আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সদরঘাটে কুলি বিড়ম্বনা এবং পুলিশের সাহায্য। স্যালুট টু বাংলাদেশ পুলিশ।

জানতে চাই জানাতে চাই

যুগে যুগে নির্যাতিত নিপীড়িত মানুষের প্রতিনিধি হিসেবে, প্রতীক হিসেবে যাদের কে সবচেয়ে বেশি উপস্থাপন করা হয়েছে, তারা হলেন কুলি মজুর। আজ আমি সেই কুলি মজুরদের সাথেই একটা একটা বিতর্কে জড়িয়ে গেলাম। আমার ফুপাতো ভাই গত কাল সিঙ্গাপুর থেকে আসছে। তাকে রিসিভ করতে এসেছে আমার ২ দুলা ভাই এবং তারা ২ জনই আর্মি পারসন। আজ যখন তারা গ্রামের বাড়ি যাওয়ার জন্য সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল এ গেলো, সাথে আমিও ছিলাম, হটাত ৪-৫ জন লোক এসে ব্যাগ টানাটানি শুরু করলো।

যখন জিজ্ঞাস করা হল, ব্যাগ নিয়ে টানাটানি করছেন কেন? তারা বলছে, এই ব্যাগে বিদেশী মালামাল আছে, তাই ট্যাক্স লাগবো। তখন আমার দুলা ভাই বলল, বিদেশী মালে এইখানে ট্যাক্স লাগবো, জানতাম নাতো। সে তখন বলল, আমি আর্মি পারসন, এইসব ব্যাপার নিয়া ঝামেলা কইরেন না। আমাদের যেতে দিন। তখন এক কুলি বলতেছে, প্রেসিডেন্ট আইলেও ট্যাক্স ছাড়া যাইতে পারবো না, আপনের কার্ড দেখান।

আমার দুলা ভাই বলল, আমি তো ট্যাক্স দিতে পারবো না, তাইলে আমি এই মালামাল পুলিশের কাছে জমা দিয়ে যাই। তখন এক কুলি বলে পুলিশ পোন্দানের টাইম নাই। ট্যাক্স দেন। মাল খালাস করেন তারাতারি। এই কথা শোনার পর আমি হ্যাং হইয়া গেছি, তখন দুলা ভাই পকেট এ হাত দিতাছে ওদের টাকা দেয়ার জন্য।

তখন আমি দুলা ভাইকে থামালাম, বললাম, থামেন। আগে আমারে একটু বিষয়টা বুঝতে দিন। আমি কুলিদের মধ্যে নেতা টাইপের কুলিরে ডাক দিয়া বললাম, এই ট্যাক্স টা কে নিবে?? কুলি বলে এইটা ঘাটের ডাক যে নিছে, সে পাবে। আমি বললাম, কোন মানি রসিদ আছে? কুলি বলে এই ট্যাক্সের কোন মানি রসিদ দেই না। তখন আমি বললাম এই মালামাল বিদেশ থেকে আসছে, কোন ট্যাক্স লাগলো না, আর ট্যাক্স লাগবো সদরঘাট এ।

তাও আবার কোন মানি রসিদ ছাড়া। এই মাল আমি ট্যাক্স ছারাই আমি এই ঘাট দিয়া নিয়া যাবো। যদি কিছু করতে পারেন, তো করেন। তখন আমাকে এক কুলি আমার ঘারে হাত দিয়া বলে তুই বাবা কুনহানকের কোন হেডাম হইছোস যে ট্যাক্স ছাড়া মাল খালাস করবি। আমি বললাম আমি এই এলাকার পোলা, ঘাড়ের থিকা হাত নামাইয়া কথা বল।

তখন পাশে থেকে আর এক কুলি বলে, ওই ওর গায় হাত দিস না, মাইয়া মানুষ। এই কথা বলার সাথে আমার হাত থিকা বাগটা নিয়া গেলো। ততক্ষণে কুলিদের সংখ্যা কমপক্ষে ১৫ জন হয়ে গেছে। আমার ২ টা আর্মি পারসন দুলা ভাই পুরাই ভ্যাবাচ্যাকা খাইয়া গেলো। আমি বললাম, এক মিনিট দাঁড়ান, আর ফাইনাল তামসা টা দেখেন।

আমি পিছন থেকে উধাও হইয়া গেলাম, আর আমার চতুর দুলাভাই, ততক্ষণ ওদের সাথে দর কষাকষি করতেছে, কত টাকা ট্যাক্স নিব। হটাত কইরা ঠাসঠুস আওয়াজ শুরু হইল, আর একটা আওয়াজ শুনলাম, স্যার আমি কিছু করিনাই। আমি কিছু করি নাই। এক কুলির দৌড় দিতে গিয়া লুঙ্গি খুইলা গেলো, আর একটা কুলি গামছা ফালাইয়া দৌড় দিল। আর দুর্ভাগ্যক্রমে এস আই সাহেবের বগলদাবা হয়েছে সেই কুলি, যেটা বলছিল পুলিশ পোন্দানের টাইম নাই।

আমিও সুযোগটা কাজে লাগাইলাম, আমি সামনে গিয়া বললাম, স্যার এই ব্যাটা বলছে, পুলিশ পোন্দানের নাকি টাইম ওর নাই। এস আই সাহেব এই কথা শুনিয়া তো বাম হাতের কবজি তে যত শক্তি আছে, সব শক্তি দিয়া কইশা থাপরাইতে লাগলো। আমিও কয়েক টা দিতে চাইছিলাম, দুলাভাই থামাইয়া দিছে। এখন আমার কথা হল, আমার ব্যাগ যদি আমি নিতে পারি, তাইলে কুলিদের কি সমস্যা? আমি না পারলে ওদের কেতো আমিই ডাকবো। আর বিদেশ থেকে কেউ আসলে ওদের আমি ট্যাক্স কেন দিবো? সেখানে ওরা রীতিমত চাঁদাবাজি, ছিনতাই শুরু করে দিছে।

শুধু তাইনা, ওদের আচারন দেখলে মনে হয়, ওরা দেশের প্রেসিডেন্ট হয়ে গেছে, একজন আর্মি পারসনকে বলে, আপনার কার্ড দেখান। পুলিশ পোন্দানর টাইম নাকি ওদের নাই। ভবিষ্যতে যদি কারো লঞ্চ, বাস, ট্রেন, ফেরি ঘাট এ এই ধরনের কোন প্রবলেম হয়, তখন কখনই ওদের সাথে আপোষে যাবেন না। আস্তে করে নিরবে আসে পাশে থাকা পুলিশের কাছে চলে যান, পুলিশের সাহায্য নিন। আমাদের পুলিশ ভাইরা এ ব্যাপারে আপনাকে সাহায্য করবে।

বিশেষ করে সদরঘাট এ। কারন এখানকার বাসিন্দা হওয়াতে আমার পূর্ববর্তী অভিজ্ঞতা থেকে আমি এতোটুকু আশ্বাস দিতে পারি, সদরঘাটে পুলিশ আপনাকে সর্বাত্মক সাহায্য করবে। আর যদি আপনি ওদের সাথে আপোষে যান, তবে সিউর থাকুন, আপনি কমপক্ষে ১০০০ টাকার নিচে ওদের সাথে আপোষে যেতে পারবেন না। ওদের সাথে আপোষ করলে কি হয়, এ ব্যাপারে আমার অভিজ্ঞতা অন্য একদিন শেয়ার করবো। স্যালুট টু বাংলাদেশ পুলিশ।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।