আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সমঝোতা না হলে বাংলাদেশও সন্ত্রাসবাদের কবলে পড়তে পারে

একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধ, শেখ হাসিনাকে ক্ষমতা থেকে সরে দাঁড়িয়ে অন্য কারো নেতৃত্বে  নির্বাচনকালীন সরকার গঠন এবং ধর্মীয় সংখ্যালঘু নির্যাতনে দায়ীদের কঠোর শাস্তির মতামত প্রকাশ পেল মার্কিন কংগ্রেসে বাংলাদেশ নিয়ে দীর্ঘ শুনানিতে। দুই কংগ্রেসম্যান এবং হিউম্যান রাইটস ওয়াচ কর্মকর্তার বক্তব্যে একাত্তরের যুদ্ধাপরাধ ট্রাইবু্যনাল আন্তর্জাতিক রীতি মেনে চলছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। বিএনপি, আওয়ামী লীগসহ কোন সরকারের আমলেই সংখ্যালঘুরা নিরাপদ ছিলেন না বলেও গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। এসব অভিযোগ উঠলো এমন দিনে যেদিন নিউইয়র্ক টাইমসের সম্পাদকীয়তে বাংলাদেশের এহেন পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে আন্তর্জাতিক হস্তক্ষেপ হবার আশঙ্কা ব্যক্ত করা হয়েছে। নিউইয়র্ক টাইমসের এ সম্পাদকীয়তেও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিয়ে প্রশ্নের অবতারণা করা হয়েছে।

বাংলাদেশের টলটলায়মান পরিস্থিতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেসে পররাষ্ট্র বিষয়ক উপ-কমিটির (দক্ষিণ এশিয়া) শুনানিতে রাজনীতিক ও সুশীল সমাজের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানানো হয় সমঝোতার  মাধ্যমে নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করার জন্য। অন্যথায় বাংলাদেশের গণতন্ত্র আবারো হুমকির মুখে পড়ার আশঙ্কা ব্যক্ত করেছেন এ শুনানিতে অংশগ্রহণকারীরা। একইসঙ্গে তারা হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন যে, রাজনৈতিক পরিস্থিতির শানি্তপূর্ণ অবসান ঘটানো সম্ভব না হলে পাকিস্তানের ভাগ্য বরণ করতে হবে বাংলাদেশকেও।

২০ নভেম্বর বুধবার অপরাহ্ন ৩টায় ক্যাপিটাল হিলের ল্যাবার্ন অফিস ভবনে পররাষ্ট্রবিষয়ক কমিটির কক্ষে এ শুনানিতে সভাপতিত্ব করেন উপ-কমিটির চেয়ারম্যান স্টিভ শ্যাবট। বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি, সংখ্যালঘুদের অবস্থা, একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার এবং গার্মেন্টস সেক্টর পরিস্থিতি ইত্যাদি প্রাধান্য পায় এ শুনানিতে।

নিজেদের মতামত উপস্থাপন করেন সম্প্রতি বাংলাদেশ সফর করে আসা কংগ্রেসম্যান স্টিভ শ্যাবট, পররাষ্ট্র বিষয়ক কমিটির চেয়ারম্যান কংগ্রেসম্যান এড রয়েস, কমিটির প্রভাবশালী সদস্যা কংগ্রেসওম্যান গ্রেস মেং, কংগ্রেসম্যান ব্ল্যাড শারমেন, কংগ্রেসওম্যান তুলসী গ্যাবার্ড এবং জেরার্ড ই কোনোলি। এ শুনানিতে আরো অংশ নেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন থিঙ্ক ট্যাঙ্ক 'উড্রো উইলসন সেন্টার'র পাবলিক পলিসি স্কলার ড. আলী রিয়াজ, বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব পিস এন্ড সিকিউরিটি স্টাডিজের প্রেসিডেন্ট অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল এএমএন নুরুজ্জামান এবং হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়া এডভোকেসি ডিরেক্টর জন সিফটন।

ড. আলী রিয়াজ বাংলাদেশের মূল সমস্যার প্রতি সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করে তা থেকে উত্তরণে ৩টি প্রস্তাব পেশ করেন। এগুলো হচ্ছে:

১. সবাইকে নিয়ে নির্বাচনের কোন সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। তাই বিরোধী দলের দাবির কিছু অংশ মেনে নিয়ে সমস্যার সমাধানে সরকারী দলকেই এগিয়ে আসতে হবে।

বিশেষ করে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে নির্বাচনকালীন সরকারকে যেহেতু প্রধান বিরোধী দল কোনভাবেই মেনে নেবে না, তাই শেখ হাসিনার পরিবর্তে অন্য কারো নেতৃত্বে সর্বদলীয়/নির্বাচনকালীন সমরকার গঠিত হতে পারে।

২. বিরোধী দলকে বাদ দিয়ে ১৯৯৬ সালের ফেব্রুয়ারির মত একতরফা নির্বাচন করা। তবে বর্তমানের পরিস্থিতি ১৯৯৬ সালের মত নয়। এছাড়া একতরফা নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা কখনোই আসে না বিধায় বিরোধী দলকে সাথে নিয়ে নির্বাচনের ব্যবস্থা করা।

৩. নির্বাচন পিছিয়ে দেয়া যেতে পারে।

বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী জাতীয় সংসদ ভেঙ্গে দেয়ার ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করার কথা। তাই জাতীয় সংসদের মেয়াদ শেষ হলে তা ভেঙ্গে দিয়ে সংশ্লিষ্ট সকলে আলাপ-আলোচনা চালিয়ে নির্বাচনের নতুন তারিখ ধার্য করা যেতে পারে। এছাড়া তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রশ্নে বারবার উঠা জটিলতার অবসানে গণভোটের ব্যবস্থাও করা যেতে পারে।

ড. আলী রিয়াজ আরো বলেছেন, প্রতি ৫ বছর অন্তর নির্বাচনের আগে যেহেতু সহিংসার সৃষ্টি হচ্ছে, তাই মানসম্পন্ন গণতনে্ত্রর জন্যে সার্বক্ষণিকভাবে বাংলাদেশের সাথে কাজ করতে পারে যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসন। নির্বাচন কমিশনকে আরো শক্তিশালী এবং স্বাধীনভাবে কাজের উপযোগী করতে যুক্তরাষ্ট্রের উচিত হবে সর্বাত্মক সহায়তা দেয়া।

গোলযোগ সৃষ্টি হলে তা নিয়ে নাক গলানোর পরিবর্তে এ বিষয়ে স্থায়ী সমাধানে যুক্তরাষ্ট্রের এগিয়ে যাওয়ায় শ্রেয়।

শুনানিতে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, বাংলাদেশ হিন্দু-বেৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ, জামায়াতে ইসলামীর সমর্থকরা উপস্থিত ছিলেন।
 
 


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।