আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নিজামীর মামলার রায় যে কোনো দিন

মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত জামায়াতে

ইসলামীর আমির মতিউর রহমান নিজামীর বিরুদ্ধে মামলার রায় ঘোষণা করা হবে যে কোনো দিন। গতকাল বিচারপতি এ টি এম ফজলে কবীরের নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ আদেশ দেন। প্রসিকিউশনের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে গতকালও আসামি পক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন পর্ব চলছিল। কিন্তু অন্য দিনের মতো এদিনও আসামি পক্ষের সিনিয়র আইনজীবীরা

হরতালের অজুহাতে ট্রাইব্যুনালে যাননি। এ কারণে তাদের অসমাপ্ত যুক্তিতর্ক লিখিতভাবে জমা দিতে বলা হয়েছে।

এদিকে আসামি পক্ষের এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, নিজামীর বিরুদ্ধে মামলায় সিএভির আদেশ প্রত্যাহার (রিকল) করে অসমাপ্ত যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের জন্য আসামি পক্ষ আবেদন নিয়ে গতকাল বিকালে ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রার কার্যালয়ে যায়। কিন্তু সে আবেদন রেজিস্ট্রার গ্রহণ করেননি। পরে ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যানের কাছে গেলে চেয়ারম্যানও তা গ্রহণ করেননি। নিজামীর বিরুদ্ধে একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় হত্যা, লুট, ধর্ষণ, উসকানি, সহযোগিতা, পরিকল্পনা ও ষড়যন্ত্র এবং বুদ্ধিজীবী হত্যার মতো ১৬টি অভিযোগ রয়েছে। এসব ঘটনায় অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে গত বছরের ২৮ মে নিজামীর বিচার শুরু হয়।

এটি হবে একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে দশম রায়। এর আগের নয়টি মামলায় জামায়াতে ইসলামীর সাবেক ও বর্তমান আটজন এবং বিএনপির দুই নেতাকে দণ্ড দেন ট্রাইব্যুনাল। ২০১০ সালের ২৯ জুন নিজামীকে একটি মামলায় গ্রেফতারের পর ওই বছরের ২ আগস্ট তাকে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়। অভিযোগ গঠনের দিন নিজামীর পরিচিতিতে ট্রাইব্যুনাল জানান, ১৯৪৩ সালে পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার মোহাম্মদপুরে নিজামীর জন্ম হয়। তিনি ১৯৭১ সালে জামায়াতে ইসলামীর ছাত্রসংগঠন ইসলামী ছাত্রসংঘের (বর্তমানে ছাত্রশিবির) পূর্ব পাকিস্তান শাখার সভাপতি ও আলবদর বাহিনীর প্রধান ছিলেন।

রাজাকার, শান্তি কমিটি, আলবদর প্রভৃতি গঠনে তিনি তৎকালীন জামায়াতে ইসলামীর পূর্ব পাকিস্তানের আমির গোলাম আযমকে সহায়তা করেন। তদন্ত কর্মকর্তা আবদুর রাজ্জাক খানের জবানবন্দি উপস্থাপনের মধ্য দিয়ে গত বছর ২৬ আগস্ট এ মামলায় সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়। প্রসিকিউশনের পক্ষে সাক্ষ্য দেন মোট ২৬ জন। আর নিজামীর পক্ষে তার ছেলে মো. নাজিবুর রহমানসহ মোট চারজন সাফাই সাক্ষ্য দেন। সাক্ষ্য ও জেরা শেষে গত ৩ থেকে ৬ নভেম্বর প্রসিকিউশনের পক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করা হয়।

এরপর ৭ নভেম্বর থেকে চার দিন আসামি পক্ষের যুক্তিতর্কের জন্য দিন রাখা হলেও হরতালের কারণে নিজামীর আইনজীবীরা ট্রাইব্যুনালে যাননি। নিজামীর বিরুদ্ধে অভিযোগের মধ্যে রয়েছে_ ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিজয়ের প্রাক্কালে অসংখ্য বুদ্ধিজীবীকে হত্যা করে আলবদর বাহিনী। দেশের বুদ্ধিজীবী শ্রেণীকে ধ্বংস করতে পরিকল্পিতভাবে আলবদর সদস্যরা ওই গণহত্যা চালায়। জামায়াতে ইসলামীর তৎকালীন ছাত্রসংগঠন ইসলামী ছাত্রসংঘ ও আলবদর বাহিনীর প্রধান হিসেবে ওই গণহত্যার দায় নিজামীর ওপর পড়ে। পাবনা জেলা স্কুলের প্রধান শিক্ষক মাওলানা কছিমুদ্দিনকে নির্যাতন করে হত্যা।

তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে প্রচার চালাতেন। ৪ জুন পাকিস্তানি সেনারা তাকে অপহরণ করে নূরপুর পাওয়ার হাউসের ক্যাম্পে নিয়ে যায়। সেখানে নিজামীর উপস্থিতিতে তার ওপর নির্যাতন চালানো হয়। ১০ জুন তাকে ইছামতী নদীর পাড়ে অন্যান্য ব্যক্তির সঙ্গে হত্যা করা হয়। ১০ মে পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার বাউশগাড়ি গ্রামের রূপসী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে একটি সভায় স্থানীয় শান্তি কমিটির সদস্য ও রাজাকারদের উপস্থিতিতে নিজামী বলেন, শীঘ্রই পাকিস্তানি সেনারা শান্তি রক্ষার জন্য আসবে।

ওই সভার পরিকল্পনা অনুসারে পরে বাউশগাড়িসহ দুটি গ্রামের প্রায় সাড়ে ৪০০ মানুষকে পাকিস্তানি সেনারা হত্যা করে। প্রায় ৩০-৪০ জন নারীকে ধর্ষণ করে রাজাকাররা। ১৬ এপ্রিল নিজামীর সহযোগিতায় পাকিস্তানি সেনারা ঈশ্বরদী উপজেলার আড়পাড়া ও ভূতেরবাড়ি গ্রামে হামলা চালিয়ে বাড়িঘর লুণ্ঠন ও অগি্নসংযোগ করে। এ সময় ২১ জন মানুষ মারা যায়। পাবনার সোনাতলা গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা অনিল চন্দ্র কুণ্ডু প্রাণ বাঁচাতে ভারতে চলে যান।

নিজামীর নির্দেশে রাজাকাররা তার বাড়ি জ্বালিয়ে দেয়। ৩০ আগস্ট নিজামী ঢাকার নাখালপাড়ার পুরনো এমপি হোস্টেলে গিয়ে সেখানে আটক রুমী, বদি ও জালালদের হত্যার জন্য পাকিস্তানি সেনাদের প্ররোচনা দেন।

 

 

সোর্স: http://www.bd-pratidin.com/

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।