আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নিজামীর রায় যে কোনো দিন

মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত জামায়াতে ইসলামীর আমির মতিউর রহমান নিজামীর বিরুদ্ধে যে কোনো দিন রায় ঘোষণা করা হবে। যুক্তিতর্ক গ্রহণ শেষে গতকাল এ মামলার রায় অপেক্ষমাণ (সিএভি) রাখার আদেশ দেন বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। প্রসিকিউশনের পক্ষে অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ আলী সমাপনী যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন। একাত্তরে বুদ্ধিজীবী হত্যাসহ নিজামীর বিরুদ্ধে ১৬টি অভিযোগ রয়েছে। ইতোমধ্যে ১০ ট্রাক অস্ত্রের মামলায় নিজামীকে ফাঁসির আদেশ দিয়েছেন চট্টগ্রামের একটি আদালত।

বর্তমানে তিনি কাশিমপুর কারাগারে রয়েছেন।

গতকাল তৃতীয়বারের মতো নিজামীর মামলা রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ রাখা হলো। গত বছরের ১৩ নভেম্বর প্রথমবারের মতো নিজামীর মামলার রায় অপেক্ষমাণ রাখা হয়। পরে আসামিপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে উভয় পক্ষের যুক্তিতর্ক গ্রহণ শেষে ওই বছরের ২০ নভেম্বর এ মামলার রায় দ্বিতীয়বারের মতো অপেক্ষমাণ রাখেন চেয়ারম্যান বিচারপতি এ টি এম ফজলে কবীরের নেতৃত্বাধীন ট্রাইব্যুনাল-১। বিচারপতি ফজলে কবীর অবসরে গেলে ৩১ ডিসেম্বর থেকে চেয়ারম্যান পদটি শূন্য হয়ে পড়ে।

২৩ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টের বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমকে এ ট্রাইব্যুনালে চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হলে পুনর্গঠিত ট্রাইব্যুনাল ২৬ ফেব্রুয়ারির আদেশে আবারও যুক্তিতর্ক শোনার কথা জানান। এর পরিপ্রেক্ষিতে ১০ মার্চ থেকে আবার যুক্তিতর্ক শুরু হয়।

এ মামলায় রবিবার আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ হয়। ১০ থেকে ১২ মার্চ এবং রবিবার ও গতকাল প্রসিকিউশনের পক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করা হয়। প্রসিকিউশনের পক্ষে আরও যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ।

১৩ মার্চ থেকে রবিবার পর্যন্ত পাঁচ কার্যদিবসে আসামিপক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন অ্যাডভোকেট মিজানুল ইসলাম ও অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম।

নিজামীর বিরুদ্ধে অভিযোগের মধ্যে রয়েছে তিনি নিজে ঢাকার নাখালপাড়ার পুরনো এমপি হোস্টেলে গিয়ে সেখানে আটক রুমী, বদি ও জালালদের হত্যার জন্য পাকিস্তানি সেনাদের প্ররোচনা দেন। বিজয়ের প্রাক্কালে জামায়াতে ইসলামীর তৎকালীন ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রসংঘ ও আলবদর বাহিনীর ঘাতকরা পরিকল্পিতভাবে বহু বুদ্ধিজীবীকে হত্যা করেন। সেই ইসলামী ছাত্রসংঘ ও আলবদর প্রধান হিসেবে বুদ্ধিজীবী হত্যার দায় নিজামীর ওপর পড়ে। স্বাধীনতার পক্ষে কাজ করার জন্য পাবনা জিলা স্কুলের প্রধান শিক্ষক মাওলানা কছিমুদ্দিনকে পাকিস্তানি সেনাদের নূরপুর পাওয়ার হাউসের ক্যাম্পে নিয়ে নিজামীর উপস্থিতিতে নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করা হয়।

নিজামীর প্ররোচনায় পাকিস্তানি সেনারা পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার বাউশগাড়িসহ দুটি গ্রামের প্রায় ৪৫০ ব্যক্তিকে হত্যা ও প্রায় ৩০-৪০ জন নারীকে ধর্ষণ করে। এ ছাড়া নিজামীর সহযোগিতায় পাকিস্তানি সেনারা ঈশ্বরদী উপজেলার আড়পাড়া ও ভূতেরবাড়ি গ্রামে হামলা চালিয়ে বাড়িঘর লুণ্ঠন, অগি্নসংযোগ ও ২১ জনকে হত্যা করে। নিজামীর নির্দেশে রাজাকাররা পাবনার সোনাতলা গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা অনিল চন্দ্র কুণ্ডুর বাড়ি জ্বালিয়ে দেন।

মামলার ধারাবাহিক কার্যক্রম : ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার অভিযোগের মামলায় ২০১০ সালের ২৯ জুন মতিউর রহমান নিজামীকে গ্রেফতার করা হয়। পরে একই বছরের ২ আগস্ট তাকে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে আটক দেখানো হয়।

২০১১ সালের ১১ ডিসেম্বর নিজামীর বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ ট্রাইব্যুনালে উপস্থাপন করে প্রসিকিউশন। ২০১২ সালের ৯ জানুয়ারি আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আমলে নেন ট্রাইব্যুনাল। ওই বছরের ২৮ মে মানবতাবিরোধী অপরাধের ১৬টি অভিযোগে নিজামীর বিচার শুরু হয়। ২০১২ সালের ২৬ আগস্ট থেকে গত বছরের ৭ অক্টোবর পর্যন্ত প্রসিকিউশনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়। নিজামীর বিরুদ্ধে তদন্ত কর্মকর্তা আবদুর রাজ্জাক খানসহ ২৬ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে।

এর মধ্যে সপ্তম সাক্ষী প্রদীপকুমার দেবকে বৈরী ঘৌষণা করে তাকে জেরা করে প্রসিকিউশন। নিজামীর পক্ষে গত বছরের ২১ থেকে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত চারজনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়।

 

সোর্স: http://www.bd-pratidin.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।