আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বিয়ের আগে

হুট করে বিয়ে হয়ে গেল তানজিনার। পেশায় চিকিৎসক তানজিনার বিয়ের ব্যাপারে নিজের কোন মতামত দেবার সুযোগ ছিল না। বাবা-মা ভীষণ চাপ দিচ্ছিলেন বিয়ের জন্য। একে তো বয়স বেড়ে যাচ্ছে, তার উপর ছোট আরো দুই বোন আছে। এসব কারণেই ওকে বিয়েতে রাজি হয়ে যেতে হলো।

বিয়ে যেহেতু করতেই হবে একজনকে না একজনকে, এত ভাবাভাবির কী আছে? কিন্তু বিয়ের পরে তানজিনা তার নতুন জীবনের সাথে মানিয়ে চলতে পারছে না। এমন কি জীবনটা ওর কাছে আনন্দময় না হয়ে বোঝার মত মনে হচ্ছে। বিয়ের পরে স্বামী অনেক কিছু ওর উপরে চাপিয়ে দিয়ে নিজে ফুরফুরে হয়ে গেছে। মনের ভেতরে জমা হতে থাকে রাশি রাশি বিরক্তি, ক্ষোভ, ক্রোধ। কখনো বাবা-মায়ের উপর, কখনো স্বামীর উপর, কখনো নিজের উপরেই।

কেন সে এই বিয়েতে রাজি হতে গিয়েছিল? বিয়ের আগে হবু বর-কনে ও তাদের পরিবারের প্রতিটি সদস্য অনেক উচ্ছ্বাস নিয়ে অপেক্ষা করে থাকেন উৎসবের দিনটির জন্য। এজন্য তাদের নানা রকম প্রস্তুতিও থাকে। কোন পার্লার থেকে কনেকে সাজানো হবে, কোথা থেকে বিয়ের পোশাক কেনা হবে, কেমন গয়না বানানো হবে, কোথায় বিয়ের পার্টির আয়োজন করা হবে, গায়ে হলুদে কী করা হবে, পান-চিনিতে কী করা হবে এমনি নানান সব আয়োজনে সবাই ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়েন। উৎসবের আনন্দে যেন এতটুকু ঘাটতি না থাকে। কিন্তু বিয়ের আগে বর-কনের যে আগে থেকে একটা মানসিক প্রস্তুতির প্রয়োজন থাকা দরকার, সে ব্যাপারে কারোরই যেন সচেতনতা নেই।

মানসিকভাবে প্রস্তুতি বলতে অনেকে এটুকুই বোঝেন যে, ‘’হ্যাঁ, আমার বিয়ে হবে। এর জন্য আমি তৈরি। ‘’ কিন্তু বিয়ের পরে সম্পর্কটি কিভাবে চালিয়ে যেতে হবে, এরপরে যে শারীরিক পরিবর্তনগুলো তৈরি হবে, দুই পরিবারের সব সদস্যদের সাথে কিভাবে মানিয়ে চলতে হবে তার জন্য হয়ত দেখা যাবে তিনি মানসিকভাবে একেবারেই প্রস্তুত নন। বিয়ের আগে বর ও কনের উভয়েরই আগে ভেবে দেখতে হবে তিনি আসলে কেন বিয়ে করতে যাচ্ছেন? বাসা থেকে বিয়ের জন্য অনেক চাপ দেওয়া হচ্ছে, বন্ধুদের মধ্যে প্রায় সবাই বিয়ে করে ফেলছে, বিয়ের বয়স পার হয়ে যাচ্ছে এমন সব কারনে আপনি বিয়ে করতে যাচ্ছেন, নাকি আপনার নিজেকে শারীরিক, মানসিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক সব দিক থেকে বিয়ের জন্য প্রস্তুত মনে হচ্ছে? নিজের কাছে এই প্রশ্নের উপর যদি হ্যাঁ পেয়ে থাকেন তবে এবার ভাবুন কাকে বিয়ে করতে যাচ্ছেন? শুধু এরেঞ্জ ম্যারেজের ক্ষেত্রেই নয়, প্রেমের বিয়ের ক্ষেত্রেও এই প্রশ্নের উত্তর জানা খুব জরুরি। যদি মনে হয় আপনি তাকে খুব ভালবাসেন বলে বিয়ে করতে চান, এটাকেও ঠিক বিয়ের সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার জন্য যথেষ্ঠ কারণ বলা যাবে না।

কারণ, একটি বিয়ের সম্পর্ক শুধু ভালবাসা দিয়েই চালানো যায় না। ভেবে দেখুন, ঐ ব্যক্তির পছন্দ-অপছন্দ আপনি কতটুকু জানেন, সেগুলোর কতখানি মূল্য/গুরুত্ব আপনি দিতে পারবেন? তিনিই বা আপনার সম্পর্কে, পছন্দ অপছন্দ কতটুকু জানেন, তিনি কিভাবে আপনাকে মূল্যায়ন করেন? দুজন ভিন্ন মানুষ অবশ্যই ভিন্ন ভিন্ন রকমের হবে। কখনোই এমন হবে না যে তাদের সব চাওয়া-পাওয়া, চিন্তা ভাবনা ১০০% মিলে যাবে, এটা শুধু স্বপ্নেই সম্ভব। কারণ, দুজন ব্যক্তি শৈশব থেকে দুটি ভিন্ন পরিবারে, ভিন্ন পরিবেশ ও সংস্কৃতিতে ভিন্ন ব্যক্তিত্ব নিয়ে বেড়ে উঠেছেন। নিজেদের এই পার্থক্যগুলো সম্পর্কে দুজনেই জানেন কিনা? দুজনের মধ্যে যে পার্থক্যগুলো আছে সেসব কি দুজন পারবেন মানিয়ে নিতে? বিয়ের আগে এ প্রশ্নগুলোর উত্তর নিজেকেই খুঁজে বের করে নিতে হবে।

আর সেজন্য বিয়ের আগে হবু বর ও কনের নিজেদের মধ্যে খোলা মনে কথা বলে নেওয়া খুব জরুরি। বিয়ের আগে বর-কনে উভয়েরই পরস্পরের কাছ থেকে জেনে নিতে হবে তাদের শিক্ষাগত যোগ্যতা, আয়ের উৎস ও পরিমান, ক্যারিয়ার ও লক্ষ্য সম্পর্কে, ধর্মীয় ও রাজনৈতিক দর্শন, ব্যক্তির নিজের বা তার পরিবারের কারো কোন ধরনের অসুস্থতা আছে কি না, যা তাদের পরবর্তী জীবনে প্রভাব ফেলতে পারে। শুধু রোমান্টিক আলাপ না করে পরিবারে কোন সংকট দেখা দিলে কীভাবে সেটা সামলাবেন, দুজনের মধ্যে মত বিরোধ হলে তা সহজভাবে নিষ্পত্তি কীভাবে করবেন, সংসারের জন্য কে কতটুকু খরচ করবেন, সংসারে কার কতটুকু ও কী দায়িত্ব থাকবে, সন্তানের ভবিষ্যত নিয়ে পরিকল্পনা এমনি নানা সব বিষয় নিয়ে বর ও কনে কথা বলতে পারে। এতে তার সিদ্ধান্ত নিতে সহজ হবে, এই ব্যক্তিকে বিয়ে করা তার জন্য ভাল হবে কি না। এসব প্রশ্ন করার মানেও এটা নয় যে, আপনি বিয়ে করতে ভয় পাচ্ছেন বা সংগী/সংগিনী সম্পর্কে বেশি খুঁতখুঁতে।

এসব প্রশ্নের কোন নির্দিষ্ট জবাব নেই। ভিন্ন ভিন্ন ব্যক্তি তার নিজের দৃষ্টিভংগীর দিক থেকে এসব প্রশ্নের ভিন্ন ভিন্ন উত্তর দিয়ে থাকবেন। বরং এমন প্রশ্নের সম্মখিন হলে আপনার সংগী/ সংগিনী বিয়ের সম্পর্ক নিয়ে সচেতন ও প্রস্তুত হবেন। খোলা মনে ও সৎভাবে এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা দুজন দুজনকে চিনতে সাহায্য করবে। বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে যাবার পরে সমস্যা তৈরি হবার চেয়ে, আগেই সমস্যা সম্পর্কে আন্দাজ করে তা সে সম্পর্ক আর না বাড়ানো বেশি ভাল।

এর চেয়েও আরো ভাল যদি সে সমস্যা সমাধানের উপায় হবু বর-কনে দুজনের জানা থাকে। তাতে বিয়ের পরে জীবনটা বোঝা মনে না হয়ে বরং উলটো মনে হবে বোঝা কমে গেল আর সেটা দুজনের বেলাতেই। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।