়া আবাহনীর ছয় ফুটবলার এশিয়ান গেমসে যাওয়া থেকে বিরত থাকেন। কাজী সালাউদ্দিন, মনোয়ার হোসেন নান্নু, অমলেশ সেন, মো. আশরাফ,আশরাফ উদ্দিন আহমেদ চুন্নু ও খোরশেদ বাবুলদের মতো তারকা ফুটবলার শেষ মুহূর্তে গেমস বয়কট করলে বিপাকে পড়ে যায় বাফুফে। পরে তাদের বিকল্প হিসেবে ছয়জন তরুণ ফুটবলারকে থাইল্যান্ডে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল।

বাফুফে গেমসে না যাওয়ায় ছয় ফুটবলারকে সব প্রকার খেলা থেকে এক বছরের জন্য নিষিদ্ধ করেছিল। তবে এ শাস্তি পুরো মেয়াদ বাস্তবায়িত হয়নি। দুই মাস যাওয়ার পরই তুলে নেওয়া হয়েছিল।

এবার এশিয়া কাপে শৃঙ্খলাভঙ্গের দায়ে হকিতে জাতীয় দলের রাসেল মাহমুদ জিমি, জাহিদ হোসেন ও ইমরান হাসান পিন্টুকে তিন বছর জাতীয় দল ও দুই বছর ঘরোয়া আসর থেকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। আরেক খেলোয়াড় কামরুজ্জামান রানাকে জাতীয় দল দুই ও ঘরোয়া আসর থেকে এক বছর নিষিদ্ধ করা হয়।

প্রশ্ন উঠেছে, এই সিদ্ধান্তে ফেডারেশন অটল থাকতে পারবে কিনা। কারণ বাংলাদেশের একমাত্র দুই ফুটবলার শেখ মো. আসলাম ও রণজিতের বেলায় শাস্তির মেয়াদ পূরণ হয়েছে। ১৯৮৭ সালে প্রথম বিভাগ লিগে মোহামেডান ৩-২ গোলে আবাহনীকে হারালে দুই দলের পয়েন্ট সমান হয়ে যায়।

পরে দুই দলের অধিনায়ক আসলাম ও রণজিত নিজেদের যৌথ চ্যাম্পিয়ন ঘোষণা করে মাঠ প্রদক্ষিণ করেছিলেন। তারা জানতেন না লিগ শেষে দুই দলের পয়েন্ট সমান হলে শিরোপা নির্ধারণের জন্য রিপ্লে ম্যাচের আয়োজন হবে।

সুতরাং বাইলজ ভঙ্গের দায়ে দুজনকে এক বছরের জন্য নিষিদ্ধ করা হয়। মজার ব্যাপার হলো, এক বছর তারা নিষিদ্ধ থাকলেও ফুটবল দেড় বছর মাঠেই গড়ায়নি। সেক্ষেত্রে তাদের শাস্তি প্রত্যাহারের প্রয়োজন ছিল না। শুধু খেলোয়াড় নন, ক্রীড়াঙ্গনের কর্মকর্তাকে বহিষ্কারের ঘটনাও রয়েছে। ১৯৯৮ সালে মহিলা অ্যাথলেটকে শ্লীলতাহানির অভিযোগে অ্যাথলেটিকস ফেডারেশনের এক কর্মকর্তাকে ক্রীড়াঙ্গন থেকে বহিষ্কার করা হয়।

অথচ সরকার বদলের পর এই বহিষ্কৃত কর্মকর্তাই হয়ে যান ক্রীড়াঙ্গনের গডফাদার। সাফ গেমসে দ্রুততম মানব বিমল চন্দ্র তরফদারসহ আরও ক'জন ক্রীড়াবিদকে গেমসে যাওয়ার পর বিদেশ থেকে ফিরে না আসার অপরাধে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এদের মধ্যে কারও কারও শাস্তি মওকুফও করা হয়েছে।

বাংলাদেশ গেমসে কাবাডিতে হট্টগোলের দায়ে আনসারের কয়েকজনকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। শোনা যাচ্ছে যেকোনো মুহূর্তে এ শাস্তি প্রত্যাহার হয়ে যাবে।

সেক্ষেত্রে অনেকের ধারণা হকিতেও চার খেলোয়াড়ের শাস্তি যেকোনো সময় মওকুফ হয়ে যাবে। এ ব্যাপারে অবশ্য ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক খাজা রহমত উল্লাহ বলেছেন, ক্ষমা চাইলেও তাদের শাস্তি অটল থাকবে। কারণ যে অপরাধ তারা করেছেন তাতে দেশের মানসম্মান নষ্ট হয়েছে। এখানে সিদ্ধান্ত বদল হলে হকিতে চেইন অব কমান্ড বলে কিছুই থাকবে না। রহমত উল্লাহ যে পদে আছেন তাতে এখন তার পক্ষে ক্ষমা নিয়ে কথা বলাটা বিব্রতকরই।

তবে অধিকাংশ ক্রীড়ামোদীদের ধারণা, পুরো মেয়াদে চারজনের শাস্তি বহাল রাখা যাবে না। তাছাড়া হকিতে এর আগে এহসান রানা ও জুম্মন লুসাইকে শাস্তি দেওয়া হলেও তা টিকেনি। এশিয়া কাপে দলে যাওয়া বেশ কয়েকজন খেলোয়াড় বলেছেন চারজনই শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন। এরপরও তারা যদি লিখিতভাবে ফেডারেশনের সভাপতির কাছে ক্ষমা চান তখন তা নিয়ে ফেডারেশন অবশ্যই চিন্তা করবে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জাতীয় দলের সাবেক এক অধিনায়ক বলেন, দেখুন হকিতে দেশে এমনিতে ভালোমানের খেলোয়াড় নেই, চারজন নির্ভরযোগ্য তারকা মাঠের বাইরে থাকলে ব্যক্তিগতভাবে তাদের পারফর্ম যেমন নষ্ট হবে, তেমনি দেশের হকিও ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

সে কারণে চারজনেরই উচিত হবে অযথা কারোর ইন্ধনে মামলা বা অন্য কোনো ঝামেলার কথা চিন্তা না করে ফেডারেশনের সভাপতির কাছে ক্ষমা চাওয়া।

 

 

সোর্স: http://www.bd-pratidin.com/

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।