আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

হুমায়ূন স্যারের জন্মদিন আগামীকাল আর আজ আমার আমার একটি ছোট্ট উৎসর্গ

ঝাপসা লাগে সুখের স্মৃতিগুলো

পগার পাড় মানে বুঝেন ? এই মুহূর্তে আমি থানা থেকে এই শব্দটির যথাযুক্ত প্রয়োগ করেই এসেছি। কেমন করে বের হলাম সেটা পরে বলবো আগে কেমন করে থানায় গেলাম সেটা আগে বলি। আজ সকালটা শুরু হয়েছে বড় মামার অফিস থেকে। সকাল ১১টা থেকে ১১টা পনের এই পর্যন্ত সেখানে ছিলাম। আমি বেশ আগ্রহ নিয়ে মামার সামনে বসে আছি, মামা ফাইল দেখছেন আর আমার দিকে চোখ তুলে এমন ভাবে তাকাচ্ছেন মনে হচ্ছে আমি চাকরীর ইন্টারভিউ দিতে এসেছি।

মামার ব্যস্ততা দেখে আমিও মনে মনে উত্তরপত্র ঠিক করে ফেললাম। ঃ আপনার নাম ? ঃমঙ্গল ঃএটা কেমন নাম ? ঃএটা কি প্রশ্ন ? উত্তর দিলে চাকরিটা পাবো তো স্যার ? প্রশ্নকর্তার মুখে কোন আবেগের চিহ্ন নেই। ঃ মঙ্গল, তোমার কি কোন কাজের অভিজ্ঞতা আছে? ঃ আছে মানে ! আমি বিগত ১২বছর যাবত সফলতার সাথে রাতবিরাতে হাটাহাটি করি। গেট আউট, ননসেন্স। এইবার মামার সাথে আমিই কথা বলার সিদ্ধান্ত নিলাম।

মামা, ভালো আছেন ? ঃহু। আপনার সাথে ইনহেলার আছে তো ? ঃমানে ? তুমি কি কোন ফন্দি আটছো ? আসলে আমি আপনাকে যে কথাটা বলবো এটা শুনার পর আপনার ইনহেলার লাগবে। ঃফাইজলামি করো ননসেন্স ? মামা, আপনার আরেকটা বিয়ের কথা কি মামী জানে ? ঃগেট আউট, ননসেন্স... হে হে হে খাপে খাপ মিলে গেছে। আমার কল্পনার শেষ দৃশ্য আর বাস্তবের হুবহু মিল। মামার অফিস থেকে বের হয়ে আকাশের গন্ধ শুকতে শুকতে আমি কাকরাইলের দিকে হাটা দিলাম।

কিছু কদমফুল দরকার। কদমফুলের একটা মজার ব্যাপার আছে সেটা আমার গুরু হিমু আমায় শিখিয়েছে। কদমফুল বর্ষা ছাড়া ফোটে না, আর তখনই আসল মিরাকল। হিমু আমার গুরু হলেও আমি কিন্তু হিমুর মতো না, আমি আমার মতো, আসলে আমিই হিমু হয়ে উঠতে পারিনি। তাই হিমুর কিছু কাজের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয় আমার মধ্যে।

যেমন আমি হাটা ছাড়া থাকতে পারি না কিন্তু খালি পায়ে হাটি না, আমার কোন হলুদ পাঞ্জাবী নেই। আমার মোবাইল আছে আর সেটাতে বেশ আয়েশ করেই আমি ফেইসবুক চালাই। গুরুর সাথে এই মুহূর্তে কথা বলতে পারলে ভালো হতো। ঃ তুমি দেখি আমারে ডুবাইবা ! ক্যান গুরু ? ঃএই যে তুমি গুরু বইল্লা ডাকো এইটা আমার পছন্দ না। তাইলে কি বইল্লা ডাকুম ? ঃ হিমু হে হে হে এইটা তো জানিই, তবুও আফনের একটা ইজ্জত আছে না।

ঃ আমি কি নিরবাচনে দাড়াইসি, আমার ইজ্জত নিয়া তোমার ভাবতে হবে না। গুরু জী আফনের কত কদর, আফনের কথা কইতে আমার ভালোই লাগে। ঃ তুমি যা শুরু করসো তাতে তো দুইদিন পর সবাই আমার নামে মাজার বানাইবো, হিমু বাবার মাজার। কি বিশ্রী ব্যপার। গুরু জব্বর আইডিয়া দিলেন, আজকেই মাঠে নামুম।

ঃতুমি কি আমাকে বিভ্রান্ত করতে চাইছো ! এটা আমার কাজ তোমার না। যাও কদমফুলের জন্য বাচ্চু অপেক্ষায় আছে। বাচ্চু খিলগাঁও বস্তিতে থাকে আমির আলীর পোলা, ৮ বৎসর বয়স। আমিই কইসিলাম তারে কদমফুল এনে দিমু, আমি তারে কদম বলে ডাকি। এর অবশ্য কারণ আছে।

তার মাথায় ঝাঁকড়া চুল দেখলেই কদমফুলের কথা মনে পড়ে যায়। সন্ধ্যা নামতে শুরু করছে, কদমফুল পাইনি। আমি এখন শাহবাগ, এই জায়গাটার প্রতি আমার বিশেষ দুর্বলতা। ২টা পুলিশ ভাই দাঁড়িয়ে আছে ভাবছি এদের একটু ভড়কে দিলে কেমন হয়। স্লামালেকুম... পুলিশ ভায়েরা আমার দিকে বেশ কৌতূহলী দৃষ্টিতে তাকালো।

মনে হয় বুঝতে চেষ্টা করছে আমি কোন ধরণের লোক। সাধারণ লোক পুলিশকে ভাই বলে ডাকে না, স্যার ডাকে। পুলিশের আগে পিছে এরা যায় না, তারা পুলিশকে অদৃশ্য জীব মনে করেই তাদের নিত্যদিনের কাজ করে যায়। ঃওয়ালাইকুম আসসালাম ভালো আছেন ভাই ? ভাই মনে হয় আমারে চিনেন নাই, আমি মজিদ রামপুরায় থাকি। আফনে হেইদিন আমার যা উপকার করসিলেন।

ঃ আসলে চিনলাম না, কি করেছিলাম ? আরে ভাই, ঐ যে আমার লগে ফেন্সি আসিলো, আপনি আমারে চেক করসিলেন কিন্তু ফেন্সি পাইয়াও আমারে ছাইড়া দিলেন। ধন্যবাদ ভাই। এইবার পুলিশ ভাইয়ের ভ্রু কচকে গেল, একবার সাথের ভাইয়ের দিকে আর একবার আমার দিকে তাকাচ্ছেন। আমি বুঝে গেলাম আমার কাজ শেষ, এইবার চেইন বিক্রিয়ার মতো অটোমেটিক কিছু ঘটনা ঘটতে থাকবে। ঃ তোমার নাম কি বললা ? ভাই, মজিদ।

ঃ আমারে চিনো কেমন করে ? ভাই, কইলাম না ঐদিন ফেন্সি... ঃ ঐদিন কোন দিন ? ভাইয়ের মেজাজ মর্জি মনে হয় ঠিক নাই, আজ তাইলে আমি যাই। ঃনা, দাড়া বেটা। বাহ, এক নিমিষেই তুমি থেকে তুই ! ঃকরিম সাহেব, গাড়ি কল করুন। বেটা পুলিশের সাথে মজা লয়। গাড়ি আসতে আসতে ৩৪ মিনিট লাগলো।

শাহবাগ থানা কি তুলে দেয়া হইসে ? আমি এতক্ষন চুপ করেছিলাম, বেশ কিছু লোক জড়ো হয়ে গেছে। আমাকে গাড়িতে উঠতে বলা হয়েছে। আমি জিজ্ঞাসা করলামঃ স্যার আমাকে হ্যান্ডকাফ পড়াইবেন না? পুলিশ ভাই কোন শব্দ করলো না, তবে আমি স্পষ্ট তার চোখে আগুন দেখলাম। আমাকে পিকাপ ভ্যানে তোলা হল আর কোন প্রশ্ন করার ইচ্ছে হলো না। একঘন্টা পার হল তবু আমরা থানায় পৌছাচ্ছি না, আমি অবাক হলাম না।

লেনদেনের বিষয়টা ক্লিয়ার করার জন্যই এ ব্যবস্থা। আমি গাড়িতে চোখ বুলালাম দুইটা পুলিশি রোল অন্ধকারেও বুঝতে পারলাম। এইবার বাইরের দিকে মনোযোগ দিলাম, গাড়িতে বসে কাচের বাইরে চোখ রাখলে ভিন্ন জগত বলে মনে হয়। আজ পূর্ণিমা, আমি আকাশে চাঁদ খুঁজছি। আরো আধাঘন্টা পার হবার পর চাঁদের দেখা পেলাম।

কি অপূর্ব ! চাঁদ গলে গলে পড়ছে শহরে। আহ্‌, পিকাপ ভ্যানে জোছনা দেখতে ভালোই লাগে।


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.