আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

তোমাদের জন্য শুভকামনা

আমার খুব কষ্ট হয়, যখন RAJAKAR বানানটা বাংলা বর্ণমালায় লিখা হয়। এটা বর্ণমালার জন্য অপমান।

৩৩তম বিসিএস পরীক্ষার রেজাল্ট হলো অতি সম্প্রতি। যারা কোন ক্যাডার পাওনি, তাদের জন্য সান্ত্বনার কথা বলবোনা, কারণ তোমাদের যন্ত্রণার কথা আমার অজানা নয়। এই অধম ৩০ তম বিসিএস এর ভাইভাতে ফেল করেছিলো।

যাই হোক, যারা পাশ করেছো তাদের অভিনন্দন। যারা এডমিন ক্যাডারের জন্য প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত হয়েছো-তাদের জন্য কিছু অভিজ্ঞতালব্ধ তথ্য সন্নিবেশ করছি। ১. বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারে চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত সদস্যরা CRPC অনুসারে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। প্রথম পদমর্যাদা 'সহকারী সচিব', মাঠ প্রশাসনে 'সহকারী কমিশনার'। চাকুরিটা আরামের নয়, দায়িত্বের।

২৪X৭ ডিউটি। দিনে-রাতে যে কোন সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষার কাজে ডাক পড়তে পারে। ছুটির দিনের কথা ভুলে যেতে হবে কারণ, ছুটির দিনেও Jurisdiction এর বাইরে যাবার উপায় নেই। খুব প্রয়োজন পড়লে জেলা প্রশাসকের কাছ থেকে লিখিত অনুমোদন নিয়ে যেতে হয়। তারপরও শর্ত থাকে যে, যে কোন রাষ্ট্রীয় প্রয়োজনে স্বল্পতম সময়ে চাকুরিস্থলে পৌঁছতে হবে।

যারা দায়িত্বটাকে উপভোগ করে, তাদের জন্য এর চেয়ে ভালো চাকুরি দ্বিতীয়টি নেই। ২. এখানে ঝুঁকি আছে নিঃসন্দেহে। একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতা আছে সম্মুখে সংঘটিত অপরাধের শাস্তি বিধান স্বরূপ নির্দিষ্ট মেয়াদ ও পরিমাণে জেল-জরিমানা করার। ব্যাপারটা অপরাধীচক্র নিশ্চয়ই ভালো চোখে দেখবেনা। জেল-জরিমানা করার ক্ষেত্রে চিন্তা করতে হয় অপরাধ এবং শাস্তির পরিমাণ সমানুপাতিক কিনা।

কোন অবিচার যাতে না হয়-সেটা খেয়াল রাখতে হয় সর্বাগ্রে। দ্বিতীয়ত, মেট্রোপলিটন এলাকার বাইরে (মেট্রো এলাকার ভেতরে এই ক্ষমতা এএসপি ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট উভয়েরই আছে) যে কোন সংঘাতে গুলি করার অবস্থা সৃষ্টি হলে পুলিশকে সেখানে নিযুক্ত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের অনুমতি নিতে হয়। এই অনুমতি দেয়া না দেয়ার সিদ্ধান্তটা দ্রুত নিতে হয়। এখানে মানুষের জীবনমরণ প্রশ্ন এবং রাস্ট্রের অস্তিত্বের প্রশ্ন থাকে। আর পুলিশের সাথে এসব অভিযানে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিরস্ত্র থাকে-এমনকি সাথে চেস্টগার্ড কিংবা হেলমেটও থাকেনা অনেক সময়।

আহত হওয়া কিংবা জীবননাশের সম্ভাবনা প্রতি মুহূর্তে। আমার বিশ্বাস-যারা সাহসী, তারা এই ব্যাপারটা উপভোগ করবে-কেননা, কিছু মানুষ জেগে থাকে বলেই, বাকীরা ঘুমায়। ৩. মোবাইল কোর্ট, উচ্ছেদ অভিযান, টাস্কফোর্স অভিযান, নির্বাহী তদন্ত, ভিআইপি প্রটোকল-এতোকিছুর পাশাপাশি অফিসের ফাইল ওয়ার্ক করতে হয়। এর সাথে অবশ্য কর্তব্য পড়ালেখা। আইন প্রয়োগ করতে হলে নিশ্চিতভাবে আইন জানতে হবে।

একটা দুটো নয়, শত শত কিংবা হাজার। ৪. যে কোন পাবলিক কিংবা প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রশ্ন বিজি প্রেস থেকে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের তত্ত্বাবধানে জেলা ট্রেজারীতে সংরক্ষিত হয়। প্রশ্ন সম্বলিত শত শত সিলগালাকৃত ট্রাঙ্ক নিয়ে ট্রাকের চালকের পাশে বসে আসতে হয়। এই সময়টুকুর জন্য সমস্ত দায়-দায়িত্ব নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের। যদিও সংগে পর্যাপ্ত পুলিশ থাকে, তবুও এই ঝুঁকি কম নয়-কারণ ট্রাঙ্ক এবং প্রত্যেকটা তালা অক্ষত ভাবে ট্রেজারীতে পৌঁছাতে হয়।

এতে ভয় পাবার কিছু নেই কিংবা হতাশ হবার কিছু নেই-কারণ রাষ্ট্র একমাত্র নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটকেই বিশ্বাস করে। ৫. সব ঈদ কিংবা পূজার ছুটিতে নিজের বাড়িতে যাবার সুযোগ নেই। কারণ সে সময়ের জন্যও কয়েকজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্বপ্রাপ্ত থাকে। তবে কলিগদের সাথে ছুটিগুলো আগে-পরে ভাগ করে নেয়া যায়। উপরের ব্যাপারগুলোর সাথে যদি নিজেকে মানিয়ে নিতে পারো, তাহলে মানুষের জীবন ও সম্পদের নিশ্ছিদ্র ছায়া হয়ে থাকতে পারবে।

এখানে জীবন হারানোর ঝুঁকি আছে, তার চেয়ে বেশি আছে দায়িত্ব পালনের আনন্দ। সারাদিনের ব্যস্ততা শেষে সন্ধ্যায় অফিসের সবাই মিলে তেতো বিস্বাদ র'চা খাওয়ার যে আনন্দ-তার সাথে কোন কিছুর তুলনা চলেনা। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে একজন ম্যাজিস্ট্রেটের কথার মূল্য। মানুষ তোমাকে বিশ্বাস করবে। সেই বিশ্বাসের যদি যথাযথ মূল্য দিতে পারো-দিন শেষে দায়িত্ববানের সুখী হাসিটা তুমি হাসতেই পারো।

মানুষ তোমাকে এককথায় সম্মান করবে। সেই সম্মান রাখার ম্যাজিস্ট্রেসি'টা নাহয় নিজের উপরেই করলে! তোমাদের জন্য শুভকামনা। ছবিঃ বাংলাদেশ সচিবালয় ছবিসূত্রঃ ইন্টারনেট ফটোগ্রাফারঃ অজানা (কৃতজ্ঞতাসহ)

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.