আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নির্জন নক্ষত্রেরা



পুফিন আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে হাসি শিখছে! হাসি ব্যাপারটা কেমন সে জানে না!! ঠোঁট দুটো দুদিকে বেশ প্রসারিত হয়ে গেলে এটা কি হাসি নাকি দুটো ঠোঁট গোলকরে থাকলে এটাকে হাসি বলে?! আচ্ছা, হাসির শব্দটা কেমন করবে সে? সে চেষ্টা করছে, উউউউ......ইইইইই! আচ্ছা, হাসির শব্দ কি এমনভাবে করে?! পুউউউউউউউ.........ফ্যা এএএএ... হুম... এবার মনে হচ্ছে হাসি হচ্ছে!! **** **** **** **** মিরা হাসল! মিরার হাসি সুন্দর । আমি কোন কথা বলছি না, চুপচাপ মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি! মিরা যখন হাসে তখন প্রার্থনার মত পবিত্র একা বাতাস বয় চারদিকে, উপাসনার মত শীতল করে যায় বুক! হাসি থামিয়ে হঠাত করে আকাশের দিকে তাকিয়ে বলল, এখনও মানবী নামক আসবাব কিছু ঘুণপোকা কুঁড়ে কুঁড়ে খায়!! -তোর আবার হঠাত কি হল? এই তো ভালো ছিলি! কিছু হয় নি তো! আচ্ছা, শিখন,এই যে এত নীল আকাশ, এতে কখনো ঘুন ধরে না? -মনে হয় না! এত উপরে ঘুনপোকা কিভাবে যাবে?! নক্ষত্রদের? জানিনারে! এসব কি হেঁয়ালি করছিস! **** **** **** **** রেনু ড্রয়িংরুমে বাবুটার ছবির দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসল। বাবুটার ছবি নতুন লাগানো হয়েছে। সন্তানসম্ভবা মায়েদের সুন্দর সুন্দর বাচ্চাদের ছবি দেখলে তাদের সন্তানও সুন্দর হয়! রেনু ভাবছে আচ্ছা তার ছেলেটার হাসি কেমন হবে? সে কি সম্রাট অশোকের মত সুন্দর করুন করে হাসতে পারবে? সে যখন হাসবে তখন কি তার চোখও হাসবে?! মিথুন তাদের ছেলেটার একটা নাম রেখেছে , পুফিন! পুফিন নামটা জানি কেমন অদ্ভুত! আচ্ছা হাসির সাথে কি নামের কোন সম্পর্ক আছে? পৃঁথিবীর সবচেয়ে সুন্দরতম হাসি হবে যে ছেলেটার তার নাম হবে পুফিন!!?? মিথুনের হাসি তেমন সুন্দর না, কেমন হা হা করে হাসে! বাল্যে অনেক কষ্ট করে বড় হয়েছে মিথুন, যেন হাসিটাও ছিল সামান্য চাপা। তার শোধ নিতে এখন বিকট শব্দে হাহা করে! **** **** **** **** আচ্ছা, নক্ষত্র এত দূরে দূরে কেন? চাঁদকেও মানুষ কত কাছে নিয়ে এল অথচ নক্ষত্ররা দূরে কেন?! মানবীদের মুখে প্রতিদিন কত মানুষ চাঁদ খুঁজে পাচ্ছে্‌ অথচ নক্ষত্ররা! আমি মিরার মুখ শক্ত করে দুই হাতে নিলাম! দরদ দিয়ে বললাম, কি হয়েছে মিরা? মিরার চোখ জলে ভিজে আসছিল , সে আমার হাত থেকে মুখ ছাড়ীয়ে বলল, কই কিছু না! আমি অবাক হওয়ার ভঙ্গিমা খুঁজে পেলাম না! একটা মানুষ প্রার্থনার মত পবিত্র হাসি কি করে হঠাত করে কান্না হয়ে যেতে পারে?! শিশুর মত মস্কিস্কের নিউরনে নিউরনে হাতড়াতে লাগলাম কি বলে ওকে মানাব! মিরা চোখ মুছে আমার দিকে তাকাল, বলল, আজকে বাবার চতুর্থ মৃত্যুবার্ষিকী।

চারবছর আগে এই দিনেই রোড এক্সিডেন্টে বাবা......... তারপর থেকে আমাদের পরিবারটা...... এক দফা আবার কাঁদল...... তুই তো জানিস ই। মায়ের বুকে ব্যাথাটা বেড়েছে, ওষুধ কেনার টাকা নেই। রাফির ফর্মফিলাপ টাকা দিতে হবে, কোথায় পাব জানি না! নিরাটা কেমন ভাবলেশহীন হয়ে যাচ্ছে, কোন কথা বলে না, কোনদিন কোনকিছু চায় না । আব্বা আমাদের এতিম করে আকাশে গিয়ে বসে আছেন। নক্ষত্ররা যদি কাছে আসত তবে আমি আব্বাকে বলতাম আব্বা আমাদের পাঁচহাজার টাকা দিন! কি মনে করে মিরা সামান্য হাসল।

বলল, জানিস আমি চাইলে আব্বা আমাকে কোনদিন না করতেন না! আমি বাড়ির বড় মেয়ে তো তাই। একদিন বান্ধবীদের সাহে পিকনিকে যাওয়ার জন্য আব্বা আমাকে এক হাজার টাকা দিলেন, অহচ রাফি সেদিন ই সিনেমা দেখার জন্য একশ টাকা চেয়ে পায়নি! আব্বার রাগ সেদিন রাফি আমার উপর খাটাল! আমাকে মেরে চুল টুল ছিঁড়ে বিদিকিচ্ছিরি অবস্থা! -মিরা কাল তুই রাফিকে মেরেছিস? মিরা আমার দিকে তাকাল। শুন্য দৃষ্টি। আমি মারিনিরে! ও নিজেই ফ্যনের সাথে ঝুলে...... ওর কি এত কষ্ট ছিল আমাকে কোনদিন বলতো না। বাবা মারা যাওয়ার পর কেমন চুপচাপ হয়ে গেছিল।

কিছু না বলে ও বাবার মত নক্ষত্র হয়ে গেছে! আমি মিরাকে শক্ত করে বুকে ঝরিয়ে ধরলাম । প্রচণ্ড জলোচ্ছ্বাসে আমার বুক ভেসে যাচ্ছে। বুকটাকে মনে হচ্ছে সাগরজলে ভেসে চলা খড়কুটো! এতদিন যে বুককে আকাশ ভেবে এসেছি জলের সামনে তা একদম মিইয়ে গেছে! সাগরের সামনে আকাশগুল কেমন খড়কুটো হয়ে যায়! **** **** **** **** মিথুন খুব ই চিন্তিত! এটা তার সতেরোতম সিগারেট। রেনুর পাগলামি ক্রমে বেড়েই চলেছে। তার কিভাবে যেন মনে হয়েছে।

পুফিনকে সে পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর হাসির ছেলে হিসেবে তৈরি করবে আর হাসি ও শেখানো যায়! তারউপর দায়িত্ব পড়েছে খুব সুন্দর করে হাসতে পারে এমন একটা মানুষ খুঁজে বের করার। সে নাকি হাহা করে হাসে! সুন্দর হাসি দেখলে পুফিন ও সুন্দর করে হাসবে! পুফিন সত্যিকার কেউ হলে হয়তো এরকম অদ্ভুত ইচ্ছা প্রশ্রয় দেয়া যেত! কিন্তু পুফিন বলে আসলে কেউ নেই! রেনুর পেটে একটা টিউমার ধরা পড়েছে। ডাক্তার সাহেব কনফার্ম করেছেন এটা টিউমার। কিন্তু এ কথা সে কিছুতেই মিরাকে বলতে পারছে না! তার মনে হচ্ছে এটা শোনার সাথে সাথে মিরা পাগল হয়ে যাবে! মিরা অফিসে ঢোকার সাথে সাথে দারোয়ান তারহাতে একটা কাগজ ধরিয়ে দিয়ে বলল, বস আপনাকে আসার সাথে সাথে দেখা করতে বলেছেন। **** **** **** **** আমি আর মিরা রেনুর মুখোমুখি বসে আছি।

মিরার দায়িত্ব হচ্ছে পুফিনকে পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দরতম হাসি শেখানো! আমি হচ্ছি জোকার!আমার দায়িত্ব হচ্ছে রেনু আর মিরা ক্লান্ত হয়ে এলে এদেরকে গল্পের রসদ যোগান দেয়া! রেনু কথাবার্তার মাঝখানে হঠাত করে জিজ্ঞেস করলো, আচ্ছা, শিখন ভাই, আমার পুফিনটা কি এখন নক্ষত্র তাই না? নক্ষত্র হয়ে আমাদের দেখছে?! উত্তরটা দিলাম আমি মিরাকে! আমার মস্তিষ্কের, আমাদের মস্তিষ্কের প্রতিটি নিউরন একেকটা নক্ষত্র!এসব নক্ষত্র জুড়ে যার অবাধ বিচরন করি আমরা । এবং এক সময় বিচরনের মাঝে অতীতগুলোকে মনে হয় দূরের কোনো নক্ষত্রপুঞ্জ; উল্কাবেগে ধাববান সময়ের বালুঘড়ি প্রতিনিয়ত পেছনে ঠেলে দেয় যাকে । সময়ের অতল গহ্বরে একসময় হারিয়ে যেতে চায় এইসব নক্ষত্রপুঞ্জের মিট মিটে আলো । কিন্তু চোখের হাসিতে সে আলো বারবার ফিরে ফিরে আসে! **** **** **** **** মিরা সাদা ধবধবে একটা শাড়ি পড়েছে! রাতের অন্ধকারে ওকে দেখে মনে হচ্ছে অবাস্তব কোন অস্তিত্ব! আমার হঠাতই মনে হল আমাদের ছেলেটা নিশ্চয়ই খুব সুন্দর করে হাসবে? মিরার মত সুন্দর! কিন্তু আমি তো কেমন হাহা করে হাসি! বিদিকিচ্ছিরি!

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।