আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমি কিংবদন্তীর কথা বলছি!!!

যারা অসংখ্য মানুষের ভালবাসা অর্জন করে তারা হলো সৌভাগ্যবান, আর যারা মানুষকে ভালবাসতে পারে তারা হলো আকাশের মতো মহান। আমি কোন যোগ্যতা ছাড়া অকারণেই খুব সৌভাগ্যবান, তাই এখন স্বপ্ন দেখি আকাশ হবার...

তাকে কখনো সামনাসামনি দেখিনি, কথা বলিনি, এমনকি তিনি আমাকে চিনতেনও না। অথচ আমার মতো অসংখ্য তরুন-তরুনীর জীবনে এককভাবে সবচেয়ে বেশি প্রভাব বিস্তার করেছেন তিনি। হ্যাঁ, আমি হুমায়ুন আহমেদের কথা বলছি। আমি কিংবদন্তীর কথা বলছি।

চিনতেন না বলাটা কি পুরোপুরি ঠিক হলো? সম্ভবত না। তিনি কি আমাদেরই একজন ছিলেন না, অনেক কাছের একজন? “আমার ছেলেবেলা”তে ‘জোছনার ফুল’ ছোয়ার ঘটনাটি কি আমাদের জীবনেও ঘটে নি? ‘চাঁদের আলোয় কয়েকটি যুবক’ এর মধ্যে কি আমি-আপনিও ছিলাম না? বাকের ভাই আজো আমাদের চার পাশে ঘুরে বেড়াচ্ছে না? ছোটবেলায় পড়েছিলাম ‘কিশোর সমগ্র’. হারিয়ে যাওয়া ‘নীল হাতি’, ‘বোতল ভূতে’র র জন্য আমিও কেদেছিলাম তখন, বড় হয়ে যেমন কেদেছিলাম ‘এপিটাফ’ পড়ে। একবার অসুস্থ হয়ে হসপিটালে ভর্তি থাকার সময় মা কিনে দিয়েছিল ‘তোমাদের এই নগরে’. হ্যাপিদার কাছ থেকে নিয়ে এসেছিলাম ‘তিথির নীল তোয়ালে’ সহ আরো অনেক অনেক বই। লূকু মামা আমার সবগুলো বই ক্যালেন্ডারের সাদা পাতা দিয়ে মলাট করে দিয়েছিল; একটা একটা করে বইগুলো কারা যেন নিয়ে গেছে, ফিরিয়ে দেয় নি। থাক না কিছু তাদের কাছে, হয়তো তাদের কেউই আজ হয়ে উঠছে ‘কবি’র আতাহার।

‘সূর্যের দিনগুলি’, ‘আগুনের পরশমণি’, ‘জোছনা ও জননীর গল্প’ পড়ে ঘৃণা করতে শিখেছি পাক হানাদার ‘ইবলিশ’দের, আর বেঈমান ‘অমানুষ’ ‘পোকা’ গুলোকে বলেছি- তুই রাজাকার । আবার ‘বহুব্রীহি’, ‘মেঘ বলেছে যাব যাব’ পড়ে অন্তরে জেগে উঠেছে ‘তোমাদের জন্য ভালবাসা’ . সায়েন্স ফিকশন ‘নিউটনের ভূল সূত্র’, ‘ওমেগা পয়েন্ট’ এবং ‘ফিহা সমীকরণ’ নিয়ে পড়ে ছিলাম কিছুদিন। ‘নুহাশ ও আলাউদ্দিনের আশ্চর্য চেরাগ’ পড়ে বিস্ময়ে ভেবেছিলাম ‘একি কান্ড’! ‘পারুল ও তিনটি কুকুর’ নাড়া দিয়ে গেছে কখনো, আবার কখনো ‘তন্দ্রাবিলাস’ পড়ে ‘অন্যভূবনে’ গিয়ে বলেছি ‘আমিই মিসির আলী’. প্যারালাস ইউনিভার্স এবং সিরিয়াল কিলার নিয়ে ‘অতিপ্রাকৃত’ মমস্তাত্ত্বিক উপন্যাস পড়ার পর ‘আপনারে আমি খুজিয়া বেড়াই’. পাঁচটি নীলপদ্ম নিয়ে ‘রূপা’ ‘ইমা’ ‘রুমালী’ ‘মৃন্ময়ী’ দের মতো ‘পেন্সিলে আকা পরী’ খুজে বেড়িয়েছি কোন এক ‘শ্রাবণ মেঘের দিন’এ। বাসার সবাই মিলে একসাথে দেখেছি ‘আজ রবিবার’, ‘নক্ষত্রের রাত’, ‘কোথাও কেউ নেই’ . কোন এক গভীর ‘রজনী’তে কারো জন্য ‘অপেক্ষা’ করতে করতে অবশেষে মনে হয়েছে ‘দরজার ওপাশে’ ‘কোথাও কেউ নেই’। চশমাটা চোখে দিয়ে মাঝে মাঝে নিজেকে ‘শুভ্র’ মনে হয়, যেন কেউ ডেকে উঠবে এখনি ‘এই শুভ্র এই’ বলে! আজো আমি একাকী ভীড় বাসে হিমু’র মতো ‘‘ময়ুরাক্ষী’ নদী তৈরী করে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করে নেই চারিপাশ থেকে।

তিনি আমাদেরকে ‘বাদল দিনের প্রথম কদম ফুল’ খুজতে শিখিয়েছেন, ‘অরণ্য’তে জোছনা দেখা শিখিয়েছেন, তাইতো “জোছনা রাতে সবাই গেছে বনে’. তিনি আমাদেরকে ‘রহস্য’ময় ‘রূপালী রাত্রী’তে খালি পায়ে হাটতে শিখিয়েছেন হলুদ পাঞ্জাবী পড়ে, ‘দেখা না দেখা’ পৃথিবীটাকে ‘তৃ্তীয় নয়ন’ দিয়ে দেখতে শিখিয়েছেন তিনি, শিখিয়েছেন সকল বাধা অমান্য করে ‘বৃষ্টি বিলাস’ করতে। তিনি আমাদেরকে দেখিয়েছেন ‘এইসব দিনরাত্রি’তে কিভাবে শত কষ্টের মধ্যেও হাসতে হয়, হাসাতে হয়, বাঁচতে হয়। ভেবেছিলাম ছোট করে লিখব, কিন্তু হুমায়ূন আহমেদের যে প্রভাব জীবনে রয়েছে তার ব্যপ্তি এক লাইনে হয় না। আজ হঠাৎ ইচ্ছে করলো তার পুরো কালেকশনটা কিনব, রকমারি থেকে কিনতে ৩৬,৬১২ টাকা প্রয়োজন। হয়তো পুরোটা একবারে পারব না, বিকেলে ‘হিমু সমগ্র’টা কিনে আনব ভাবছি।

পাগলামীটাও তো তিনিই শিখিয়েছিলেন! মানুষটা শেষ দিকে অনেক কষ্ট পেয়েছিলেন এই ‘নন্দিত নরকে’. যে ‘মহাপুরুষ’ সবাইকে এত আনন্দ দিয়েছেন এই ‘নির্বাসন’ তার প্রাপ্য ছিল না। ক্যান্সারের চিকিৎসা চলার সময় ‘নিউইয়ার্কের আকাশে ঝকঝকে রোদ’ এ উনি লিখেছিলেন শাওনকে বিয়ে করায় তাকে কি পরিমাণ অপমান সহ্য করতে হয়েছে। আমি তার প্রতি এই অবিচার কখনই মানতে পারিনি, তার জীবনদর্শন হয়তো তাকে এমন দর্শনের সন্ধান দিয়েছিল যা তার দৃষ্টিভঙ্গীকে আমাদের সাদা চোখের বাইরে নিয়ে গিয়েছিল। ‘শঙ্খনীল কারাগার’এর বাধা ভাঙ্গার, ‘ভয়’ কে জয় করার, অসম প্রেমকে বরণ করার, এক জীবনে নিজেকে বঞ্চিত না করার সাহসের কথা তিনি যখন তার বইয়ে লিখেছেন তখন আমরা তাকে বাহবা দিয়েছি। মনের গভীরে নিজেরাও কি চাইনি ‘সকল কাঁটা ধন্য করে’ ‘ ‘বাঘবন্দী মিসির আলী’ ‘এবং হিমু’ হতে? অথচ...।

শুভ জন্মদিন গল্পের ‘জাদুকর’. ভক্তদের হৃদয়ের ‘অনন্ত নক্ষত্রবিথী’তে আপনার স্থান। ভাল থাকুন ‘অন্যভূবনে’। `````‘আলোটুকু তোমায় দিলাম, `````ছায়া থাক আমার কাছে’-

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।